Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লেস্টার সিটি বনাম আর্সেনাল: অবামেয়াং ও ভার্ডির এগিয়ে যাবার লড়াই

সেন্ট ম্যারিস স্টেডিয়ামে ম্যাচ। ঘরের মাঠে লেস্টার সিটিকে আতিথ্য দেবে সাউথহ্যাম্পটন। বর্তমানে তারা তেমন শক্তিশালী দল না হলেও তাদের মাঠে তাদেরকে হারানো বেশ কষ্টকর। কিন্তু ব্রেন্ডন রজার্সের লেস্টার সিটি তার তোয়াক্কাই করল না, গোল উৎসব শুরু হলো প্রথম থেকেই। ভার্ডি, পেরেজ, ম্যাডিনসন সবাই গোল করার প্রতিযোগিতায় মত্ত হলেন। সাউথহ্যাম্পটনের বিপক্ষের ম্যাচে আগের সপ্তাহে বার্নলির সাথেও জিতেছে তারা। এমনকি, ক্রিস্টাল প্যালেসের সাথে পরের ম্যাচও।

ফক্সদের গোলবন্যার পরের দিন এমিরেস্টস স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ চেষ্টায় ক্রিস্টাল প্যালেসের সাথে ড্র করে আর্সেনাল। প্রথমার্ধে দুই গোলে এগিয়ে থেকেও ঘরের মাঠে জয় ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় তারা। এর আগের ম্যাচে শেফিল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে হেরে এসেছিল উনাই এমেরির দল। শুধু তাই নয়, ক্রিস্টাল প্যালেসের ম্যাচের পরের সপ্তাহে আবার উলফহ্যাম্পটনের সাথে ড্র। 

গানার্সবাহিনীর সর্বশেষ তিন ম্যাচে কোনো জয় নেই। বিপরীতে ফক্সরা তাদের সর্বশেষ তিন ম্যাচই দুর্দান্ত খেলে জিতেছে। এবং আজকে প্রিমিয়ার লিগের ১২তম রাউন্ডে ভাগ্য এই দুই দলকে এক করে দিচ্ছে কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে।

বিগত মৌসুমে লেস্টারের বিপক্ষে হারের পর  ©Julian Finney/Getty Images

লেস্টার সিটি

ক্লদিও রানিয়েরির সেই রূপকথার মৌসুমের পর লেস্টার সিটি আর তাদের স্বাভাবিক খেলায় ফিরতে পারেনি। ঐ মৌসুমের পরই কয়েক দফায় তাদের খেলোয়াড় দল থেকে বিদায় নেয়ায় মূল সুর কেটে যায়। কয়েক দফায় কোচ পরিবর্তন করেও তেমন লাভ হয়নি, একমাত্র ব্রেন্ডন রজার্সকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া ছাড়া। রজার্স আসার পর বেশ কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ ট্রান্সফার করেছে তারা, আর এতেই হারানো সেই সুর আবারও অনুরণিত হওয়ার উপক্রম হয়েছে ফক্সদের।

ব্রেন্ডন রজার্সের নতুন লেস্টার এ মৌসুমে হেরেছে মাত্র দুই ম্যাচ, বাকি ৭টিতে জয় এবং অন্য ২টিতে ড্র। লেস্টার সিটি হেরেছে একমাত্র লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে। কিন্তু যেসব ম্যাচে তারা অনায়াসে পয়েন্ট তুলতে পারবে, সে ম্যাচে কখনোই হোঁচট খায়নি। একমাত্র ব্যর্থতা বলতে গেলে, ‘আনকোরা’ চেলসির সাথে মৌসুমের প্রথম দিকে ড্র। এছাড়াও খেই হারিয়ে ফেলা টটেনহ্যামকেও ছেড়ে কথা বলেনি ভার্ডিরা।

গত সপ্তাহে ক্রিস্টাল প্যালেসকে তাদের নিজের মাঠে হারিয়ে ফুরফুরে মেজাজে আছে ফক্সরা। দলের প্রধান খেলোয়াড়দের কারও ইনজুরি সমস্যা নেই। তাই পছন্দমতো একাদশ গড়তে ভাবতে হবে না লেস্টার কোচকে। এ মৌসুমের প্রায় শুরু থেকে ব্রেন্ডন রজার্স ৪-১-৪-১ ফর্মেশন ব্যবহার করে আসছেন, যেখানে রক্ষণভাগে থাকবেন চিলওয়েল, সিয়েঞ্চি, এভান্স ও রিকার্দো পেরেইরা। আর গোলরক্ষক হিসেবে অবশ্যই ক্যাসপার স্মাইকেল। নামকরা কেউ না থাকলেও এ মৌসুমে লেস্টারের রক্ষণ লাইনআপ অন্যতম সেরা। তারা ক্লিনশিট রেখেছে ৪টি। কিন্তু লেফটব্যাকে থাকা বেন চিলওয়েল যেন এবার ফর্মের তুঙ্গে আছেন। লেফট উইংয়ে থাকা হার্ভি বার্নেসের সাথে তার বোঝাপড়া দারুণ। তাই রক্ষণ ছাড়াও মাঠের বাম পাশে প্রতি-আক্রমণের সময় চিলওয়েলের নজরকাড়া ক্রস বা পাস সবসময়ই উজ্বল।

 বেন চিলওয়েল ©Robin Jones/Getty Images

ব্রেন্ডন রজার্স ৪-১-৪-১ ফর্মেশন ব্যবহার করলেও মাঠে তা হয়ে যায় ৪-৩-৩। উইলফ্রিদ এনদিদি একদম ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকায় থাকেন, আর ম্যাডিনসন হলেন একদম প্রথাগত প্লে-মেকার। এদের পাশাপাশি মধ্যমাঠের দায়িত্বে থাকেন বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার ইউরি তিয়েলেমান্স। ম্যাডিনসন আর তিয়েলেমান্সের থাকার দরুণ বার্নস আর পেরেজ নিচে নেমে আর আক্রমণে সহায়তা করতে আসেন না। উইংজুড়ে আক্রমণেই তাদের বিচরণ।

লেস্টার সিটির এ মৌসুমের অন্যতম সুবিধা হচ্ছে তাদের মিডফিল্ড থেকে আক্রমণের ৬ জন খেলোয়াড়ের ভেতর নিয়মিত ৫ জনই গোল করতে পারেন। তাই প্রতিপক্ষ শুধুমাত্র কয়েকজনকে আটকে রাখলেই ফক্সবাহিনী থেমে যায় না। আর্সেনালের রক্ষণকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর জন্য আগুনঝড়া ফর্মে আছে জেমি ভার্ডি। আর্সেনালের বিপক্ষে গোল করার পরিসংখ্যানও তার নজরকাড়া। তবে ভার্ডির পাশাপাশি আর্সেনালের জন্য ত্রাস ছড়াতে পারেন ম্যাডিনসন। বর্তমান আর্সেনালের রক্ষণের পাশাপাশি মধ্যমাঠেও তাদের রসায়ন সুবিধার না। আর এর মাঝে ম্যাডিনসনকে সুযোগ দেয়া মানে খাল কেটে কুমির আনা। তাই আর্সেনাল যদি প্রথম থেকে ম্যাচে থাকতে চায়, তবে ভার্ডির পাশাপাশি তাদের বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত ম্যাডিনসনের প্রতিও।

ম্যাডিনসন © James Williamson – AMA/Getty Images

লেস্টারের অন্যতম প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, সেট-পিসে গোল করা। কর্নার থেকে হেডে, অথবা পেরেইরা ও চিলওয়েলের ক্রস বা থ্রু-পাসে বরাবরই গোল করছে লেস্টারের খেলোয়াড়েরা। নিজেদের ডি-বক্সে আর্সেনালের রক্ষণ কতটা রক্ষণাত্মক হতে পারবে, তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন থেকে যায়।

আর্সেনাল

প্রিমিয়ার লিগে সব থেকে বেশি অস্বস্তিতে দিন কাটাচ্ছে আর্সেনাল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সর্বশেষ চার ম্যাচে কোনো জয় নেই। প্রিমিয়ার লিগের শেষ তিন ম্যাচেও একই অবস্থা, জয়ের দেখা নেই। যদিও গানার্সদের জন্য ম্যাচ জেতা এ মৌসুমে বেশ বিরল দৃশ্য। কারণ প্রিমিয়ার লিগে ১১ ম্যাচ খেলে আর্সেনাল এবার মাত্র ৪টি ম্যাচে জিততে পেরেছে।

আর্সেনাল মাঠে নামলে প্রতি মুহূর্তে প্রতিটা পজিশনে তাদের ভুল ও ব্যর্থতা চোখে পড়ে। তাদের কোচ উনাই এমেরি যে আর্সেনালের মতো ক্লাবের ম্যানেজার, এটা যেন এখনও তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ ম্যাচ আর্সেনাল খেলেছে উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে। প্রথমার্ধে গোল পেয়ে এগিয়ে যাওয়া আর্সেনাল শেষমেষ ড্র করেছে তাদেরই ভুলে। ম্যাচ যত সামনে এগিয়েছে, এমেরির দল ম্যাচ থেকে পিছিয়ে গেছে। আর সুযোগ পেয়ে উল্টে তাদের চেপে ধরে নুনো এসপিরিতো স্যান্তোর শিষ্যরা।

উনাই এমেরি ©James Williamson – AMA/Getty Images

আর্সেনালে এমেরি নতুন আসেননি। ইংল্যান্ডে তার বেশ অনেকটা সময় চলে গেছে। তবুও এমেরি আর্সেনালের জন্য একটি স্থায়ী একাদশ ও কৌশল বের করতে পারেননি। একবার ৪-৪-২, তো অন্যবার ৪-৩-১-২ এ ফর্মেশন পরিবর্তন করেই গেছেন। কিন্তু লাভের খাতা শূন্য। একাদশ নির্বাচনের পরও তার খেলোয়াড়দের স্বস্তি ও স্বাধীনতা নেই। আর্সেনালের অধিকাংশ খেলোয়াড় তার নিজস্ব পজিশনে খেলার স্বাধীনতা পান না। কাউন্টার অ্যাটাক বা প্রতি-আক্রমনাত্মক ফুটবলেও এমেরির সমস্যা আছে। তাই পেপে, অবামেয়াং ও ল্যাকাজেটের মতো বিশ্বসেরা ত্রয়ী থাকার পরও আর্সেনালের আক্রমণভাগ মাঝেমধ্যেই ভোঁতা বলে মনে হয়। 

তাই এটা বলা মুশকিল যে, দুর্দান্ত লেস্টারের বিপক্ষে এমেরি কী ভাবছেন, বা তার কৌশল কী। তবে যত কিছু হোক, তার ফর্মেশনে ঘুরেফিরে হয়তো সেই ৪-৩-৩ এ ফিরে যাবেন। আর পেপে, ল্যাকাজেট ও অবামেয়াংদের ইনজুরি সমস্যা না থাকার কারণে তারাই থাকবেন আর্সেনালের আক্রমণভাগে।

লেস্টারের বিপক্ষে আর্সেনাল টিকে থাকতে হলে গড়ে তুলতে হবে একটি আদর্শ মধ্যমাঠ। তার জন্য সঠিক ত্রয়ী হচ্ছেন গেনদৌজি, তোরেইরা ও সেবায়েসত্রয়ী। মধ্যমাঠে একজন মিডফিল্ডারকে ধ্বংসাত্মক ভূমিকায় রেখে আরেকজন আদর্শ সেন্টার-মিডফিল্ডারের সাথে পূর্ণাঙ্গ নাম্বার টেনের ভূমিকায় একাদশে থাকা উচিত ছিল মেসুত ওজিলের। কিন্তু ওজিলের মতো একজন প্লে-মেকারের পজিশন নেই এমেরির ফুটবল দর্শনে। তাই যতবারই এমেরি ওজিলকে একাদশে রেখেছেন, ততবারই ওজিল হতাশ করেছেন।

চলতি মৌসুমে আর্সেনালের রক্ষণে ক্লিনশিট যেন ডুমুরের ফুল। রক্ষণের সমস্যা আগেই ছিল। কিন্তু সেই সমস্যা সমাধানের জন্য সঠিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দলে এবার এসেছেন ডেভিড লুইজ। সক্রাটিস আর মুস্তাফি যে ভুলগুলো করতেন, সে ভুলগুলো এখনও বিদ্যমান। তবে ব্যতিক্রম হলো, ভুল করার হার কিছুটা কমেছে। তবে ভার্ডির আগুনঝরা ফর্মের পাশাপাশি ম্যাডিনসন ও পেরেজরা যদি স্বরূপে দেখা দেন, তবে গানার্সদের এই রক্ষণ বেশিক্ষণ অটুট থাকার কথা নয়।

এত সব সমস্যার ভীড়ে আর্সেনালের একমাত্র স্বস্তির নাম পিয়েরে অবামেয়াং। চলতি মৌসুমে লিগে এ পর্যন্ত ৮টি গোল করেছেন এই গ্যাবন স্ট্রাইকার। আর্সেনালের দুর্দিনে, বা বড় দলের বিপক্ষে তার গোল করা থেমে থাকেনি। বিহ্বল আর্সেনালের বিপক্ষে দুর্দান্ত লেস্টার সিটি যখন মুখোমুখি হবে, তখন তাদের একমাত্র চিন্তার কারণ হতে পারেন এই অবামেয়াং।

আর্সেনালের একমাত্র স্বস্তির নাম পিয়েরে অবামেয়াং ©Chloe Knott – Danehouse/Getty Images

আর্সেনাল ভার্সেস লেস্টার সিটি: হেড টু হেড

প্রিমিয়ার লিগে ব্রেন্ডন রজার্সের সাথে উনাই এমেরির এটি দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। প্রথম দেখায় কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে আর্সেনালকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল লেস্টার সিটি। সে ম্যাচে জোড়া গোল করে আর্সেনালকে একাই ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন জেমি ভার্ডি। তাই ঘরের মাঠে আবারও জেমি ভার্ডির দিকে তাকিয়ে থাকবে লেস্টার সমর্থক।

এই মৌসুমে লেস্টার সিটি মোট গোল করেছে ২৭টি। বিপরীতে আর্সেনাল করেছে মাত্র ১৬টি। গোল হজম করার ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে লেস্টার। হোম ও অ্যাওয়ে মিলিয়ে মোট গোল হজম করেছে মাত্র ৮টি, যেখানে আর্সেনাল গোল খেয়েছে ১৫টি। তাই পূর্বের ম্যাচের রিপোর্ট, সাম্প্রতিক ফর্ম ও গোল দেওয়া, এবং হজম করার পরিসংখ্যানেও ব্রেন্ডস রজার্সের বাহিনী এক কদম এগিয়ে।

ব্রেন্ডন রজার্সের সাথে উনাই এমেরি © Clive Howes via Getty Images

বড় ম্যাচে ও চাপের মুখে এমেরির হাল ছেড়ে দেবার অঢেল উদাহরণ আছে। পিছিয়ে গিয়ে ফিরে আসার মানসিকতাও আর্সেনালে দেখা যায়নি। তাই যেখানে ঘরের মাঠে সম্প্রতি দুই ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়েছে আর্সেনাল, সেখানে লেস্টারের মাঠে জয় ছিনিয়ে আনা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব কিছু। তবে ফুটবলে অসম্ভবও সম্ভব হয়। কারণ, মাঠে ৯০ মিনিট কী হবে, সেটাতে ভাগ্যের অবদানও নেহায়েত কম নয় বৈকি।

এজন্যই, পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে হয়তো গানার্সবাহিনী ফিরতে পারে স্বরূপে। আর আজকের ম্যাচের ফলাফল এবং আর্সেনালের পারফরম্যান্সই বলে দেবে উনাই এমেরির ভবিষ্যৎ।

প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘খেলাধুলা’ বিভাগে এখন থেকে লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bangla language. It is a match preview right before a high-voltage match of English Premier League between Leicester city and Arsenal. 

Featured Image: Skysports

Related Articles