Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লিওনেল মেসি: আনকোরা থেকে সময়ের সেরা ফ্রি-কিক টেকার

১.

ইংরেজী ভাষায় ‘কামব্যাক’ বলে একটা শব্দ প্রচলিত রয়েছে। সহজ ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে ‘ফিরে আসা’। কিন্তু অর্থটা যত সহজই হোক না কেন, যে বিষয়টাতে এটা ব্যবহার করা হয়, সেখানে গভীরভাবে চিন্তা করলে আরো ভিন্ন কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। সাধারণত কোনো কিছুর সম্ভাবনা যখন প্রায় শেষ হয়ে যায়, সেখান থেকে ফিরে আসাকেই কামব্যাক বলা হয়ে থাকে।

২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল ম্যাচটা কামব্যাকের উদাহরণ হিসেবে খুবই আদর্শ। প্রথমার্ধেই এসি মিলানের কাছে ৩-০ গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর সবাই লিভারপুলের জয়ের আশাটা ছেড়েই দিয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে ম্যাচটাকে ৩-৩ গোলে সমতায় এনে শেষ পর্যন্ত লিভারপুলের টাইব্রেকারে জিতে যাওয়াটাকে খুব সম্ভবত ফুটবলের সবচেয়ে সেরা কামব্যাক হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। আরেকটা উদাহরণ হচ্ছে বার্সেলোনা বনাম পিএসজির ২০১৬-১৭ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচটা । পিএসজির মাঠে প্রথম লেগে ৪-০ গোলে হারার পর দ্বিতীয় লেগে ৬-১ গোলের জয় সম্ভবত বার্সেলোনার ইতিহাসের তো বটেই, ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা কামব্যাক।

এসি মিলানের বিপক্ষে ফিরে আসাটা ফুটবল ইতিহাসেরই গ্রেট কামব্যাক; Image Source: Answersafrica

এখানে তো তবুও এক দল জিতেছে, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ক্ষেত্রে তো সেটাও ঘটেনি। ব্যালন ডি’অর কিংবা ফিফা বর্ষসেরার দৌঁড়ে মেসির কাছে ৪-১ এ পিছিয়ে যাবার পর সেটাকে ৫-৫ করে ফেলাটাকেও তো ফুটবল ইতিহাসের একটা গ্রেট কামব্যাক বলা হয়ে থাকে। এগিয়ে যেতে না পারলেও গ্রেট বলাটা অযৌক্তিকও নয়। ৪-১ এ পিছিয়ে যাবার পর সাধারণ মানুষ তো দূরে থাক, অনেক ফুটবল বিশ্লেষকরাও ভাবতেও পারেননি যে, ক্রিস্টিয়ানো সেটাকে সমতায় নিয়ে আসতে পারবে।

মোদ্দা কথা হচ্ছে, কামব্যাক কথাটা তখনই ব্যবহার করা হয়, যখন প্রায় অসম্ভব কোনো অবস্থান থেকে কোনো ব্যক্তি কিংবা দল ফেরত আসে। সেই হিসেবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সাথে প্রতিযোগিতায় ফ্রি-কিক এর দৌঁড়ে মেসির ফিরে আসাটাও একটা দুর্দান্ত কামব্যাক।

২.

ফুটবল একটা দলীয় খেলা হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে একক কিছু কাজও এখানে বেশ প্রভাব ফেলে। ফ্রি-কিক ঠিক তেমনই একটা কাজ। ফ্রি-কিক যদি সরাসরি গোল পোস্টে মেরে গোল করা হয়, তাহলে প্রত্যক্ষভাবে তাতে দলের অন্য খেলোয়াড়দের কোনো অবদান থাকে না। তবে ফ্রি-কিক থেকে গোল করার জন্য সর্বপ্রথম যে জিনিসটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে দলে ফ্রি-কিক নেবার সুযোগটা থাকতে হবে। ক্যারিয়ারের শুরুতে দলে রোনালদিনহো এবং পরবর্তীতে জাভি থাকায় সেই সুযোগটা মেসি পাননি। হয়তো তাদের অনুপস্থিতিতে কালেভদ্রে মেসি ফ্রি-কিক নিতেন।

২০০৭-০৮ থেকে মেসি বার্সেলোনার হয়ে ফ্রি-কিক নেওয়া শুরু করেন, সেটা নিয়মিত হয় মোটামুটি ২০০৮-০৯ থেকে। সেই মৌসুমে ১টি গোলও করেন লিওনেল মেসি। তবে ততদিনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ১৪টি গোল করে ফেলেছেন। পরের মৌসুমে মেসি ২টি গোল করলেও ক্রিস্টিয়ানো করলেন ৬টি। ২০১০-১১ মৌসুমে রোনালদো করলেন ক্যারিয়ার সেরা ৭টি ফ্রি-কিক গোল, অন্যদিকে সেই মৌসুমে মেসি করতে পারলেন মাত্র ১টি।

বয়সের সাথে পাল্লা দিয়ে দু’জনের গোল সংখ্যা; Image Source: michelacosta.com

সেই পর্যন্ত রোনালদোর ২৭টি ফ্রি-কিক গোলের বিপরীতে মেসির ফ্রি-কিক গোল মাত্র ৪টি। অন্য অনেক দিক থেকে মেসিকে বিশেষজ্ঞরা এগিয়ে রাখলেও ফ্রি-কিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কারো মনে কোনো দ্বিধা ছিল না, বরং এই বিষয়ে দু’জনের মাঝে তুলনা দেওয়ার প্রয়োজনও মনে করতেন না।

ফ্রিকিকে একটা সময় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেই সবাই এগিয়ে রাখতেন; Image Source: Goal.com

পরের মৌসুমে মেসি করলেন তার তৎকালীন মৌসুমের সবচেয়ে বেশী ফ্রিকিক গোল, ৩টি। কিন্তু সেই মৌসুমেই ক্রিস ৬ গোল করে লড়াইয়ে আরো এগিয়ে গেলেন। ক্রিসের ৩৩ গোলের বিপরীতে মেসির গোল হলো ৭টি। ২০১২-১৩ মৌসুমে মেসি ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো এক মৌসুমে ফ্রি-কিক গোল করার ক্ষেত্রে ক্রিসকে পেছনে ফেললেন। রোনালদোর ৩ গোলের বিপরীতে করে ফেললেন ৬টি গোল। কিন্তু তখনও সেটা লড়াইয়ে ফিরে আসার মতো কিছু নয়, কারণ এরপরও ক্রিসের ৩৬ গোলের বিপরীতে মেসির ছিল মাত্র ১৩টি। পরের মৌসুমে আবার মেসি আরেকটু পেছনে পড়লেন, ক্রিসের ৬টি গোলের বিপরীতে করলেন ৪টি। ২০১৪-১৫ মৌসুমে প্রথমবারের মতো এক মৌসুমে দুইজন গ্রেট সমান সংখ্যক (২টি) ফ্রি-কিক গোল করলেন।

তবে এরপর থেকেই মেসির অগ্রযাত্রা শুরু।

৩.

২০১৫-১৬ মৌসুমে মেসি ফ্রি-কিক থেকে গোল করলেন ৯টি। সম্ভবত এক মৌসুমে যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়েই বেশি ফ্রি-কিক গোল। মূলত এই মৌসুম থেকেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো পেছনে পড়তে শুরু করেন। পরের ২ মৌসুমে মেসির ৫ আর ৭টি ফ্রি-কিক গোলের বিপরীতে ক্রিস্টিয়ানো করেন যথাক্রমে ৪টি আর ২ টি। চলতি (২০১৮-১৯) মৌসুমে এই পর্যন্ত মেসি ফ্রি-কিক থেকে ৭টি গোল করে ফেললেও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এখন পর্যন্ত একটি গোলও করতে পারেননি। ক্রিসের ৫৩টি ফ্রি-কিক গোলের বিপরীতে মেসির ফ্রি-কিক গোল ৪৭টি হলেও যে গতিতে মেসি এগুচ্ছেন, তাতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেলা সময়ের ব্যাপারমাত্র। তাছাড়া জুভেন্টাসের হয়ে ফ্রি-কিক নেবার দায়িত্ব পিয়ানিচের থাকায় ক্রিসের ফ্রি-কিক নেবার সম্ভাবনাও কমে গিয়েছে।

মৌসুম প্রতি দুজনের গোলসংখ্যা; Image Source:  michelacosta.com

সংখ্যায় মেসি পেছনে থাকলেও রেশিওতে কিন্তু এই মুহূর্তেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন মেসি। ২০১৮ সালের একটা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, লা লিগায় ফ্রি-কিকে সবচেয়ে ভালো গোল রেশিও মেসির। এই ক্ষেত্রে তিনি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোসহ পেছনে ফেলেছেন রোনালদিনহো এবং রবার্তো কার্লোসকেও। বুলেট মাস্টার রবার্তো কার্লোসের লা লিগায় ফ্রি-কিক গোল ১৬টি, তবে এটা করতে তিনি ফ্রি-কিক নিয়েছেন ৩৮২টি। প্রতি ১০০টি শটে তিনি ৪.২টি গোল করতে পেরেছেন। রোনালদিনহো ২০৫টি ফ্রি-কিক নিয়ে গোল করতে পেরেছেন ১৫টি, শতকরা হিসেবে যা হয় ৭.৩%। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর লা লিগায় ফ্রি-কিক গোল ১৯টি, তবে এর জন্য ৩১০টি শট নেওয়ায় তার রেশিও দাঁড়িয়েছে ৬.১%। সবাইকে ছাড়িয়ে ৩৩০ বারের প্রচেষ্টায় লিওনেল মেসির গোল হচ্ছে ২৮টি, যা শতকরা হিসেবে আসে ৮.৫ টি।

প্রতি মৌসুম শেষে দুজনের গোল সংখ্যা; Image Source:  michelacosta.com

পরবর্তীতে অবশ্য মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দু’জনেরই লা লিগায় ফ্রি-কিক গোলের সংখ্যা আরো বেড়েছে। বার্সেলোনার হয়ে ৪১টি বাদেও দেশের হয়ে মেসির ফ্রি-কিকে গোলের সংখ্যা ৬টি। বিপরীতে ইউনাইটেডের হয়ে ১৩টি ফ্রি-কিক গোলের পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৩২টি এবং পর্তুগালের হয়ে ৮টি গোল করেছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

৪.

লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, দু’জনেই ক্যারিয়ারের অসংখ্য ম্যাচে ফ্রি-কিক থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছেন কিংবা বিপদমুক্ত করেছেন। তবে ফ্রি-কিকে দুইজনের শক্তির জায়গাটা মূলত আলাদা। ক্রিসের শক্তির জায়গা হচ্ছে প্রচন্ড গতি। অনেক দূর থেকেও তীব্র গতির মাধ্যমে গোলার মতো শটে গোলকিপারকে এমনভাবে স্তব্ধ করে দিয়েছেন যে, কিপার জায়গা থেকে নড়ার সুযোগ পর্যন্ত পাননি। অনেক দুরূহ কোণ থেকেও ক্রিসের কিছু অসাধারণ গোল রয়েছে। 

সংখ্যায় কিছুটা পেছনে থাকলেও রেশিওতে মেসিই এগিয়ে ক্রিসের চেয়ে; Image Source: Evening Standard

অন্যদিকে, মেসির শক্তির জায়গা হচ্ছে তার রহস্যময় প্লেসমেন্ট। ডি-বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে এমন চমৎকার বাঁকানো শট মেরে গোল করেন যে, গোলকিপার বলের গতিপথ বুঝতে পারার আগেই সেটা গোললাইন অতিক্রম করে ফেলে। কাছ থেকে ফ্রি-কিকে গোল করাটাও খুব সহজ নয়। সামনে মানবদেয়াল থাকায় জায়গাটাও খুব কম পাওয়া যায়। তবে দূর থেকেও মেসির ফ্রি-কিকে গোল রয়েছে।

সর্বকালের সবচেয়ে বেশি ফ্রি-কিকে গোল করার রেকর্ড ব্রাজিলের জুনিনহোর (৭৭ টি)। সেখানে যাওয়াটা খুব কঠিন হলেও সেরা দশে ঢুকে পড়াটা মেসি আর ক্রিস্টিয়ানোর পক্ষে খুবই সম্ভব। ক্যারিওকার ৫৯টি গোল পেরোনোর জন্য মেসিকে করতে হবে আর ১৩টি, এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে করতে হবে মাত্র ৭টি ফ্রি-কিক গোল।

ফ্রি-কিক থেকে সবচেয়ে বেশি গোল জুনিনহোর; Image Source: IMDb

তারা পারবেন কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে ৪-১ ব্যালন ডি’অর থেকে ৫-৫ করে ফেলাটা যেমন গ্রেট কামব্যাক, ঠিক তেমনি ৪-২৭ থেকে ৪৭-৫৩ অবশ্যই গ্রেট হতে বাধ্য।

একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, গ্রেট বলেই ‘মেসি-রোনালদো’ কামব্যাক করেননি, বরং তারা কামব্যাক করতে পেরেছেন বলেই ইতিহাসে গ্রেট বলে বিবেচিত হচ্ছেন। এভাবে পেছন থেকে ফিরে আসাটা অবশ্যই পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য একটা অনুপ্রেরণা।

বি.দ্র.: সকল পরিসংখ্যান ৭ই এপ্রিল ২০১৯ ইং পর্যন্ত।

This article is in Bangla language. This article describes the improvement of Lionel Messi in the free kick. 

References are given inside as hyperlinks.

Feature Image: Washington Post

Related Articles