Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সেরা দল সাফল্যের নিশ্চয়তা নয়

অতীতকে ভুলিয়ে দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ার প্রত্যয়, এক বুক আশা নিয়ে বিশ্বকাপ মিশনে ইংল্যান্ড পাড়ি জমিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে ১৫ স্বপ্ন সারথী বিশ্বকাপের ময়দানে দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। বড় কোনো বিতর্ক ছাড়াই গঠন করা হয়েছে বিশ্বকাপ দল। সন্দেহাতীতভাবে দলটার সাহসিকতা, লড়াকু মানসিকতা, অদম্য শক্তি রুপে আত্মপ্রকাশের মূলে পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার। তাদের বাইরেও একাধিক বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে কয়েকজনের। দলে আছে তারুণ্যের বারুদও। প্রথমবার বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া সাত তরুণ তুর্কী।

বিশ্বকাপে ষষ্ঠবার অংশ নেবে বাংলাদেশ। আগের পাঁচবারে সর্বোচ্চ সাফল্য কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। ২০১৫ বিশ্বকাপে যেই অর্জন ধরা দিয়েছিল। ক্রিকেট বিশ্লেষক, সাবেক ক্রিকেটারসহ এক বাক্যে বলছেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নুদের দেয়া এবারের দলটাই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা দল। অভিজ্ঞতা, তারুণ্যের দারুণ সম্মিলন রয়েছে দলে। এই ফরম্যাটে ক্রমাগত উন্নতি, ধারাবাহিক পারফরম্যান্স মিলে টাইগারদের নিয়ে প্রত্যাশার পারদ এখন অনেক উঁচুতে।

খোদ বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিশ্বাস করেন, এবারই বাংলাদেশের সেরা সময়। বিশ্বকাপ বিষয়ক আলোচনায় অনেকবারই নড়াইল এক্সপ্রেস সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডায় বলেছেন, এবার বিশ্বকাপে আমরা কেন যাবো? সেমিফাইনাল খেলতে, প্রথম পর্ব থেকে চলে আসতে? কে কী ভাবে, জানি না। আমি মনে করি, এই চিন্তা করে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। অনেক হয়েছে, এবার যেতে হবে বড় টার্গেট নিয়ে। ছোটখাটো কিছু, সম্মানজনক কিছু’র চিন্তা করে লাভ নেই। বিশ্বকাপে গেলে আপনাকে ফাইনালে খেলার চিন্তা করে যেতে হবে। ট্রফি ভাগ্যের বিষয়। আমরা কী পারি না পারি, এসব ভেবে হবে না। চিন্তা করতে হবে, এটাই আমাদের সেরা সময়।

তবে মাশরাফি এটাও বলেছেন, এই সেরা দলই সাফল্যের নিশ্চয়তা নয়। তার মতে, কাগজে-কলমে, কথায়-আলোচনায় সেরা দল হওয়ার চেয়ে মাঠের সেরা দল হওয়াটাই মূল লক্ষ্য। মাঠে যারা ভালো করে, তারাই আসল সেরা দল, ভালো দল। মাশরাফির চাওয়া, বাংলাদেশ যেন মাঠের সেরা দল হিসেবেই আবির্ভূত হয়।

দেশ ছাড়ার আগে; Image Credit: DhakaTimes24

দেশ ছাড়ার আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সেরা দল বিষয়ক আলোচনা সম্পর্কে বাংলাদেশের অধিনায়ক বলেছেন,

‘সেরা দল, এইটা গুরুত্বপূর্ণ না। এশিয়া কাপে এই দল নিয়েই গিয়েছিলাম। ট্রফি জিততে পারিনি, সেরা দলই ছিলাম। শেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেমিফাইনাল খেলেছিলাম। খুব আগের বিষয় না। এই দলই ছিল। এই হাইপ তোলার কোনো প্রয়োজন নেই। দুই বছর আগে এই দলই খেলেছে। নতুন করে এক্সট্রা-অর্ডিনারি এমন কিছু তাদের ভেতর আসেনি যে তারা এই মুহূর্তে সেরা দল। সেরা দল সবসময় ভালো করে না। যারা মাঠে ভালো করে, তারাই ভালো করে।’

যেভাবে জুড়ে গেছে সেরা দলের তকমা

অতীতে বিশ্বকাপে ৩২ ম্যাচ খেলে ১১ জয়ের স্মৃতি রয়েছে টাইগারদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার বিশ্বকাপের টপ ফেভারিট স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও ভারত। সামর্থ্যের প্রতি শ্রদ্ধা রাখলেও বাংলাদেশকে নিয়ে এই মঞ্চে বড় কিছুর আশা হয়তো অনেকেই করে না। সমালোচক, বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন যা-ই হোক, অতীত পরিসংখ্যান বলে বড় টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের মাটি বাংলাদেশের জন্য বেশ পয়মন্ত। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এই তো, দুই বছর আগে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছিল মাশরাফি বাহিনী।

Image Credit: Getty Images

অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ক্রিকেটবিশ্ব তাকে শ্রদ্ধা, সম্মানের আসনেই দেখছে। পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতারের মতে, এই বিশ্বকাপের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি।

এটা অনস্বীকার্য যে, তার নেতৃত্বে বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন উচ্চতায় উঠেছে বাংলাদেশ, বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে। গত চার-পাঁচ বছরে অসামান্য সব সাফল্য এসেছে তার নেতৃত্বকালীন সময়ে। ২০১৫ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা, ওই বছরই ঘরের মাঠে ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ হারানো, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল অব্দি ঘরের মাঠে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জয়, দু’বার এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলা (২০১৬, ২০১৮), এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিতে খেলার মতো অনন্য অর্জন ধরা দিয়েছে মাশরাফির নেতৃত্বেই।

বর্তমান দলের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই এক যুগের বেশি সময় খেলছেন। একসঙ্গে ১০০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার গৌরবও অর্জন করেছেন তারা। ‘পঞ্চপান্ডব’ খেতাবটা এখন তাদের নামের পাশে সবসময় শোভা পাচ্ছে। অধিনায়ক মাশরাফি ১৮ বছরে ২০৯টি ওয়ানডে খেলেছেন, মুশফিক ২০৭, সাকিব ২০১, তামিম ১৯৫, মাহমুদউল্লাহ ১৭৭ ওয়ানডে খেলেছেন। মাহমুদউল্লাহ ছাড়া বাকি চারজনই এবার চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে নামবেন। ১০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা পেস বোলার রুবেল হোসেনও তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে যাবেন। ওয়ানডে ম্যাচ খেলার সেঞ্চুরি থেকে মাত্র চার ধাপ দূরে আছেন দ্রুতগতির এই বোলার।

শুধু ওয়ানডে খেলা, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিচরণই নয়, বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা বিচারেও এবার বাংলাদেশের অবস্থান সমৃদ্ধ। ইংল্যান্ড দলের মাঝে তাদের অধিনায়ক ইয়োন মরগান সর্বোচ্চ ১৮ ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বকাপে। ভারতীয় দলে ভিরাট কোহলি ১৭ ও মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ২০ ম্যাচ খেলেছেন। নিউ জিল্যান্ড দলে থাকা রস টেইলর ২৩ ম্যাচ, মার্টিন গাপটিল ১৭ ম্যাচ, উইলিয়ামসন ১৩ ম্যাচ খেলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা ১৫ ম্যাচ, ফাফ ডু প্লেসিস ১৪ ম্যাচ, জেপি ডুমিনি ১৩ ম্যাচ খেলেছেন। শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা ২২ ম্যাচ, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ১৫ ম্যাচ, থিসারা পেরেরা ১০ ম্যাচ খেলেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ক্রিস গেইল খেলেছেন ২৬ ম্যাচ। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে স্টিভেন স্মিথ ১৪ ম্যাচ, ডেভিড ওয়ার্নার ৮ ম্যাচ খেলছেন। পাকিস্তানের সরফরাজ আহমেদ, শোয়েব মালিক তিনটি করে ম্যাচ খেলেছেন। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে তামিম, সাকিব, মুশফিক ২১টি করে ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বকাপে। মাশরাফি ১৬, মাহমুদউল্লাহ ১০টি ম্যাচ খেলেছেন। বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতায়ও তাই টাইগাররা এগিয়ে থাকছে।

Image Source: Instagram

এছাড়াও দলে থাকা লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকাররা টপ অর্ডারে আগুনে ব্যাটিং করতে সিদ্ধহস্ত। মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেনরা বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য রাখেন। লোয়ার অর্ডারে দ্রুতলয়ে রান তোলার দায়িত্ব সাব্বির রহমানের। বোলিংয়ে স্পিন আক্রমণে সাকিবের সঙ্গে তরুণ মেহেদী হাসান মিরাজ আছেন। পেস আক্রমণে মাশরাফির বড় বাজি মুস্তাফিজুর রহমান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আর্বিভাবেই হইচই ফেলে দেয়া এই বাঁহাতি পেসার এখন পরিণত। বোলিংয়ে তার উপস্থিতি যোগাচ্ছে বড় আশা। ছন্দে থাকলে হাল সময়ে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম দুর্ভেদ্য পেস বোলার বাংলাদেশের এই তরুণ। গতিময় বোলিংয়ের পাশাপাশি ইনিংসের মাঝপথে উইকেট এনে দিতে পারঙ্গম রুবেল হোসেন। তাদের সঙ্গী পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। উন্নতির সোপানে থাকা এই তরুণ অলরাউন্ডার হতে পারেন বাংলাদেশের চমক। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও কিছু অবদান রাখার সামর্থ্য আছে তার। আনকোরা আবু জায়েদ রাহীকে নেয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে সুইং বোলিংয়ের চিন্তা করে। কারণ দুই দিকেই সুইং করতে পারেন তিনি। গত সিরিজে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনিও।

মানসিক প্রস্তুতিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক

Image Source: Prothom Alo

ফরম্যাট অনুযায়ী বিশ্বকাপের প্রথম পর্বেই নয়টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এমন লম্বা টুর্নামেন্টে তাই মানসিকতার দিক থেকে শক্ত হতে হবে দলকে। মাশরাফি বলেছেন,

‘অভিজ্ঞ ক্রিকেটার অনেক আছে বলে গত কয়েকবারের থেকে এবারের দলটাকে ভারসাম্যপূর্ণ বলা যায়। যারা জুনিয়র খেলোয়াড় আছে, ম্যাক্সিমামের ওয়ার্ল্ড কাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। এর মানে এই না যে, অভিজ্ঞতা থাকলে ভালো টুর্নামেন্ট খেলা যাবে। অবশ্যই একতাবদ্ধ থাকতে হবে। একটা টুর্নামেন্টে নয়টা ম্যাচ খেলতে হবে। সেগুলো হ্যান্ডেল করার জন্য মানসিকতা বেশি জরুরী। আপস অ্যান্ড ডাউনস থাকবে, কিন্তু সামনের ম্যাচে কীভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে, সেটা খুব জরুরী। আয়ারল্যান্ড থেকেই সেটা প্র্যাকটিস করতে হবে, যেন আমরা বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত থাকি এইসব পরিস্থিতি হ্যান্ডেল করার মতো।’

প্রয়োজন দর্শকদের সমর্থন

Image Credit: AP

‘দর্শকদের বিষয়ে একটা কথাই বলবো, আমার ব্যক্তিগত চাওয়া আপনারা পুরো দলকে সাপোর্ট দিবেন। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুতে ম্যাচের পর ম্যাচ হেরেছি, তারপরও স্টেডিয়ামভরা দর্শক পেয়েছি। এখন দেশের বাইরে খেলতে যাচ্ছি। আশা করি, সেখানেও আপনাদের সাপোর্ট অবিরাম থাকবে। সামনে রোজা-ঈদ থাকলেও আপনারা ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। আমাদের পক্ষ থেকে ভালো করার ক্ষেত্রে কোনো আপোষ থাকবে না।’

দক্ষিণ আফ্রিকা বরাবরই শক্তিশালী দল নিয়ে বিশ্বকাপে যায়। তারপরও তাদেরকে বিশ্বকাপের দাবিদার ধরা হয় না। কারণ বারবারই নকআউট পর্বে এসে চাপের বিপরীতে ভেঙে পড়ে প্রোটিয়ারা। ভালো দল হয়েও তাই দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে সেই কদর পায় না। সময়ের সেরা দল নিয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়ী ভালো কিছু করতে। অভিজ্ঞতা-সামর্থ্য রয়েছে দলটার, এখন মাঠে নিজেদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু পারফর্ম করে বিশ্বকাপ রাঙানোই মূল চ্যালেঞ্জ।

This article is in Bangla language. It is based on Mashrafe's point of view about the current team of Bangladesh. 

Featured Image: AP

Related Articles