Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লিওনেল মেসি ফিরলেন, তার বিশ্বসেরার মঞ্চে।

অপেক্ষা! এ শব্দটি কারও জীবনে প্রচন্ড স্বস্তিদায়ক অথবা ক্লান্তিকর। মেসির জীবনে এই শব্দটির প্রভাব কেমন ছিলো সেটা জানা না থাকলেও এটা সত্য যে, দীর্ঘ এক অপেক্ষার অবসান হলো তার জীবনে। সেই ২০১৫ সালে বার্সেলোনার হয়ে ট্রেবল জেতার পর মেসিও সকল ব্যক্তিগত অর্জন নিজের করে নিলেন। তারপর পার হয়ে গেছে দীর্ঘ তিনটি বসন্ত। ব্যক্তিগত অর্জনের দেখা আর মেলেনি। চোখের সামনে রোনালদো, মড্রিচরা প্রত্যেক বছর তার সামনে হাতছানি দিতে থাকা অর্জনগুলো ছিনিয়ে নিয়ে গেছেন। মেসি হয়ত বিফল মনে পরের বছরের কথা ভাবতে ভাবতে খালি হাতে ফেরত গেছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই পরের বছরও তার হয়নি।

২০১৫ সালে সর্বশেষ মেসি যখন বর্ষসেরা হয়েছিলেন, তখন উয়েফা বর্ষসেরা ও ব্যালন ডি’অর চালু ছিলো। তখন এই পুরস্কার ফিফা ও ফ্রান্স ফুটবল যৌথভাবে বর্ষসেরার ঘোষণা করত। কিন্তু ২০১৬ সালে ফিফা ব্যালন ডি’অর থেকে আলাদা হয়ে ‘দ্য বেস্ট’ নামে বর্ষসেরার পুরস্কারের আয়োজন করে আসছে। ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৫ সালেও বর্ষসেরা হয়েছিলেন মেসি। কিন্তু ‘দ্য বেস্ট’ নামকরণের পর এই প্রথমবার ট্রফি জিতলেন ৩২ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন তারকা। বর্ষসেরা হওয়ার দৌড়ে মেসি পেয়েছেন ৪৬ পয়েন্ট, ৩৮ পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইক এবং তৃতীয় স্থানে আছেন ৩৬ পয়েন্ট পাওয়া পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

প্রথমবারের মত ‘ফিফা বেস্ট’ হাতে লিওনেল মেসি  © Simon Hofmann/Getty Images

২০১৫ সালে ক্লাবের হয়ে মেসির ট্রেবল জেতা মৌসুমের পর রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে তেড়েফুঁড়ে জ্বলে উঠলেন রোনালদো। মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য বার্সেলোনার কাছে লিগ হারালেও রোনালদোর পারফরম্যান্স ছিলো দুর্দান্ত। ৩৬ ম্যাচে ৩৫ গোল করেছিলেন তিনি। যেখানে মেসি ৩৩ ম্যাচ খেলে মাত্র ২৬ গোল। লিগের পাশাপাশি রোনালদো চ্যাম্পিয়নস লিগের রাজা বনে গিয়েছিলেন সেবছর। প্রতি ম্যাচে গোল করে একাই টেনেছেন রিয়াল মাদ্রিদকে। ১২ ম্যাচে ১৬ গোলের সেই বিধ্বংসী পারফরম্যান্সের কাছে একদমই নিষ্প্রভ হয়ে ছিলেন মেসি। তার দল বার্সেলোনাও সেবার চ্যাম্পিয়নস লিগে সুবিধা করতে পারেননি।

চ্যাম্পিয়নস লিগে বরাবরই রোনালদোর তুলনায় পিছিয়ে ছিলেন মেসি © Michael Regan/Getty images

২০১৭ সালেও ফিফার বর্ষসেরা তালিকার সেরা তিনে ছিলেন মেসি। সে মৌসুমে তার ক্যারিয়ারের থলিতে একমাত্র সম্বল কোপা ডেল রে। লা লিগা উঠে রিয়াল মাদ্রিদের ঘরে। লিগ হারানোর ফলে মেসির সে বছরে ৩৪ ম্যাচে ৩৭ গোলের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স চাপা পড়ে গেছে রোনালদোর সামনে। চ্যাম্পিয়নস লিগেও সেবছর ৯ ম্যাচে ১১ গোল ছিলো তার। কিন্তু সেসব গ্রুপ পর্বের ম্যাচে। যেখানে সেমি-ফাইনাল বা কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচগুলোতে তাকে দলের বিশেষ প্রয়োজন ছিলো সেখানে মেসি ছিলেন নিষ্প্রভ। অপরদিকে রোনালদো ছিলেন নিজেকে সময়ের সেরা প্রমাণে ব্যস্ত। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দুই লেগে ৫ গোল, সেমি-ফাইনালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে আবারও হ্যাটট্রিক, জুভেন্টাসের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচেও জোড়া গোলের মত ম্যাচগুলোর পারফরম্যান্স সবসময় এগিয়ে রেখেছিলো তাকে। একপাশে নিজের ক্লাব শিরোপা জিতেছে, অপরদিকে রোনালদো সকল ব্যক্তিগত শিরোপা নিজের নামে নামাঙ্কিত করেছেন। আর দ্বিতীয় ব্যক্তির মতো মেসির এই পারফরম্যান্স আর অর্জনগুলো দেখে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না।

২০১৮ সালে রোনালদো-মেসি জুটির বর্ষসেরা জয়ের অবসান ঘটে। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিলেন রোনালদো, কোপা ডেল রে ও লা লিগা ছিলো মেসির ঝুলিতে। চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ছিলো রোনালদোর। কোপা ডেল রে এবং লা লিগাতে মেসি ছিলেন দুর্দান্ত। কিন্তু তাদের মাঝ থেকেই উত্থান ঘটে এক ক্রোয়েট মিডফিল্ডারের। বিশ্বকাপের বছরে মেসি ও রোনালদো সেভাবে জ্বলে উঠতে না পারলেও মড্রিচ ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ঝলমলে ছিলেন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ে মধ্যমাঠে তার অসামান্য অবদান ছিলো। ফিফার বর্ষসেরায় সেবার মেসি ছিলেন না। তাকে হটিয়ে রোনালদোর পাশাপাশি তৃতীয় সদস্য ছিলে লিভারপুলের হয়ে গোলের পসার বসানো মোহাম্মদ সালাহ। কিন্তু সালাহ ও রোনালদোকে দর্শক বানিয়ে মড্রিচ জেতেন ফিফার বর্ষসেরার মুকুট।

মেসি রোনালদোর যুগের অবসান করা প্রথম খেলোয়াড় © Dan Istitene/Getty images

২০১৬ থেকে ২০১৮ এই তিন বছরে রোনালদো অর্জনে শিখরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। ব্যক্তিগত শিরোপায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া মেসিকে স্পর্শ করেছেন তিনি। তবে মেসি যে বসে ছিলেন তা নয়, তার পায়ের জাদু তিনি দেখিয়ে গেছেন নিয়মিত। কিন্তু রোনালদোর মত ব্যক্তিগত অর্জনের পাশাপাশি দলের হয়ে নিয়মিত ট্রফি জিততে পারেননি। হ্যাঁ, বার্সেলোনার হয়ে লা লিগার শিরোপা জিতেছেন অনেকবার। কিন্তু ২০১২ সালে বর্ষসেরা হবার পর মেসি বার্সেলোনার হয়ে ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইে জয়ী হয়েছেন মাত্র একবার। আর অপরদিকে, রিয়াল মাদ্রিদের টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতার নায়ক ছিলো রোনালদো। ২০১৫/১৬, ২০১৬/১৭ ও ২০১৭/১৮ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে রোনালদো ছিলেন সবার থেকে এগিয়ে। রিয়াল মাদ্রিদের কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি ছিলেন একমাত্র আস্থা। আর সে আস্থার প্রতিদান তিনি সবসময়ই দিয়ে এসেছেন। জুভেন্টাসের বিপক্ষে জোড়া গোল, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক, বায়ার্ন মিউনিখের জালে ৫ গোল, সে বছরের ফাইনালে জোড়া গোল, উলফবার্গের বিপক্ষে হ্যাট-ট্রিক। এসব অদম্য পারফরম্যান্সগুলোর জন্য মেসি ছিলেন রোনালদো থেকে এক ধাপ পিছিয়ে।

রিয়াল মাদ্রিদের টানা তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের নায়ক © Alexander Hassenstein/Getty images

টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জেতার পর গত মৌসুমের শুরুতে রোনালদো পাড়ি জমান জুভেন্টাসে। আর লা লিগা ও চ্যাম্পিয়নস লিগে শুরু হয় মেসির ফিরে আসার এক নতুন অধ্যায়। রোনালদো নতুন ক্লাব ও পরিবেশে গিয়ে প্রথমেই তার খুনে রূপ বের করতে পারেননি। জুভেন্টাসের হয়ে ২১ গোল করে লিগ জিতলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রত্যাশামাফিক পারফরম্যান্স পাওয়া যায়নি। কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকে মেসি ছিলেন দুর্দমনীয়। টানা তিনবার ব্যালন ডি’অর জেতা সময়ের মেসিকে যেন ফিরে পাওয়া যাচ্ছিল। গোল করছেন, গোল করাচ্ছেন, বার্সেলোনার কঠিন সময়ে পাশে থেকেছেন, হেরে যাওয়া ম্যাচ জিতিয়ে দিয়েছেন। কী করেননি তিনি! ৩৪ ম্যাচে ৩৬ গোল ও ১৩ অ্যাসিস্টের উপর ভর করে বার্সেলোনাকে লা লিগা জেতায় তার সর্বোচ্চ অবদান ছিল।

চ্যাম্পিয়নস লিগেও মেসি ছিলেন স্বরূপে। শেষ ষোলর আসরে অলিম্পিক লিঁও এর মাঠে ড্র করে আসার পর। ক্যাম্প ন্যুতে মেসি একাই জিতিয়ে দিয়েছিলেন বার্সেলোনাকে। কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচ। দ্বিতীয় লেগে সেখানেও তার জোড়া গোল, পুরো ম্যাচে চোখে লেগে থাকা পারফরম্যান্স। বার্সেলোনার স্বস্তির জয়। সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে দেখা লিভারপুলকে একাই উড়িয়ে দিলেন তিনি। তবে মেসি ম্যাজিকের এখানেই সমাপ্তি। কারণ, সবকিছু ছাপিয়ে ফুটবল একটি দলগত খেলা। ক্যাম্প ন্যুতে লিভারপুলের বিপক্ষে বার্সেলোনা কোচের রক্ষণাত্মক ট্যাকটিকসের কোন প্রয়োজন ছিলো না। আর তীরে এসে তরী ডোবানোর অভ্যাস বার্সেলোনার বহুদিনের। শেষ পর্যন্ত বহুল প্রত্যাশিত চ্যাম্পিয়নস লিগ মেসি জিততে না পারলেও, সেখানে তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের আশে-পাশে দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি আসতে পারেননি।

গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসি ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে  © Michael Regan/Getty images

ব্যক্তিগতভাবে সাফল্যের একটি বছর পার করার পরও মেসির তিক্ত স্মৃতি কিন্তু কম নয়। লা লিগা ছাড়া কোন শিরোপা নেই তার। চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের বিপক্ষে লজ্জাজনক হারের পর কোপা ডেল রে ফাইনালও হেরে বসে কাতালানরা। ফলে ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন এক ধাক্কাতে স্মৃতি। গতবছর কোপা আমেরিকাও অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। নিজের সেরা ফর্ম নিয়েও হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে ফেরত আসতে হয়েছিলো তাকে। আর্জেন্টিনা সেমি-ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে হেরে বাদ পড়ে। আর সেমি-ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে যাবার পেছনেও তার তেমন কৃতিত্ব ছিলো না। তবে এক মৌসুমে ৫১টি গোল ও ১৯টি অ্যাসিস্ট, চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা ফরোয়ার্ডের পুরস্কার, গত মৌসুমের গোল্ডেন বুট ও সর্বোপরি, পুরো বছরের ফর্ম তো অগ্রাহ্য করা যায় না!

অ্যানফিল্ডে বিধ্বস্ত হবার দিন © Shaun Botterill/Getty images

এবার একটু ভিন্ন দিকে আসি। বর্ষসেরার সেরা তিনে একজন ডিফেন্ডারকে সচারচর দেখা যায় না। রিয়াল মাদ্রিদ যখন টানা শিরোপা জেতায় মগ্ন ছিলো। তাদের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার সার্জিও রামোস কিন্তু কোন সংস্করণের সেরা তিনে জায়গা পাননি। অথচ এক মৌসুমের পারফরম্যান্সে ভার্জিল ভ্যান ডাইক নিজেকে বর্ষসেরার তালিকায় নিয়ে গেছেন। ভ্যান ডাইক যেন লিভারপুল দুর্গের পরিখা। তাকে পার হওয়াই দুষ্কর, গোল দেওয়া তো পরের কথা। প্রিমিয়ার লিগে বাঘা বাঘা স্ট্রাইকার গত মৌসুমে ভ্যান ডাইককে ফাঁকি দিয়ে ড্রিবল গোল করতে সক্ষম হয়নি। চ্যাম্পিয়নস লিগেও গল্প একই। লিওনেল মেসি থেকে হ্যারি কেইন, কেউ সক্ষম হননি এই অসাধ্য সাধন করতে।

প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ ক্লিনশীট ধরে রাখার রেকর্ড লিভারপুলের। ভ্যান ডাইক গত মৌসুমে খেলেছেন ৫৯ ম্যাচ তাতে ২৮টিতে তার দল কোন গোল হজম করেনি। গোল করেছেন ৯টি, অ্যাসিস্টও আছে ৪টি। লিভারপুলের হয়ে গত মৌসুমে তার চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেননি কেউ। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৭৩.৭ শতাংশ এরিয়াল ডুয়েল জিতেছেন এই ডাচ ডিফেন্ডার। গতবার প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে কম হজম করেছিল লিভারপুল। তাতে ভ্যান ডাইকের অবদানই ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রিমিয়ার লিগটা শেষ পর্যন্ত হাতছাড়া হলেও তার দারুণ পারফরম্যান্সের সাথে যোগ হয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার মর্যাদা।

উয়েফা বর্ষসেরা পুরস্কার হাতে ভ্যান ডাইক © Harold Cunnighum – UEFA

প্রিমিয়ার লিগে দারুণ সাফল্য ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতায় ভ্যান ডাইক কিছুদিন আগেই জিতেছিলেন উয়েফা বর্ষসেরার পুরস্কার। কিন্তু ফিফা বর্ষসেরা নির্বাচিত করার পন্থা একটু ভিন্ন। এখানে জাতীয় দলের দলনেতা, কোচ ও সমর্থকদের ভোট গ্রহণ করা হয়। হল্যান্ড বিশ্বকাপে ছিলো না, জাতীয় দলের হয়ে ভ্যান ডাইকের কোন কৃতিত্ব সেভাবে নজরে আসে না। আর সব মিলিয়ে পুরো একটি মৌসুম অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা মেসিকে এগিয়ে রেখেছে সবাই। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি উভয়ই লিগ জিতেছিলেন নিজ ক্লাবের হয়ে। তবে দারুণ একটি মৌসুম পার করার পর লিভারপুল যদি প্রিমিয়ার লিগ জিততে পারত, তাতে ফিফা বর্ষসেরাতেও ভ্যান ডাইকের ভাগ্য খুলে যাবার সুযোগ ছিলো।

লিওনেল মেসি সবসময় চেয়েছেন মৌসুম শেষে দলগতভাবে শিরোপা জিততে। নিজ থেকে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। কিন্তু দলগত রসায়নের বিষয়টি আর আসেনি। মৌসুম শেষে তাই মেসির ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সই বেশি রঙিন। বর্ষসেরার রুপালি ট্রফিটি হাতে নিয়ে শোনালেন সেই পুরনো আসার বাণী,পুরনো বিশ্বাসের মূলমন্ত্র। মেসি প্রথমে জানালেন তার ইনজুরি নিয়ে,

“সবাই আমার ইনজুরি নিয়ে প্রশ্ন করছে। প্রায় দুই মাসের মত খেলা থেকে দূরে ছিলাম। ওজন কিছুটা বেড়েছে, নিজেকে ভারি লাগছে, ছন্দটা পাচ্ছি না।”

এরপর তার বিশ্বাসের কথা, দলগত ফুটবলের কথা। বর্ষসেরার ট্রফিটি হাতে নিয়ে তিনি বলেন,

দলীয় সাফল্য আর দলগত পুরস্কার আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে “দ্য বেস্ট” পুরস্কারের মুহূর্তটিও আমার জন্য দারুণ।”

হাতছাড়া হওয়া দুটো শিরোপা মেসির ক্যারিয়ারের দারুণ সংযোজন হতে পারত। কিন্তু মেসি নিজেকে রাঙিয়েছেন নিজের দক্ষতায়। রাশিয়া বিশ্বকাপের পর থেকে তার দলনেতা হবার ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিস্তর সমালোচনা শিকার হন তিনি। হয়ত নেতৃত্ব নেবার মত খেলোয়াড় মেসি নন। কিন্তু নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস যে তিনি হারিয়ে ফেলেন না, তার প্রমাণ দীর্ঘ সময় পরেও তিনি দিলেন। রোনালদোর টানা তিন বছরের খুনে পারফরম্যান্স, বিশ্বকাপ ও কোপা আমেরিকা পরবর্তী সমালোচনা, চ্যাম্পিয়নস লিগ ব্যর্থতার পরও মেসি নিজের রাস্তা থেকে সরে যাননি। নিজের হারানো সিংহাসন ফেরত নিতে দৃঢ় প্রত্যয় ছিলো তার। এবং সেই ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করেই মেসি স্বরূপে ফিরলেন। বিশ্বসেরা পুরস্কারের খেতাব মেসিকে নতুনভাবে আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। প্রায় জিতে যাওয়া দুটো শিরোপা হারিয়ে ও প্রায় ২ মাস ইনজুরির পর মেসির জন্য এটা ভীষণ প্রয়োজন ছিলো। তিনি নিজেও যে চিন্তিত বর্তমান বার্সেলোনাকে নিয়ে, সেটা তার পুরস্কার নেবার মঞ্চে বলা বক্তব্যতে পরিষ্কার বোঝা গেছে।

৬ষ্ঠ বারের মত ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কার জিতলেন মেসি ©  Simon Hofmann – FIFA

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমের পর লিগে সবচেয়ে বাজে শুরু করেছে বার্সেলোনা। প্রথম ৫ ম্যাচ থেকে কোনমতে মাত্র ৭ পয়েন্ট পেয়েছে তারা। খেলার ধরণেও বার্সাকে বড্ড অচেনা দেখাচ্ছে এ মৌসুমে। বার্সেলোনার অস্থির সময়ে স্বস্তির ছায়া হয়ে এসেছে এই মেসির বর্ষসেরার পুরস্কার। মেসি নিজেও আত্মবিশ্বাসী। হয়ত এই আত্মবিশ্বাসই পুরো বার্সাকে নিজেদের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

Related Articles