Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আমি এক নম্বর ছিলাম: জন ম্যাকেনরো

জন ম্যাকেনরো অনেকের মতেই সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড়দের একজন। জীবনে ৭৭টি সিঙ্গেল ও ৭৮টি ডাবলস শিরোপা জিতেছেন। পশ্চিম জার্মানিতে জন্ম নেওয়া এই টেনিস খেলোয়াড় খেলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে। ক্যারিয়ারে ৭টি গ্র্যান্ডস্লাম জিতেছেন তিনি।

বিয়ন বোর্গ, জিমি কনরস হয়ে পিট সাম্প্রাসদের সাথে ছিলো তার অসাধারণ লড়াই।

রোমান্টিক যুগের এই টেনিস তারকা এখন শখের গিটার বাদক। নিজের একটি ব্যান্ডও আছে। তার স্ত্রী প্যাটি স্মিথ বেশ নামকরা গায়িকা। ম্যাকেনরো সম্প্রতি রোমে এসেছিলেন এক সঙ্গীতানুষ্ঠানে।

সাবেক তারকা খেলোয়াড় জন ম্যাকেনরো নিজের টেনিস, এই সময়ের খেলা এবং নাদাল-ফেদেরারদের নিয়ে কথা বলেছেন। 

রোমে এলেন আপনার দ্বিতীয় ভালোবাসা গিটারের জন্য। আপনার স্ত্রী কি এখনও আপনার ব্যান্ডে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান?

ওর আপত্তি আছে; এটা বললে কিছুটা বোঝা যায়। আসল কথা হলো, ও চালাক। আমার জন্য এটা স্বপ্নের মতো একটা ব্যাপার হবে, যদি কখনো একসাথে পারফর্ম করতে পারি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা কখনো হবে বলে মনে হয় না।

গিটার হাতে ম্যাকেনরো; Image Source: Tennis Magazin

যখন এক নম্বর ছিলেন, তার চেয়ে এখন টেনিস কি বেশি উপভোগ করেন?

দেখুন, বিশ্বের সেরা হওয়াটা সবসময়ই অসাধারণ একটা তৃপ্তির ব্যাপার। কিন্তু একই সাথে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিলো। প্রত্যাশা ছিলো ভয়ানক। প্রত্যেকে চাইতো আমাকে হারাতে। আর আমি আরও বেশি চাপের মুখে থাকতাম। কারণ, আমি প্রতিটা ম্যাচে জয় চাইতাম। এটা একটা অস্বস্তিকর ব্যাপার ছিলো। উইম্বলডন জেতো, ইউএস ওপেন জেতো, লেন্ডল, কনরস, বোর্গ, সাম্প্রাস, সবাইকে হারাও। এসব ব্যাপার মানসিকভাবে খুব চাপে ফেলতো। এখন আমি স্রেফ যাই, মজা করি। কারণ, আমি টেনিস ভালোবাসি।

আপনার টেলিভিশনে কাজ নিয়েও অনেক প্রশংসা আছে। বলা হয়, আপনি যত ভালো খেলোয়াড় ছিলেন, তার চেয়েও ভালো ধারাভাষ্যকার।

লোকে যখন বলে যে, আমি ধারাভাষ্যটাই বেশি ভালো দেই, তখন আমি বিরক্ত হই। আমি ভাবি, আরে, আমি তো এক নম্বর ছিলাম। অবশ্য এই ধরনের স্বীকৃতি একটা সন্তুষ্টিও দেয়। অবশ্যই ধারাভাষ্য দেওয়াটা খেলার চেয়ে অনেক সোজা। আমি তো কোর্টে থাকছি না। আরামে একটা চেয়ারে বসে কথা বলছি। আপনি আরামে বসে খেলোয়াড়দের কী ভালো করা উচিত, এ নিয়ে কথা বলবেন, এটা তো সোজা কাজ। কোর্টে আপনাকে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপনি যদি ঐদিন সেরা খেলতে না পারেন, দর্শকরা আপনাকে গালি দেবে। সেই সময় আমার পক্ষে ওরকম একটা মুহুর্তে শান্ত থাকা কঠিন হতো। আর সেই সাথে আমি টেলিভিশনে আমার ভবিষ্যত আছে, এমনও মনে করি না। আমি ওখানে কাজ করি। তাতে অন্তত খেলার সাথে একটু জড়িত আছে বলে মনে হয়। এটুকুই।

ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় ভুল করে জিহবা কামড়াতে হয়েছে কখনো?

হ্যাঁ। তবে কোর্টে ভুল করার চেয়ে মাইকের সামনে ভুল করা সহজ।

আপনি কি এখন তরুণ কাউকে দেখেন যে, দ্রুতই গ্র্যান্ডস্লাম জিততে পারবে?

সত্যি বললে, আমি সেটা বিশ্বাস করি না। বেকার, নাদাল পেরেছিলো। জোকোভিচও বোধহয় ২০ বছরে পেরেছিলো। আমি বলছি না যে, এটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু এখন খেলাটা অনেক বেশি শারীরিক হয়ে গেছে। এই সময়ে এসে একটা বাচ্চা ছেলের পক্ষে সাতটা ম্যাচ জেতার মতো সামর্থ দেখানো কঠিন। এই মুহুর্তে আমি সেরকম কাউকে দেখি না। এটাই সত্যি যে, আমি ফেদেরারের মতো প্রত্যাবর্তনও রোজ রোজ কল্পনা করতে পারি না। ও তো রজার; সর্বকালের সেরা। ওর পক্ষে কিছু অসম্ভব না।

যখন উইম্বলডন খেলতেন; Image Source: Getti

তাহলে পরের প্রজন্ম কবে আসবে?

দেখুন, আমি এটার জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করে আছি। কেউ কেউ এর মধ্যে নিজেদের সুযোগ হারিয়েছে। এরা কখনোই আর সম্ভবত সুযোগ পাবে না। বোরনা কোরিচ খুব ভালো পথে ছিলো। কিন্তু তারপর পড়ে গেলো। আমার ধারণা, ডেনিস শাপোভালোভের ভালো গতি আছে, উৎসাহও আছে। ভক্তরা ওর শক্তিটা ভালোবাসে। যদিও ও দেখতে এমন কিছু বড়সড় নয়। কিন্তু শাপোভালোভের বয়স এখন ১৮ (আসলে ১৯); ওর সামনে সময় আছে। এখনকার মধ্যে আলেক্সান্দার জেভারেভ খুব বড় একজন দাবিদার হয়ে উঠতে পারে। যদিও সে বড় টুর্নামেন্টগুলোতে এখনও তেমন ভালো খেলছে না। আমি ওর কাছ থেকে সামনের বছরগুলোতে আরও বেশি কিছু আশা করছি।

আপনি কি তার ওপর তাহলে আস্থা রাখতে চান?

কোনো প্রশ্ন ছাড়াই ও বয়সের তুলনায় খুব পরিণত। ওর জন্য এই বছরটা একটা বড় বছর হতে যাচ্ছে। অন্তত একটা গ্র্যান্ডস্লামে ওর নিজের মানটা প্রমাণ করা উচিত।

জার্মানির দিকে তাকানো যাক। অ্যাঞ্জেলিক কারবার এক নম্বর হওয়ার চাপটা নিতে পারলেন না। ২০১৮ সালে অবশ্য ভালোভাবে ফিরে এসেছেন। তার সমস্যাটা কী ছিলো?

সে তো সার্ভ থেকে প্রায় কোনো পয়েন্টই জিততে পারে না। ওর যে খেলোয়াড়ী স্টাইল, তাতে লম্বা র‌্যালিতে ওর প্রতিপক্ষকে ছিড়ে ফেলার কথা। সম্ভবত ওর ওপর চাপটা একটু বেশি হয়ে গিয়েছিলো। সেরেনা প্রতি খেলায় সার্ভিস থেকে অন্তত দুটো পয়েন্ট বের করে নেয়। বাকি মেয়েদের এই সুবিধা কম নিতে দেখি আমি।

ম্যাকেনরোর মতে সর্বকালের সেরা ফেদেরার; Image Source: Tennis World

সেই নাদাল আর ফেদেরারের লড়াই চলছে এখনও। আপনি একবার বলেছিলেন, আপনি এদের ফিরে আসাটা কল্পনা করেননি।

তারা দুজন আমার মতে টেনিসের সর্বকালের সেরা দুই খেলোয়াড় এবং অবিশ্বাস্য দুজন খেলোয়াড়। এটাও ঠিক যে, জোকোভিচ আর মারে ব্যর্থ হচ্ছে এবং বাকিরা ইনজুরিতে খুব ভুগছে।

নাদাল আর ফেদেরার আর কতদিন সর্বোচ্চ স্তরে খেলতে পারবে বলে মনে করেন?

সম্ভবত খুব বেশি দিন না। এরকমভাবে ফিরে আসাটা অনেক কষ্টের একটা ব্যাপার। আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এটা বলতে পারি। আমি ২৭ বছর বয়সে একটা বিরতি নিয়েছিলাম। কিন্তু রজারের মতো আর ফিরতে পারিনি। ফিরে আসাটা শারীরিক ও মানসিক- দুই ধরনেরই চ্যালেঞ্জ।

নাদাল আর ফেদেরার খেলা বন্ধ করে দিলে কী হবে?

জীবন চলতে থাকবে। কীভাবে টেনিস চলবে, তা নির্ভর করে কে বা কারা ওদের জায়গা নিচ্ছে তার ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রে টেনিস এত সমস্যায় আছে কেন?

দেখুন, সুইজারল্যান্ডের সেরা একজন অ্যাথলেট হলো ফেদেরার বা সার্বিয়ার সেরা অ্যাথলেটদের একজন জোকোভিচ। তারা টেনিস খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে, সেরা অ্যাথলেটরা ফুটবল (আমেরিকান) বা বাস্কেটবল খেলে। আপনার দেশের সেরা অ্যাথলেটরা টেনিস না খেললে সেরা ফল পাবেন না। আপনাদের সেরা ফল যখন অষ্টম হওয়া বা কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া, তখন খেলাটা জনপ্রিয়তাও হারাবে। স্কুলগুলোতে ছোট ছোট বাচ্চারা ফুটবল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। কারণ, টেনিস কোর্টের মতো একটা জায়গাতে ২২টা ছেলে ব্যস্ত থাকতে পারে। সেটা অনেক সহজ এবং আর্থিকভাবেও স্বচ্ছন্দের। এর একটা সমাধান হতে পারে, টেনিসকে খেলার সিলেবাসে ঢোকানো এবং বাচ্চাদের র‌্যাকেট, বল ও কোচিং দিয়ে সহায়তা করা।

লেভার কাপে অধিনায়কত্ব করছেন; Image Source: Tennis Magazin

আপনার দিনের সাথে আজকের টেনিসের প্রধান পার্থক্য কী বলে মনে হয়?

সব খেলা এখন প্রধানত ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে সেরা খেলোয়াড়দের জীবনযাপন একেবারেই বদলে গেছে। এই পেশাদার খেলোয়াড়দের জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ এখন পরিকল্পিত। তারা কী খাবে, ম্যাচের পর ঠিক কী করবে- এসব আগে থেকে ঠিক করে রাখা। আমরা এরকমভাবে সবকিছু ভাবতে পারতাম না। অর্থ সবকিছু অনেক বদলে দিয়েছে। সেটা ভালো হয়েছে কি না সেটা অনেক বড় একটা প্রশ্ন। আর খেলার কথা যদি বলি, খেলা এখন অনেক শারীরিক হয়ে উঠেছে। খেলোয়াড়রা এখন আরও শক্তিশালী। আগের দিকে আপনার কৌশল ভালো থাকলে আপনি জিততে পারতেন। এখন আপনাকে জিততে হলে অনেক শক্তিশালী হতে হবে।  

Related Articles