Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ দিলে জাতীয় দলে ফিরতে পারবো: লিখন

লেগস্পিনার একটি শিল্প। কথাটি লিখেছিলেন বিখ্যাত ক্রিকেট লেখক মাইক সেলভি। শেন ওয়ার্ন, আবদুল কাদির, স্যামুয়েল বদ্রী আর ইমরান তাহিররা সে শিল্পকে জয় করেছেন আরও আগে। বাংলাদেশ সেভাবে পায়নি এই শিল্পের ‘শিল্পী’কে। তবে জুবায়ের হোসেন লিখন একজন, যিনি মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন লেগস্পিনের গুরুত্ব। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর ৬ টেস্ট, ৩ ওয়ানডে আর একটি মাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচের বেশি কিছু খেলতে পারেননি। শুরুর আলো মিইয়ে গেলে ২০১৫ সালের পর থেকে আর জাতীয় দলে জায়গা হয়নি তার। টেস্টে ১৬ উইকেট,  ওয়ানডেতে ৪ উইকেট ও টি-টোয়েন্টিতে ২ উইকেট নিয়ে ‘আপদকালীন’ শেষ হয়েছে জাতীয় দলেরে মিশন।

কেন ফিরতে পারছেন না লিখন? এই দায়টা বোধ হয় তার নিজেরই বেশি। কোচ-বোর্ড একজন লেগস্পিনারের গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিলো বলেই শুরু থেকেই আগলে রাখা হয়েছিলো লিখনকে। কিন্তু দিন যেতে না যেতেই মুদ্রার ওপিঠ দেখতে হলো। নিজের শরীর ও পারফরম্যান্সের প্রতি বেখেয়ালি হয়ে পড়লেন লিখন। ফলাফল, জাতীয় দলের পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেও আস্তে আস্তে সুযোগ হারাতে থাকলেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) এখন পর্যন্ত তার একটিও ম্যাচ খেলা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, গেল কয়েক আসরে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও দল-ম্যাচ পাচ্ছেন না। সর্বশেষ আসরে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে ছিলেন। কিন্তু একটিও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি। শেষপর্যন্ত নিজের ক্যারিয়ারটা বোধ হয় থেমেই যাচ্ছিল লিখনের। কিন্তু সেই শেষ মুহূর্তেই নিজের ভুলটা বুঝতে পারলেন তিনি।

হ্যামিল্টন মাসাকাদজার উইকেট নেওয়ার পর লিখন; Source: AFP

তাই আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় লড়ে যাচ্ছেন তিনি। লড়াইটা নিজের সঙ্গে। পাশে পাচ্ছেন বোর্ড-জাতীয় দলের সতীর্থদের। কবে ফেরা হবে তা জানেন না নিজেও। বয়স মাত্র ২২, ক্যারিয়ার পড়ে আছে এখনও শুরুতেই। তাই মানসিকভাবে শক্তি পাচ্ছেন। এগিয়ে যাওয়ার পাথেয় পাচ্ছেন।

কেমন যাচ্ছে তার এই লড়াই? তা নিয়ে কথা হয়েছে তার সঙ্গে।

দেখে তো মনে হয় অনেক পরিবর্তন এসেছে আপনার শরীরে। পারফরম্যান্স নিয়েও বোধ হয় খুব খাটছেন?

হ্যাঁ, খুব করে চেষ্টা করছি আমি ফেরার। আসলে নিয়মিত রানিং করছি, জিম করছি। সঙ্গে রেগুলার ২০-২৫ ওভার বোলিং করছি একাডেমির মাঠে (মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠ)। আল্লাহর রহমতে সবই করছি। কোচ শাহিন (হুমায়ূন করিব শাহীন) আমাকে অনুশীলন করান এখন। আমার বোলিংটাও অনেক ভালো হচ্ছে। ফিটনেসও ভালো হয়েছে। মিরপুরে একটা টি-টোয়েন্টি হয়েছিলো। ওখানে বেশ ভালো বল করেছি আমি (৪ ওভারে ১৬ রান ২ উইকেট)। এখন শুধু সুযোগের অপেক্ষায় আছি। আল্লাহর রহমতে সেটা পেলেই আমি ধরে রাখার চেষ্টা করবো। এখন দেখা যাক কতটা কি হয়।

বেশিরভাগ সময় যেটা হয়, ফিটনেস কিংবা পারফরম্যান্সের কারণে দলের বাইরে চলে যেতে হয়। আপনার কি মনে হয় না আপনার বাদ পড়ার জন্য এর বাইরেও কিছু ব্যাপার দায়ী ছিলো?

আসলে আমার ‘পরিণত’ হওয়া নিয়ে সমস্যা ছিলো। সেটাই কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি, পারছিও অনেকটা। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছি আমি। এখন বুঝতে পারছি কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক। নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারছি, সেগুলো শুধরাচ্ছি। নতুনভাবে এগোচ্ছি। এবার চেষ্টা করছি সুযোগ যদি আবারও আসে তাহলে যেন আর না হারাতে হয়।

জাতীয় দলে যারা আপনার সতীর্থ ছিলেন, তাদের কাছ থেকে কতটা পরামর্শ বা সাহায্য পাচ্ছেন?

আপনি তখনই বুঝবেন যে আপনাকে ভালো করতে হবে, যখন আপনার সময় খারাপ যাবে। আমি সেটা বুঝতে পেরেছি বলেই খাটছি। জাতীয় দলের কথা যদি বলেন, সবার সাথেই নিয়মিত কথা হয় দেখা হয়। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মাত্রই শেষ করলাম। খেলেছি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ভাইয়ের মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। তিনি আমার বোলিং নিয়ে অনেক প্রশংসা করেছেন। তিনিও টের পাচ্ছেন আমার বলে গতি বেড়েছে আগের চেয়ে। লাইন-লেন্থও ঠিক হয়েছে। ব্যাপারগুলো আমাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে, আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে।

জুবায়ের হোসেন লিখন; Source: Dhaka Tribune

আর কী কী করছেন ফেরার জন্য?

চেষ্টা করে যাচ্ছি, বসে নেই একটুও। কবে একটা সুযোগ পাবো সেই অপেক্ষা করছি। আমি এইচপিতেও (হাই পারফরম্যান্স ইউনিট) ছিলাম। ঝামেলাটা হচ্ছে আমি লিগ (ঘরোয়া ক্রিকেট) খেলতে পারছি না। সুযোগই পাচ্ছি না। এটার কারণে অনেক পিছিয়ে যাচ্ছি। যদি নিয়মিত মাঠে খেলতে পারতাম তাহলে অবশ্যই কামব্যাক করতে পারতাম।

আপনি তো বিপিএলে দল পাননি। শুনলাম আপনাকে নাকি মাশরাফি বিন মুর্তজা রংপুর রাইডার্সে অনুশীলনের জন্য ডেকেছিলেন? কিন্তু আপনি দুদিনের পর আর যাননি?

আমি অবশ্যই এটা খুব ভুল কাজ করেছি। আমার আসলে কাজটা ঠিক হয়নি, যাওয়া উচিত ছিলো। মাশরাফি ভাইয়ের সাথে কথা বলেছিলাম পরে। উনার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি।

ওখানে যে দুদিন গিয়েছিলাম, খুব ভালো কেটেছিলো। রংপুর রাইডার্সের কোচ টম মুডি আমার বোলিং দেখে খুশি হয়েছিলেন। নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে নেটে বল করেছিলাম, উনিও অনেক প্রশংসা করেছেন। আমি যে আসলে রংপুর রাইডার্সে জাস্ট অনুশীলন করতে এসেছি, সেটা উনি টেরই পাননি!

মাশরাফি কোনো পরামর্শ দিয়েছেন?

ওই সময়ে সবাই যখন খুব প্রশংসা করছিল, তখন মাশরাফি ভাই ডেকেছিলেন। বলেছিলেন, তুই সুযোগ পাচ্ছিস না ভালো কথা। কিন্তু হাল ছাড়িস না চেষ্টা করে যা। তুই এভাবে ভাব যে, তুই খেলবিই না আপাতত। সময় আছে এখনও, হাল ছাড়িস না।

অভিষেকের দিন টেস্ট ক্যাপ পরিয়ে দিচ্ছেন সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক ফারুক আহমেদ; Source: BCB

সুনীল যোশী এইচপিতে আপনাকে দেখেছেন, জাতীয় দলের সঙ্গেও আছেন তিনি। কথা হয় ?

সুনীল যোশির সঙ্গে যখন আমি জাতীয় দলের ক্যাম্পে ছিলাম ওই সময়ে কথা হয়েছিল। উনি আমাকে বলেছিলেন, আমি অনেক ভালো বোলার। তুমি যে কী তুমি নিজেও জানো না যে তুমি কী। আসলে আমাকে সবাই ভালো বলেছে। আপনারা জানেন শাহীন ভাই, যার অধীনে আমি এখন অনুশীলন করছি, তিনি অনেক ভালো লেগস্পিনার ছিলেন বাংলাদেশে। তিনি বলেছেন নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে। তাহলেই নাকি আমি ভালো করবো।

 ‘এ’ দল নিয়ে কতটা আশাবাদী?

এটা তো পুরোটা নির্বাচকদের উপর। আমি তো কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্বাস করি আজ না হোক, কাল হবে। তাই আশা ছাড়ছি না। ‘এ’ দলে জায়গা পেলে নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করে যাবো। কারণ আমার আসলে প্রমাণ করার জায়গা দরকার। নিয়মিত ম্যাচ খেলা দরকার। সেটা করতে পারলে নিজের পারফরম্যান্স নিজে বিচার করতে পারবো। জানি না কতটা কি হবে, আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখছি। বোর্ডও খুব সাহায্য করছে। জিমনেশিয়াম ব্যবহার করছি, একাডেমি মাঠে অনুশীলন করছি। তারা দিচ্ছে বলেই হচ্ছে।

যেহেতু বলছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ পাচ্ছেন না, ক্লাবগুলোকে কিছু বলতে চান?

বলতে চাই মানে, আমাকে আসলে সুযোগ দেওয়া হোক। আমার মনে হয় তারা সাহস পাচ্ছে না আমাকে খেলাতে। এটারও অবশ্যই আমারই দায়। কিন্তু আমি তো এখন অনেক পরিশ্রম করছি। চেষ্টা করছি। আমাকে তারা সুযোগ দিয়ে দেখুক। তারা যে সাহসটা হারিয়েছে, সেটা আমাকেই ফেরাতে হবে বলে মনে করি আমি।

ফিচার ইমেজ- AFP

Related Articles