একটা তথ্য শুনলে আপনারা হয়তো কিছুটা অবাক হতে পারেন। বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটার খুব কাছাকাছি গেলেও কেউ চাইলেই সেটা স্পর্শ করতে পারে না! শুধুমাত্র ফিফার অফিসিয়াল, বিশ্বকাপজয়ী কোনো দলের সদস্য আর রাষ্ট্রপ্রধানদেরই এই ট্রফিতে স্পর্শ করার অনুমতি রয়েছে। এ কারণে অনেক বড় বড় মানুষকেই বিশ্বকাপ ট্রফির সাথে ছবি তুলতে দেখা গেলেও সেই ট্রফি হাতে নিয়ে ছবি তুলতে দেখা যায় না।
বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরার স্বপ্ন ফুটবলের সাথে যুক্ত প্রতিটি মানুষেরই থাকে। কারো স্বপ্ন পূরণ হয়, কারো স্বপ্ন আবার অধরাই থেকে যায়। কিন্তু আজ আমরা এমন একজন মানুষের কথা জানবো, যিনি এক কিংবা দুবার নয়, চারবার বিশ্বকাপজয়ী দলের অংশ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন! তিনি ব্রাজিলের কিংবদন্তী ফুটবলার এবং কোচ মারিও জাগালো।
১৯৩১ সালের ৯ আগস্ট ব্রাজিলের ম্যাসিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন মারিও জাগালো। ১৯৪৮ সালে আমেরিকা ফুটবল ক্লাবের হয়ে পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু করেন তিনি। ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার জাগালো বেশ দক্ষ মিডফিল্ডার ছিলেন। ইনসাইড ফরোয়ার্ড হিসেবেই মূলত খেলতেন, তবে দলের প্রয়োজনে রক্ষণভাগে সাহায্য করতে নিচে নেমে আসতেন।
১৯৪৯ সালে ব্রাজিলের বিখ্যাত ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গোতে যোগ দেন তিনি। ফ্ল্যামেঙ্গোর হয়ে খেলার সময়েই ১৯৫৮ বিশ্বকাপের অল্প কিছুদিন আগে ব্রাজিল দলে ডাক পান। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচে ভালো পারফর্ম করায় বিশ্বকাপ দলেও জায়গা পেয়ে যান।
সেই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কোচ ভিসেন্তে ফিওলা তার দলকে ৪-২-৪ ফর্মেশনে খেলাচ্ছিলেন। সেই দলে জাগালো মূলত লেফট উইঙ্গার হিসেবেই খেলতেন। ১৯৫৮ বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলে লেফটব্যাক হিসেবে খেলতেন নিল্টন সান্তোস। এই নিল্টন সান্তোস ফুলব্যাকদের আক্রমণে ওঠার ক্ষেত্রে সেসময়ে একধরনের বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। নিল্টন যাতে স্বাধীনভাবে আক্রমণে যেতে পারেন, এজন্য এমন একজন উইঙ্গার দরকার ছিল যে প্রয়োজনের সময়ে রক্ষণে নেমে নিল্টনের রেখে যাওয়া জায়গা কভার করতে পারবে। এই কাজটা জাগালো খুব ভালোভাবে করতেন। এ কারণে ঐ বিশ্বকাপ দলে জাগালোর জায়গা একদম পাকা হয়ে যায়।
খেলোয়াড়ি জীবনে মারিও জাগালো; Image Source : Goal.com
১৯৫৮ বিশ্বকাপ ক্যাম্পেইনে জাগালো ব্রাজিল দলের এতটাই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে যান যে, ব্রাজিলের হয়ে সেই আসরে প্রতিটি মিনিটেই মাঠে ছিলেন তিনি। পেলে, ভাভা, গারিঞ্চা, দিদি, জাগালোদের পারফর্মেন্সে ভর করে সেই আসরের ফাইনালে চলে যায় ব্রাজিল, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক সুইডেন। ফাইনালে ৪ মিনিটে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়লেও শেষপর্যন্ত সুইডেনকে ৫-২ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ জয় করে ব্রাজিল। সেলেকাওদের সেই ঐতিহাসিক জয়ে ৪র্থ গোলটি করেন জাগালো। এই গোলের ব্যাপারে তিনি বলেন,
সেদিন দলের ৪র্থ গোলটি আমি করেছিলাম। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে একটা কর্নার ক্লিয়ার করতে গিয়ে এক সুইডিশ ডিফেন্ডার দিদির পায়ে বল তুলে দেন। দিদি বলটা ঠিকমত স্পর্শ করতে পারেনি, ফলে বল চলে আসে আমার কাছে। আমার ঠিক সামনেই সুইডিশ গোলরক্ষক দাঁড়িয়ে ছিল, আমি তার পায়ের ফাঁকা লক্ষ্য করেই শট করলাম এবং বাঁ প্রান্ত দিয়ে বলটি জালে জড়িয়ে গেলো!
ফাইনালে জাগালোর সেই গোলটি; Image Source : The Sun
১৯৫৮ সালেই ফ্ল্যামেঙ্গো ছেড়ে বোটাফোগোতে যোগ দেন জাগালো। সেখানেও নিজের ফর্ম ধরে রেখেছিলেন তিনি, ফলে ১৯৬২ বিশ্বকাপ দলেও তাকে রাখা হয়েছিলো। এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কোচ ছিলেন আয়মোর মোরেইরা। ফিউলার মতো মোরেইরাও দলকে ৪-২-৪ ফর্মেশনে খেলাতেন। ফলে আগের সেই লেফট উইঙ্গার ভূমিকাতেই এই বিশ্বকাপে খেলতে থাকেন জাগালো। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। এ ম্যাচে দলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন জাগালো। পুরো আসরে আর কোনো গোল তিনি পাননি, তবে গোল না পেলেও সেই আসরে বেশ ভালো খেলে ব্রাজিলের টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ে ভূমিকা রাখেন তিনি।
১৯৬২ বিশ্বকাপে জাগালো; Image Source : CBF
১৯৬২ বিশ্বকাপের পরেই ঘন ঘন ইনজুরিতে পড়ার কারণে জাগালোর ক্যারিয়ার বারবার বিঘ্নিত হতে থাকে। শেষপর্যন্ত ১৯৬৫ সালে ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। অবসরের পরেই কোচ হিসেবে কাজ করা শুরু করেন জাগালো। কোচ হিসেবে নিজের খেলোয়াড়ি ক্লাব বোটাফোগোতেই যোগ দেন। ১৯৬৭ সালে স্বল্প মেয়াদে ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করলেও বড় দায়িত্ব পান ১৯৭০ সালে। বিশ্বকাপ শুরুর অল্প কিছুদিন আগে জোয়াও সালদানহোকে কোচের পদ থেকে সরিয়ে জাগালোকে দায়িত্ব দেয় সিবিএফ। যদিও সালদানহোর অধীনে ব্রাজিল ভালোই করছিলো, কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর অল্প কিছুদিন আগে তৎকালীন ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় চাকরি হারাতে হয় সালদানহোকে।
সালদানহোর বদলে জাগালো যখন দায়িত্বে এলেন, তখন খুব বেশি পরিবর্তন আনার সুযোগ আসলে ছিল না। তবুও স্বল্প সময়ে বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে শরীরনির্ভর ফুটবলের কাছে হার মানতে হয়েছিলো সেলেকাওদের, এ কারণে খেলোয়াড়দের শারীরিক দক্ষতার দিকে আলাদা নজর দেওয়ার জন্য কোচিং স্টাফে পাহেইরা ও কৌতিনহোকে নিয়ে আসেন জাগালো। তাছাড়া দল সাজানোর ক্ষেত্রেও সেবার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন তিনি। সেই আসরে দলকে ৪-২-৪ ফর্মেশনে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু এই ফর্মেশনে জারসন আর রিভেলিনোকে একসাথে খেলানো সম্ভব ছিল না, অথচ দুজনই মূল দলে খেলার যোগ্যতা রাখেন। তখন জাগালো প্লেমেকার রিভেলিনোকে লেফট উইঙ্গার হিসেবে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেন, আর জারসনকে তার ন্যাচারাল পজিশন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডেই জায়গা দেন।
কোচ হিসেবে মারিও জাগালো; Image Source : FIFA
জাগালোর সাজানো দলটি ১৯৭০ বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য দল হিসেবে আবির্ভূত হয়। সাফল্যের সাথে সুন্দর ফুটবলের অসাধারণ এক সমন্বয় দাঁড় করায় জাগালোর ব্রাজিল। টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে ফাইনালে চলে যায় তারা, যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল ইতালি। তখন ব্রাজিল ও ইতালি দুই দলের ঝুলিতেই দুটি করে বিশ্বকাপ। তাই যারা এই বিশ্বকাপ জিতবে, তারাই আজীবনের জন্য জুলে রিমে ট্রফির মালিকানা পেয়ে যাবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ইতালিকে ৪-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতে নেয় ব্রাজিল। আর এই জয়ের ফলে ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বজয়ের নজির গড়েন জাগালো।
১৯৭০ বিশ্বকাপ জয়ের পর অধিনায়ক আলবার্তোর সাথে ট্রফি হাতে জাগালো; Image Source : SoccerFootball
জাগালোর অধীনে ১৯৭০ সালের সেই দলটিকে সর্বকালের সেরা ফুটবল দল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সুন্দর ফুটবলের সাথে শতভাগ সাফল্য- এই দুইয়ের সমন্বয় জাগালোর সেই দলটিই সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পেরেছিলো। তবে ১৯৭৪ বিশ্বকাপের দলকে নিয়ে এই সাফল্য ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী দলের অনেক সদস্যই সেই বিশ্বকাপের পর অবসরে চলে গিয়েছিলেন। তাই ১৯৭৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলের শক্তিমত্তা অনেকখানি কমে গিয়েছিলো। এ কারণে সেবার দ্বিতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয় সেলেকাওদের। এই হারের কারণে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে মারিও জাগালোকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
জাতীয় দলের দায়িত্ব ছাড়ার পর বিভিন্ন মেয়াদে ফ্লুমিনেন্স, ফ্ল্যামেঙ্গো, বোটাফোগো, ভাস্কো দা গামার কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জাগালো। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ক্লাবেও কোচ হিসেবে ছিলেন। এদিকে সেই ১৯৭০ বিশ্বকাপের পর কিছুতেই আর বিশ্বকাপের দেখা পাচ্ছিলো না ব্রাজিল দল। বিশেষ করে সর্বকালের অন্যতম সেরা দল নিয়েও ১৯৮২ বিশ্বকাপে ব্যর্থ হওয়ার পর ব্রাজিলিয়ানরা খুব বেশি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। দীর্ঘদিনের বিশ্বকাপ খরা ঘুচাতে ১৯৯৪ বিশ্বকাপকে লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতে থাকে ব্রাজিল। সেই লক্ষ্যে কার্লোস আলবার্তো পাহেইরাকে কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর পাহেইরার সহকারী হয়ে ব্রাজিল দলে আবারো ফিরে আসেন জাগালো।
জাগালোর হাত ধরেই ১৯৭০ সালে প্রথম ব্রাজিল দলে এসেছিলেন পাহেইরা; Image Source : ESPN
পাহেইরার জাতীয় দলে প্রথম আসাটাও এই জাগালোর হাত ধরেই। তাই পাহেইরার উপর জাগালোর বেশ ভালো প্রভাব ছিল। অভিজ্ঞ জাগালোকে নিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের লক্ষ্যে দল সাজাতে থাকেন পাহেইরা। ২৪ বছরের বিশ্বকাপ খরা ঘোচাতে সুন্দর ফুটবলের কথা পেছনে রেখে সাফল্যনির্ভর ফুটবল খেলার পরিকল্পনা করেন এই দুজন। ব্রাজিলিয়ানরা এসব দেখে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেও ৪-৪-২ ফর্মেশনে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে বেশ ভালোই খেলছিলো ব্রাজিল। শেষপর্যন্ত এই ফলনির্ভর ফুটবল খেলেই ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে চতুর্থ বিশ্বকাপ ঘরে তুলে নেয় তারা। আর চারটি বিশ্বকাপজয়ী দলেরই সদস্য ছিলেন মারিও জাগালো। এসব দেখে অনেকে বলতে থাকেন, জাগালোর জন্মই যেন হয়েছে বিশ্বজয়ের জন্য।
১৯৯৪ বিশ্বকাপের পর পাহেইরা দলের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে সহকারী কোচের বদলে আবারো প্রধান কোচের দায়িত্ব পান জাগালো। এই মেয়াদেও ব্রাজিল দলকে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন জাগালো। রোমারিও ও রোনালদোকে সাথে নিয়ে জিতে নেন ১৯৯৭ কোপা আমেরিকা ও ১৯৯৭ কনফেডারেশন্স কাপের ট্রফি। ১৯৯৮ বিশ্বকাপেও হট ফেভারিট হিসেবে খেলতে গিয়েছিলো জাগালোর ব্রাজিল, কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর আগেই এক বিতর্কে জড়িয়ে যান জাগালো। আগের বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় রোমারিওকে ইনজুরির কারণে দলে রাখেননি জাগালো, কিন্তু রোমারিও দাবি করেন যে তিনি ফিট আছেন! রোমারিকে বাদ দেওয়া নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠে যায়।
তবে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ভালো খেলার কারণে সেই বিতর্ক থেমে যায়। রোনালদোর পারফর্মেন্সে ভর করে সেবার বেশ ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলো জাগালোর ব্রাজিল। নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে চলে যায় সেলেকাওরা, যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক ফ্রান্স। কিন্তু ফাইনালের আগে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে যান ব্রাজিলের প্রাণভোমরা রোনালদো! ফাইনালের আগে রোনালদো সুস্থ হবেন কি না এ ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি হয়। তবে শেষপর্যন্ত রোনালদোকে একাদশে রেখেছিলেন জাগালো, কিন্তু অসুস্থ রোনালদো সেদিন পুরো ম্যাচেই নিষ্প্রভ ছিল। মূল খেলোয়াড়ের এমন বিবর্ণ দিনে ব্রাজিলও ফাইনালে পাত্তা পায়নি, ফ্রান্সের কাছে হেরেছিলো ৩-০ গোলে। ম্যাচ হারার পর রোনালদোকে মাঠে নামানোর ব্যাপারে জাগালো বলেন,
আমি যদি রোনালদোকে সেদিন না নামাতাম আর ব্রাজিল হারতো, তাহলে সবাই বলতো রোনালদোকে না নামানোর জন্যই ব্রাজিল হেরেছে। তাছাড়া রোনালদো নিজে মাঠে নামার জন্য জোর করছিলো। তাই সেদিন রোনালদোকে একাদশে রাখা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না।
আসলে সেই বিশ্বকাপে ভাগ্যের কাছেই ব্রাজিল হেরে গিয়েছিলো। নইলে দুই সেরা খেলোয়াড় রোমারিও আর রোনালদো কেন এভাবে ইনজুরিতে পড়বেন? ভাগ্য একটু সহায় থাকলেই ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের পেন্টাজয়ের সাথে নিজেও পাঁচটি বিশ্বজয়ের সাক্ষী হয়ে অন্যরকম এক ইতিহাস গড়ে ফেলতে পারতেন জাগালো। তবে এরপরেও জাগালো যা গড়েছেন, সেটাও কম কিছু নয়। সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপজয়ী দলের অংশ হওয়ার রেকর্ডটা জাগালোর দখলেই। বিশ্বকাপজয়ী দলের অংশ হওয়ার রেকর্ডে ফুটবলের রাজা পেলে নিজেও জাগালোর চেয়ে পেছনে, কারণ জাগালোর চার বিশ্বকাপের বিপরীতে পেলে তিনটি বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। অর্থাৎ ব্রাজিল সব মিলিয়ে যে পাঁচটি বিশ্বকাপ জিতেছে, তার মধ্যে শুধুমাত্র একটি বিশ্বকাপেই জাগালোর কোনো ভূমিকা ছিল না।
এমন বর্ণীল রেকর্ডের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও মিডিয়া কিংবা দর্শকদের আলোচনায় মারিও জাগালোর নামটা সেভাবে আসে না। এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন,
আমার শো কেসে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ জয়ের মেডেল রয়েছে। একবার শুনলাম আমার এই কৃতিত্বের জন্য ব্রাজিলিয়ানরা মারাকানায় আমার নামে একটা প্রতিকৃতি করছে। আমি জানি না সেই প্রতিকৃতিটা ঠিক কোথায় আছে, হয়তো আমি মারা যাওয়ার পর সেই প্রতিকৃতিটা দৃশ্যমান হবে।
জাগালোর এই কথাটির মাধমে অনেক রূঢ় একটি সত্য উঠে এসেছে, গুণীজন মারা যাওয়ার আগে আমরা তার প্রাপ্য সম্মান দিতে পারি না। এই বছরের ৯ আগস্ট ৮৮ বছরে পা দিতে যাচ্ছেন এই গুণী মানুষটি। পেশাদার কোচ হিসেবে সেই ২০০১ সালেই অবসরে চলে গিয়েছেন, ফুটবল থেকে সেভাবে আর জাগালোর চাওয়া পাওয়ার হয়তো কিছু নেই। শেষ বয়সে এসে হলেও এই গুণী মানুষটি তার প্রাপ্য সম্মান পাবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ফিচার ইমেজ : ESPN
Download the Roar App
Share Your Reactions or Comments Below
fascinated3 Readers
informed7 Readers
happy1 Readers
sad2 Readers
angry0 Readers
amused2 Readers
রোর মিডিয়া হলো দক্ষিণ এশিয়ার একটি বহুভাষী মিডিয়া প্লাটফর্ম, দেশ ও মানবজাতির গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত নানা বিষয় নিয়ে যারা চমকপ্রদ সব কন্টেন্ট তৈরি করে থাকে, তুলে ধরে গবেষণালব্ধ ফলাফল। আমাদের সকল কন্টেন্টেরই লক্ষ্য থাকে পাঠক-দর্শকদের নতুন কিছু জানানো, নতুন করে ভাবতে শেখানো, এবং সর্বোপরি সমাজের জন্য ইতিবাচক কিছু করবার আহবান।