Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দোর্দণ্ড প্রতাপে মুমিনুলের প্রত্যাবর্তন: সাগরিকায় যত রেকর্ড

বিপিএল শেষ হওয়ার পর গত ডিসেম্বরে যখন বাকি ক্রিকেটাররা কিছুটা বিশ্রামের খোঁজে ছুটিতে গেলেন, মুমিনুল হক তখন ছুটলেন বিকেএসপিতে। গত কয়েক টেস্টে বেশ কয়েকবার অফ স্পিনারদের বিপক্ষে যেভাবে আউট হয়েছেন, সেই কথা ভেবে মনে শান্তি পাচ্ছিলেন না একটু। তার উপর সামনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট, হাতে সময়ও নেই খুব বেশি একটা। সিরিজ শুরুর আগে কিছু সমস্যার সমাধান না খুঁজলেই যে নয়! তাই সমাধান খুঁজতে ধর্না দিলেন প্রিয় শিক্ষাগুরু মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের কাছে। নির্দ্বিধায় কিছু টেকনিক্যাল খুঁটিনাটিতে ভুল ধরিয়ে দিলেন সালাউদ্দিন স্যার, আর সেটাই যেন কাজ করলো জাদুর মতো!

Credit: Firoz Ahmed/The Daily Star

একটু পেছনে ফিরে যাই। কক্সবাজার শহরের দুরন্ত এক কিশোর, নাম সৌরভ। তার সময় কাটতো শুধু সাইক্লিং করতে করতেই। নাহ, ‘ট্যুর ডি ফ্রান্স’-এ নাম লেখানোর বিশেষ ইচ্ছে ছিলো না তার, বরং ইচ্ছে ছিল ক্রিকেটার হবার। কিন্তু ক্রিকেটার হতে গেলে যে প্রয়োজন যথাযথ দিকনির্দেশনা, কক্সবাজারে কোথায় পাবে এত ভালো কোচ? উত্তর খুঁজে মিললো বিকেএসপিতে; হ্যাঁ, বিকেএসপিতেই ভর্তি হতে হবে।

২০০৩ সালে তাই মুশফিক-সাকিবদের আঁতুড়ঘর বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে উপস্থিত হলো সৌরভ, ক্রীড়াবিদদের শিক্ষার জন্য বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে ঢোকার জন্য আশায় বুক বাঁধলো। কিন্তু বাদ সাধলো নিজের উচ্চতা, কোনোমতে পাঁচ ফুট না হলে যে ঢুকতে পারবে না সেখানে! দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সৌরভ এবার চ্যালেঞ্জ নিলো, লম্বা হতেই হবে। জানতে পারলো, সাইকেল চালালে নাকি লম্বা হওয়া যায়। ব্যস, শুরু হলো তার কঠোর পরিশ্রম। অবশেষে সেই হার্ডলটা পার করতে পারলো সৌরভ, ভর্তি হলো বিকেএসপি-তে। কক্সবাজারের আনাচেকানাচে সারাদিন সাইকেলে ছুটে চলা ছোট্ট সৌরভ থেকে বাংলাদেশের ‘মুমিনুল হক’ হয়ে ওঠার শুরুটা হলো সেদিন থেকেই।

সেই মুমিনুল হক এখন নিজের ছোট্ট শরীরটাকেই সবচেয়ে বড় ঢাল বানিয়ে নিয়েছেন, হয়ে উঠেছেন টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান। তাঁর হয়ে সাক্ষ্য দেয় নিজের পারফরম্যান্সটাই, ৪৮.২০ গড়টাই বা আছে ক’জনের বাংলাদেশে? সত্যি বলতে, কারোরই নেই। আর তাই গড় এবং ধারাবাহিকতার দিক থেকে নির্দ্বিধায় টেস্টে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান নিঃসন্দেহে তিনিই। ‘অন্যতম’ শব্দটাও আসলে ভদ্রতা করেই বলা, বেশিরভাগ ক্রিকেটবোদ্ধার কাছেই সেটা নিয়ে কোনো সংশয়ই নেই।

তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন নেই কারো মধ্যেই ; Credit : Cricbuzz

অথচ এই মুমিনুলই হাতুরুসিংহের দলে ব্রাত্য হয়ে উঠেছিলেন। বাংলাদেশের সাবেক এই  শ্রীলংকান কোচ দায়িত্ব নেওয়ার আগে ফুলে-ফলে ভরে উঠেছিলো যেন মুমিনুলের ক্যারিয়ার; যা স্পর্শ করছিলেন, তা-ই সোনা হয়ে উঠছিল। ক্যারিয়ারের প্রথম ১৪ টেস্টেই টানা পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছিলেন, ছিলো পাঁচটি শতকও! অথচ সেই মুমিনুলই হঠাৎ যেন রান করতে ভুলে গেলেন! প্রথম সফরেই হাতুরুসিংহে আবিষ্কার করলেন, তাঁর নাকি পেস বলে বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে। কথাটা শোনার পর রীতিমতো আকাশ থেকে পড়েছিলেন দেশের কোচরা, মুমিনুল যে পেস বোলিংয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশে সেরাদের একজন বলেই জানতেন সকলে!

এরপর কয়েক দফা তাঁকে বাদ দেওয়ার নানাবিধ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন প্রাক্তন কোচ; কখনো পেস বোলিংয়ে দুর্বলতার কথা বলেছেন, আবার কখনো স্পিনে ‘পা চলে না’ টাইপ অভিযোগ তুলেছেন। অথচ সংবাদ সম্মেলনে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, “যে ছেলেটি কিছুদিন আগেও এতটা ভালো করছিল, সে হঠাৎ করেই আপনার সময়ে এত খারাপ হয়ে গেলো কেমন করে? সেটা সংশোধনে আপনার দায় কতটুকু?” হাথুরুসিংহে সকলকে স্তম্ভিত করে দিয়ে বলেছিলেন, “আমার দায় নেই!”

অবশেষে সফল হলেন হাতুরুসিংহে, মুমিনুল এবং মাহমুদউল্লাহ দু’জনই বাদ পড়লেন বাংলাদেশের শততম টেস্টে। পরিসংখ্যান বলছে, শততম টেস্টের আগের সাত টেস্টে মুমিনুলের ফিফটি মাত্র তিনটি। সেখানে পঁচিশের সামান্য বেশি গড়ে রান করেছেন, ধারাবাহিক হতে পারেননি সেই অর্থে। ভারতের বিপক্ষে দুই ইনিংসে করেছিলেন যথাক্রমে ১২ ও ২৭ রান, এরপর শ্রীলংকা সিরিজে প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে ৭ ও ৫ রান করে ফিরে যাওয়াতেই বাংলাদেশের শততম টেস্টের একাদশ থেকে বাদ পড়েন মুমিনুল।

অথচ সেই পরিসংখ্যানই বলছে, এই দুই টেস্টের আগেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে টানা দুই ফিফটি করেছিলেন মুমিনুল; এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টেও ৪০ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, ঘরের মাঠে শেষ দুটো টেস্টেই তাঁর ফিফটি রয়েছে, সেটাও ইংল্যান্ডের মতো কোয়ালিটি বোলিং অ্যাটাকের বিরুদ্ধে ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমিতে!

পারফরম্যান্সে বরাবরই ছিলেন ধারাবাহিক, তবু অবহেলার শিকার হয়েছেন প্রাক্তন কোচের আমলে ; Credit : Cricbuzz

এই পরিসংখ্যান যদি যথেষ্ট না হয়ে থাকে, সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও ছিলেন রানের মধ্যেই। ১৬ ম্যাচে করেছিলেন ৫৮৪ রান, যাতে ছিলো ১৫২ রানের বিধ্বংসী একটি ইনিংস। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে অনুষ্ঠিত একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও দারুণ পারফর্ম করে নিজের দাবিটা বেশ জোরালোভাবেই রেখেছিলেন তিনি।

এরপরও যদি মুমিনুলের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ থেকে থাকে, তাহলে এটাও যোগ করে নিতে পারেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরূপ কন্ডিশনে প্রথমবারের মতো ব্যাটিং করতে নেমেই মরকেল-রাবাদা-মহারাজদেরকে নিয়ে গঠিত বোলিং অ্যাটাকের সামনে বুক চিতিয়ে খেলেছিলেন ৭৭ রানের একটি লড়াকু ইনিংস। আবারও প্রমাণ দিয়েছিলেন নিজের ব্যাটিং টেম্পারামেন্টের।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুমিনুলের বাদ পড়ার সংবাদটি শোনার পর সংবাদ সম্মেলনে যখন প্রশ্ন উঠলো, গত হোম সিরিজে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ঠিক কোন প্রসেসের কারণে এই সিরিজে স্কোয়াডেই সুযোগ পেলেন না, সদুত্তর দিতে সক্ষম হননি প্রধান নির্বাচক। উপরন্তু বলেছেন, “ওই সিরিজ হয়েছে এক বছর আগে, এরপর আরও অনেকগুলো টেস্ট খেলেছি আমরা।”

নাহ, এই এক বছরে আমরা অনেকগুলো টেস্ট খেলিনি। আদতে কাগজে-কলমে এক বছর হয়নি ইংল্যান্ড সিরিজের, এরপর আমরা খেলেছি আর মাত্রই চারটি টেস্ট। এবং দেশের বাইরে শ্রীলংকা এবং ভারতের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ খেলার আগে তিনি নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে একটিমাত্র টেস্ট খেলেছিলেন, যেখানে সাকিব-মুশফিক বীরত্বের আগে নিজের পাশে লিখেছিলেন ৬৪ রান। অদ্ভুত ব্যাপার, ইংল্যান্ডের পাশাপাশি এই দলটিও ছিলো অনেকাংশেই পেসনির্ভর।

Credit : ICC-Cricket

মুমিনুলকে নিয়ে আরেকটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, মুমিনুল নাকি লঙ্গার ফরম্যাটের খেলোয়াড়, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নাকি তিনি একদমই মানানসই নন। অথচ বারবারই তিনি এই ধারণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এসেছেন, নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন নানাভাবে। তবু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তিনি কখনোই বিবেচনায় আসেন না। যতবারই এসেছেন ওয়ানডে দলে, খেলেছেন লোয়ার মিডল অর্ডারে, এমনকি নয় নম্বরেও নেমেছেন! প্রমাণের ছিলো তাই অনেক কিছুই।

ব্যক্তিগত জীবনে অন্তর্মুখী ও শান্ত স্বভাবের মুমিনুল তাই হঠাৎ করেই যেন বারুদের মতো জ্বলে উঠলেন চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করে। ব্যাট-হেলমেট উঁচিয়ে ধরা তো ছিলোই, এছাড়া বাতাসে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ছুড়েছেন, চোয়াল শক্ত করে ছুটে গেছেন ড্রেসিং রুমের দিকে। চোখে-মুখে অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিলো মনে জমে থাকা এতদিনের ক্ষোভ-অভিমান সব একবারে উগড়ে দিতে চাইছেন। আপাতদৃষ্টিতে সেটাকে সাবেক কোচ হাতুরুসিংহের প্রতি জবাব বলে মনে হলেও মুমিনুল দাবি করলেন, এরকম কিছু নাকি তাঁর মাথায়ই ছিলো না। চ্যালেঞ্জটা ছিলো নিজের কাছেই, অনেকদিন সেঞ্চুরি করতে পারছিলেন না বলে!

শরীরী ভাষায় প্রতিজ্ঞাটা ছিলো স্পষ্ট ; Credit : cricket.com.au

তবে সেখানেই থেমে থাকেননি, গড়েছেন একাধারে বেশ কিছু রেকর্ডও। চলুন, দেখে আসি সাগরিকা টেস্ট চলাকালীন সময়ে মুমিনুলের কিছু মাইলফলক।

টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম ২,০০০ রান

১৭৬ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলার পথে উদযাপনরত মুমিনুল ; Credit : Tigercricket.com.bd

মুমিনুল টেস্টটি শুরু করেছিলেন ১৮৪০ রান নিয়ে, দু’হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে প্রয়োজন ছিলো আর ১৬০ রান। মাত্র ৪৬ ইনিংস খেলেছেন, এর আগে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম দু’হাজার রানে পৌঁছানোর রেকর্ড গড়তে তামিম ইকবাল সময় নিয়েছিলেন ৫৩ ইনিংস। অদম্য মুমিনুল সেই মাইলফলক ছুঁতে একদমই সময় নিলেন না, তামিমকে দ্বিতীয় অবস্থানে ঠেলে দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম ২,০০০ রান সংগ্রহের রেকর্ড গড়লেন চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনেই। দিনের ৮১তম ওভারে রঙ্গনা হেরাথকে উড়িয়ে মারলেন, বল নিশ্চিন্তে চলে গেলো বাউন্ডারির বাইরে। আর সাথে সাথেই আরো একটি রেকর্ড নিজের নামের পাশে লিখিয়ে নিলেন ‘মিমি’।

তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ

“কাজ এখনো বাকি”, এটাই কি মুমিনুলকে বলছিলেন মুশফিক? Credit : AFP

২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে  ৯০ রানে দুই উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে ১৫৭ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল এবং মুমিনুল হক। এতদিন সেটাই ছিলো বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপের রেকর্ড। তবে আজই শেষ হওয়া চট্টগ্রাম টেস্টে প্রাক্তন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে সাথে নিয়ে নিজেরই আগের রেকর্ড ভাঙেন মুমিনুল, গড়েন ২৩৬ রানের জুটি। সাথে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের বড় রান সংগ্রহের পথটাও। এই জুটির উপর ভিত্তি করেই পরে ৫১৩ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ।

চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ

ছবিতে লিটনের তুলনায় কিছুটা ম্লান মনে হলেও গোটা ইনিংস জুড়েই নিজগুণে ভাস্বর ছিলেন মুমিনুল ; Credit : The daily Star

২০১২ সালের ১৩ নভেম্বর মিরপুরে অনুষ্ঠিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টে উইন্ডিজের গড়া ৫২৭ রানের বিশাল সংগ্রহের জবাব দিতে নেমে ১১৯ রানে তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর ক্রিজে শক্ত খুঁটি গেঁড়ে বসেন নাঈম ইসলাম, তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন সাকিব আল হাসান। ফলাফলস্বরূপ, চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা পড়ে ১৬৭ রান। সাগরিকায় সর্বশেষ টেস্টটির আগ পর্যন্ত সেটাই ছিলো বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের পার্টনারশিপ। তবে এই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের টানা দ্বিতীয় শতক তুলে নেওয়ার পথে মুমিনুল জুটি গড়েন লিটন কুমার দাসের সঙ্গে, গড়েন ১৮০ রানের বিশাল এক জুটি। এই জুটিই খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশকে আবারও ম্যাচে ফিরিয়ে আনে এবং বাংলাদেশ ড্র করতে সক্ষম হয়।

এক টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান

মুমিনুল আজ অনেকদিক থেকেই পিছনে ফেলেছেন তামিমকে ; Credit : ICC-Cricket

চট্টগ্রাম টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির পথে মুমিনুল পিছনে ফেলেছেন তামিম ইকবালের এক টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের বাংলাদেশী রেকর্ডটিকে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৭তম ওভারে লাহিরু কুমারার বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে নিজের মুকুটে যোগ করেন আরেকটি পালক। এর আগে তামিম ইকবাল ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই মহাকাব্যিক দ্বিশতকের ম্যাচে নিজের নামের পাশে যোগ করেন ২৩১ রান। এতদিন সে রেকর্ড অনতিক্রম্য থাকলেও মুমিনুল আজ নতুন করে রেকর্ড গড়েন, সংগ্রহ করেন ২৮১ রান!

মুমিনুলের সাগরিকা-প্রেম

Credit : Firoz Ahmed/ The Daily Star

বাংলাদেশের এই দলে দু’জন ক্রিকেটার রয়েছেন, যারা চট্টগ্রাম বিভাগের- তামিম ইকবাল এবং মুমিনুল হক। তাই একদিক থেকে তাঁকে ঘরের ছেলে বলাটা ভুল হয় না। বরাবরই সাগরিকা তাঁকে দু’হাত ভরে দিয়েছে, এবারও সেটির ব্যত্যয় হলো না। সাগরিকায় ম্যাচ পড়লেই একটা ব্যাপার যেন অবধারিত, মুমিনুলের রানের ফুলঝুরি ছোটানো। এর পেছনে কি আলাদা কোনো রহস্য আছে? সে থাকুক আর না থাকুক, সাগরিকাভাগ্য যে বরাবরই মিমির জন্য সুপ্রসন্ন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই ম্যাচ খেলতে নামার আগে মুমিনুলের সাগরিকাতে কোনো ফিফটি ছিলো না, অথচ ছিলো তিনটি শতক! আর ম্যাচ শেষে অর্ধশতকের ঘরে শূন্য থাকলেও শতকের ঘরে যোগ হলো আরো দুই, সব মিলিয়ে পাঁচটি! বলা বাহুল্য, এক ভেন্যুতে পাঁচটি শতক নেই বাংলাদেশে আর কারো। তিনটি শতক রয়েছে মোহাম্মদ আশরাফুলের, সেটিও এই জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামেই। এছাড়া তামিম ইকবালের দুটি করে শতক রয়েছে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে।

টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি

একই টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরিতে ইতিহাসের পাতায় পাকাপোক্তভাবে নাম লিখে ফেললেন মুমিনুল ; Credit : AFP

চট্টগ্রাম টেস্টে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ, যাতে মুমিনুল হক খেলেন অনবদ্য ১৭৬ রানের একটি ইনিংস। এরপরও খাদের কিনারায় চলে যায় বাংলাদেশ, শ্রীলংকা প্রথম ইনিংস শেষে ২০০ রানের লিড নিয়ে নেয়। জবাব দিতে নেমে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ, মাত্র ৮১ রানেই খুঁইয়ে বসে তিনটি উইকেট। আবারও হাল ধরেন মুমিনুল, লক্ষ্মণ সান্দাকানের ওভারের পঞ্চম বলে দ্রুত সিঙ্গেলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ শতক তুলে নেন মুমিনুল হক। সাথে গড়েন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে একই টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরির অমূল্য এক রেকর্ড।

এর আগে এই রেকর্ড ছিলো মাত্র ৬৬ জনের, যাতে নাম রয়েছে রিকি পন্টিং, সুনীল গাভাস্কার, হার্বার্ট সাটক্লিফ, স্যার ক্লাইড ওয়ালকট, জ্যাক ক্যালিস, অ্যালান বোর্ডার, রাহুল দ্রাবিড়, ইয়ান চ্যাপেল, গ্রেগ চ্যাপেল, স্যার গ্যারি সোবার্স, ব্রায়ান লারা থেকে শুরু করে হালের বিরাট কোহলি, কুমার সাঙ্গাকারা, হাশিম আমলাদের। তবে বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের জন্য এতদিন এই রেকর্ডটি ছিলো অধরা। বাংলাদেশের বাঁহাতি এই ‘পকেট ডায়নামাইট’-র হাত ধরে অবশেষে এ অর্জন ধরা দিলো, ইতিহাসের পাতায় ঢুকে গেলেন মুমিনুল। এই কীর্তির সূচনা ঘটেছিলো ১৯০৯ সালের আগস্টে, লন্ডনের ওভালে। সেই ম্যাচেই টেস্ট ইতিহাসের ‘প্রথম’ ক্রিকেটার হিসেবে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ওয়ারেন বার্ডসলে। এরপর তাঁর দেখানো পথে হেঁটেছেন আরো ৬৬জন, যার মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন ‘মিমি’।

৬৬ জন এই কীর্তি গড়লেও সাকুল্যে এমন ঘটেছে ৮২ বার, ১০ জন খেলোয়াড় দুই বা এর বেশিবার ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি করেছেন। তবে তাতে বিন্দুমাত্র কৃতিত্ব কমে যায় না মুমিনুলের। সেঞ্চুরি তো অনেকেই করতে পারেন, কিন্তু জোড়া সেঞ্চুরির জন্য ভাগ্যের পাশাপাশি প্রয়োজন হয় প্রতিভা এবং দুর্দান্ত টেম্পারামেন্টেরও। এই টেস্ট দিয়ে সব সমালোচনার জবাব দিলেন, টেম্পারামেন্টের প্রমাণ দিলেন, সাথে এটাও বোঝালেন যে তিনি সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও হতে পারেন অসাধারণ সংযোজন। একদিক থেকে অন্তত টেন্ডুলকারকেও ছাড়িয়ে গেলেন তিনি, বসলেন লারা-দ্রাবিড়-পন্টিং-সোবার্সদের পাশে। বৃদ্ধ বয়সে গল্প করার মতো রসদ ইতোমধ্যেই জুটিয়ে ফেলেছেন মুমিনুল!

ফিচার ইমেজ: ICC-Cricket.com

Related Articles