Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ম্যানচেস্টার সিটি: নতুন মৌসুমে সাফল্য ও ব্যর্থতার যুক্তি

যেখানে শেষ সেখানেই শুরু। এ কথাটি যেন একদম হাতে-কলমে করে দেখিয়ে দিলো পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। গত মৌসুম থেকে শুরু করা যাক। প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলো কয়েক ম্যাচ হাতে রেখেই। তা-ও সিটিজেনরা প্রিমিয়ার লিগ ঘরে তুললো সাউদাম্পটনের সাথে শেষ ম্যাচ জিতেই। নতুন মৌসুমেও একই জয়ের ধারা। তারা চলতি মৌসুম শুরু করেছে চেলসিকে হারিয়ে কমিউনিটি শিল্ড জিতে। পাশাপাশি করেছে আর্সেনালকে হারিয়েও প্রিমিয়ার লিগে শুভ সূচনাও।

কেন এ জয়ের ধারাবাহিকতা? এ ধারা কি বজায় থাকবে সদ্য শুরু হওয়া মৌসুমেও?

সিটিজেনদের মৌসুমের প্রথম শিরোপা, কমিউনিটি শিল্ড; Image Source: fcmcwatch.com

পেপ গার্দিওলা এবং স্কোয়াড ডেপথ

একটি দলে যেখানে গার্দিওলার খেলার ধরনের সাথে খাপ খাওয়ানোর মতো পর্যাপ্ত খেলোয়াড় নেই, সেই দলের দায়িত্ব তাকে দিলে তিনি কতটুকু উন্নতি করতে পারবেন? সাফল্যের সম্ভাবনা কম। কারণ পেপ গার্দিওলা কোনো দলের স্কোয়াড বা সেই দলের খেলার ধরনের মতো করে খেলেন না, দলকে খেলান নিজের ধরনের সাথে মানিয়ে নিয়ে। তাই তার দরকার পর্যাপ্ত একটি স্কোয়াড, যেখানে সকল খেলোয়াড় তার ফুটবল দর্শনের সাথে পরিচিত।

“গার্দিওলার সিস্টেমের সাথে মানিয়ে নিতে না পারলে স্কোয়াডে তার জায়গা নেই” বলে একটা কথা ফুটবল মহলে শোনা যায়। আসলেই কিন্তু তা-ই। ম্যান সিটি কোচ আগের সিটিজেনদের বদলে তার মতো করে স্কোয়াড গড়েছেন। জো হার্ট, গ্যারি ক্লিশি, পাবলো জাবালেতা, কোলারভ বা বাকারি সানিয়ার মতো খেলোয়াড় তার সাথে মানানসই না বলে তাদের বিক্রি করে দিতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি।

সিটিজেনদের কারিগর পেপ গার্দিওলা; Image Source: Getty Image

৩য় মৌসুমে এসে গার্দিওলা পূর্ণাঙ্গ একটি দল গড়তে পেরেছেন, যেখানে সবাই তার দর্শনের অনুসারী। মূল একাদশ বাদে তার দলের বেঞ্চ প্রিমিয়ার লিগের কোনো কোনো দলের মূল একাদশ অপেক্ষা শক্তিশালী। তাই দলের তারকা খেলোয়াড়দেরকে টানা খেলার ধকল বা ইনজুরির ঝুঁকি নিতে হয় না। প্রিমিয়ার লিগে টিকে থাকতে হলে ধারাবাহিক ভালো খেলার পাশাপাশি এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে কারণেই প্রিমিয়ার লিগে গত মৌসুমে সিটিজেনরা ছিল অপ্রতিরোধ্য।

গার্দিওলার দলের শক্তির মাত্রা সম্পূর্ণ করতে যে সাইনিংয়ের প্রয়োজন ছিল তা তিনি এবার করে ফেলেছেন। রাহিম স্টার্লিং মাঝেমাঝেই শিশুতোষ ভুল করেন। যদিও সার্জিও আগুয়েরো বা লিরয় সানে টানা গোল করার কারণে তার ভুলগুলো সেভাবে স্পষ্ট হয় না। তাছাড়া তার বিশ্রামেরও দরকার আছে। দলে সেভাবে আর কোনো উইংগার না থাকার কারণে সানে আর স্টার্লিংয়ের টানা ম্যাচ খেলার ধকল নিতে হচ্ছিলো। তাই সিটি শুধু এবার রিয়াদ মাহরেজকে কিনেছে। যিনি লেফট-উইং ও রাইট-উইং ছাড়াও অ্যাটাকিং মিডফিল্ডের শক্তি বাড়াতে সহায়তা করতে পারবেন।

এবারের দল বদলের মৌসুমে ম্যান সিটির একমাত্র সাইনিং রিয়াদ মাহরেজ; Image Source: Getty Image

অপ্রতিরোধ্য মাঝমাঠ

গত বছর যদি বলা হতো, কেভিন ডি ব্রুইন ও ডেভিড সিলভা একসাথে ম্যানচেস্টার সিটির মধ্যভাগে খেলবে, তাতে কেউ খুব একটা অবাক হতেন না। কিন্তু এ দুজনের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে খেলার কথা শুনে ফুটবলবোদ্ধাদের মুখের অভিব্যক্তি কেমন হতো? বক্স-টু-বক্স খেলোয়াড় ফার্নান্দিনহোর একটু সামনে ডি ব্রুইন ও সিলভাকে খেলিয়েছেন পেপ গার্দিওলা। অথচ তাদের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে খেলার অভ্যাস কখনোই ছিল না। কারণ তারা তাদের দেশের হয়ে নম্বর ১০ এর ভূমিকাতেই সবসময় খেলেন।

কেভিন ডি ব্রুইন- দ্য হার্ট অফ ম্যান সিটি; Image Source: Getty Image

গার্দিওলা তার দলের কোনো এক খেলোয়াড়কে মস্তিষ্কের ভূমিকা দেন, যেখান থেকে সবকিছুর শুরু হবে। কেভিন ডি ব্রুইন ছিলেন তার সেই ইঞ্জিন, যাকে কেন্দ্র করে এবং তার সাহায্যে ম্যানচেস্টার সিটির অপ্রতিরোধ্য মধ্যমাঠ ও আক্রমণ তৈরি হতো। তবে এ মৌসুমের শুরুতেই সুরের সেই তাল ধরে রাখা কিছুটা কষ্টসাধ্য। কেভিন ডি ব্রুইন ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থাকবেন প্রায় ৩ মাস। তার পরিবর্তে খেলবেন বার্নার্ডো সিলভা। সিলভা মিডফিল্ডার হিসেবে যথেষ্ট প্রতিভাবান। কিন্তু তিনি কি ডি ব্রুইনের সেই চরিত্রে খেলতে পারবেন? তিনি ভালো কিছু করতে না পারলে ৩ মাসেই সিটির অনেক স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ৯০ দিন অথবা ১০টি ম্যাচ কোনো দলের স্বপ্ন ভেঙে দিতে অথবা গড়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।

ফার্নান্দিনহোর বয়স সমস্যা

প্রিমিয়ার লিগে তিনজন মিডফিল্ডার নিয়ে স্কোয়াড সাজালে অন্তত দুজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার থাকে সেই দলে। একজন পূর্ণাঙ্গ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার, আরেকজন আক্রমণের পাশাপাশি একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের মতো খেলতেও পারদর্শী। কিন্তু ব্যতিক্রম গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। তার দলে কেভিন ডি ব্রুইন ও ডেভিড সিলভা খেলেছেন সেন্ট্রাল-মিডফিল্ডে, ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড পজিশন থেকে একটু উপরে। আর একজন মাত্র ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার খেলতেন গার্দিওলার সিস্টেমে, তিনি ফার্নান্দিনহো।

ফার্নান্দিনহো কি কোচের ভরসার প্রতিদান দিতে পারবেন? Image Source: Getty Image

ফার্নান্দিনহো বক্স-টু-বক্স খেলোয়াড় হলেও রক্ষণে তার পারদর্শিতা লক্ষণীয়। মাঠে তিনি দুই সেন্ট্রাল-মিডফিল্ডের পেছনে থেকে আক্রমণ ও রক্ষণে শৃঙ্খলা আনতেন। এ জাতীয় খেলোয়াড়েরা মাঠে কোনো কারুকাজ দেখান না বলে ঠিকমতো নজরে আসেন না। কিন্তু গত মৌসুমে সিটিজেনদের সাফল্যে ফার্নান্দিনহোর অন্যতম ভূমিকা ছিল।

ফুটবলারদের জন্য বয়স ভয়ংকর একটি সমস্যা। ফার্নান্দিনহোর বয়স বর্তমানে ৩৩। আগের সেই গতি, বল কন্ট্রোল, ট্যাকল বা পাসিংয়ের মতো কর্মদক্ষতা বয়সের সাথে অনেকটাই কমে গেছে। তাই ৩৩ বছর বয়সী ফার্নান্দিনহো এ মৌসুমে কতটুকু সাফল্য পাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। যদিও তার পরিবর্তে ইল্কায় গুন্ডোগান খেলার জন্য সুযোগ পাবেন। তবে ফার্নান্দিনহোর মতো বক্স-টু-বক্স খেলার দক্ষতা তার নেই।

ফুল-ব্যাকের হালহকিকত

গার্দিওলা এসেই দলে থাকা পুরনো ফুল-ব্যাকদের রাতারাতি বদলে ফেলেন। জাবালেতা, কোলারভ, সানিয়া, ক্লিশি সবাই ছেড়ে গেলেন ম্যান সিটিকে। কারণ গার্দিওলার ট্যাকটিসের সাথে তারা মানানসই নন। জাবালেতা বা কোলারভ দুজনেই পজিশন ধরে রেখে মাঝমাঠে বল পাঠানোর মতো দক্ষতা রাখেন না। গার্দিওলা নিয়ে আসলেন কাইল ওয়াকার ও বেনজামিন মেন্ডিকে। এছাড়াও মাদ্রিদফ্লপ দানিলোকে কিনলেন উভয় পজিশনে খেলার জন্য। কিন্তু গত মৌসুমে তা ঘটেনি। ওয়াকারই শুধু একলা সারাটা মৌসুম খেলেছেন, মেন্ডি প্রায় পুরো মৌসুম ছিলেন ইনজুরিতে।

গার্দিওলার ট্যাকটিসে অন্যতম ভূমিকা পালন করে এই ফুল-ব্যাক পজিশন। পজিশন ধরে রেখে মধ্যমাঠে পাস দেওয়া ও প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করে আক্রমণের জায়গা তৈরিই মূলত গার্দিওলার ট্যাকটিসে ফুল-ব্যাকদের ভূমিকা। এছাড়াও প্রতিপক্ষের প্রতি-আক্রমণের সময় তারা নিচে নেমে এসে রক্ষণেও সাহায্য করতে পারে। গত মৌসুমজুড়ে কাইল ওয়াকার যথাযথভাবে এ দায়িত্ব পালন করেছেন। ফাবিয়ান ডেলফ হতাশ না করলেও তার উপস্থিতি সেভাবে লক্ষণীয় ছিল না। কিন্তু এ মৌসুমে ফিরেছেন মেন্ডি। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচেই করেছেন জোড়া অ্যাসিস্ট। একপাশে কাইল ওয়াকার ও অন্যপাশে মেন্ডি থাকলে সিটিজেনদের আটকানোর সাধ্য কার!

বেনজামিন মেন্ডি; Image Source: fourfourtwo

কেভিন ডি ব্রুইনকে হারিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি প্রথমেই ধাক্কা খেয়েছে ঠিকই। কিন্তু এ পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ তাদের আছে পর্যাপ্ত। একটি পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড, ডাগআউটে পেপ গার্দিওলার মতো একজন টেকটিশিয়ান। আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে একটা সাফল্যময় মৌসুম পার করতে এর থেকে বেশি আর কী প্রয়োজন?

ফিচার ইমেজ: mcfcwatch.com

Related Articles