Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মাইকেল ফেলপস: জলমানব কিংবা জলদানব

২০০১ সাল। নিউ ইয়র্কে সাঁতারের ইউএস ওপেন চলছে। ততদিনে মাত্র ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিক সাঁতার টিমে জায়গা করে নিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ২০০০ সালের সিডনি অলিম্পিকে সেবার পুরষ্কার অবশ্য জেতেননি। ২০০ মিটার বাটারফ্লাইতে ফাইনাল রাউন্ড পর্যন্ত গিয়ে পঞ্চম হয়ে ফিরেছিলেন। আক্ষেপ থাকলেও হতাশা ছিল না, সবে তো শুরু। কিন্তু সেই শুরুর শেষটা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেটি কি নিজের কল্পনাতে এঁকে রেখেছিলেন মাইকেল ফেলপস?

সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দিয়েছিলেন ররি কনেল।

ফিরে আসা যাক ইউএস ওপেনের সেই সাঁতারের মঞ্চে। সদ্য শেষ হওয়া ২০০ মিটার বাটারফ্লাইতে টম ম্যালচো’র পিছনে থেকে দ্বিতীয় হয়ে পুল থেকে উঠলেন ফেলপস। ররি কনেল এগিয়ে আসলেন ফেলপসের দিকে, উদ্দেশ্য অটোগ্রাফ নেওয়া। অটোগ্রাফের আশায় একটি ছবি এগিয়ে দিলেন ফেলপসের দিকে।

‘ম্যান, আমি ভাবতে পারছি না তুমি এখনো এই ছবি রেখে দিয়েছো। আমি দুঃখিত, এখানে আমি অটোগ্রাফ দিতে পারছি না।’

ছবি দেখে কিছুটা চমকে উঠেছিলেন ফেলপস। ফ্ল্যাশব্যাকে হয়তো চলে গিয়েছিলেন ১৯৯৬ সালে। সে বছর ইস্টার্ন জোন চ্যাম্পিয়নশিপে ফেলপস নেমেছিলেন ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলের ২:০০.৭০ এর রেকর্ড ভাঙতেই, কিন্তু শেষ করেছিলেন ২:০০.৮৮ এ। তবুও তিনি দ্বিতীয়! ২:০০.৭৫ এ শেষ করে পোডিয়ামের চূড়ায় দাড়িয়েছিলেন এই ররি কনেলই! মেডেল হাতে দুইজনের ওই ছবিটিই পরবর্তীতে হারিয়ে যাওয়া কনেল নিয়ে এসেছিলেন অটোগ্রাফের জন্য।

কনেলের মতে, এই ঘটনাটি টনিকের মতো কাজ করেছিলো। কারণ ছবিটি ফেলপসকে মনে করিয়ে দিয়েছিল, আর দশজনের মতো তিনিও নিতান্তই একজন সাধারণ সাঁতারু। সেটি মেনে নেননি ফেলপস। তাই সেদিনই নিজের শেষটা কোথায় নিয়ে যেতে চান, তা হয়তো ঠিক করে ফেলেছিলেন তিনি। কারণ জলের রাজপুত্র হয়ে উঠাটা যে ঠিক তখন থেকেই!

আট বছর বয়সী ফেলপস; Image Credit: North Baltimore Aquatic Club

জলের সঙ্গে মিতালি

ক্যাথি লিয়ার্স ঘুনাক্ষরেও ভাবেননি, ভবিষ্যতে এত পদক ফেলপসের সামনে গড়াগড়ি খাবে। টসন হাই স্কুলের পুলে শৃঙ্খলার অভাবে যখন প্রায়ই বিভিন্ন কাণ্ড ঘটিয়ে বসতেন ফেলপস, তাতে বেশ মনঃক্ষুণ্ণ হতেন পুলের তত্ত্বাবধানে থাকা ক্যাথি। সেই সময়টাতে ক্যাথি খেয়াল করেন, ফেলপসের পানির সাথে সখ্যতাটা সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ক্যাথির পরামর্শে শুরুর দিকে ব্যাকস্ট্রোকেই পুলে সময় কাটাতেন ফেলপস। ধীরে ধীরে পানিকে বশ মানানোর পর পুরোদমে ফ্রিস্টাইল-বাটারফ্লাইতে মজে যান মাইকেল ফেলপস। যতটা সহজে ফেলপসের সাঁতারে মজে যাওয়ার ব্যাপারটি লিখে দেওয়া গেলো আদতে তা মোটেও সহজ ছিল না।

ফেলপস যখন সিক্সথ গ্রেডে, তখন সর্বপ্রথম তার ADHD ধরা পড়ে। নামটা বেশ খটমটে, অ্যাটেনশন ডেফিসিট অ্যান্ড হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিজঅর্ডার। সাধারণত এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা লক্ষ্য স্থির রাখতে পারেন না, কোনো নির্দিষ্ট কাজ মনোযোগ দিয়ে করতে পারেন না। কিন্তু বাস্তবে সেটা ফেলপসের জন্য ছিল আরো ভয়াবহ। ফেলপস ছিলেন এই সিন্ড্রোমের সর্বোচ্চ শিখরে। সেই সময়ে এক স্কুলশিক্ষক তো মা ডেবি ফেলপসকে ডেকে বলেই দিয়েছিলেন,

“আপনার ছেলে কখনোই জীবনে একটি স্থির লক্ষ্যে পৌছাতে পারবে না।”

নিজের লেখা বইয়ে সে সময়ের সংগ্রাম অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন ফেলপস,

“আমি কখনোই স্থির হয়ে বসে থাকতে পারতাম না, কারণ একটা নির্দিষ্ট কাজে ফোকাস করাটা আমার জন্য হতো খুব কঠিন একটা ব্যাপার। এভাবে দিনশেষে দেখা যেত, সবকিছুতেই যেন মাঝখানে আটকে আছি আমি।”

কিন্তু সাঁতারে মজে যাওয়ার ব্যাপারটা হয়তো ঈশ্বরের আশীর্বাদস্বরূপ। অন্তত ফেলপসের কাছে তাই-ই,

“প্রথমবারের মতো পুলে ঝাঁপ দেওয়ার সময় আমার নিজেকে ডলফিনের মতো মনে হয়েছিল। এবং ধীরে ধীরে পানিকে বশ করানোর পর মনে হয়েছিল, জীবনে প্রথমবারের মতো কোনো কিছু নিজের আয়ত্বে আনতে সক্ষম হয়েছি।”

মূলত তখন থেকেই নিজের লক্ষ্য স্থির করতে সক্ষম হন মাইকেল ফেলপস।

বাল্টিমোর সুইমিং পুলে মাইকেল ফেলপস; Image Source: Baltimore Sun

মা ডেবি ফেলপসের স্বপ্নই ছিল, তার সন্তানেরা দেশসেরা সাঁতারু হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ছেলে মাইকেল আর মেয়ে হুইটনিকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন বাল্টিমোর সুইমিং ক্লাবে। ১৪ বছর বয়সী হুইটনি যখন ২০০ মিটার বাটারফ্লাইতে পুরো দেশে ১০ম স্থান অর্জন করেন, ফেলপস তখনো ক্যাথি লিয়ার্সের অধীনে দাপাদাপি করে বেড়াচ্ছেন পুলে। তবে বোনের সাফল্য যারপরনাই উদ্বুদ্ধ করলো ফেলপসকে। ক্যাথির পরামর্শে ৮ বছর বয়সে ফেলপস যোগ দেন ট্রেইনার শার্টলের গ্রুপে, যেখানে মূলত ৮-১১ বছরের বাচ্চারা সুইমিং করে থাকে। ৮ বছর হওয়াতে তুলনামূলকভাবে বাকি সবার চেয়ে বয়সে ছোটই ছিলেন ফেলপস। সুইমিং পুলকে তেমন ভালো না বাসলেও ফেলপস সবচাইতে বেশি অপছন্দ করতেন হেরে যাওয়া। কিন্তু বয়সে ছোট হওয়ার কারনে প্রায়ই দেখা যেতো প্রথম স্থানে নাম নেই ফেলপসের নাম, যেটি কি না ফেলপসকে নিজের সবটুকু নিংড়ে দিতে আরো বেশি উদ্দীপনা জাগিয়েছিল৷

ঠিক ১ বছর পরের কথা। আগের সেই অবাধ্য ফেলপস আর নেই। অদম্য স্পৃহা আর জয়ের অসম্ভব ইচ্ছের কারণে বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি ফেলপসকে। পরের এক বছরের মাথায় শার্টলস গ্রুপের সাঁতারের আটটি রেকর্ড নিজের নামে করে নেন ফেলপস, যার মধ্যে ৬টি রেকর্ড টিকে আছে এখনো!

‘সে জিততে পছন্দ করতো। আমার মনে হয়, সে খেয়ালই করতো না যে দেশেই তার অবস্থান প্রথম। তার একমাত্র চিন্তাচেতনা ছিলো পুলেই প্রথম হওয়া।’

শার্টল পরবর্তীতে ফেলপসকে নিয়ে এই কথাগুলোই বলেছিলেন। অনেকটা যেন ফেলপস রেকর্ডের দিকে ছোটেন না, রেকর্ডই তাড়া করে বেড়ায় ফেলপসকে।

জয়ের স্বাদ

পানিকে বশ করা সাঁতারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন সাঁতারু পানিকে নিজের আয়ত্ত্বে আনতে পারলে কখন কোথায় গুরুত্বপূর্ণ স্ট্রোক ফেলা উচিত, কিংবা কখন গতি বা ত্বরণ বাড়াতে হবে, তা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল থাকেন।

শার্টলের মতে, ফেলপসের এই গুণাবলী ছিল সবচেয়ে তীব্র; যার জন্য মাত্র সাড়ে নয় বছরেই ফেলপস লাফ দিয়ে চলে আসেন টম হাইমস-এর গ্রুপে। টম হাইমস তৎকালীন সময়ে ছিলেন বাল্টিমোর অ্যাকোয়াটিক ক্লাবের বয়সভিত্তিক দলের প্রধান কোচ। মূলত ১০-১৬ বছর বয়সী সাঁতার কাটতো তার অধীনে। কিন্তু ১০ বছর হওয়ার আগেই সেই দলে সুযোগ পেয়ে যান ফেলপস। শুধু তাই নয়, সেই সময় ফেলপস হাইমস গ্রুপের বেশিরভাগ প্রতিযোগীদের থেকেই ছিলেন দ্রুততর সাঁতারু

১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে ফেলপস পুরো দেশে বয়সভিত্তিক সাঁতারুদের মধ্যে টপ টেন র‍্যাংকিংয়ে চলে আসেন। বাল্টিমোর অ্যাকোয়াটিক ক্লাবে তখন ফেলপস-ফেলপস রব। তবে শুধু মাইকেল ফেলপসই না, তার বোন হুইটনি ফেলপসও ততদিনে সবার চোখের মণি৷ ১৯৯৫ প্যান প্যাসিফিক ২০০ মিটার বাটারফ্লাইতে যে ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে ফিরেছেন হুইটনি!

জলে ঝাঁপ দিচ্ছেন ফেলপস; Image Source: Getty Images

ফেলপসের আসলে দরকার ছিল এমনই একজন রোল মডেল কিংবা পথপ্রদর্শক। হুইটনি সেই কাজটি করতে পেরেছেন যোগ্যভাবেই৷ আন্তর্জাতিক অঙ্গন আর বাল্টিমোর সুইমিং ক্লাব যে একই জিনিস নয়, সেই উপলব্ধি ফেলপসকে এনে দিয়েছিলেন হুইটনি। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তাগাদা ও স্পৃহার পিছনেও ছিল বড় বোনের ইন্ধন।

ফেলপস পরিবার

মাইকেল ফেলপস বয়সভিত্তিকে দেশ সেরা সাঁতারু। হুইটনি ততদিনে জায়গা করে নিয়েছেন ১৯৯৬ সালের অলিম্পিক দলে। আরেক বোন হিলারিও সুইমিং স্কলারশিপ নিয়ে পড়ছেন কলেজে।

এমনি এমনি এসব অর্জন আসেনি, সেটি ভালো করেই জানেন ফ্রেড ফেলপস ও ডেবি ফেলপস। পরিবার থেকেই সাঁতারের হাতেখড়ি তাদের। বাবা ফ্রেড ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অফিসিয়াল সাতাঁরের ট্রুপার। মা ডেবিও ছিলেন মেরিল্যান্ড সুইমিং ক্লাবের পরিচালক। তিন ভাইবোনের সাফল্যে বাবা-মা’র অনুপ্রেরণা ছিল তাই সবচেয়ে বেশি। কীভাবে যৌথ প্রচেষ্টায় নিজের সন্তানদের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন, সেই নিয়েই বলছিলেন হিলারি।

‘বাবা সকালে আমাকে নিয়ে যেতেন সুইমিং ক্লাসে। মা তখন হুইটনি আর মাইকেলকে নিয়ে যেতেন স্কুলে। আবার পরে বিকেলে মা আমাকে নিয়ে যেতেন দ্বিতীয় সুইমিং ক্লাসে৷ বাবা বের হতেন মাইকেল আর হুইটনিকে নিয়ে।’

কিন্তু এই দৃশ্য বেশিদিন টেকেনি। ১৯৯৪ সালে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যার ফ্রেড আর ডেবির মধ্যে। মাইকেলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় মা হিসেবে তখন দায়িত্ব তুলে নেন দুই বোন হিলারি ও হুইটনি। তাই শুধু পুলের সাফল্যই নয়, ফেলপসের বেড়ে ওঠাতেও দুই বোনের অবদান অনস্বীকার্য।

স্বর্ণজয়ের পর মা ও দুই বোনের আলিঙ্গনে ফেলপস; Image Source: Swim swam

মাইকেল ফেলপসের উত্থান

১৯৯৬ সালের ইস্টার্ন জোন চ্যাম্পিয়নশিপে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন ফেলপস। ৫০০ গজ ফ্রিস্টাইল ফেলপস শেষ করেন ৬ মিনিটের নিচে, যেটি কি না ২০ বছরের নিচে কোনো সাঁতারুই করতে পারেননি।

সেই চ্যাম্পিয়নশিপেই ফেলপসের বন্দনা বাল্টিমোর ক্লাব পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে। সেই বন্দনায় আর যতি পড়তে দেননি ফেলপস। এর কিছুদিন পর বয়সভিত্তিক দলে ১০০ মিটার বাটারফ্লাইতে নিজের রেকর্ডই আবার ভাঙেন, এবার সময় নেন ১:০৮:৫৪, যেটি ছিল অবিশ্বাস্য। অথচ ফেলপস তখনও ১০ বছরের নিতান্তই এক বাচ্চা। সেবার ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকে চেজ মরটনের রেকর্ডটি অল্পের জন্য ভাঙতে না পারলেও চ্যাম্পিয়ন বেশেই পুল ছেড়েছিলেন। পুরো মৌসুমে তিনটি শর্ট কোর্স ও তিনটি লং কোর্স ইভেন্টে প্রথম স্থান অধিকার করে বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, পুলে ঝড় তুলতেই তার জন্ম।

বিশ্বরেকর্ডের পর মাইকেল ফেলপস; Image Source: Getty Images

চ্যাম্পিয়ন ফেলপস

ফেলপস পরবর্তীতে হাইমস গ্রুপে সাঁতার কেটেছিলেন আরো এক বছর। নিজের ১১তম জন্মদিনের কিছুদিন আগেই যোগ দেন বব বাউম্যানের গ্রুপে। বাউম্যানের অধীনে নিজেকে সবচেয়ে শাণিত করেন ফেলপস। দৃঢ়চেতা মনোভাব কিংবা সংকল্প, কিছুরই অভাব ছিল না ঠিক ফেলপসের মাঝে। তাই বাউম্যানের অধীনে খুব দ্রুতই নিজেকে ছাড়িয়ে যান। শিষ্যের প্রতিভার ব্যাপারটি আগেই ধরতে পেরেছিলেন বাউম্যান। ফেলপসকে তাই বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথম রেকর্ডটি করার পর যাতে তাকে ফোন করতে না ভোলেন ফেলপস। কিন্তু বাউম্যান হয়তো কস্মিনকালেও ভাবেননি, সেই ফোনটি তিনি এত দ্রুত পাবেন।

২০০১ সালের, ২৪ জুলাই। ফেলপসের বয়স ১৫ বছর; আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, ১৫ বছর ৯ মাস। যুক্তরাষ্ট্রে তখন রাত দু’টো। জাপানের ফুকৌকোতে ২০০ মিটার বাটারফ্লাইতে বিশ্বরেকর্ড ভেঙে ততক্ষণে খেলাধুলার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী রেকর্ডধারী ফেলপস। ফোনে খবর পেয়ে বাউম্যান সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন,

‘এই খবর অবিশ্বাস্য। আমার মনে হয় না কেউ এই খবর বিশ্বাস করবে।’

বাউম্যান যদি জানতেন ভবিষ্যতে এইরকম অবিশ্বাস্য খবরকে রীতিমতো ডালভাত বানিয়ে ফেলবেন মাইকেল ফেলপস, তাহলে হয়তো সেদিন খবরটি এত অতিরঞ্জিত ভাবতেন না তিনি।

অলিম্পিক পদক জয়ের পর; Image Source: Adobe Stock Images

অলিম্পিকের সেরা

মাইকেল ফেলপস কি সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ান? পরিসংখ্যানের চোখে ফেলপসই অবশ্য সেরা। ২৩টি স্বর্ণপদকসহ সর্বমোট ২৮টি অলিম্পিক মেডেল তার ঝুলিতে, যা কি না আধুনিক অলিম্পিকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আপনি যদি বলেন দলগত নৈপুন্য সেসবে অন্তর্ভুক্ত নয়, তাহলেও দ্বিতীয় হওয়ার জো নেই। ফেলপসের ১৬টি ব্যক্তিগত মেডেলও ইতিহাসের সর্বোচ্চ।

সিডনি অলিম্পিকে এসেছিলেন চমক হয়ে। ১৫ বছর বয়সী ফেলপস সেবার জেতেননি কিছুই। ২০০৪ এথেন্সে নিজের নাম চিনিয়েছেন। তিনটি বিশ্বরেকর্ড গড়ে ৬টি স্বর্ণ আর ২টি ব্রোঞ্জসহ পদক জিতেছিলেন সবক’টি বিভাগে। ২০০৮ বেইজিং তো স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু। শুধু সবক’টি বিভাগে স্বর্ণই জেতেননি, ৮টি ইভেন্টের মধ্যে ৭টিতেই করেছেন বিশ্বরেকর্ড। আর বাকি একটিতে? দুর্ভাগ্যবশত সেটিতে নিজের করা রেকর্ড নিজেই ভাঙতে পারেননি। ২০১২ লন্ডনেও ২৭ বছর বয়সী ফেলপস জিতেছেন চারটি সোনা আর দুইটি রৌপ্য। ততদিনে তিনি জীবন্ত কিংবদন্তি। সেবার পুলে নামার আগে বলেছিলেন, এই শেষ। শেষের আগে সবটুকু দিয়ে যেতে চান।

কিন্তু জলের টান উপেক্ষা করতে পারলেন না বেশিদিন, ফিরে এলেন ২০১৬ এর রিও ডি জেনিরোতে। সেই ‘বুড়িয়ে যাওয়া’ ফেলপস আবার জিতলেন ৫টি গোল্ড, সাথে একটি সিলভার মেডেলও। অমরত্ব নিশ্চিত করলেন মাত্র ৩১ বছর বয়সেই।

সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ান; Image Source: Getty Images

২০০১ ফুকৌকা থেকে ২০১৬ রিও ডি জেনিরো — মাঝের ১৫ বছরে ফেলপসের শোকেসে জমা হয়েছিল ৬৬টি স্বর্ণ, ১৩টি রৌপ্য, আর ৩টি ব্রোঞ্জ। অমরত্বের সার্টিফিকেট নেই, তা না হলে সেই শোকেসে সেটিও থাকতো। ফেলপসের কিংবদন্তি কিংবা অমর হওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলাই অবান্তর। কিন্তু একটি প্রশ্ন ফেলপস ঠিকই রেখে গিয়েছেন, যার উত্তর বলাটা দুষ্কর — তিনি কি জলমানব ছিলেন, নাকি জলদানব?

This Bangla article is about how Michael Phelps became the greatest swimmer and as well as the greatest Olympian ever. Necessary references are hyperlinked in the article. 

 Feature Image: Mike Lewis/ Ola Vista

Related Articles