Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ল্যান্স গিবস: দ্য মাস্টার স্পিনার অব ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ড

“There was never a more whole-hearted cricketer for the West Indies, nor an off-spinner in anything like his class. He was by no means a mechanical spinner, instead always thinking about the game, working an opponent out, assessing his strengths and weaknesses and laying the trap for him. A fierce competitor, he would be given a total effort, no matter if the pitch was flat and docile, no matter if the total was 300 for two and the sun scorching, no matter if his finger had been rubbed raw”. 

কিংবদন্তি অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড এমনই এক উক্তি দিয়েছিলেন তার সতীর্থকে নিয়ে। ‘৬০ এবং ‘৭০ এর দশকে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অন্যতম সেই সদস্য ডানহাতি অফ স্পিনার ল্যান্স গিবস।

‘৬০ এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে তখন পেসারদের জয়জয়কার। ক্যারিবীয়রা যখন পেস বোলারদের গোলাবারুদে ঠাসা, ঠিক তখনই এই অফ স্পিনার দলে জায়গাটা পাকাপোক্ত করে রেখেছিলেন, মাঠেও নামতেন নিয়মিতই। একদিক থেকে পেসারদের একের পর এক গোলা, আর অন্য প্রান্ত থেকে তার স্পিন ঘূর্ণি সত্যিই বড্ড বেশিই নাজেহাল করে দিয়েছিল বিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের। কোথায় সেই ভয়াবহ ফাস্ট বোলিংয়ের পর স্পিন এলে ব্যাটসম্যানরা একটু স্বস্তি খুঁজবেন, কিন্তু স্পিনার যিনি বল করতে আসতেন, তিনি উল্টো নাকানিচুবানি খাইয়ে ছাড়তেন। হাতটা যে দারুণ ঘুরাতে পারতেন গিবস!

দীর্ঘদেহী অফ স্পিনার গিবস। Source: ESPNCricinfo
দীর্ঘদেহী অফ স্পিনার গিবস; Source: PA Photos/Getty Images

৫৩.৩-৩৭-৩৮-৮! 

না, কোনো গাড়ির নাম্বার কিংবা ফোনের ডিজিট নয়৷ এটি গিবসের বোলিং ফিগার বার্বাডোসের ব্রিজটাউনে ভারতের বিপক্ষে। ফিগার দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বোলার কতটুকু মিতব্যয়ী ছিলেন৷ ৫৩ ওভার হাত ঘুরিয়েছেন, যার ৩৭টিতেই কোনো রান খরচ করেননি। কিন্তু তার থেকেও সাংঘাতিক ছিল উইকেটসংখ্যা, সাজঘরে যে ফিরিয়েছেন গুনে গুনে ৮ ব্যাটসম্যানকে!

৫৩ ওভারের প্রথম ৩৮ ওভার কোনো উইকেটই শিকার করতে পারেননি৷ একের পর এক মেইডেন ওভারই করে গেছেন, কিন্তু উইকেটের দেখা মিলছিল না। শেষে ১৫ ওভারের এক স্পেলে একাই গুঁড়িয়ে দেন ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। ১৫ ওভারে মাত্র ৬ রানের বিনিময়ে নেন বাকি ৮ উইকেটের সব ক’টিই!

ভারতের মাঠে তাদেরই বিরুদ্ধে বিদেশি এক অফ স্পিনারের এমন কীর্তি সত্যিই তাদেরকে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিল। ক্যারিয়ারে এটিই ছিল তার সেরা বোলিং ফিগার। দিনটি ছিল ২৭ মার্চ ১৯৬২ সাল। এছাড়া ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগারও ভারতেরই বিপক্ষে ২৫ এবং ২৬ জানুয়ারী ১৯৭৫ সালে, গাভাস্কারের শহর মুম্বাইতে। গাভাস্কারকে দিয়ে শুরু করে ‘নবাব’ পতৌদি পর্যন্ত সেদিন ৫৯ ওভার বল করে ৯৮ রানে শিকার করেছিলেন ৭ উইকেট, সাথে মেইডেন নিয়েছিলেন ২০ ওভার।

মেলবোর্নে বক্সিংডে টেস্ট চলাকালীন বোলিং; সাল ১৯৭৫। Source: Cricket Monthly
মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে বোলিং করছেন গিবস; সাল ১৯৭৫; Source: Patrick Eagar/Popperfoto via Getty Images

অ্যাডিলেড টেস্ট, ১৯৬১  

জানুয়ারী, ১৯৬১ সালের কথা৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল তখন অস্ট্রেলিয়া সফরে। সে সিরিজের সিডনি টেস্টে ৪ বলে ৩ উইকেট শিকার করলেন গিবস৷ ভাগ্যবিধাতা ভাগ্যে ‘হ্যাটট্রিক’ নামক শব্দটা রাখলেন না, এই যা।

টেস্ট শুরু হলো অ্যাডিলেড ওভালে৷ অজিদের প্রথম ইনিংসেই এই স্পিন দৈত্যের থাবা। টানা ৩ বলে সাজঘরে ফেরালেন ম্যাকেই, গ্রাউট এবং মিসনকে। সিডনির অপূর্ণতা মেটালেন এখানে এসে, করলেন হ্যাটট্রিক। ইতিহাসের ৯ম বোলার হিসেবে ঢুকে গেলেন হ্যাটট্রিক শিকারিদের ছোট্ট এবং কুলীন ক্লাবে।

সোবার্স এবং গিবস

একজন সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার, আর অন্যজন ইতিহাসের অন্যতম সেরা অফ স্পিনার। দু’জনের বোলিং জুটি নিয়ে বলবো, এই ভেবেছেন? কিন্তু না! দুজনেই ‘৬০ এর দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার হলেও তাদের রসায়নটা ঠিক অন্য জায়গায়। সেটা ফিল্ডিংয়ে।

তাদের ফিল্ডিং রসায়নটা হচ্ছে, ল্যান্স গিবসের বলে সর্বাধিক ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্স। গিবসের বলে সোবার্স ক্যাচ লুফে নিয়েছেন ৩৯টি, যা গিবসের মোট উইকেটের ১৩ শতাংশ। আর মোট ক্যাচের মাধ্যমে পাওয়া উইকেটের ২৩.৯২ শতাংশ। সোবার্স তার টেস্ট ক্যারিয়ারে ক্যাচ লুফেছেন মোট ১০৯টি, আর ৩৯টিই এসেছিল গিবসের বলে। অর্থাৎ, তার ক্যারিয়ারের প্রায় ৩৬ শতাংশ ক্যাচই গিবসের বলে। এই জুটির ৩৯টি ক্যাচ তখনকার সময়ে রেকর্ড পরিমান ক্যাচ ছিল কোনো বোলার-ফিল্ডার কম্বিনেশনে৷ পরবর্তীতে এই রেকর্ড শেন ওয়ার্ন-মার্ক টেলর জুটি ভেঙে দেন।

১৯৬৯ সালের ইংল্যান্ড সফরে মাঠে নামছেন গিবস এবং সোবার্স। Source: Cricket Monthly
১৯৬৯ সালের ইংল্যান্ড সফরে মাঠে নামছেন গিবস এবং সোবার্স; Source: PA Images via Getty Images

১৩১৩

‘আনলাকি থার্টিনের ১৩ অপয়া হলেও গিবসের জন্য ১৩১৩ সংখ্যাটা পয়মন্তই বটে। এটি ছিল ল্যান্স গিবসের নেওয়া মেইডেন ওভারের সংখ্যা, টেস্ট ক্রিকেটে যা তখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ছিল। বর্তমানে এই রেকর্ডের মালিক মুত্তিয়া মুরালিধরন। ৭৯ টেস্টে ৪২০৭.৪ ওভার বল করে মেইডেন নিয়েছেন ১৩১৩টি। যার সর্বোচ্চ ৪৯৬টি ইংলিশদের বিপক্ষে, অজিদের বিপক্ষে ৩৬১, ভারতের বিপক্ষে ২৮৪, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০৭, এবং কিউইদের বিপক্ষে ৬৫টি।

৩০৯

টেস্ট ক্যারিয়ারে সবচাইতে বেশি ঘায়েল করেছেন অজি ব্যাটসম্যানদের। ২৪ ম্যাচে ১০৩ বার তাদের সাজঘরের পথ ধরিয়েছেন তিনি। এছাড়া ইংলিশদের বিপক্ষেও রয়েছে উইকেটের সেঞ্চুরি। তাদের বিরুদ্ধে ২৬ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ঠিক ১০০। এছাড়া ভারতের বিপক্ষে ১৫ ম্যাচে ৬৩টি, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯ ম্যাচে ৩২, এবং কিউইদের বিপক্ষে ৫ ম্যাচে ১১টি উইকেট শিকার করেন এই স্পিন জাদুকর। তার মোট উইকেটসংখ্যা ৩০৯।

টেস্টে স্পিনারদের জন্য ইনিংস বলা হয় ৩য় এবং ৪র্থ ইনিংসকে। আর সেখানেই সফল তিনি। টেস্ট ক্রিকেটের ১ম ইনিংসে যেখানে তার উইকেটসংখ্যা ৬১টি, সেখানে ২য় ইনিংসে ৯৯, ৩য় ইনিংসে ১০০; যা তার বোলিং করা যেকোনো ইনিংসে সর্বোচ্চ। আর ৪র্থ ইনিংসে পেয়েছেন ৪৯ উইকেট, নেহায়েত ফেলনা নয় পরিসংখ্যানটা।

পাশাপাশি হানিফ মোহাম্মদ এবং গিবস৷ ১৯৬৫ সালে ইংল্যান্ড বনাম অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশের খেলায়৷ Source: Cricket Monthly
পাশাপাশি হানিফ মোহাম্মদ এবং ল্যান্স গিবস৷ ১৯৬৫ সালে ইংল্যান্ড বনাম অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশের খেলায়; Source: Don Morley – PA Images via Getty Images

গিবসের সাথে বোধহয় ব্যাটসম্যানদের ক্যাচ তুলে দেওয়ার কোনো চুক্তি ছিল৷ যদিও একটু মজার ছলেই বলেছি কথাটা, কিন্তু ক্যারিয়ারের ৩০৯ উইকেটের ১৬৩টিই এসেছে ক্যাচের মাধ্যমে। তার মোট উইকেটের শতকরা ৫২.৮ ভাগ! বোল্ড করেছেন ৮৭টি, অর্থাৎ ২৮.২ শতাংশ। তার বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ব্যাটসম্যান ক্যাচ দিয়েছে ২৯টি, যা মোট উইকেটের ৯.৪ শতাংশ। ব্যাটসম্যানকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফিরিয়েছেন ২১ বার, আর উইকেটরক্ষক দ্বারা স্ট্যাম্পড করিয়েছেন ৯ বার৷

মিতব্যয়িতা

বাস্তব জীবনে মানুষ গিবস আসলে কেমন, সেটা এই লেখকের জানা নেই। মিতব্যয়ী নাকি খরুচে, সেটা তো জানা অসম্ভবের কাছাকাছি। কিন্তু এটা জানা কথা যে, বোলার গিবস ছিলেন ভয়াবহ কৃপণ। ৭৯ টেস্টে ৩০৯ উইকেট শিকারের জন্য বল করেছেন ৪,২০৭.৪ ওভার, অর্থাৎ ২৭,১১৫টি ডেলিভারি। ওভারপিছু দিয়েছেন মাত্র ১.৯৮ রান করে। এই ২৭১১৫ বলে রান দিয়েছেন মাত্র ৮,৯৮৯। এভারেজও বেশ ভালো, ২৯.০৯। ওয়ানডে ক্রিকেটে খেলেছেন মাত্র ৩টি ম্যাচ। সেখানেও বেশ মিতব্যয়ী তিনি। ৩ ইনিংসে ১৫৬ বল বা ২৬ ওভার করে রান দিয়েছেন মাত্র ৫৯, যেখানে ওভারপিছু রান মাত্র ২.২৬।

'Gray-Nicolls' এর কারখানায় প্রস্তুতকৃত বল পরখ করছেন। source: Getty Image
‘Gray-Nicolls’ এর কারখানায় প্রস্তুতকৃত বল পরখ করছেন গিবস; source: Central Press/Getty Images

কিছু রেকর্ড রয়েছে, যেখানে অনন্য ল্যান্স গিবস। টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট শিকারী ২য় বোলার গিবস। ১ম স্পিনার হিসেবেও ৩০০ উইকেট শিকারী বোলার তিনি। জেষ্ঠ্য বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেটের কুলীন ক্লাবে ঢুকার রেকর্ড এখনো তার দখলে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার উইকেট সংখ্যা ১,০২৪৷ ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে শিকার করেছিলেন রেকর্ড ১৮৪ টেস্ট উইকেট। খেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে৷ জিতেছেন ১৯৭৫তে অনুষ্ঠিত হওয়া ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপও৷

এবং ‘ব্যাটসম্যান’ গিবস

তার ছয় বছরের পুত্র রিচার্ড এবং চার বছরের কন্যা একবার তাদের বাবার চেয়ে আরও ভাল ব্যাটসম্যান হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বাবার ব্যাটিংয়ের করুণ দশা দেখেই পুত্র এবং কন্যার মজার ছলে এই মন্তব্য।

ব্যাটিংটা গিবস সেভাবে আয়ত্ত করেননি। তাই তো কখনো ফিফটি বা সেঞ্চুরির দেখাও মেলেনি ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেট কিংবা লিস্ট-এ ক্রিকেটে। টেস্টে ১০৯ ইনিংস ব্যাট হাতে করেছেন ৪৮৮ রান। নেহায়েত ৩৯ ইনিংস অপরাজিত ছিলেন, তবুও তার গড় মাত্র ৬.৯৭। ওয়ানডেতে তো এক ইনিংস ব্যাট করে ০* রানে অপরাজিত। এই ব্যাটিং নিয়ে পুত্রের হাসির পাত্র হয়েছিলেন তিনি। যদিও তার কাজ ব্যাট হাতে ছিল না। নিজের জায়গায় তিনি সেরাদের একজন হয়েছেন।

১৯৭৫ এর বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। Source: windiescricket.com
১৯৭৫ এর বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল; Source: Ken Kelly/Popperfoto via Getty Images/Getty Images

সম্মাননা হিসেবে আইসিসির ‘হল অফ ফেম’-এ জায়গা করে নিয়েছেন। এর চেয়ে বড় সম্মাননা আর কী-ই বা হতে পারে একজন ক্রিকেটারের জন্য!

এছাড়া ম্যানেজার ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১৯৯১ সালের ইংল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে৷ ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পন্সর হিসেবে ‘Digicel’ নামটা ক্রিকেটের দর্শকদের কাছে বেশ পরিচিত। গিবস সেই Digicel-এর ছিলেন ব্র‍্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, যা ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের সেরা মোবাইল সার্ভিস৷ ব্যক্তিগত জীবনে ক্লাইভ লয়েডের ‘জ্ঞাতি ভাই’ গিবস এখন আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন স্ত্রী জয়, দুই সন্তান রিচার্ড এবং ক্যালিয়্যান কার্টরাইটকে নিয়ে।

১৯৩৪ সালে গায়ানার জর্জটাউনে জন্ম নেওয়া এই স্পিনার ক্রিকেট মাঠে অর্ধশতক কিংবা শতক না হাঁকাতে পারলেও বয়সের ক্রিজে আছেন নার্ভাস নাইনটিজের  দ্বারপ্রান্তে। জীবনের ক্রিজে অপরাজিত আছেন ৮৬তে। বাইশ গজের ক্রিজে নিদেনপক্ষে হাফ সেঞ্চুরিটাও পূর্ণ করতে পারেননি বটে, তবে জীবনের ক্রিজে সেঞ্চুরিটা অনায়াসে পেরিয়ে যান, সেটাই রইলো প্রার্থনা৷

This article is in Bangla language. It is about Lance Gibbs, who is a Caribbean cricketer, who plays internationally for West Indies. Gibbs was part of the West Indies squad that won the 1975 Cricket World Cup.

Featured Image Credit:  R. McPhedran/Daily Express/Getty Images

Related Articles