Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নিশ্চিত জয় বা পরাজয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফলাফল ঘুরে যাওয়া ম্যাচগুলো

এই তো, গেল ফেব্রুয়ারির কথা। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে ১৯৩ রান তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। দেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে ২০ ওভারের ফরম্যাটে এটি ছিল সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-সৌম্য সরকাররা। কিন্তু বাস্তবে সে স্বপ্নকে স্বপ্নেই বিলিন করিয়েছিলেন দীনেশ চান্দিমাল-রঙ্গনা হেরাথরা।

ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অনেক গল্প আছে, যেখানে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে। এমন অনেক গল্প আছে, হারের খুব কাছে গিয়ে তালুবন্দী হয়েছে জয়ের মালা। বলা যা, ক্রিকেটের মৃত্যুর পথ থেকে জীবন পাওয়া। সে ইতিহাসে বাংলাদেশেরও স্থান হয়েছে। এমনই ফিরে আসা কিংবা জয়ের বন্দর থেকে উল্টোপথে যাওয়ার কয়েকটি গল্প নিয়ে এই  আয়োজন।

বাংলাদেশ বনাম ভারত (২০১৬)

একটি রানআউট, সারা জীবনের কান্না; Source: CricketCountry.com

২০১২ এশিয়া কাপ ফাইনাল। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সেদিন জয়ের খুব কাছ থেকে ফিরেছিল বাংলাদেশ। সেই শিরোপা হাতছাড়া হবার ক্ষত বোধ হয় এখনো রয়ে গেছে ক্রিকেটার-সমর্থকদের মনে। ঠিক চার বছর পর আবারো একই পথের পথিক হন মুশফিকুর রহিমরা। ভারতের মাটিতে জয়ের স্বাদ নেওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আনন্দের আতিশায্যে জয়টা শেষ পর্যন্ত পাওয়া হয়নি। সহজ ম্যাচ হারতে হয়েছিল কেবল ১ রানের ব্যবধানে।

ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নস্বামী স্টেডিয়াম, ২৩ মার্চ, ২০১৬। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের খেলায় স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নামা মহেন্দ্র সিং ধোনির দল সেদিন ব্যাট হাতে খুব যে ভালো করেছিল এমন নয়। আবার বাংলাদেশের বোলাররাও বিধ্বংসী বল করেছে, তা-ও না। সত্যি বলতে সেদিন মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুস্তাফিজুর রহমান, আল-আমিন হোসেনরা সত্যিকার অর্থের টি-টোয়েন্টি বোলিং করেছিলেন। উইকেট নয়, রান কম দেওয়ায় যেন লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল। ফলাফল, নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪৬ রানে থামে ভারতের ইনিংস।

মাঝারি ঘরানার লক্ষ্য। টপকানোটা খুব কঠিন নয়। তারপরও সংশয় থাকে। সেদিনও ছিল। দলীয় ১১ রানের মাথায় ওপেনার মোহাম্মদ মিঠুনকে হারিয়ে প্রথম ধাক্কা খেয়েছিল টাইগার দল। এরপর সাব্বির রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ওপেনার তামিম ইকবাল করলেন ৪৪ রানের ‘ঢাল’ জুটি।  দলীয় ৫৫ রানের মাথায় তামিম যখন রবীন্দ্র জাদেজার বলে স্টাম্পিং হয়ে ফিরলেন, তারপর থেকে আবারও নিয়মিত বিরতীতে উইকেট হারাতে শুরু করলো বাংলাদেশ। ৫৫ রানে ২ উইকেট, সেখান থেকে ৯৫ রানে ৫ উইকেট হারালো মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। সেখান থেকে ১২৬ রান পর্যন্ত নিয়ে গেলেন সৌম্য সরকার-মুশফিকুর রহিম। জিততে হলে, প্রয়োজন ২১ রান। হাতে বল আরও ১৩টি।

টি-টোয়েন্টিতে খুব একটা চাপ বলা যায় না এই রান। চাপ মনে হয়নি মুশফিকুর রহিম-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কাছেও। কিন্তু বেশ ধীরগতির ছিলেন। খোলা চোখেই যেন টের পাওয়া যাচ্ছিল, জয়টা তারা নিশ্চিন্তই করে ফেলেছেন। তাই তো, ১৪৫ রান তোলার পর যখন দুই বলে এক রান বাকি, তখনই উদযাপনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। আর দূর্ভাগ্যের কালো ছায়া নেমে এলো দলের উপর। বাংলাদেশের উদযাপনে ক্ষনিকের জন্য থমকে গিয়েছিল পুরো গ্যালারি। হাতে ৩ বল, প্রয়োজন ২ রান। হার্দিক পাণ্ডে একাই ধসিয়ে দিলেন। চতুর্থ বলে ক্যাচ আউটের ফাঁদে ফেললেন মুশফিকুর রহিমকে। পরের বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। শেষ বলে এক রান নিতে গিয়ে মুস্তাফিজ পড়লেন রান আউটের কবলে।

সফলতার শেষ বর্ণে গিয়ে যেন মুছে গেল কলমের কালি। তাই ব্যর্থতার গঞ্জনা। সে কষ্টে এখনও পোড়েন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা

উইন্ডিজ বনাম পাকিস্তান (১৯৭৫)

সেই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে পাক ব্যাটসম্যান; Source: Cricbuzz.com

সেবার উইন্ডিজের বিপক্ষে পাকিস্তানের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপ দলকে সাত উইকেটে মোট ২৭৭ রানের সংগ্রহ দিয়েছিল। বল হাতেও চমকে দিয়েছিলেন পাক পেসার সফফরাজ নেওয়াজ। উইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৬ রানে তিন উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। ২২ গজে তখন ক্লাইভ লয়েড আর রোহান কানহাইয়ের ব্যাটিং যুদ্ধ চলছে। সেটাও বেশিদূর এগোলো না। কানহাই আউট হয়ে গেলেন। নতুন ব্যাটসম্যান ভিভ রিচার্ডস পুল করতে গিয়ে ক্যাচের ফাঁদে পড়লেন। অন্যপ্রান্তে লয়েড একাই লক্ষ্য তাড়া করে যাচ্ছিলেন। এপাশে যখন উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের উইকেট বিলানোর তাড়া, ওপাশে দ্রুত সময়ে হাফ-সেঞ্চুরি পার করেন ক্লাইভ লয়েড। তিনিও ফিরে গেলেন। লেগ স্পিনার জাভেদ মিয়াঁদাদ কট বিহাইন্ডের ফাঁদে ফেললেন তাকে।

সব মিলিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিল উইন্ডিজ দল। হাতে কেবল দুটি উইকেট বাকি, জিততে প্রয়োজন আরও ১০১। ভাগ্যের জোর বলতে হবে লয়েড-হোল্ডারদের। শেষ ওভারে রান আউটের সুযোগ ছিল। কিন্তু উইকেটরক্ষক ওয়াসিম বারি সেই সুযোগ হারালে অপর প্রান্ত থেকে ওভার থ্রো করে পাকিস্তানের বোলার। এবার কাজ হয়নি। শেষ উইকেটে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ম্যাচ জিতে নেয় উইন্ডিজ দল।

অস্ট্রেলিয়া বনাম উইন্ডিজ  (১৯৯৬ বিশ্বকাপ)

শেন ওয়ার্নে ধ্বস নেমেছিল উইন্ডিজ ব্যাটিং লাইন আপে; Source: ESPNcricinfo

বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলবে উইন্ডিজ। তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জয়ের সুযোগ দেশটির সামনে। সবকিছু সেভাবেই হচ্ছিল। আগে ব্যাট করা অজিদের টপ অর্ডার মাত্র ১৫ রানে ধসিয়ে দিয়েছিলেন কার্টলি অ্যামব্রোস-ইয়ান বিশপ। এই রানের মধ্যেই চার উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া দল। সেখান থেকে স্ট্রুয়ার্ট ল-মাইকেল বেভানের জুটিতে ১৩৮ রান। মূলত ল-বেভানরা রান তোলার কৌশল হিসেবে উইন্ডিজ দলের ধীর গতির বোলারদের লক্ষ্য বানিয়েছিলেন। নির্ধারিত ৫০ ওভারে শেষ পর্যন্ত ২০৭ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয় অজিরা।

জবাবে শিবনারায়ণ চন্দরপলের ৮০ রানের ইনিংস দারুণ শুরু এনে দেয় উইন্ডিজকে। এককথায় অস্ট্রেলিয়ার উপর চড়ে বসেছিলেন কোর্টনি ওয়ালশ-রিচি রিচার্ডসনরা। জয়ের বন্দর থেকে ৯ ওভারে যখন ৪৩ রান বাকি, তখনও ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ব্যাট করছিল তারা। সবই ঠিক ছিল। গ্লেন ম্যাকগ্রার বলে চন্দরপল আউট হলেও হারের শঙ্কা সেভাবে দেখা যায়নি। অধিনায়ক রিচার্ডসন তখনো উইন্ডিজ দলকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিচ্ছিলেন।

কিন্তু আতঙ্কের শুরু যখন রজার হারপার-ওটিস গিবসনের পর উইকেটে নেমে নতুন দুই ব্যাটসম্যান জিমি অ্যাডামস-কেইথ আথারটন দাঁড়াতেই পারলেন না। ম্যাকগ্রা-ওয়ার্ন সেদিন যেন ফাঁদ পেতেছিলেন বল দিয়ে। একে একে ইয়ান বিশপ, রিচি রিচার্ডসন সবাই সাজঘরের পথ ধরলেন। ‘টাইট সিঙ্গেল’ নিতে গিয়ে কার্টলি অ্যামব্রোস রান আউটের শিকার হলেন। পারলেন না ওয়ালশও। সেদিনের ম্যাচ সত্যি সত্যিই উইন্ডিজ হেরেছিল। এমনকি অস্ট্রেলিয়া দল নিজেরাই বিশ্বাস করতে পারছিল না যে তারা জিতে গেছে। অজি ক্রিকেটার মার্ক টেলর পরে বলেছিলেন, ম্যাচটিতে ৯৫% জয়ের সম্ভাবনা ছিল উইন্ডিজ দলের। বাকি ৫% রিচার্ডসন (অধিনায়ক) নিতে পারেননি।

দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম শ্রীলঙ্কা (১৯৯৯)

সেদিনের দুই নায়ক বাঁ থেকে ল্যান্স ক্লুজনার ও অ্যালান ডোনাল্ড। Source: Alamy Stock Photo

বিশ্বকাপের আসর। শক্তিশালী প্রোটিয়াদের সামনে খানিকটা হলেও ঢিমেতালে শ্রীলঙ্কা। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন আপে নয় নম্বরে নামা ল্যান্স ক্লুজনার যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্যই বিপদের। তার ব্যাটিংও ততদিনে প্রমাণিত। শ্রীলঙ্কার প্রামোদ্যা বিক্রমাসিংহে ও চামিন্দা ভাস টসে জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সেই সিদ্ধান্ত কাজেও লাগলো। ৬৯ রান তুলতে গিয়ে পাঁচ উইকেট হারালো দক্ষিণ আফ্রিকা দল। ডেরিল কালিনানের ৪৯ রানের ইনিংস খেলে খানিকটা হলেও ধ্বস আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মুত্তিয়া মুরালিধরন তাকে টিকে থাকতে দেননি। ১২২ রান তুলতে গিয়ে প্রোটিয়াদের আটজন ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরলো। সেখান থেকে ক্লুজনারের ব্যাটে টেনেটুনে ১৯৯ করলো তারা। সাবেক এই অধিনায়ক হাফ সেঞ্চুরি পার করেছিলেন।

হয়তো হেসেখেলে জয় পাওয়ার কথা ভেবেছিল লঙ্কানরা। কিন্তু ক্রিকেট তো ‘গোল বলের খেলা’- এই প্রবাদ প্রমাণ করতেই বাস্তবে ঘটেছিল একেবারে উল্টোটা। কম রানের লক্ষ্য বলে সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়ে বোলিংটাও যেমন করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিল্ডিংয়েও ছিল মনোযোগী। প্রথম তিনজন শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানকে আউট করে লঙ্কানদের সবকিছু গুবলেট করে দিয়েছিলেন জ্যাক ক্যালিস। মিডল অর্ডার ধ্বংস করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন দুই প্রোটিয়া কিংবদন্তি শন পোলক ও অ্যালান ডোনাল্ড। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও শেষটা সেদিন মুড়িয়ে এসেছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার। সবমিলিয়ে মাত্র ১১০ রানে থেমে গিয়েছিলো শ্রীলঙ্কার রানের খাতা।

অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড (২০০৩)

স্মৃতির পাতায় অজি পেসার বিচেল; Source: Australian Cricketers’ Association

২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে জায়গা করতে হলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডকে জিততেই হবে। শুরুটা ভালোই হয়েছিল। প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৬ রানের সংগ্রহ। দুই অজি কিংবদন্তি গ্লেন ম্যাকগ্রা-ব্রেট লি’দের ভালোই সামলাচ্ছিল ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। শেন ওয়ার্নহীন অস্ট্রেলিয়াকে সব মিলিয়ে ভয় পাওয়ার তেমন কোনো কারণ ছিলোও না।

কিন্তু এমন সময়ে হঠাৎ করে ঝড় হয়ে এলেন মিডিয়াম পেসার অ্যান্ডি বিকেল। ৬৬-৭৪; এই রানের ব্যবধানে ওপেনার নিক নাইট, মাইকেল ভন ও এলিস স্ট্রুয়ার্টকে ফেরালেন বিকেল। ৬৫ রান পর্যন্ত কোনো উইকেট না হারানো ইংল্যান্ড দল ৮৭ রানে হারিয়েছিল ৫ উইকেট। সেখান থেকে আরো ১০০ রান, অর্থাৎ দলীয় ১৮৭ রানে ইংল্যান্ডের ৮ জন ব্যাটসম্যান ফিরল ড্রেসিংরুমে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২০৪ রানে থামল ইংল্যান্ড। বিকেল ২০ রান দিয়ে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন।

জবাবে আরো ভয়ানক অবস্থা অস্ট্রেলিয়ার। অ্যান্ডি ক্যাডডিকের সামনে সেদিন ধ্বসে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার পুরো টপ অর্ডার। ৪৮ রানেই ডানহাতি মিডিয়াম পেসার তুলে নিয়েছিলেন চার উইকেট। সেখান থেকে ডেভিড লেহম্যান-মাইকেল বেভানের ৬৩ রানের জুটিতে দেয়াল গড়ে অস্ট্রেলিয়া। ব্যক্তিগত ৩৭ রানে ফেরা বেভানের আউট দিয়ে আরেক দফা উইকেট শিকারের উৎসব শুরু করে ইংলিশরা। দলীয় ১১১ রানে পাঁচ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া ১৩৫ রানের মাথায় হারায় ৮ উইকেট। পরে মাইকেল বেভানের অপরাজিত ৭৪ রান ও বিকেলের অপরাজিত ৩৪ রানে চড়ে দুই উইকেট হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে অস্ট্রেলিয়া দল।

ফিচার ইমেজ- Kaieteur News

Related Articles