Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জারজিনহো: যে ঝড়ের সমাপ্তি নেই

বিশ্বকাপের ফাইনালের পরপরই আলোচনাটাকে উসকে দিয়েছেন লিওনেল মেসি। গ্রুপপর্ব থেকে শুরু করে নকআউটের প্রতিটি পর্বেই গোল, এই কীর্তিটা কি মেসির একার? নাকি মেসি কেবলই অন্য কারো রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর ’না’। এই কীর্তি আগেও দেখেছে ফুটবল বিশ্ব, দুটো ক্ষেত্রে আরো বেশি ‘নিখুঁত’ভাবে। ঐ দুই ব্যক্তির একজনের নাম আলসিডেস ঘিগিয়া; ১৯৫০, ফাইনাল, ব্রাজিল, মারাকানাজো, শব্দগুলোর সাথে পরিচিত থাকলে আপনি তাকে চেনেন নিশ্চিত। আরেকজনের সাথেও ‘ব্রাজিল’ জড়িত, তবে এবার পক্ষে। তার নাম জেয়ার ভেনতুরা ফিলহো, ‘জারজিনহো’ নামেই অবশ্য বেশি পরিচিত তিনি। ব্রাজিলের ফুটবলে তিনি ‘দ্য হারিকেন’, নামের সাথে মিলিয়ে ঝড় হয়েই প্রতিপক্ষকে তছনছ করে দিয়েছিলেন ১৯৭০ বিশ্বকাপে।

যেমনটা বলা হচ্ছিল, গ্রুপপর্ব থেকে শুরু করে বিশ্বকাপের প্রতিটা ম্যাচে গোল করার রেকর্ড আছে মাত্র দুইজন খেলোয়াড়ের। তাদের মধ্যে প্রথমজন, আলসিডেস ঘিগিয়া ১৯৫০ এর বিশ্বকাপের চার ম্যাচেই গোল পেয়েছিলেন। বিশ বছর পরে ঐ রেকর্ডে নিজের নাম যোগ করেছেন জারজিনহো, তবে তার কীর্তিটা আরেকটু বড়। মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ঐ বিশ্বকাপের ফাইনালসহ ছয় ম্যাচের প্রত্যেকটাতেই গোল করেছিলেন তিনি। সাত ম্যাচে গোল করে লিওনেল মেসিও এই রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারতেন, পোল্যান্ডের বিপক্ষে যদি পেনাল্টিটা মিস না করতেন! মেসির কথা বাদ থাকুক আপাতত; জারজিনহো আর মেক্সিকো বিশ্বকাপ নিয়েই কথা হোক।

জারজিনহো; Image Source: Getty Images

মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৭০ বিশ্বকাপই ছিল প্রথম বিশ্বকাপ, যা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়েছিল বিশ্বব্যাপী। ঐ স্যাটেলাইটের নাম ছিল টেলস্টার, ঐ নামটাই অ্যাডিডাস ব্যবহার করেছিল ঐ বিশ্বকাপের অফিশিয়াল বলের নামকরণে। আর ঐ বিশ্বকাপেই বাজিমাত করেছিল ব্রাজিল দল, যার কেন্দ্রে ছিলেন ‘পঞ্চপাণ্ডব’।

“মারিও জাগালোর অধীনে ’৭০ এর দলটা যা অর্জন করেছিল, সেটাকে বিশেষ না বলার উপায় নেই। ঐ দলে আমরা পাঁচজন খেলোয়াড় ছিলাম, যারা কার্যত একই পজিশনের খেলোয়াড় ছিলাম। আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্লাবে ‘নাম্বার টেন’ হিসেবে খেলতাম। “

– জারজিনহো
ব্রাজিলের পঞ্চপাণ্ডব: (বাঁ থেকে) জারজিনহো, গারসন, টোস্টাও, পেলে এবং রিভেলিনো; Image Source: Getty Images

বোটাফোগোর জারজিনহো, সাও পাওলোর গারসন, ক্রুজেইরোর টোস্টাও, করিন্থিয়ান্সের রিভেলিনো, এবং অবশ্যই, সান্তোসের পেলেকে নিয়েকে গঠিত ব্রাজিলের ‘পঞ্চপাণ্ডব’-এর প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্লাবে ছিলেন ‘ডিপ-লায়িং অ্যাটাকার‘। জারজিনহো ব্যাখ্যা করছেন,

“বোটাফোগোতে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে সেসময়ে খেলতেন রবার্তো মিরান্ডা, সান্তোসে খেলতেন কুতিনহো, ক্রুজেইরোতে ছিলেন ইভালদো। আমরা কেউই প্রথাগত স্ট্রাইকার ছিলাম না। আমি সাত নম্বর জার্সি পরতাম, একজন ‘নাম্বার সেভেন’ এর মতোই রাইট উইং দিয়ে আক্রমণ করতাম। রিভেলিনো পরতো এগারো নম্বর জার্সি, ও বাঁ পাশ দিয়ে আক্রমণ করতো। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একটা বিষয় সাধারণ ছিল, আমরা সবাই আক্রমণ করতাম।“

– জারজিনহো

ব্রাজিলের এই পাঁচ ফরোয়ার্ড প্রতিনিয়ত নিজেদের মধ্যে জায়গা পরিবর্তন করতেন, এবং সেটা অবশ্যই যথাযথ ‘লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য’ সামনে রেখে। ’৭০ বিশ্বকাপের ফাইনালের শেষ গোলটার উদাহরণই দেওয়া যাক। ইতালির বিপক্ষে ঐ গোলদাতা হিসেবে রাইটব্যাক কার্লোস আলবার্তোর নাম লেখা থাকবে ইতিহাসে, কিন্তু ঐ গোলে জারজিনহোর ভূমিকাও ছিল অসামান্য। আলবার্তো নিজেই যেমনটা বলছেন,

“জাগালো জারজিনহোকে বলছিলেন, ’সম্ভব হলে ডান থেকে বাঁ দিকে একটু সরে যাওয়ার চেষ্টা কোরো তাতে ইতালির লেফটব্যাক ফাচ্চেত্তি তোমার দিকে সরে যাবে, আর কার্লোস আলবার্তো সামনে যাওয়ার জন্য জায়গা পেয়ে যাবে।”

– কার্লোস আলবার্তো, সাবেক রাইটব্যাক, ব্রাজিল ফুটবল দল

জাগালোর এই পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল হয়েছিল। জারজিনহোকে মার্ক করতে গিয়ে ফাচ্চেত্তি সরে গিয়েছিলেন তার জায়গা থেকে। জারজিনহো তখন বলটা পাস দেন পেলেকে, পেলে থেকে বল পেয়ে যান আলবার্তো। ফলাফল: দুর্দান্ত শটে লক্ষ্যভেদ। ঐ গোলটাকে বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে অন্যতম সেরা গোল হিসেবে মনে করা হয়।

বিখ্যাত এই ছবিতে পেলেকে কোলে তুলে নিয়েছেন জারজিনহো; Image Source: The Irish Times

তবে প্রত্যেকেই আক্রমণ করলেও ক্লাব থেকে জাতীয় দলে নিজের ভিন্ন ভূমিকায় সবচেয়ে ভালোভাবে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন জারজিনহো। বিশ্বকাপ-যাত্রার প্রথম ম্যাচেই চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে দুটো গোল করেন তিনি। এই গোল করার ধারা অব্যাহত থাকে পরের পাঁচ ম্যাচেও। সাত নম্বর জার্সিধারী হিসেবে রাইট উইংয়ে খেলা শুরু করলেও তিনি জায়গা পরিবর্তন করে চলে আসতেন সেন্টার ফরোয়ার্ডের ফাঁকা স্থানে। জারজিনহোর এই পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিশ্বকাপের আগে আগে জোয়াও সালডানহার পরিবর্তে ব্রাজিলের কোচের দায়িত্ব পাওয়া মারিও জাগালো,

“আমি জানতাম জারজিনহো সফল হবে। এর কারণ সে শুধু গোল করতেই সিদ্ধহস্ত ছিল না, পাশাপাশি শারীরিকভাবে সে খুবই ভালো অবস্থায় ছিল। সে রীতিমতো উড়ছিল। রাইট উইঙ্গার, মিডফিল্ডার, বা সেন্টার ফরোয়ার্ড, যেকোন পজিশনে খেলার মতো শারীরিক সামর্থ্য ছিল জারজিনহোর”

– মারিও জাগালো, সাবেক কোচ, ব্রাজিল ফুটবল দল
গুরু-শিষ্য; কোচ মারিও জাগালোর সাথ জারজিনহো; Image Source: Getty Images

এই তিনটা পজিশন তো বটেই, জারজিনহো খেলতে পারতেন লেফট উইংয়েও। ১৯৬৬ আর ১৯৭০ বিশ্বকাপের বিভিন্ন সময়ে তাঁকে দেখা গেছে এই পজিশনগুলোতে খেলতে। কখনো কখনো তিনি হয়ে উঠতেন একজন ‘নম্বর সেভেন’, যিনি মাঠের ডান পাশ দিয়ে দৌড়ে বক্সের ভেতরে ঢুকতে পারতেন। রক্ষণসেনাদের কাছে পুরো ব্যাপারটাই ছিল একটা বিভীষিকা। জারজিনহোও মিথ্যা বিনয় করেননি,

“বল নিয়ে দৌড়ানো শুরু করার পর, আমাকে থামানো কঠিন হতো। হ্যাঁ, এজন্য আমার জায়গা দরকার হতো, আর মেক্সিকো বিশ্বকাপে আমি সেটা পেয়েছিলাম। আমাদের বেশিরভাগ আক্রমণের ক্ষেত্রে আমি প্রচুর দৌড়িয়েছি, কখনো কখনো ডায়াগোনাল রান নিয়েছি। আর আমি বরাবরই এমন, জায়গা পেলে সেটা কাজে লাগাতে জানি।“

– জারজিনহো

তবে মাঠে জারজিনহোর যথাযথ পজিশন নিয়ে যে ধোঁয়াশা, এটার শুরু কিন্তু ’৭০ এর ঐ ‘ড্রিম টিম’-এ নয়। এই শুরুর গল্পটা জানার জন্য ফিরে যেতে হবে বারো বছর আগে, ১৯৫৮ সালে। জারজিনহোর বয়স তখন ১৪। পরিবারের সাথে ঐ বয়সে তিনি পাড়ি জমান রিওতে, বোটাফোগো স্টেডিয়ামের কাছেই। এর অল্প কিছুদিন পরই জারজিনহোকে দেখা যায় বোটাফোগোর যুবদলের হয়ে মাঠে নামতে।

জারজিনহোর নেতৃত্বে বোটাফোগোর যুবদলটা খুবই ভালো খেলতে থাকে। এতটাই ভালো যে, বিষয়টা দ্রুতই বোটাফোগোর মূলদলের কোচ জোলো রাবেলোর চোখে পড়ে। একদিন ট্রেনিংয়ে, একটা প্রস্তুতি ম্যাচে তিনি তাঁর পোড়খাওয়া সেন্টার ফরোয়ার্ড কোয়ারেন্তিনহাকে পরিবর্তন করে নামান জারজিনহোকে, যখন মাঠে ছিলেন দিদি, গারিঞ্চা, জাগালো, আমারিলদোর মতো সেই সময়ের বড় বড় খেলোয়াড়রা।

জারজিনহো কখনোই প্রথাগত স্ট্রাইকার ছিলেন না, কিন্তু ঐ সময়ে প্রাপ্ত সুযোগটা তিনি বিফলে যেতে দেননি। ঐ ম্যাচে তিনি দুটো গোল করেন। আর সেই শুরু, তখন থেকে জারজিনহো সুযোগ পেতে লাগলেন বোটাফোগোর মূল দলে।

চৌদ্দ বছরের রোনালদোকে ‘আবিষ্কার’ করেছিলেন জারজিনহো; Image Source: Ronaldo’s Personal Archive

ঐ সময়ে অভিষেক হওয়ায় জারজিনহো একটা সুবিধা পেয়েছিলেন। গারিঞ্চার ক্যারিয়ারে তখন ভাটার টান, ব্রাজিল দলে তাঁর জায়গাটাই নিয়ে নিলেন জারজিনহো। শুধু জায়গা নয়, সাথে পেলেন গারিঞ্চার সাত নম্বর জার্সি আর গারিঞ্চার জুতোয় পা গলানোর প্রবল চাপ। আর সেই চাপটাকে তিনি কীভাবে জয় করেছিলেন, সেই গল্প তো উপরে বলা হয়েছেই।

পরবর্তী জীবনে, বুটজোড়া তুলে রাখার অনেক দিন পরে, ব্রাজিলের ফুটবলকে আরেকবার সাহায্য করেছিলেন জারজিনহো। সাও ক্রিস্টোভোতে ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর প্রতিভাকে প্রথমবারের মতো শনাক্ত করেছিলেন তিনি। সেই কিশোর পরে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন, বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন, নামের সাথে ‘দ্য ফেনোমেনন’কে জড়িয়ে নিয়েছেন, প্রতিভা আর প্রয়োগের বিচারে সেই রোনালদো নাজারিও কি পেরেছিলেন ১৯৭০ এর জারজিনহোকে অবিসংবাদিতভাবে ছাড়িয়ে যেতে?

প্রশ্নটা তোলা থাক ব্রাজিলের ফুটবলের পাঁড় অনুসারীদের জন্যই।

This article is in Bangla language. It is about Jairzinho, the famous footballer from Brazil, whon won the FIFA World Cup in 1970 and scored at least a goal in each match of that tournament.

Necessary Source: Fifa.com

Featured Image Source: Getty Images

Related Articles