Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মায়া বাড়াচ্ছেন মাশরাফি!

চর্তুদিকে রব উঠেছে। সায় না দিয়ে পারছেন না তিনিও। যদি-কিন্তু’র ছায়ায় আলোচনা আপাত থামানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু থামাতে পারছেন কই?

বলছি মাশরাফি বিন মুর্তজার কথা। নড়াইল এক্সপ্রেস যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিবাহযোগ্য কন্যা, ২২ গজ থেকে তাকে বিদায় জানাতে পারলেই যেন স্বস্তির অবগাহনে ডুববে বাংলাদেশ। তারই প্রস্তুতিটা যেন এখনই শুরু হয়ে গেছে। বিদায়ের সময় হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা বলেছেন তিনি। কিন্তু রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর মাশরাফির বিদায় লগ্নের ক্ষণগণনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন অনেকেই।

বিশ্বকাপের পর নিজের অবস্থান, ফর্ম এবং ফিটনেস দেখে রিভিউ করার অভিপ্রায় জানিয়েছিলেন মাশরাফি। সেসবে অবশ্য নজর নেই কারো। তার বিদায়ের মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অধীর অপেক্ষা সর্বত্র!

Image Credit: UNB

দেশের মাটিতে এটাই শেষ সিরিজ, শেষ ম্যাচ বিষয়ক আলোচনায় সরগরম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর মাঠে ফোকাস থাকবে না, ক্রিকেট-রাজনীতি একসঙ্গে চালানো ঠিক হবে না। গত কয়েকদিনে হরেকরকম আলোচনায় ভাস্বর মাশরাফির নাম।

কিন্তু মাশরাফির পারফরম্যান্স কি বলে?

৩৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সে তারুণ্যের দীপ্তি রীতিমতো ঠিকরে বের হচ্ছে। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসেও ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়, ম্যাচের সেরা বোলার হন তিনি। মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেনদের যুগেও পেসারদের মধ্যে সেরা মাশরাফিই। সাকিব-মিরাজরা থাকলেও বল হাতে নেতৃত্বের ঝান্ডা তারই হাতে।

রোববার মিরপুর স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজদের বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ানডেতে অসাধারণ বোলিং করেছেন মাশরাফি, ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে নিয়েছেন তিন উইকেট। যার সারমর্ম বলা যায়, সমালোচকদের মুখ চুনকালি।

Image Credit: Firoz Ahmed

এশিয়া কাপের পর ৪১ দিন মাঠের বাইরে। ফিরেই বল হাতে দুর্বার মাশরাফি। রোববার বোলিংয়ে এসে প্রথম বলে চার খেয়েছেন, আর নিজের শেষ বলে ছক্কা। এই চার-ছক্কা তার বোলিংয়ের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশমাত্র। কারণ ১০ ওভারে আর কোনো বাউন্ডারি দেননি তিনি। বাকি সময়ে ডানহাতি এই পেসারের বলে রীতিমতো নাকানি-চুবানি খেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। এই পেসারের বল পড়তে গিয়ে গলদঘর্ম হতে হয়েছে ক্যারিবিয়ানদের। নিয়ন্ত্রিত, আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে মাশরাফি যেন ফিরিয়ে এনেছিলেন বল হাতে তার সোনালী সময়কে।

দুই বলে দিয়েছেন ১০, বাকি ৫৮ বলে ২০ রান। তার ৪১ বলে কোনো রানই নিতে পারেনি ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। তিন স্পেলে বোলিং করেছেন, প্রথম স্পেলে সাত ওভারে ১৪ রান দিয়ে দুই উইকেট নিয়েছেন, পরে দুই ওভারের স্পেলে ৫ রান দিয়ে নেন এক উইকেট, তৃতীয় স্পেলে এক ওভারে দেন ১১ রান। ২১তম ওভারে ড্যারেন ব্র্যাভোকে ফিরিয়ে শুরু তার শিকার সংগ্রহ। মাশরাফির কাটারের জবাবে লং অফে ক্যাচ তুলেছিলেন ড্যারেন ব্র্যাভো (১৯), প্রায় ১০-১২ গজ দৌড়ে এসে বাজপাখির মতো উড়ন্ত অবস্থায় দর্শনীয় এক ক্যাচ ধরেছেন তামিম ইকবাল। তাই ব্র্যাভোর বিদায়ে বোলার মাশরাফির চেয়ে ফিল্ডার তামিমের অবদান অনেকাংশেই বেশি, সেটা বললে ভুল হবে না।

একপ্রান্ত আগলে খেলা শাই হোপকে (৪৩) ফেরান ২৫তম ওভারে। লেন্থ বলে হোপের স্লাইস ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিরাজের হাতে ধরা পড়ে। নিজের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম বলে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে তৃতীয় শিকার বানান মাশরাফি।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০০ ওয়ানডে খেলার গৌরব অর্জন করলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। দুর্দান্ত বোলিংয়ে নিজের মাইলফলকের ম্যাচটাও রাঙিয়েছেন তিনি। যেখানে বাংলাদেশে চলছে তার ক্যারিয়ারের শেষের আলোচনা, সেখানে বোলার মাশরাফি যেন বল হাতে প্রতিনিয়ত মায়া বাড়াচ্ছেন।

Image Credit: Md Manik/Dhaka Tribune

বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ১৮ বার ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় স্থানে মাশরাফি, ১২ বার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন তিনি। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৬২ বার ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার।

রোববারের পারফরম্যান্সে পেসার মাশরাফি গিয়েছেন আরও বড় উচ্চতায়। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ২৪তম সেরা বোলার এখন নড়াইল এক্সপ্রেস। ২৫৫ উইকেটধারী বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক টপকে গেছেন ভারতের কিংবদন্তি কপিল দেবকে (২৫৩)। ৫৩৪ উইকেট নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে মুত্তিয়া মুরালিধরন।

চলতি বছরে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে ১৮ ম্যাচে ২৩ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি। সর্বোচ্চ ১৬ ম্যাচে ২৭ উইকেট আছে মুস্তাফিজের। এছাড়া রুবেল ২১, সাকিব ১৯ এবং মিরাজ ১৩টি উইকেট নিয়েছেন (রোববার পর্যন্ত)।

পরিসংখ্যানের পাতা উল্টালেই মাশরাফির কার্যকারিতার চিত্র ফুটে উঠবে সবার সামনে। গত তিন বছরে (২০১৬-২০১৮) দেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী তিনি, নিয়েছেন ৫১ উইকেট। তারপর মুস্তাফিজ ৪৫, সাকিব ৩৯ এবং রুবেল ৩২টি উইকেট নিয়েছেন। এক বছর বাড়িয়ে চার করা হলেও (২০১৪-২০১৮) অক্ষুন্ন থাকছে নড়াইল এক্সপ্রেসের শীর্ষস্থান। মাশরাফি ৭২, মুস্তাফিজ ৭১, সাকিব ৬৩ এবং রুবেল ৫০টি উইকেট নিয়েছেন গত চার বছরে।

তার পিঠেই সওয়ার বাংলাদেশ; Image Credit: Getty Images

বাংলাদেশের বোলিং লাইনে মাশরাফির কার্যকারিতা প্রমাণিত সত্য। গত রোববার যেটি আবারও মঞ্চস্থ হয়েছে। এদিন বল হাতে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের প্রাণ সংহারী মূর্তি হয়ে ধরা দিয়েছিলেন নড়াইল এক্সপ্রেস। এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সকে অবশ্য মাঠের বাইরের ইস্যুগুলোর জবাব বলতে নারাজ তিনি। তার মতে, জবাব দেয়ার কিছু নেই।

প্রথম ওয়ানডে শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বলেছেন,

‘না, আসলে জবাবের কি আছে, জবাবের কিছু নেই। খারাপ হলে কথা বলতো, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জবাব দেয়ার কিছু নাই। ১৮ বছর ধরে খেলছি, এতো সহজে ফোকাস সরার তো কথা না। প্রত্যেকটা মানুষ নিজেকে খুব ভালো করে চেনে। আমি জানি না সবাই চিনে কিনা, কিন্তু আমি নিজেকে চিনি। তাই এত সহজে আসলে ফোকাস সরার কথা না। আর শেষ কিছু দিন তো আমি নিজেই চেষ্টা করে যাচ্ছি, বলটা যেখানে করতে চাই সেখানে ঠিকমতো করতে পারছি কিনা অনুশীলনে। আর জবাব-টবাবের কিছু নাই।’

বলা বাহুল্য, চোট নিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এই অনন্য বোলিং করেছেন মাশরাফি। এশিয়া কাপ থেকেই কুঁচকির চোট ছিল, নতুন করে যোগ হয়েছে হ্যামস্ট্রিং। দুই চোট সামলেই নিয়েছেন তিন উইকেট।

তিনি বলেছেন,

‘ইনজুরি জিম্বাবুয়ে সিরিজে যেটা ছিল, সেটা এখনও ক্যারি করছি। তিন উইকেট পেয়েছি বলে যে একেবারে সেরা অবস্থানে আছি তা না। সাথে আরও একটা ইনজুরি যোগ হয়েছে হ্যামস্ট্রিংয়ের, যেটা আমার নরমালি ছিল না। শারীরিকভাবে যে জিম্বাবুয়ে সিরিজ থেকে খুব ভালো আছি, তা না।’

বাংলাদেশের ১০০তম ওয়ানডেতে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন মাশরাফি। সেই ম্যাচে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ তার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে। এবার নিজের ব্যক্তিগত ২০০তম ম্যাচেও ম্যাচসেরা হলেন তিনি।

মাশরাফি বলেছেন,

‘১০০তম ম্যাচেরটা মনে আছে বোধহয় ভারতের সাথে ম্যাচটি ছিল, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ম্যাচটা ছিল। এটা অনেকদিন মনে ছিল, এখনও আছে। আজকেরটা (রোববার) তো এখনই হলো, ভোলার তো সুযোগ নাই। আসলে দুনিয়ায় কো-ইনসিডেন্ট বলে কিছু নাই, আমরা বানাই। ঘটনা ঘটে, এই আর কি।’

দলের সেরা বোলার এখনো তিনিই; Image Credit: UNB

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্যারিয়ার শুরুর পর থেকেই চোটের সঙ্গে সখ্যতা মাশরাফির। সাতবার অস্ত্রোপচারের টেবিলে গিয়েছেন। কখনও কখনও মাসের পর মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে। অনেক সময় তার ক্যারিয়ার নিয়েই জেগেছে শঙ্কা। এসবের কারণেই দেশের হয়ে অভিষেকের পর ওয়ানডেতে ১১১টি ম্যাচ মিস করেছেন তিনি।

সবার ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে বারবার চ্যাম্পিয়নের মতো ফিরে এসেছেন মাশরাফি। ১৭ বছর পার করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও টিকে আছেন, এবং সেটা মাশরাফি বলেই সম্ভব। হাঁটুতে বিশেষ নি-ক্যাপ পরে ৩৫ বছর পেরিয়েও তারুণ্যের ছন্দে ছুটছেন তিনি।

গত কয়েকদিনে ক্যারিয়ারের শেষ বলে যারা তাকে বিদায় দিতে উঠেপড়ে লেগেছেন, তাদেরকে অন্তত মাশরাফি জানিয়ে দিতে পেরেছেন যে, কারো দয়ায় নয়, নিজের যোগ্যতায় এবং পারফরম্যান্সেই খেলে যাচ্ছেন তিনি। রাজনীতি-ক্রিকেটও একসঙ্গে চলতে পারে সেটাও গত রোববার ক্রিকেট দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তবে এটুকু নিশ্চিত, মুস্তাফিজ-রুবেলদের এই যুগেও বল হাতে ক্ষুরধার এবং কার্যকর একজন মাশরাফিকে হারানোর ক্ষতিটা নেহায়েত কম হবে না বাংলাদেশের জন্য।

This article is in Bangla language. It is a feature about the countdown for the skipper of Bangladesh National Cricket Team to step back in an immature way. 

Featured Image Source: Munir Uz Zaman

Related Articles