Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পিচিচি ট্রফি ও একজন মেসি

একের পর এক রেকর্ড ভাঙাগড়া অনেকটা ডালভাতের মতোই ব্যাপার বানিয়ে ফেলেছেন লিওনেল মেসি। সম্প্রতি আরেকটি রেকর্ড ছুঁয়েছেন এই আর্জেন্টাইন ক্ষুদে জাদুকর। নিজের ষষ্ঠ পিচিচি ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়ে ছুঁয়ে ফেলেছেন সবচেয়ে বেশি পিচিচি ট্রফি জেতা অ্যাথলেটিক বিলবাও কিংবদন্তি তেলমো জারাকে। বলা রাখা ভালো যে, প্রতি মৌসুমের সর্বোচ্চ লা লিগা গোলদাতাকে দেওয়া হয় পিচিচি ট্রফি।

সর্বশেষ লা লিগা ম্যাচে এস্তাদিও মিউনিসিপ্যাল দে ইপুরুয়াতে এইবারের বিপক্ষে জোড়া গোলের সুবাদে এই মৌসুমে মেসির লিগ গোলসংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬-এ, যার ধারেকাছেও ছিল না কোনো লা লিগা খেলোয়াড়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সুয়ারেজ ও বেনজেমা থেকে ১৫ গোল বেশি করেছেন এই জিনিয়াস। তেলমো জারা’র ৬টি পিচিচি ট্রফি জেতার রেকর্ড ছুঁতে গিয়ে পেছনে ফেলেছেন ৫টি করে পিচিচি জেতা ডি স্টেফানো, কুইনি ও হুগো সানচেজকে। সেই উপলক্ষ্যে চলুন দেখা আসা যাক মেসির জেতা ছয়টি পিচিচি ট্রফি জেতা মৌসুমে মেসির পারফরম্যান্স সম্পর্কে।

২০০৯-১০ মৌসুম (৩৪ গোল)

২০০৪ সালের অক্টোবরে মেসির লা লিগা অভিষেক হলেও প্রথম পিচিচি ট্রফির জন্য মেসিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ছয়টি বছর। ক্যারিয়ারের প্রথম পিচিচি ট্রফি জেতেন ২০০৯-১০ মৌসুমে। ৩৪ গোল করেন সেবার মেসি, যেখানে ছিল ৩টি হ্যাটট্রিক। মেসির দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ৯৯ পয়েন্ট নিয়ে সেবার লা লিগা চ্যাম্পিয়নও হয় বার্সা। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ থেকে তারা এগিয়ে ছিল তিন পয়েন্ট।

পিচিচি ট্রফি জেতার ক্ষেত্রে সেবার মেসির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল দুইজন। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে গঞ্জালো হিগুয়াইনের ২৭ গোল ও রোনালদোর ২৬ গোলকে পেছনে ফেলেই সেবার লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা হন লিওনেল মেসি।

২০০৯/১০ মৌসুমে তরুন মেসি; Image Source : Marca

২০১১-১২ মৌসুম (৫০ গোল)

প্রথম পিচিচি জেতার পরের মৌসুমে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব হারান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কাছে। এর পরের সিজনেই মুকুট পুনরুদ্ধার করেন মেসি। তবে এইবার রেকর্ডের বন্যা ভাসিয়ে দিয়েই পিচিচি জিতেন তিনি। পিচিচি ট্রফি জেতার পাশাপাশি লা লিগায় করেন রেকর্ড ৫০ গোল। এক মৌসুমে লিগে ৫০ গোল করা সবার কাছে স্বপ্নের মতো ব্যাপার হলেও সেটি করে দেখিয়েছেন তিনি। ছয়টি হ্যাটট্রিকের সাথে দুইবার ম্যাচে চার গোল করেন সেবার তিনি। তবে মেসির এত কিছুর পরও সেবার লা লিগা জিততে পারেনি বার্সেলোনা। রোনালদোর এক মৌসুমে লা লিগার রেকর্ড ৪৬ গোলের সুবাদে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সেই মৌসুমে মেসির দুর্দান্ত ফর্ম থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র কোপা দেল রে শিরোপা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল বার্সেলোনা বাহিনীকে।

তবে ২০১১-১২ মৌসুমে রোনালদো নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। ৪৬ গোলের পরও লিগে গোলদাতার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিল তার নাম।  

এই মৌসুমে ৫০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন মেসি; Image Source : The Marca

২০১২-১৩ মৌসুম (৪৬ গোল)

প্রথমবারের মতো নিজের পিচিচি ট্রফি ধরে রাখতে সক্ষম হন মেসি। ২০১২-১৩ মৌসুমে ৪৬ গোল করে আবারও লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা হন তিনি। সেই বছরই মেসি ভেঙে ফেলেন ১৯৭২ সালে জার্ড মুলারের এক বছরে করা ৮৫ গোলের রেকর্ড। বার্সেলোনার হয়ে ৭৯ গোল ও আর্জেন্টিনার হয়ে ১২ গোল মিলিয়ে এক বছরে মেসি করেন রেকর্ডসংখ্যক ৯১ গোল। লিগে টানা ২১ ম্যাচে গোল করে সব প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল করারও অনন্য রেকর্ড গড়েন মেসি।

মেসির অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে ১০০ পয়েন্ট নিয়ে সেবার লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হয় লা বুলাগানারা। পিচিচি ট্রফির দৌড়ে সেবারও মেসির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, সেবার এই পর্তুগীজ লা লিগায় করেন ৩৪ গোল।

গোলের পর উল্লাসরত মেসি; Image Source : The Telegraph

২০১৬-১৭ মৌসুম (৩৭ গোল)

মাঝখানে পুনরায় আবার পিচিচি ট্রফি জিততে মেসিকে অপেক্ষা করতে হয় চার মৌসুম ধরে। মাঝে দুইবার ক্রিস্টিয়ানো ও একবার এই পুরষ্কার জেতেন লুইস সুয়ারেজ। অবশেষে ২০১৬-১৭ মৌসুমে ৩৭ গোল করে নিজের চতুর্থ পিচিচি ট্রফি জেতেন এই আর্জেন্টাইন।

তবে সেবার লা লিগায় রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বার্সেলোনাকে। রিয়াল মাদ্রিদের কাছে শিরোপা হারায় তারা, তবে ব্যক্তিগতভাবে দারুণ উজ্জ্বল ছিলেন মেসি। ৩৭ গোলের মধ্যে বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে করা ২ গোল ছিল সেই মৌসুমে মেসির মূল হাইলাইট।

মেসির ৩৭ গোলের বিপরীতে নিজের বার্সেলোনা সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ করেন ২৯ গোল। অন্যদিকে, মৌসুমে ২৫ গোল করে তৃতীয় স্থান দখল করেন রিয়াল মাদ্রিদের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।

বার্ন্যাবুতে শেষ মুহূর্তের গোলের পর মেসির উদযাপন; Image Source : The Daily Mail

২০১৭-১৮ মৌসুম (৩৪ গোল)

নতুন কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে আসলেও মেসির পারফরম্যান্সের এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি। পরের মৌসুমেই ৩৪ গোল করে নিজের পঞ্চম পিচিচি ট্রফি জিতে নেন লিওনেল মেসি। প্রথম পিচিচির মতো এটিই ছিল পিচিচি জয়ের মৌসুমে মেসির সবচেয়ে কম গোল। তবে ঠিকই লা লিগা চ্যাম্পিয়ন হয় বার্সেলোনা। তিন হ্যাটট্রিক ও ম্যাচে একটি চার গোলের সুবাদে ৩৪ গোল করেন এই ক্ষুদে জাদুকর।

প্রতিবারের মতো রোনালদোই ছিলেন মেসির সবচেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। এই পর্তুগীজের গোল ছিল ২৬টি। এই মৌসুমই ছিল লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর একইসাথে খেলা শেষ লা লিগা মৌসুম। মৌসুমশেষে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে রোনালদো যোগ দেন ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে।

লিওনেল মেসি; Image Source : Goal.com

২০১৮-১৯ মৌসুম (৩৬ গোল)

চলতি মৌসুমেও পিচিচি ট্রফি জিতে তেলমো জারা’র ছয়টি পিচিচি ট্রফি জেতার রেকর্ড স্পর্শ করেন লিওনেল মেসি। পাশাপাশি এই প্রথম টানা তিন মৌসুম ধরে এই পুরষ্কারটি জিতে আসছেন তিনি। তবে এইবারের পিচিচি ট্রফি একটু স্পেশালই মেসির জন্যে। প্রথমবারের মতো অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পড়ে এই পুরষ্কার বগলদাবা করলেন তিনি, পাশাপাশি দলকে জেতান ২৬তম লিগ শিরোপাও।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সুয়ারেজ ও বেনজেমার ২১ গোল থেকে মেসির গোল ছিলো ১৫টি বেশি। রোনালদোর বিদায়ে সেইভাবে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি মেসির সাথে। তাই হেসেখেলেই এইবার এই পুরষ্কারটি জিতেন মেসি। শুধু গোলের দিক দিয়েই নয়, ১৩ গোলে সহায়তা করে অ্যাসিস্টের দিক দিয়েই এক নাম্বার স্থান দখল করেছেন তিনি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, এই মৌসুমেই বার্সেলোনার হয়ে ৬০০তম গোলের মাইলফলক পেরিয়ে যান তিনি। আগামী সপ্তাহে কোপা দেল রে ফাইনালে ভ্যালেন্সিয়াকে হারাতে পারলে আরেকটি ঘরোয়া ডাবল অর্জনের সুযোগ হবে বার্সেলোনা অধিনায়ক মেসির।

বরাবরের মতো এই মৌসুমেও দুর্দান্ত ছিলেন মেসি; Image Source : The South African

৩১ বছর বয়সী মেসি ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে এসেও যে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন, তাতে বলাই যায়, তেলমো জারার এই রেকর্ড অক্ষুন্ন থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। আর একবার পিচিচি ট্রফি জিতলেই এককভাবে সবচেয়ে বেশিবার এই পুরষ্কার অর্জনের মালিক হবেন মেসি। তা যে করার সামর্থ্য এই আর্জেন্টাইনের আছে, তাতে দ্বিমত করার লোক নেই বললেই চলে। লা লিগার অন্যান্য সব রেকর্ডের মতো এই রেকর্ডটিও মেসির হাতে ধরা দিক, সেটিই কাম্য সবার।  

This Bangla article is about the Messi's record number Pichichi trophy season performances. References are hyperlinked in the article.

Feature Image: Barcelona.com

Related Articles