Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেপা আরিজাবালাগা: পাখির পালক থেকে বিশ্বসেরা

বাবার সাথে ছোটবেলায় পাখি পালতেন।

পাখি ট্রেনিং করিয়ে তাকে দিয়ে সুন্দর গান করাতেন। বিশেষ করে গোল্ডফিঞ্চ নিয়ে ছিলো বাবা-ছেলের কারবার। ২০০৮ ও ২০১০ সালে আঞ্চলিক এক পাখি বিষয়ক প্রতিযোগিতায় পুরষ্কারও পেয়েছেন।

পাখি পালার এই অভ্যেসটা মনে হয় রয়েই গেছে। অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের গোলপোস্টের নিচে পাখির মতো উড়ে উড়ে বেড়াতেন তিনি। দূর থেকে যাওয়া বলটা লুফে নিতে দীর্ঘ দেহটা শূন্যে উড়িয়ে দিতে পারেন। এই দেখে সতীর্থরা তার নাম দিয়েছে-এলজিলগুয়েরো; দ্য গোল্ডফিঞ্চ।

অবশেষে স্পেন থেকে সেই গোল্ডফিঞ্চ পাখিটা উড়ে চলে এলো চেলসিতে। হঠাৎ করেই বিশ্ব দেখলো এক তরুণ গোলরক্ষকের উত্থান। চোখের পলকে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে দামী গোলরক্ষক হয়ে গেলেন সেই পাখির পালক কেপা আরিজাবালাগা।

ছোট্টবেলার কেপা (মাঝে); Image Source: Instragam

চেলসি তাদের বিশ্বস্ত গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে ছেড়ে দিলো রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। ফলে হঠাৎ করেই একটা শূন্যতা তৈরি হলো স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে। এই সময় তাদের একজন নতুন এক নম্বর দরকার ছিলো। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের দলবদল শেষ হতেও আর বেশি সময় ছিলো না। বাজারে তাই লেগে গেলো আগুন। শেষ অবধি স্পেনের অ্যাথলেটিক বিলবাও থেকে প্রায় ৭২ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে কিনে আনলো তারা কেপাকে।

একেবারেই আলোচনার বাইরে থাকা কেপা রাতারাতি আলোচনার ঝড় তুললেন। মাত্র দিন বিশেক আগে ইতিহাসের সবচেয়ে দামী গোলরক্ষক হয়েছিলেন এলিসন বেকার। তার রেকর্ড ভেঙে গেলো কেপার দলবদলে। এখন বিশ্বজুড়ে তাই আগ্রহ কেপা আরিজাবালাগাকে নিয়ে।

কে এই কেপা আরিজাবালাগা?

মাত্র ছয় বছর বয়সে ফুটবল শুরু করেছিলেন কেপা। স্পেনের বাস্ক কাউন্টির ওনডারোয়া নামের ছোট্ট শহরে জন্ম তার। সেখানেই ফুটবল শুরু করেছিলেন। ৯ বছর বয়স হতে না হতে স্কাউটদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেললেন। তাকে নিজেদের কাঠামোতে ভিড়িয়ে ফেললো অ্যাথলেটিক।

এ দলটিতেই বেড়ে ওঠা। অ্যাথলেটিকের যুব দলে খেলেছেন। অ্যাথলেটিকের দ্বিতীয়, তৃতীয় দলের হয়ে স্পেনের তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগের দলে খেলে উঠে এসেছেন লা লিগায়। লা লিগায় আসার পর তাকে পনফেরাডিনা ও ভ্যালাদোলিদে ধারে দেওয়া হয়েছিলো। অবশেষে ২০১৬ সাল থেকে নিয়মিত হয়েছেন অ্যাথলেটিকের মূল দলে।

স্পেনের বয়সভিত্তিক দলে ছিলেন প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক। ২০১২ সালে স্পেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাথে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। পরের বছর ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি ইনজুরির কারণে। পরে আবার বয়সভিত্তিক দলে নিয়মিত হয়েছেন। ২০১৭ সালে প্রথম স্পেন মূল দলে ডাক পান বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এসে। ইনজুরিতে থাকা পেপে রেইনার বদলে তৃতীয় গোলরক্ষক হিসেবে দলে এসেছিলেন। স্পেনের প্রথম পছন্দ ডেভিড ডে গিয়াকে পরাস্ত করতে পারেননি এখনও। তবে এরই মধ্যে ডে গিয়াকে বসিয়ে কখনো কখনো কেপাকে পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। কোস্টারিকার বিপক্ষে একটি ম্যাচে পুরো নব্বই মিনিটই খেলেছেন।

বিশ্বকাপে ছিলেন ২৩ সদস্যের দলে।

চেলসিতে পাচ্ছেন স্পেনের আরও অনেককে; Image Source: Sky Sports

রিয়াল মাদ্রিদ হতাশা

থিবো কোর্তোয়া নন, এখন রিয়াল মাদ্রিদে নাভাসের পাশে থাকতে পারতেন কেপাই। গত জানুয়ারিতে সেরকমই চলছিলো সবকিছু।

রিয়াল মাদ্রিদ ১৮ মিলিয়ন পাউন্ডে কেপাকে দলে ভেড়ানোর চুক্তিও করে ফেলেছিলো। ইউরোপ-সেরা দলটিতে কেপার মেডিকেল চেক আপও সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু শীতকালীন এই উইন্ডোতে হতে চলা এই দলবদল প্রায় সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ থমকে যায় কোচ জিনেদিন জিদানের হস্তক্ষেপে। তিনি বলেন,

‘কেপা খুবই প্রতিভাবান, সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি মৌসুমের মাঝপথে দলে একজন গোলরক্ষক চাই না।’

মার্কা পরে বলেছিলো, এই ভুলের জন্য আজীবন আফসোস করবেন জিদান। কিন্তু ফরাসি কোচ জিদানের অভিমত ছিলো, মৌসুমের মাঝপথে দলে একজন বাড়তি গোলরক্ষক নিলে তার দলের ছন্দ নষ্ট হতে পারে।

কেপার এত দাম কেন?

চেলসি এজন্য রিয়াল মাদ্রিদকে দোষারোপ করতে পারে। রিয়াল যখন কেপাকে ফিরিয়ে দিলো, তখন অ্যাথলেটিক বিলবাও নতুন করে কেপার সাথে চুক্তি করলো। আর সেখানে ‘রিলিজ ক্লজ’ যোগ করা হলো অনেক বড় অংকের। ফলে তার দাম ১৮ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৭১ মিলিয়নে গিয়ে ঠেকলো। আর এই পরিস্থিতিতে চেলসির নতুন করে কোনো দরদাম করার মতো অবস্থা ছিলো না।

এখানে অ্যাথলেটিকের একটা রীতির কথা উল্লেখ করা জরুরি। এই ক্লাবটি বাস্ক কাউন্টি বা এর আশেপাশের জন্মসূত্রে ফুটবলার ছাড়া কাউকে কখনো ক্লাবে ভেড়ায় না। তারা মূলত নিজেদের তৈরি করা ফুটবলারই খেলায় ব্যবহার করে। ফলে তাদের কোনো খেলোয়াড় দল ছেড়ে চলে গেলে তার বদলী পেতে তাদেরকে নিজেদের অ্যাকডেমিতেই হাত দিতে হয়। আর এই অ্যাকাডেমির বিপুল খরচ আসে মূলত কালেভদ্রে বিক্রি করা এসব তারকা খেলোয়াড় থেকে।

এজন্যই তারা রিয়াল থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর অনেক দাম বাড়িয়ে রেখেছিলো কেপার।

চেলসিতে আসার পর; Image Source: Sky Sports

কেপা কেমন গোলরক্ষক?

তাকে অনেকেই কিংবদন্তী ইকার ক্যাসিয়াসের সাথে তুলনা করেন। তবে রিয়াল মাদ্রিদের লিজেন্ড ক্যাসিয়াসের চেয়ে কেপা সামান্য একটু লম্বা। ২৩ বছর বয়সী কেপার এখন উচ্চতা ৬ ফুট ২ ইঞ্চি। কর্তোয়ার চেয়ে ৪ ইঞ্চি ছোট কেপা।

কেপা মূলত তার ভয়ানক রিফ্লেক্স ক্ষমতার জন্য আলোচিত। অ্যাথলেটিক মূল দলে প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আগে অনেক পরিশ্রম করে এসেছেন। বয়স কম হলেও অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক।

তার অ্যাথলেটিক ক্লাবে উত্থান মূলত বর্তমান বার্সেলোনা কোচ এরনেস্তো ভালভার্দের সময়ে। এই কোচের অত্যন্ত পছন্দের গোলরক্ষক ছিলেন কেপা। আধুনিক যুগের ‘শট-স্টপার কিপার’ বলতে যা বোঝায়, কেপা আসলে তা-ই। পায়ের কাজে খুবই ভালো। তাকে স্পেনের ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতের গোলরক্ষক বলে অভিহিত করে থাকেন। রাশিয়া বিশ্বকাপে ডেভিড ডে গিয়া যখন সংগ্রাম করছিলেন, স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যমগুলো তখন কেপাকে মাঠে নামানোর জন্য চাপ তৈরি করছিলো।

চেলসির জন্য কি ভালো হবেন কেপা?

এটা সত্যি যে, কয়েক মাস আগে চেষ্টা করলে এই কেপাকেই ১৮ মিলিয়ন পাউন্ডে পেতে পারতো চেলসি। কিন্তু সে নিয়ে তাদের আর আফসোস করার সুযোগ নেই। বাজার যা, সেটাই মেনে নিতে হবে।

তবে এটাও সত্যি যে, সবচেয়ে দামী গোলরক্ষক যে সেরা গোলরক্ষক হবে, এ নিশ্চয়তা দেওয়া কঠিন। বিশেষ করে সারাজীবন এক ক্লাবে কাটিয়ে আসার পর ইউরোপের আরেক প্রান্তে কঠোর লড়াইয়ের প্রিমিয়ার লিগে কেপা কতটা সফল হবেন, সে নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন।

এখানে অনেকে প্রশ্ন করছেন, চেলসি আরেকটু টাকা বাড়িয়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের দুর্দান্ত গোলরক্ষক জান ওবলাককে কেন কিনলো না? কিন্তু চেলসির এখানে বিবেচ্য ছিলো যে, স্লোভেনিয়ার এই গোলরক্ষক পায়ের কাজে খুব ভালো নন। বিশেষ করে ডিয়েগো সিমিওনের অধীনে ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলায় অভ্যস্থ ওবলাককে চাচ্ছিলো না তারা।

বিপরীতে কেপার খেলার ধরন চেলসির নতুন কোচের খেলার ধরনের সাথে অনেকটাই মানিয়ে যায় বলে ম্যানেজমেন্ট মনে করেছে। মাউরিজিও সারির আক্রমণাত্মক ঘরানার সাথে এই গোলরক্ষক খুব মানানসই হবেন বলে তারা মনে করেন। সারি মনে করেন, কেপার সামনে সত্যিকারের বিশ্বসেরা হয়ে ওঠার মতো সময় অপেক্ষা করছে।

মাউরিজিও সারির পছন্দের গোলরক্ষক কেপা; Image Source: Sky Sports

কেপা নিজে কী বলছেন?

কেপা বলছেন, এই যে দামে বিক্রি হয়েছেন, সেটা নয়, নিজের কীর্তি দিয়ে তিনি চেলসিতে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চান,

“আমি এই ক্লাবে স্মরণীয় হয়ে থাকতে চাই। আমি যখন বহু বছর পর এই ক্লাব ছেড়ে যাবো, তখন যেন লোকে মনে করে যে, আমি ক্লাবকে অনেক শিরোপা জেতাতে সহায়তা করতে পেরেছি এবং ইতিহাসে নাম লেখাতে পেরেছি।”

Related Articles