Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মহামারি ও আর্থিক দুরবস্থার মাঝে ইউরোপের ক্লাবগুলোর দলবদল

করোনাভাইরাসের আক্রমণের ফলে ইউরোপের প্রত্যেক লিগের ধরন ও ভাগ্য পাল্টে গেছে। যে মৌসুম শেষ হয়ে প্রাক-মৌসুম চলার কথা, সে মৌসুম শেষ হলো মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে। আর নতুন ঘরানায় তৈরি করা ইউরোপা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ তো এখনও চলছে। এর মাঝে খুলে গেছে দলবদলের মৌসুম। করোনাভাইরাসের কারণে হয়তো দলবদলের মৌসুম পূর্বের ন্যায় উত্তাপ ছড়াবে না, কিন্তু থেমেও থাকবে না। নতুন পৃথিবীর সাথে ফুটবলেও নতুন নিয়মে অভ্যস্ত হতে শুরু করবে। ফুটবল বোদ্ধারা তাই বলছেন, এবারের দলবদলগুলো নগদ অর্থের বদলে খেলোয়াড় অদল-বদলের দিকে বেশি মনোযোগ দেবে। 

কিন্তু নতুন মৌসুম তো শুরু হবে। প্রত্যেক ক্লাবের প্রয়োজন হবে নতুন খেলোয়াড়। সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে দলের সমস্যা চিহ্নিত করে খেলোয়াড় কিনতে মরিয়া অনেক ক্লাবই। তাই এই অর্থগত সমস্যার মাঝেও ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর কোন পজিশনে কোন খেলোয়াড় লাগবে, এবং সেই চাওয়া অনুযায়ী তারা কোনো না কোনো খেলোয়াড়দের শনাক্ত করছে। তা নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন। শুরু করা যাক, প্রিমিয়ার লিগ থেকে এ মৌসুমে লিগ জেতা লিভারপুল থেকে।

লিভারপুলের নতুন সাইনিং কস্তাস সিমিস্কাস ; Image Source: liverpoolfc

তারকা বা স্কোয়াড ডেপথের ক্ষেত্রে ক্লপের দলে কোনো অভাব নেই। তার অধীনে জেগে উঠেছে হেন্ডারসন, ভাইনালদুমরা। আর আক্রমণের ভয়ঙ্কর ত্রিমুখ ছাপিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের মঞ্চে গোল করে অরিগির মতো ব্যাকআপ খেলোয়াড়। তবে লিভারপুলের দুর্বলতা মূলত রক্ষণে। লেফটব্যাকে রবার্টসনের উপযুক্ত ব্যাকআপ নেই। আর ভ্যান ডাইকের পাশে খেলার মতো সঙ্গীও নেই। জো গোমেজকে রাইটব্যাক ও সেন্টারব্যাক উভয় পজিশনে নজর দিতে হয়। আর জোয়েল মাতিপ পুরো মৌসুমে ধারাবাহিকতা হারান বার বার।

তাই আগামী মৌসুমে রক্ষণ আরও মজবুত করতে ক্লপের প্রয়োজন হবে একজন সেন্টারব্যাক ও লেফটব্যাকে রবার্টসনের ব্যাকআপ। রবার্টসনের ব্যাকআপ হিসেবে গ্রিক ফুলব্যাক কস্তাস সিমিস্কাসকে কিনে ফেলেছে তারা। আর সেন্টারব্যাক হিসেবে আপাতত অলরেডদের পছন্দ রিয়াল বেটিসের ডিফেন্ডার আইসা মান্দি ও সেভিয়ার ডিয়েগো কার্লোস। এছাড়াও, মধ্যমাঠের শক্তি বৃদ্ধি করতে থিয়াগো আলকানতারাকে কিনতে আগ্রহী তারা। লালানার বিদায়ের পর শাকিরিও যদি অ্যানফিল্ড ছাড়েন, তবে বোর্নমাউথের ডেভিড ব্রুকসকেও লিভারপুলে দেখা যেতে পারে।

স্কোয়াডে আক্রমণভাগ ও মধ্যমাঠ ঠিক থাকলেও চেলসির সমস্যাও লিভারপুলের মতো রক্ষণ নিয়ে। কার্ট জুমা, ক্রিস্টেনসেন, রুডিগারকে নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। প্রতি ম্যাচেই তারা গোল হজম করে দলকে বিপদে ফেলছে। উপরন্তু, জুড়ে বসেছে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ খরচ করে আনা গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগার সমস্যা। তাই ভার্নার-জিয়েচের পেছনে বিরাট অঙ্ক বিনিয়োগের পরও রক্ষণ ঢেলে সাজাতে চান চেলসি কোচ।

লেফটব্যাকের সমস্যা সমাধান করতে চেলসি কিনতে পারে আয়াক্সের তাহলিয়াফিকো বা লেস্টার সিটির বেন চিলওয়েল। তবে, চেলসির লেফটব্যাক কেনা বিশেষ প্রয়োজনীয় হলেও তারা অবশ্য এখনও বড় পদক্ষেপ নেয়নি। তারা মেতে আছে লেভারকুসেনর কাই হাভের্তেজকে নিয়ে, যেখানে রক্ষণ শক্ত করা বেশি প্রয়োজন। 

চেলসি মেতে আছে লেভারকুসেনর কাই হাভের্তেজকে নিয়ে; Image Source : Getty Image

নতুন কোচের অধীনে কান্তের দিনও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। কান্তে যদি ক্লাব ছাড়েন, তাহলে চেলসি তার পুরোনো ভালোবাসায় ফেরত যেতে পারে। ওয়েস্টহ্যামের মিডফিল্ডার ডেক্লেন রাইসকে অনেকদিন ধরেই চাইছে চেলসি। এবার হয়তো সেই চাওয়া পূরণ হয়ে যেতে পারে তাদের। স্কাই স্পোর্টসের মতে, চেলসি রাইসের জন্য ইতোমধ্যে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব দিয়েছে।

লেফটব্যাকের পাশাপাশি ব্লুজদের একজন প্রতিষ্ঠিত ডিফেন্ডারও লাগবে। এক্ষেত্রে আসন্ন মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে দেখা যেতে পারে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ডিফেন্ডার হোসে হিমেনেজকে বা ‘নতুন ভ্যান ডাইক’-খ্যাত হাভিয়ে এমবায়ুম্বা। মাথা থেকে কেপার ঝামেলাও সরিয়ে ফেলতে চায় তারা। নতুন গোলরক্ষক হিসেবে পছন্দ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গোলকিপার ডিন হেন্ডারসন ও নিক পোপ। তবে হিমেনেজের স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে আসা সম্পূর্ণ উড়ো খবর হলেও পরবর্তী মৌসুমে লড়াইয়ের জন্য তাদের রক্ষণের প্রতি মনোযোগী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন।

লিভারপুল বা চেলসির মূল সমস্যা রক্ষণ হলেও আর্সেনালের সমস্যা পুরো একাদশজুড়েই। আরতেতার অধীনে এ মৌসুমে চমক দেখালেও তিনি নিজেই বলেছেন, এই দলকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। এবং যদি তা-ই করতে হয়, প্রথমে কেনা উচিত একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে। সেখানে আর্সেনাল ম্যানেজারের প্রথম পছন্দ টমাস পার্টে, যদিও এই দলবদলে অ্যাটলেটিকোর সাথে আর্সেনালের এখনও বনিবনা হয়নি। চলতি মৌসুম শেষে আর্সেনালে যোগ দেবেন উইলিয়াম সালিবা। তার সাথে রক্ষণে খেলার জন্য আর্সেনালের চোখ লিঁলের গ্যাব্রিয়েল মাগালহেসের দিকে। 

কে পাবে গ্যাব্রিয়েল মাগালহেসকে? ; Image Credit : 2020 Sylvain Lefevre

আপাতদৃষ্টিতে, টমাস পার্টে ও গ্যাব্রিয়েলের সাইনিং গানার্সদের জন্য বিশেষ জরুরী। কারণ, আরতেতার অধীনে বুকায়ো সাকা-টিয়ের্নি-মার্টিনেল্লি-রিস নিলসনরা যেভাবে জ্বলে উঠেছেন, রক্ষণ ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে হাল ধরতে পারলেই গার্নাসরা স্বরূপে ফেরার জন্য তৈরি হয়ে যায়। এছাড়া চেলসি থেকে উইলিয়ানের আর্সেনালের আসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বার্সেলোনা থেকে ফিলিপে কৌতিনহোর ধারে যোগ দেবার সম্ভাবনা তো আছেই।

হোসে মরিনহোর স্পার্সের সমস্যা রক্ষণ ও মধ্যমাঠ। গত মৌসুমে কেনা এনদমবেলে চাহিদা সম্পূর্ণ পারফরম্যান্স দিতে পারেননি। ভঙ্গুর রক্ষণকে আরও ভঙ্গুর করে স্পার্স থেকে বিদায় নিয়েছে ভার্তোংগেন। তাই দায়সারাভাবে চালানো রক্ষণ এবার মজবুত করার পরিকল্পনা করা উচিত স্পার্সের। তবে এখন পর্যন্ত রক্ষণ নিয়ে কোনো রকম গুজবও শোনা যায়নি, শুধুমাত্র ইন্টার থেকে মিডফিল্ডার মার্সেলো ব্রজোভিচ ছাড়া। তাই এখন পর্যন্ত বলা যায়, মধ্যমাঠে খেলানোর জন্য সাউদাম্পটন থেকে পিয়ের এমিল হইবার্গকে কেনা ছাড়া দল গোছানোর জন্য এখনও তারা পরিকল্পনা তেমন করে উঠতে পারেনি।

দলবদলের মৌসুম আসবে, আর ম্যানচেস্টার সিটির টাকার থলি নিয়ে মাঠে নামবে না, তা তো হতে পারে না! তবে এবার ম্যানচেস্টার সিটির দলবদলের গুজবের সাথে বার্সেলোনা প্রচ্ছন্নভাবে জড়িত। তাই দুই দলের অবস্থা একসাথে তুলে ধরা যাক।

প্রায় ৩০০ মিলিয়ন অর্থ খরচ করে ফেললেও পেপ গার্দিওলা তার রক্ষণ শক্তপোক্ত করতে পারেননি। ওটামেন্ডির বুড়িয়ে যাওয়া ও ভিনসেন্ট কোম্পানির বিদায়ের পর তাদের একজন ডিফেন্ডার লাগতোই। তাই বোর্নমাউথ থেকে তারা কিনেছে নাথান আইককে। আইক ছাড়াও সিটির রাডারে আছে নাপোলির কলিদু কৌলিবালি। সর্বশেষ পাওয়া খবর থেকে জানা গেছে, সিটি কৌলিবালির জন্য ৬৩ মিলিয়ন ইউরো দিতে প্রস্তুত। কিন্তু নাপোলি তাকে ৭০ মিলিয়নের কমে বিক্রি করতে রাজি নয়। তাই সিটি ও নাপোলির ভেতর সমঝোতা হয়ে গেলে কৌলিবালিকেও দেখা যেতে পারে সিটির একাদশে।

কিন্তু এরপরও তাদের সমস্যার সমাধান হয় না। কারণ সিটির ফুলব্যাকে মেন্ডি বা ওয়াকার ও ক্যানসেলো প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারছেন না। তাই ইউরোপে বর্তমানে অন্যতম সেরা গুজব ক্যানসেলোর সাথে বার্সার সেমেদোকে সোয়াপ ডিলে কিনতে চাচ্ছে তারা। বিপরীতে বার্সার রক্ষণ সমস্যা সমাধানে কাতালানরা তাদের লা মাসিয়ার প্রাক্তন সদস্য এরিক গার্সিয়াকে ফিরিয়ে নিতে চায়। তাই এই ত্রিমুখী চুক্তি হবার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। এছাড়া, ডেভিড সিলভার শূন্যস্থান পূরণ করার চেষ্টা করবে ম্যানসিটি। সানে বায়ার্ন মিউনিখে পাড়ি জমানোর পর নতুন উইঙ্গার ফের্নান তোরেসকে ইতোমধ্যে কিনে ফেলেছে। সিলভার রেখে যাওয়া স্থানে এমন একজন খেলোয়াড় আসা উচিত, যিনি গোল বা গোল সুযোগ তো তৈরি করবেনই, সাথে মধ্যমাঠেও সহায়তা করবেন। এমনই একজন খেলোয়াড় ফরাসি ক্লাব লিওঁর মিডফিল্ডার হুসেম আওয়ার। তার ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর জুনিনহো নিশ্চিত করেছেন, ম্যানসিটি আওয়ারের ব্যাপারে তাদের সাথে যোগাযোগ করেছে।

এরিক গার্সিয়া; Image Credit; Alex Burstow/Getty Images

তবে বার্সা সেমেদোকে ক্যানসেলোর সাথে অদল-বদল না করলেও এরিক গার্সিয়াকে চায় তারা। কারণ, উমতিতি গত মৌসুম থেকেই চোটের কবলে পড়ে ফর্মহীনতায় ভুগছেন। আর বার্সাও চায়, তাকে বিক্রি করে তার বেতনের অর্থ বাঁচিয়ে নতুন ডিফেন্ডার কিনতে। একসময় বিলবাওয়ের উনাই নুনেজ বা ভিয়ারিয়ালের পাউ তোরেসকে দলে চাইলেও বর্তমানে স্প্যানিশ ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়াকে মনে ধরেছে কাতালানদের। হয়তো নতুন লেফটব্যাক দলে আসতে পারেন, তবে গার্সিয়া বা নতুন ডিফেন্ডার ছাড়া এই দলবদলের মৌসুমে বার্সাতে নতুন খেলোয়াড় আসার সম্ভাবনা বেশ কম।

লেফটব্যাক পজিশনের জন্য বার্সেলোনার বর্তমান পছন্দ ভ্যালেন্সিয়ার হোসে লুইস গ্যায়া। আক্রমণে লুইস সুয়ারেজ থাকতে লাউতারো মার্টিনেজকে পাবে না তারা। আর পেদ্রি, ফ্রান্সিসকো ত্রিনকাও, ম্যাথিউস ফার্নান্দেজ ও লোনে থাকা কার্লোস আলেনার ফেরার পাশাপাশি ক্লাবটি বিক্রি করতে চায় তোদিবো, উমতিতি, ফিরপো, ভিদাল, রাকিতিচ, রাফিনহা, নেতো ও কৌতিনহোকে। আসন্ন মৌসুমের জন্য এমন কিছুর পরিকল্পনা থাকলেও এক লজ্জাজনক হার ক্লাবের অবস্থা একদম ঘুরিয়ে দিয়েছে।

স্প্যানিশ লিগের শেষে মেসি নিজেই বলেছিলেন, যেভাবে বার্সা খেলছে, এভাবে হবে না। পরিবর্তন প্রয়োজন একদম মূল থেকে। বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮ -২ গোলে হারার পর ক্লাবের বর্তমান পরিস্থিতি সবার কাছে পরিষ্কার। এই অবস্থার জন্য দায়ী শুধু ক্লাবের সভাপতি, কোচ বা খেলোয়াড় এককভাবে নন, প্রত্যেকে। তাই এই পরিস্থিতির জের ধরে বার্সেলোনায় আসতে চলেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। ক্লাবের সব থেকে বড় তারকা মেসির বর্তমান উদ্দেশ্যও পরিষ্কার। বর্তমান প্রেসিডেন্ট হোসে মারিয়া বার্তোমেউয়ের ওপর ভরসা নেই কারও, মেসিরও নেই। তাই সবকিছুতে বদল না আসলে তার ক্লাবে থাকার সম্ভাবনাও কম। দল ছেড়ে যেতে পারেন বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়, আসতে পারেন নতুন মুখ। সেতিয়েনকে বদলে ইতোমধ্যেই তারা নতুন কোচের আসনে বসিয়েছে রোনাল্ড ক্যোমানকে। তলানির একদম নিতে পৌঁছে এখন বার্সা কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সিটিজেনদের নগর প্রতিপক্ষ ডর্টমুন্ড স্টার জর্ডান সানচোকে দলে ভেড়ানোর ভ্রমে মগ্ন। যদিও মার্সিয়েল ও রাশফোর্ডের পাশে তাদের একজন উইঙ্গার প্রয়োজন, সেটা তারা অনুভব করছে গত মৌসুম থেকেই। তবে ডর্টমুন্ড থেকে সানচোকে ওর্ল্ড ট্রাফোর্ডে আনা আর সহজ সুযোগের অবস্থায় নেই। ডর্টমুন্ড তাদের একাদশের সবচেয়ে বড় তারকাকে ১০০ মিলিয়নের কমে বিক্রি করতে রাজি নয়। বিপরীতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যেকোনো মূল্যে তাকে পেতে চায়। ব্রুনো হার্নান্দেজের পাশাপাশি আক্রমণ ও মধ্যমাঠ অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে তারা। তবে ম্যাগুয়েরের পাশে রক্ষণের স্থানটি এখনও পোক্ত নয়। এরিক বেইলি অধিকাংশ সময়ে ইনজুরিতে ভুগে ফর্ম হারান বলে মাগুয়েরের সঙ্গী হিসেবে রেড ডেভিলদের চোখ গ্যাব্রিয়েল মাগালহেসের দিকে। 

 ডর্টমুন্ড স্টার জর্ডান সানচো; Image Credit ; imago images / osnapix

স্পেনের দিকে আসা যাক। এবারের লিগ জেতা রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি পেরেজ প্রথমেই বলে দিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক ক্ষতি এড়াতে নতুন বড় সাইনিং তারা করবে না। কিন্তু মানুষটা পেরেজ বলেই ভরসা নেই। অনেকদিন থেকে তার চোখ এমবাপের দিকে। সম্প্রতি এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গাকে মনে ধরছে। তবে এদের দলে ভেরাতে যে পরিমাণ অর্থ লাগবে, বর্তমানে তা খরচ করা রিয়াল মাদ্রিদের নাগালের বাইরে। তাই এদের কেউ এ মৌসুমে রিয়ালে আসার সম্ভাবনা নেই। 

কেউ না আসলেও রিয়াল মাদ্রিদে ফুরিয়ে এসেছে অনেকের সময়। হামেস রদ্রিগেজ, গ্যারেথ বেল, মারিয়ানো দিয়াজ ও ব্রাহিম দিয়াজের বিদায় প্রায় নিশ্চিত। গত মৌসুমে ফ্লপ পারফরম্যান্স ও লকডাউন সময়ে যে বিতর্ক তৈরি করেছেন, লুকা ইয়োভিচও টিকতে পারবেন কি না, নিশ্চয়তা নেই। ইসকোর জন্যও সময়টা ভালো যাচ্ছে না। একাদশে তার জন্য নির্দিষ্ট কোনো পজিশনও নেই। তাই পরবর্তী মৌসুমের জন্য এদের একজনেরও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত নয়। 

তবে নতুন কেউ কি আসবে না রিয়াল মাদ্রিদে? গত মৌসুমে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা মার্টিন ওডেগার্ডকে আগামী মৌসুমের জন্য দলের সাথে যুক্ত করতে চান জিদান। এছাড়াও, লুকা ইয়োভিচকে ছেড়ে দিতে চাইলে রিয়াল মাদ্রিদ চেষ্টা করবে এসি মিলানের পর্তুগিজ স্ট্রাইকার রাফায়েল লিয়াওকে দলে ভেড়াতে।

ওডেগার্ডকে চান জিদান; Image Source; Forbes

থমাস লেমার ও জোয়াও ফেলিক্স প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফরম্যান্স করতে পারেননি। নতুন মৌসুমের জন্য ডিয়েগো সিমিওনে তাই কী ভাবছেন? নতুন খেলোয়াড় কেনা থেকে খেলোয়াড় ধরে রাখাতে তার চিন্তা বেশি। টমাস পার্টেকে চায় আর্সেনাল, চেলসি চায় হিমেনেজকে। বড় ধরনের অর্থের বিনিময়ে খেলোয়াড় কিনে নেওয়া এখন ডাল-ভাত। 

গত মৌসুমে লিগে মাত্র ৫১ গোল করা অ্যাটলেটিকো মূলত আক্রমণভাগ আরও দৃঢ় করার কথা ভাবছে। তাদের প্রথম পছন্দ হামেস রদ্রিগেজ। রিয়াল মাদ্রিদের বেঞ্চে কাটানো এই নাম্বার টেনের পরবর্তী গন্তব্য হতে পারে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। হামেসকে তারা পেয়েও যেতে পারে মাত্র ২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে। এবং মধ্যমাঠের শক্তি বাড়ানোর জন্য পালমেইরাসে খেলা ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার প্যাট্রিক দে পলা আসতে পারেন ডিয়েগো সিমিওনের দলে। একাদশের অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় দল না ছাড়লে হয়তো আর কোনো বড় ট্রান্সফার তাদের জন্য অপেক্ষা করছে না।

লিগ জিতলেও ইউরোপে বর্তমানে সবচেয়ে টালমাটাল অবস্থা কাটাচ্ছে জুভেন্টাস। চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বাদ পড়ার জেরে বরখাস্ত হয়েছেন মরিৎসিও সারি। নতুন কোচ হিসেবে আনকোরা পিরলোকে নিযুক্ত করলেও, রোনালদোর জুভেন্টাস ছাড়ার গুঞ্জন চলছে ইতালিজুড়ে। পিরলোর পূর্বের কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা নেই। তিনি জুভেন্টাসকে নিয়ে কত দূর এগোবেন সেই বিষয়ে শঙ্কা থাকলেও জুভেন্টাসে আসতে চলেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। ব্লেইস মাতুইদি ইতোমধ্যে পাড়ি জমিয়েছেন ইন্টার মায়ামিতে। দুই ফুলব্যাক কুয়াদ্রাদো ও অ্যালেক্স স্যান্দ্রোকেও রাখতে চাইছে না তারা। এছাড়াও, দল ছাড়তে পারেন হিগুয়াইন, বার্নাদেস্কি, রুগানি ও ডগলাস কস্তা। 

বুড়িয়ে যাওয়া খেলোয়াড় দল ছাড়লেও নতুন তরুণ খেলোয়াড়দের পেতে চলেছেন পিরলো। আর্থুর এবং লোনে থাকা দেয়ান কুলুসেভস্কি। আর্থুর মধ্যমাঠের হাল ধরবেন। পার্মাতে দারুণ এক মৌসুম পার করা কুলুসেভস্কি রোনালদো ও দিবালার সাথে আক্রমণের ডানপাশের স্থানটি নেবেন। এছাড়াও পিরলো ক্লাবকে প্রথমেই সান্দ্রো তোনালি ও নিকোলো জানিওলোর নাম বলেছেন। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে জুভেন্টাসের রাডারে আছেন ফেদ্রিকো কিয়েসা। এদের প্রত্যেককে আনতে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে ‘তুরিনের বুড়ি’দের। কিন্তু দল ঢেলে সাজাতে মধ্যমাঠের আক্রমণ অংশে কিয়েসা ও আর্থুরের পাশে তোনালির মতো মিডফিল্ডার অতি আবশ্যক। 

ব্রেসিয়ার এই মিডফিল্ডার ইতালির অন্যতম সেরা খেলোয়াড়; Image Credit: 2019 Getty Images

স্ট্রাইকার ব্যর্থতার পর নতুন ফরোয়ার্ডও চায় তারা। হিগুয়াইনকে বিক্রি করে রাউল হিমিনেজ ও আর্কাদিয়াস মিলিকের মতো স্ট্রাইকার পছন্দ তাদের। তবে জুভেন্টাসের নতুন স্ট্রাইকার হিসেবে বর্তমানে মিলিকই এগিয়ে থাকবেন। কারণ ইতালিতে খেলার পাশাপাশি মিলিকের খেলার ধরনের সাথে জুভেন্টাসের ধরনের বেশ মিল আছে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে প্রধান শঙ্কা হলো, জুভেন্টাস বাড়তি অর্থ খরচ করে খেলোয়াড় কিনতে সবসময় অনাগ্রহী। এখন পিরলো জুভেন্টাসের বোর্ডের মানসিকতা কতটা পরিবর্তন করতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়।

জুভেন্টাসের প্রত্যেক ট্রান্সফার টার্গেট দলে ভেড়ানো সহজ হবে না। কারণ ইন্টার, মিলান ও নাপোলিও চেষ্টা করে যাচ্ছে তাদের স্কোয়াডের শক্তি বৃদ্ধি করতে। ব্রেসিয়ার তোনালিকে পেতে মরিয়া ইন্টার ও মিলান। এক্ষেত্রে তারা জুভেন্টাসের থেকে বেশি পরিমাণ অর্থ দেবার জন্য প্রস্তুত। এসি মিলানের নতুন জাগরণের সময়ে মধ্যমাঠের ডাবল পিভটে বেনেসারের পাশে খেলার জন্য তিমু বাকাইয়োকে ফেরাতে পারে তারা। নাপোলি থেকে কুলিবালি ও অ্যালান চলে গেলে তারাও চেষ্টা করবে তোনালিকে কেনার জন্য। কারণ ব্রেসিয়ার এই মিডফিল্ডার ইতালির অন্যতম সেরা ইয়াংস্টার, যার প্রতি আগ্রহী স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনাও। 

ইতালিতে জুভেন্টাস, নাপোলি,  ইন্টার বা মিলান বাদেও চুপিসারে দলের শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করছে লাৎসিও। মধ্যমাঠের আক্রমণভাগের জন্য এ মৌসুমে ভুগতে হয়েছে তাদের। তাই ম্যানচেস্টার সিটি থেকে ডেভিড সিলভাকে ফ্রি ট্রান্সফারে আনার চেষ্টা করছে তারা। এছাড়াও পিএসজির দ্বিতীয় পছন্দের গোলরকক্ষ ডিয়েগো রিকোও আসতে চলেছে ইতালির এই ক্লাবে।

জার্মানির সবচেয়ে বড় দুই ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড এখনও দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। ডর্টমুন্ডের সবকিছু নির্ভর করছে জর্দান সানচোর থাকা বা না থাকা নিয়ে। যদি সানচো এই মৌসুমে সিগনাল ইদুনা পার্কে থেকে যায়, আক্রমণ ভাগে নতুন খেলোয়াড় যোগ করার দরকার নেই। আর সানচো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে পাড়ি জমালে ডর্টমুন্ডের পছন্দ লিঁলের উইঙ্গার জনাথন ইকোনে ও অলিম্পিক লিঁও এর ফরোয়ার্ড মেম্ফিস ডিপাই। তবে ডর্টমুন্ডের উচিত এ মৌসুমে গোলরক্ষক পরিবর্তন করা। আক্রমণ ও মধ্যমাঠ ঠিকঠাক থাকলেও এই গোলরক্ষকে অতিমাত্রায় গোল হজম করার প্রবণতা তাদের লিগ শিরোপা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। 

ফরোয়ার্ড মেম্ফিস ডিপাই; Image Source; Ligue One

বিপরীতে, বায়ার্ন মিউনিখের একাদশে আপাতত কোনো খুঁত নেই। নতুন মৌসুমে আক্রমণ ভাগে যোগ দেবেন লিরয় সানে। থিয়াগো আলকানতারার ক্লাব ছাড়ার একটি গুঞ্জন চলছে। তবে আদ্রিয়ান ফেনিনকে লোন থেকে ফেরানোর ফলে মধ্যমাঠ নিয়ে তাদের ভাবতে হবে না। তবে ক্লাব ছাড়ার সম্ভবনা আছে ডেভিড আলাবা ও লুকাস হার্নান্দেজের। তবে এখন পর্যন্ত তারা সেভাবে নতুন খেলোয়াড় নিয়ে ভাবছে না। আলাবা বা লুকাস চলে গেলে তখন হয়ত নতুন পরিকল্পনা করা হতে পারে। তাই আপাতত তাদের একমাত্র লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ।

ফ্রান্সে প্যারিস সেন্ট জার্মেইও পাখির চোখ করে রেখেছে চ্যাম্পিয়নস লিগকে। তবে আগামী মৌসুমে রক্ষণ ঠিক করতে তাদের মাঠে নামা জরুরি। রাইট-ব্যাক মুনিয়ে বিদায় নিয়েছেন। সেন্টার-ব্যাক সিলভাও তার শেষ মৌসুম কাটাচ্ছেন। আর রক্ষণে থাকা বাকি খেলোয়াড়রা সেভাবে নির্ভরশীল না। তাই প্যারিসের ক্লাব হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে নতুন একজন সেন্টার-ব্যাক ও রাইট-ব্যাক। যদি ঠিকঠাক দাম পাওয়া যায় তো, কলিদু কুলিবালি ও মিলান স্ক্রিনিয়ারকে তাদের ক্লাব বিক্রি করে দিতে রাজি। আর স্ক্রিনিয়ারের মতো নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডারকে মাত্র ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বিক্রি করে দিতে রাজি ইন্টার। অর্থের অভাব না থাকা পিএসজি এই সুযোগ নিতে পারে। কুলিবালি ও স্ক্রিনিয়ারের পাশাপাশি অলিম্পিক লিঁও থেকে রাইট-ব্যাক লিও দুবোয়াকে কেনার জন্য প্রস্তুত তারা। এছাড়াও, তাদের রাডারে আছে রিয়াল বেটিসের ফুলব্যাক এমারসন , নাপোলির মিডফিল্ডার এলান ও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হামেস রদ্রিগেজ।

মিডফিল্ডার হামেস রদ্রিগেজ; Image Source; Diario AS

প্রত্যেক ক্লাবের উদ্দেশ্য করে বলা এই ট্রান্সফারগুলো গুঞ্জন মাত্র। হয়তো এর অধিকাংশ ঘটবে অথবা বাতিল হয়ে যাবে। এর মাঝে অপ্রত্যাশিত কিছু দলবদল ঘটবেই। তারপরও নতুনভাবে দল ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করবে বার্সেলোনা, আর্সেনাল বা জুভেন্টাসের মতো দল। হয়তো অনেক ক্লাব তাদের পছন্দের খেলোয়াড় সিকি দূরত্বে থেকে হাতছাড়া করবে। এসবই প্রত্যেক মৌসুমের দলবদলের সময়ের ঘটনা। কারণ, মাঠের খেলার পাশাপাশি এই দলবদলের মৌসুম প্রত্যেক বড় ক্লাবের জন্য যেন অদৃশ্য এক শিরোপার লড়াই। আর সেই শিরোপা হচ্ছে তাদের পছন্দের খেলোয়াড়।

Related Articles