Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মারিও কেম্পেস: নরকতুল্য আর্জেন্টিনায় যিনি ফিরিয়ে এনেছিলেন স্বর্গের হাওয়া

একটি বিশ্বকাপের আসরে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার ও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেবার মতো কঠিনতম বিষয় আর হতে পারে না। তবুও এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ৫ মহান ফুটবল নায়ক। ১৯৩৮ বিশ্বকাপে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে একইসাথে দুটো পুরস্কার অর্জন করার কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন ব্রাজিলের লিওনিদাস, ১৯৬২ বিশ্বকাপে গারিঞ্চা, ১৯৮২ বিশ্বকাপে পাওলো রসি এবং ১৯৯০ সালে সালভাদর শিলাচি। ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ আসরে আরও একজন জিতেছিলেন এই দুটো পুরস্কার। যদিও শুধুমাত্র এই দুটো পুরস্কার নয়, সেবার প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতেছিলো তারই দৌলতে। মাথায় ঝাঁকড়া চুল, চোখে গোলক্ষুধার আভা, পাতলা ছিপছিপে গড়নের চে গুয়েভারার দেশে জন্ম নেওয়া সেই খেলোয়াড়ের নাম মারিও কেম্পেস

মারিও কেম্পেস , আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক; Image Source: Getty Images

১৯৫৪ সালের ২৫ জুলাই। আর্জেন্টিনার আকাশে নিয়মিত সূর্যোদয় সেদিনও হয়েছিলো। কিন্ত বেল ভিলের এক বস্তিতে কোনো এক পরিবারে নতুন সন্তানের আগমন তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিলো। পরিবারের সম্মতিতে মা তার নাম দিলেন মারিও আলবের্তো কেম্পেস ছিয়োডি। কেম্পেস যখন আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছেন, ততদিন পেলে, গারিঞ্চা, ভাভারা পরিণত হবার পথে হাঁটছেন। তারাও এসেছেন কেম্পেসের মতো অস্বচ্ছল পরিবার থেকে। কিন্ত তারা করেছেন বিশ্বজয়। কেম্পেস কি তখন তাদের সাফল্যকে অনুভব করতে পেরেছিলেন?

সেটা বড় প্রশ্ন নয়, তখন মাত্রই ফুটবলের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠছে তার। কেম্পেসের ফুটবলের হাতেখড়ি তার বাবার কাছ থেকেই। পেশাদার ফুটবলে প্রথমে ইনস্টিটিউটের যুবদলে প্রতিভার ঝলক দেখাতে শুরু করলেন। তার ফিনিশিং, প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর ক্ষমতা দিন দিন উন্নত হতে থাকলো। পছন্দ করতেন সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ড পজিশনটি, খেলতেনও সেই পজিশনে। কিন্ত তার স্বভাব আর আট-দশজন সেন্ট্রাল ফরোয়ার্ডের মতো ছিলো না। ডি-বক্সে আশেপাশে ঘোরাফেরা না করে ক্ষিপ্রতা, গতি ও দুর্দান্ত ড্রিবলের সাথে গোল করা অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছিলেন। এতসব নজরকাড়া পারফর্মেন্সের পর বড় ক্লাবের চোখ এড়িয়ে যাননি তিনি। ডাক পড়ে সেন্ট্রাল রোজারিওতে। এবং সেখান থেকেই খেলতে যান আর্জেন্টিনার হয়ে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ।

একই বিশ্বকাপে জিতেছিলেন গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট; Image Source: Getty Images

ততদিনে ববি চার্লটন, পেলে বা ইউসেবিও যুগের অবসর ঘটেছে। জার্মানিতে তখন বেকেনবাওয়ারের যুগ। হল্যান্ডের আধিপত্য ক্রুয়েফ আর টোটাল ফুটবলকে ঘিরে। আগের বিশ্বকাপ জেতার ব্রাজিলও ফেবারিট ৭৪ বিশ্বকাপে। আর আর্জেন্টিনা তখন অতি সাধারণ একটি দল, যারা পরাশক্তির তালিকাতেও পড়ে না, আবার নিম্নসারির দলও নয়। প্রথম রাউন্ড ভাগ্যের জোরে পার করলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনা আর পেরে ওঠেনি। হল্যান্ডের টোটাল ফুটবলের কাছে মুখ থুবড়ে পড়ে আলবিসেন্তেরা, হারে ব্রাজিলের কাছেও। ২০ বছর বয়সী কেম্পেস তখন অনেকটাই পরিণত। কিন্ত বিশ্বকাপের প্রতি ম্যাচে তিনি যেন নিজের ছায়ায় আটকে থাকলেন। কোনো ম্যাচে গোল তো করতেই পারলেন না, দেখাতে পারলেন না তার দক্ষতার ছিটেফোঁটাও। ক্রুয়েফ, গার্ড মুলার, বেকেনবাওয়ারদের দেখলেন খুব কাছ থেকে। অনুভূতিশূন্যভাবে বিদায় নিয়ে পাড়ি জমালেন স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায়। হয়ত ৪ বছর ধরে তিনি নিজেকে প্রস্তুত করে তুলেছিলেন পরবর্তী বিশ্বকাপের জন্য।

বিশ্বকাপ হতাশা শেষে ভ্যালেন্সিয়াতে গিয়ে কেম্পেসের পুরনো ফর্ম ফিরে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিলো। প্রাক-মৌসুমের ম্যাচগুলোতে বাজে ফিনিশিং, পেনাল্টি মিস ও নিম্নমানের ড্রিবলিংয়ের কারণে প্রথমে তিনি হয়েছিলো সমালোচিত। তবে তিনি ফিরেছিলেন স্বরূপে, তার খুনে স্বভাবে। ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে প্রথম সিজনে ৩৪ ম্যাচে তিনি করেছিলেন ২৪ গোল। লা লিগায় প্রথম সিজনে পিচিচি ট্রফি জেতার পর কেম্পেসের গোলক্ষুধা, আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখে তৎকালীন ভ্যালোন্সিয়া কোচ বলেছিলেন, “তাকে কেউ মারিও কেম্পেস নামে ডাকবে না, তাকে ডাকবে গোল নামে।

ভ্যালেন্সিয়াতে একের পর গোল করে যেতে লাগলেন কেম্পেস। রিয়াল মাদ্রিদ বা বার্সেলোনাকে পেছনে ফেলে ভ্যালেন্সিয়াকে একবার কোপা দেল রে জিতিয়েছিলেন তিনি। লা লিগার বাঘা বাঘা স্ট্রাইকারদের পেছনে ফেলে তিনি দুবার জিতেছেন পিচিচি ট্রফি। নিজেকে আরো প্রমাণ করতে করতে ততদিনে পেরিয়ে গেছে ৪টি বছর। চলে এসেছে আরো একটি বিশ্বকাপের বছর। মারিও কেম্পেসের বয়স মাত্র ২৪। নিজের সেরা ফর্মে থেকেই তিনি গেলেন ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে।

ভ্যালেন্সিয়ার মাঠে কেম্পেস; Image Source: Fourfourtwo

১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্বে ছিলেন সিজার লুইস মেনোত্তি। আর্জেন্টিনায় তখন বিশ্বকাপের দামামা বাজছে। ক্রুয়েফ আসলেন না বিশ্বকাপে, ইংল্যান্ড জায়গা করে নিতে পারেনি বিশ্বকাপের মূলপর্বে, জার্মানদের সাথে নেই বেকেনবাওয়ার। তাই পরিষ্কারভাবে আর্জেন্টিনা ঘরের মাঠে ফেভারিট দল। এরই মাঝে আর্জেন্টিনার মাতাল সময়ে মেনোত্তি শুরু করলেন দল গোছানো। সিদ্ধান্ত নিলেন আর্জেন্টিনার স্থানীয় খেলোয়াড়দের নিয়ে দল গোছাবেন।

রিভার প্লেটের দ্যানিয়েল প্যাসারেল্লাকে নিলেন, আরো নিলেন আলবার্তো তারানতিনি, লুইস গ্যালভান, দ্যানিয়েল বার্তোনি, অসভালদো আরদিলেসকে। আর ছিলেন গোলরক্ষক উবালদো ফিলোল। ১৮ বছর বয়সী দিয়েগো ম্যারাডোনা নামক বিস্ময় বালককে উপেক্ষা করে মেনত্তি হলেন সমলোচিত। কিন্ত ভ্যালেন্সিয়ার ‘এল ম্যাটাডোর’ খেতাব পাওয়া কেম্পেসকে উপেক্ষা করতে পারলেন না। কেম্পেস এবং ফিলোল বাদে ‘৭৪ বিশ্বকাপের কোনো খেলোয়াড় থাকলেন না মেনোত্তির আনকোরা বিশ্বকাপ দলে। আর্জেন্টিনাকে ঢেলে নতুন মোড়কে সাজালেন মেনোত্তি। কিন্ত বিশ্বকাপ শুরুর পর কেম্পেসের দলে কেম্পেস কোথায়!

আর্জেন্টিনার সেই ঐতিহাসিক দল; Image Source: Getty Images

একমাত্র দেশের বাইরের ক্লাবে খেলা ফুটবলারকে দলে রাখার যৌক্তিকতা বোঝাতে গিয়ে মেনোত্তি বলেছিলেন, “কেম্পেস শক্তিশালী। ওর স্কিল আছে, মাঠে খেলোয়াড়দের মাঝে জায়গা তৈরি করতে পারে, ভীষণ জোরে শটও নিতে পারে। ও এমন একজন খেলোয়াড় যে দুই দলের মধ্যে ব্যবধান গড়ে দেবার মতো ক্ষমতা রাখে। এবং প্রধান কারণ হলো কেম্পেস সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলতে পারে।

কিন্ত আর্জেন্টিনার মাটিতে সেই এল ম্যাটাডোর কোথায়? ফ্রান্স আর হাঙ্গেরির বিপক্ষের ম্যাচ কোনোমতে পার করলো আর্জেন্টিনা। কেম্পেসের গোল নেই, মাঠে যে তিনি উপস্থিত সবার কাছে সেটাই স্পষ্ট নয়। ইতালির কাছে হারের ম্যাচেও কেম্পেস নীরব। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন না হতে পেরে রানার্সআপ হয়ে আর্জেন্টিনা গেল পরের রাউন্ডে। ব্রাজিল, পেরু, পোল্যান্ড ও আর্জেন্টিনাকে নিয়ে সেই গ্রুপ। বাকি তিন দলের সামনে আর্জেন্টিনা নিতান্ত শিশু। সকল আশা-ভরসা নির্ভর করছে কেম্পেসের উপর। এ আর্জেন্টিনা কেম্পেসের, মেনোত্তি সকল শক্তি ছড়াচ্ছেন কেম্পেসকে কেন্দ্র করে, কিন্ত সেই এল ম্যাটাডোর কেন এত নিষ্প্রভ?

দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম ম্যাচ পোল্যান্ডের বিপক্ষে। প্রথমার্ধ শেষ। যথারীতি কেম্পেস কিছু করতে পারেননি আর্জেন্টিনার জন্য। এ ম্যাচের আগে মেনত্তি শেভ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন কেম্পেসকে। মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল ও শেভ করা শুভ্র মুখে দ্বিতীয়ার্ধে রচিত হলো কেম্পেসের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন। ড্যানিয়েল প্যাসারেলার বাড়ানো বলে মাথা ছুঁয়ে বল জালে জড়িয়ে আর্জেন্টিনাকে প্রথম লিড এনে দেন কেম্পেস। এর কিছুসময় পর আরেক কাহিনী করে বসেন। পোল্যান্ডের একটি আক্রমণের সময় গোলপোস্টের সামনে ছিলেন তিনি। নির্ঘাত গোল হওয়া শটকে তিনি ঠেকিয়ে দেন হাত দিয়ে। যদিও পেনাল্টিতে পোল্যান্ড গোল করতে পারেনি। পেনাল্টি শটটি দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক ফিলোল। আরদিলেসের অ্যাসিস্টে দ্বিতীয় গোলও করেন কেম্পেস। ফলাফল হলো আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে হারায় পোল্যান্ডকে।

কেম্পেসের সেই দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলা; Image Source: Getty Images

দ্বিতীয় ম্যাচে ব্রাজিলের সাথে ড্র করে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলও পোল্যান্ডের সাথে জিতে সমীকরণ কঠিন করে তোলে। পেরুর সাথে আর্জেন্টিনাকে জিততে হবে অন্তত ৪-০ গোলের ব্যবধানে। পেরু তখন ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তির নাম। তাদের জালে ৪ গোল দেওয়া আর্জেন্টিনার পক্ষে কতটা শক্ত তা জানতেন মেনোত্তি। সকল আর্জেন্টিনা দর্শকের পাশাপাশি তিনিও প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। শুধুমাত্র আশা হারাননি কেম্পেস। সেই আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করে আর্জেন্টিনা পেরুকে হারায় ৬-০ গোলের ব্যবধানে! আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তোলা ম্যাচে কেম্পেস করেন জোড়া গোল ও জোড়া অ্যাসিস্ট।

ড্রিবল করার দুর্দান্ত দক্ষতা ছিলো কেম্পেসের; Image Source : Getty Images

১৯৭৮ এর ২৫ জুন। বুয়েন্স আয়ার্সে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ হল্যান্ড। ১৯৭৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে রানার্সআপ হয়েছিলো হল্যান্ড। সেবার ক্রুয়েফের হাত ধরে জন্ম নিয়েছিলো টোটাল ফুটবল। এবার ক্রুয়েফ নেই। কিন্ত আছে সেই টোটাল ফুটবল, যা দিয়ে সকল প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করে ফাইনালে এসেছে দলটি। আর্জেন্টিনা থেকে ফাইনালে হল্যান্ড শতগুণ এগিয়ে তার প্রমাণ হিসেবে প্রথম থেকেই আর্জেন্টিনা উপকূলে হামলে পড়তে লাগলো ডাচদের আক্রমণ। কিন্ত এক যে ছিলেন ফিলোল! তার কল্যাণেই প্রত্যেকটি আক্রমণ বৃথা হয়ে যেতে লাগলো ডাচদের। ম্যাচের ৩৫ মিনিটে শুধু ডাচদের টানা আক্রমণ লক্ষ্য করা গেছে। কিন্ত কোথায় হারালো আর্জেন্টিনার শৈল্পিক ফুটবল, কোথায় সেই খুনী গোলদাতা কেম্পেস? এসব ভাবতে ভাবতে ডাচ শিবিরে কেম্পেস ঝড় আছড়ে পড়লো ৩৮ মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে দুজন ডিফেন্ডারের কড়া ট্যাকল উপেক্ষা করে টর্নেডের বেগে দৌড়ালেন, শেষ মুহূর্তে ডাচ গোলরক্ষকে নাটমেগ করে গোল করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি কেম্পেস।

হল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে গোলের পর; Image Source: Getty Image

দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকে আবারও ডাচদের আক্রমণ। একসময় ফিলোলও হলে পরাজিত। সমগ্র বুয়েন্স আয়ার্সকে নিস্তব্ধ করে হল্যান্ডের হয়ে নানিঙ্গা ৮২ মিনিটে গোল করলেন। ম্যাচ গড়ালো অতিরিক্ত সময়ে। কিন্ত আর্জেন্টিনার যে একজন মারিও কেম্পেস ছিলেন। তার আত্মবিশ্বাসের স্তর যে অসীম। তাকে থামায় কার সাধ্য? ১০৫ মিনিটে আবারও কেম্পেস জাগিয়ে তুললেন বুয়েন্স আয়ার্সকে। তার সেই স্বভাবত সলো রান, তার সেই বুদ্ধিদীপ্ত গোল করার সক্ষমতার প্রমাণ মিললো বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে।

কেম্পেসের গোলের পর আর্জেন্টিনা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিলো। ১১৫ মিনিটে বার্তোনির আরেক গোল যেন তারই প্রমাণ। কেম্পেসের জোড়া গোল আর বার্তোনির একমাত্র গোলে বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনা হল্যান্ডকে হারায় ৩-১ গোলে। গ্রুপপর্বে কোনো গোল না করেও ১৯৭৮ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬ গোল করেছিলেন কেম্পেস। তার জোড়া গোলগুলো ছিলো পেরু, পোল্যান্ড এবং হল্যান্ডের বিপক্ষে। আর্জেন্টিনার প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি কেম্পেস জিতেছিলেন সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার।

প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপা তুলে ধরে আছেন প্যাসারেল্লা; Image Source: Getty Images

১৯৮২ বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনা দলে ছিলেন কেম্পেস। তবে সেই আর্জেন্টিনা মূলত তার ছিলো না। বিরাশির আর্জেন্টিনা গড়ে উঠেছিলো ম্যারাডোনা নামক এক বিস্ময়কর ফুটবলারকে কেন্দ্র করে। তবে আর্জেন্টিনা সেবার তেমন বিশেষ কিছু করে দেখাতে পারেনি বিশ্বকাপে। কিন্ত তার পরের বিশ্বকাপ শিরোপা আবারো ঘরে তুলেছিলো আলবিসেলেস্তেরা। সেবারের কেম্পেস বনে গিয়েছিলেন ‘৭৮ বিশ্বকাপে উপেক্ষিত বালক ম্যারাডোনা। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, আর্জেন্টাইনরা মারাডোনা ও ১৯৮৬ বিশ্বকাপকে বেশি মনে-প্রাণে ধারণ করে। তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জয় এবং মারিও কেম্পেসের গল্পটা তাদের কাছে অনেকটাই মূল্যহীন।

কারণ রাজনৈতিক সহিংসতায় কেম্পেসের বিশ্বকাপ বিতর্কিত। সামরিক অভুথ্যান ঘটিয়ে ভিদেলার তখন ক্ষমতায়। আর্জেন্টিনা তখন স্মরণকালের সবথেকে খারাপ সময় পার করছে। রাজনৈতিক সহিংসতা আভা ছড়িয়ে গিয়েছিলো বিশ্বকাপেও। বিশেষ করে পেরুর জালে ৬ গোল দেওয়া ম্যাচ নিয়ে অনেক প্রশ্নের তীর ছুঁটে এসেছিলো। বিশ্বকাপ জয় ছাপিয়ে হয়তো আর্জেন্টাইনরা জানে বিশ্বকাপের পেছনের নিন্দিত স্মৃতি। তাই ম্যারাডোনার এনে দেওয়া বিশ্বকাপই তাদের কাছে বেশি প্রিয়। তবে ভয়াল একটি সময়ে কেম্পেস রূপকথা সন্দেহাতীত প্রমাণিত। যত নিষিদ্ধ বা অপ্রিয় গল্প থাকুক; কেম্পেস গোল করেছিলেন, ফাইনালে হল্যান্ডের সাথে যুদ্ধেও লড়েছিলেন আপন শক্তিতে। মাতাল একটি সময়ে আর্জেন্টিনাকে প্রথম বিশ্বকাপ এনে দিয়ে নরক বনে যাওয়া আর্জেন্টিনাকে স্বর্গে পরিণত তো এই কেম্পেসই করেছিলেন।

Featured image: FIFA.com

Related Articles