Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অবিশ্বাস্য বিরাটের অতিমানবীয় কীর্তি

অবাক করার মতো কোনো ঘটনা আমাদের চক্ষুবন্দী হলে আমরা তা এককথায় প্রকাশ করার জন্য বলি বিস্ময়কর। বিশ্বাসযোগ্য মনে না হলে অবিশ্বাস্য বলে থাকি। অবিশ্বাস্য শব্দটিও অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করার জন্য বলে থাকে। বর্তমানে বিরাট কোহলির ব্যাটিং ফর্ম দেখে যে কেউ তার জন্য উপযুক্ত বিশেষণের অভাব বোধ করতে পারেন। অবিশ্বাস্য, অসাধারণ, অতিমানবীয়, দুর্দান্ত কোনো বিশেষণ দিয়ে বিরাটের বিরাট ইনিংসগুলো বর্ণনা করা যায়। ভারতীয় ক্রিকেটের ঈশ্বরখ্যাত শচীন টেন্ডুলকারের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার শেষে অনেক ক্রিকেটপ্রেমী ধরেই নিয়েছিল তার কীর্তিগুলো বহাল থাকবে বহু বছর। এই প্রজন্মের কেউ হয়তো পারবে না। তবে সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে ঝড়ের গতিতে ছুটে চলছেন ‘কিং কোহলি।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেন্ডুলকারের শতকের শতক হাঁকানোর কীর্তি কয়েক বছর আগেও আকাশছোঁয়া মনে হচ্ছিলো। কিন্তু এখন উল্টো সংশয় দেখা দিয়েছে বিরাটের কত সময় লাগবে শতকের শতক হাঁকাতে। ইতোমধ্যে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫৬টি শতক হাঁকিয়েছেন। ওয়ানডেতে ৩৫টি এবং টেস্টে ২১টি।

Image Source: AFP

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডেতে এই সিরিজের আগে একটিও শতক হাঁকাতে পারেননি বিরাট কোহলি। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এগারোটি ওয়ানডে খেললেও শতক হাঁকাতে পারেননি তিনি। সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েছেন সিরিজের প্রথম ম্যাচেই। ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেললেন ১১২ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ১১৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে ভারত। এই ম্যাচে বিরাটের বিরাট ইনিংস খেলার সুযোগ ছিলো না। সেঞ্চুরিয়নে ৪৬* রানে অপরাজিত থেকে দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। সাধ ও সাধ্য দুটোই ছিলো। প্রতিপক্ষের রান সংখ্যা কম হওয়াতে শতক হাঁকানোর সুযোগ ছিলো না কোহলির। কেপটাউনে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে টসে জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই রোহিত শর্মা শূন্য রানে ফিরে গেলে ক্রিজে আসেন কোহলি। একপ্রান্ত আগলে রেখে ইনিংসের শেষপর্যন্ত টিকে থেকে ১৫৯ বলে ১২টি চার এবং দুটি ছয়ের মারে অপরাজিত ১৬০* রানে ইনিংস খেলেন। কোহলি ১৬০ রানের মধ্যে ১০০ রান সংগ্রহ দৌড়ে। কোনোরকম ঝুঁকি না নিয়ে বিরাট ইনিংস কীভাবে খেলতে হয় সেটিই প্রমাণ করলেন ‘বিরাট।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছয় ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তিনটিতেই শতক হাঁকিয়েছেন বিরাট কোহলি; Image Source: BCCI

বিরাট কোহলি জোহানসবার্গে ৭৫ রানের ইনিংস খেলার পর সিরিজের পঞ্চম ওয়ানডেতে পোর্ট এলিজাবেথে ৩৬ রান করে রোহিতের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটের শিকার হয়ে আরেকটি শতক মিস করার আফসোস করতেই পারেন। পোর্ট এলিজাবেথে বিরাট কোহলি শতক মিস করলেও ভারত সিরিজ হাত ছাড়া করেনি। ৭৩ রানের জয় তুলে নিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়ে ভারত। পঞ্চম ওয়ানডেতে সিরিজ নিশ্চিত করার পর সেঞ্চুরিয়ানে ছয় ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ নিয়ম রক্ষার ম্যাচ হয়ে দাঁড়ায়। শেষ ওয়ানডেতে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানান। পুরো সিরিজে চাহাল ও কুলদ্বীপের কাছে ধরাশায়ী হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা শেষ ওয়ানডেতে শারদুল ঠাকুরের তোপের মুখে পড়েন। দুই ওপেনারকে সাজঘরে ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি ম্যাচে চার উইকেট শিকার করেন শারদুল ঠাকুর।

ব্যাট হাতে পুরো সিরিজ জুড়ে দুর্দান্ত পারফরমেন্স করা বিরাট ফিল্ডিংয়েও রেকর্ড গড়েন। ইমরান তাহিরের ক্যাচ লুফে নেওয়ার মধ্য দিয়ে ওয়ানডেতে একশোটি ক্যাচ ধরেন। ২০৮ ম্যাচে ১০০ ক্যাচ তালুবন্দী করার মধ্য দিয়ে ভারতীয় ফিল্ডার হিসেবে সবচেয়ে দ্রুত ১০০ ক্যাচের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।

ভারতীয় ফিল্ডারদের মধ্যে দ্রুততম সময়ে একশোটি ক্যাচ ধরেন বিরাট কোহলি; Image Source: BCCI

ঠাকুর, বুমরাহ ও চাহালদের তোপের মুখে পড়ে স্বাগতিকরা মাত্র ২০৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিল এই বুঝি আরেকটি শতক হাতছাড়া হয়ে গেলো বিরাটের। রোহিত শর্মা ১৫ রান করে দলীয় ১৯ রানে ফিরে গেলে বিরাটের ডাই-হার্ড ফ্যানরা হয়তো মুচকি হাসি হেসে আরেকটি শতকের প্রহর গুনছিলেন। ব্যাট হাতে নামলেন, আরও একটি অসাধারণ ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করলেন। এমনটাই রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে কিং কোহলির। সেঞ্চুরিয়ানে শেষ ওয়ানডেতেও এর ব্যতিক্রম হলো না। ৯৬ বলে ১৯টি চার এবং দুটি ছয়ের মারে ১২৯* রানের ইনিংস খেলেন। এদিন ৮৮ রান করেছেন বাউন্ডারি থেকে। দলের মোট রানের ৬২.৬২% এসেছে তার ব্যাট থেকে। আজিঙ্কা রাহানের সাথে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১১৭ বলে ১২৫ রান যোগ করেছিলেন কোহলি, যার মধ্যে রাহানের অবদান ৫০ বলে মাত্র ৩৪*।

সেঞ্চুরিয়নে ১২৯* রানের ইনিংসের মধ্য দিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের নিজের ২০০তম ইনিংসে ৩৫তম শতক হাঁকালেন বিরাট। শচীনের ৩৫টি শতক হাঁকাতে ৩০৭ ইনিংস লেগেছিল।

অধিনায়ক হিসেবে ৪৬ ইনিংসে বিরাটের এটি ১৩তম শতক। অধিনায়ক হিসেবে তার চেয়ে বেশি শতক আছে শুধুমাত্র রিকি পন্টিংয়ের (২২টি)। বিরাট যে গতিতে এগোচ্ছেন, পন্টিংকে টপকাতে হয়তো খুব বেশি সময় লাগবে না। শেষ ১৪ ইনিংসে তিনি পাঁচটি শতক হাঁকিয়েছেন।

আরও একটি শতক হাঁকানোর পর উদযাপন করছেন বিরাট কোহলি; Image Source: BCCI

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছয় ম্যাচে ওয়ানডে সিরিজে বিরাট কোহলির পরিসংখ্যান দেখে যে কারও চোখ কপালে উঠতে পারে। তিনটি শতক এবং একটি অর্ধশতকের সাহায্যে ১৮৬.০০ ব্যাটিং গড়ে ৫৫৮ রান। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ভারতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে সবচেয়ে বেশি তিনটি শতক হাঁকানোর কীর্তিও গড়লেন এই সিরিজে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডও এখন তার দখলে। এর আগের রেকর্ডটি ছিলো তার সতীর্থ রোহিত শর্মার। রোহিত ২০১৩-১৪ মৌসুমে ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১২২.৭৫ ব্যাটিং গড়ে ৪৯১ রান করেছিলেন। একই সিরিজে জর্জ বেইলি ৯৫.৬০ ব্যাটিং গড়ে ৪৭৮ রান করে তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে এর আগে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রহ করেছিলেন ইংল্যান্ডের কেভিন পিটারসেন। তিনি ২০০৪-০৫ মৌসুমে সাত ম্যাচের সিরিজে ১৫১.৩৩ ব্যাটিং গড়ে তিনটি শতক এবং একটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪৫৪ রান করেছিলেন।

বিরাট কোহলি বছরের প্রথম ৪৭ দিনে ওয়ানডেতে পাঁচ শতাধিক রান অতিক্রম করলেন। এটিও একটি বিশ্বরেকর্ড। এর আগের রেকর্ডটি ছিলো শচীনের। তিনি ২০০৩ সালে বছরের প্রথম ৬৯ দিনে ৫০০ রান পূর্ণ করেছিলেন। বিরাট মূলত ১৭ দিনে ৫৫৮ রান করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছয় ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হয়েছিলো পহেলা ফেব্রুয়ারি। বিরাট কোহলির অবিশ্বাস্য ব্যাটিং পারফরমেন্সের পর সিরিজের ফলাফল স্বাভাবিকভাবে ভারতের অনুকূলে থাকবে । ছয় ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ভারত জিতলো ৫-১ এ! দক্ষিণ আফ্রিকা এর আগে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পাঁচ ম্যাচে পরাজিত হয়েছিলো ২০০১-০২ মৌসুমে রিকি পন্টিংয়ের অপরাজেয় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। বিরাটের অপ্রতিরোধ্য ভারতের কাছে আবারও এক সিরিজে পাঁচ হারের স্বাদ পেলো দক্ষিণ আফ্রিকা।

ফিচার ইমেজ – BCCI

Related Articles