Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী পাঁচ ব্যাটসম্যান

১৯৭৫ সালে আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট ১১বার বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের এগারো আসরে এখন পর্যন্ত মোট ১,০৫৭ জন ক্রিকেটার খেলেছেন। যার মধ্যে কমপক্ষে এক ইনিংস ব্যাটিং করেছেন এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা ১,০১৯ জন এবং কমপক্ষে এক রান করেছেন এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা ৯৭৭ জন। বিশ্বকাপে এক সহস্রাধিক রান করা ব্যাটসম্যানের সংখ্যাও কম নয়। এক সহস্রাধিক রান করেছেন ১৭ জন ব্যাটসম্যান। যার মধ্যে শুধুমাত্র শচীন টেন্ডুলকার দুই সহস্রাধিক রান করেছেন।

বিশ্বকাপে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই সহস্রাধিক রান করেছেন শচীন টেন্ডুলকার; Image Source: AFP

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে শীর্ষ পাঁচ রান সংগ্রাহকদেরকে নিয়ে সাজানো থাকছে এই লেখা। চলুন জেনে আসা যাক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী পাঁচ ব্যাটসম্যান সম্পর্কে।

শচীন টেন্ডুলকার

ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান শচীন টেন্ডুলকার বিশ্বকাপের ছয়টি ভিন্ন আসরে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বিশ্বকাপে সবচেয়ে আসর খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনি জাভেদ মিয়াঁদাদের সাথে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছয়টি বিশ্বকাপ আসরে মোট ৪৫টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৪৫ ম্যাচের মধ্যে ৪৪ ইনিংসে ব্যাট করে ছয়টি শতক এবং ১৫টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৬.৯৫ ব্যাটিং গড়ে ২,২৭৮ রান সংগ্রহ করেছেন। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি শতক এবং অর্ধশতক হাঁকানো ব্যাটসম্যানও তিনি।

শচীন টেন্ডুলকার; Image Source: Getty Images

শচীন টেন্ডুলকার বিশ্বকাপে নিজের সর্বপ্রথম ম্যাচ খেলেন ১৯৯২ সালে। তখন তার বয়স মাত্র উনিশ। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ আসরে আট ম্যাচ খেলে সাত ইনিংস ব্যাট করে তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন। ‘৯২-তে ভারত গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়লেও শচীন ব্যাট হাতে বেশ সফল ছিলেন। সাত ইনিংসে ৪৭.১৬ ব্যাটিং গড়ে ২৮৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

১৯৯৬ সালে উপমহাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া বিশ্বকাপের আসরে শচীন টেন্ডুলকার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। সাত ম্যাচে দুটি শতক এবং তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৮৭.১৬ ব্যাটিং গড়ে ৫২৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের তুলনায় ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে শচীন টেন্ডুলকার কিছুটা নিষ্প্রভ ছিলেন। কেনিয়ার বিপক্ষে ১০১ বলে অপরাজিত ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পরেও টুর্নামেন্টে মোট সাত ম্যাচ খেলে ৪২.১৬ ব্যাটিং গড়ে ২৫৩ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

২০০৩ সালে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছিলেন শচীন ; Image Source: Getty Images

১৯৮৩ সালের পর ২০০৩ সালে বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ভারত। আর এতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন শচীন টেন্ডুলকার। টুর্নামেন্টে ১১ ম্যাচে মাত্র একটি শতক হাঁকালেও অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন ছয়টি। আর এতে করেই তিনি সর্বাধিক রান সংগ্রাহক হিসাবে ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের আসর শেষ করেছিলেন। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা শচীন ৬১.১৮ ব্যাটিং গড়ে ৬৭৩ রান করেছিলেন।

২০০৭ সালের বিশ্বকাপের কিছুদিন আগে শচীনকে ওপেনিং থেকে সরিয়ে মিডল-অর্ডারে ব্যাট করতে পাঠানো হয়। এর ফলাফল দলে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে সেটা বুঝতে বেশিদিন সময় লাগেনি টিম ম্যানেজমেন্টের। ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিলো ভারতকে। তিনি মিডল-অর্ডারে তিন ইনিংসে ব্যাট করে যথাক্রমে ৭, ৫৭* এবং ০ রানে ফিরে গিয়েছিলেন।

শেষপর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতলেন শচীন; Image Source: Associated Press

ভারত দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে ২০১১ সালের বিশ্বকাপে। নিজের শেষ বিশ্বকাপ আসরে শিরোপা জিতে স্মরণীয় করে রাখতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। টুর্নামেন্টে তিনি ভারতের হয়ে সর্বাধিক রান সংগ্রহ করেছিলেন। নয় ম্যাচে দুটি শতক এবং দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৩.৫৫ ব্যাটিং গড়ে ৪৮২ রান করে তিলকারত্নে দিলশানের পর টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি।

রিকি পন্টিং

অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছেন দুটি বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মোট ২৯ ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করে জয় এনে দিয়েছেন ২৬ ম্যাচে। পরাজয় মাত্র দুটিতে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলেছেন তিনি। যার মধ্যে তিনবার শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া এবং একবার রানার্সআপ হয়েছে।

অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে দুবার শিরোপা জিতিয়েছিলেন রিকি পন্টিং ; Image Source: Getty Images

বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৪৬টি ম্যাচ খেলা রিকি পন্টিং সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন। তিনি ৪৬ ম্যাচে পাঁচটি শতক এবং ছয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪৫.৮৬ ব্যাটিং গড়ে ১,৭৪৩ রান করেছিলেন। রিকি পন্টিং ১৯৯৬ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ আসরে সাত ম্যাচে একটি শতক হাঁকিয়ে ৩২.৭১ ব্যাটিং গড়ে ২২৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন, যা ঐ টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

স্টিভ ওয়াহর নেতৃত্বে ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ শিরোপা জেতে। ঐ আসরে রিকি পন্টিং বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও ধারাবাহিকভাবে রানের দেখা পেয়েছিলেন। ‘৯৯ তে দশ ম্যাচে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ৬৯ রানের। এছাড়া আর কোনো ইনিংসের পঞ্চাশের গণ্ডি টপকাতে পারেননি। তবুও টুর্নামেন্টে ওয়াহ ব্রাদার্সের অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। দশ ম্যাচে ৩৯.৩৩ ব্যাটিং গড়ে ৩৫৪ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন রিকি পন্টিং ; Image Source: Getty Images

রিকি পন্টিং প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেন ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে। অধিনায়ক হিসেবে নিজের প্রথম বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে শিরোপা জেতান তিনি। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ১৪০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতেছিলেন রিকি পন্টিং। পুরো আসরেই তিনি ছন্দে ছিলেন। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপে ১১ ম্যাচের মধ্যে দশ ইনিংস ব্যাট করে দুটি শতক এবং একটি অর্ধশত রানের ইনিংস খেলে ৫১.৮৭ ব্যাটিং গড়ে ৪১৫ রান করে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি।

২০০৭ সালেও অস্ট্রেলিয়া অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো। ঐ আসরে অস্ট্রেলিয়ার সব টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানই রানের মধ্যে ছিলেন। ম্যাথু হেইডেন, রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং মাইকেল ক্লার্ক টুর্নামেন্ট শেষ করেছিলেন নামের পাশে চার শতাধিক রান যোগ করে। এদের মধ্যে রিকি পন্টিং ১১ ম্যাচের নয় ইনিংসে ব্যাট করে একটি শতক এবং চারটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬৭.৩৭ ব্যাটিং গড়ে ৫৩৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ম্যাথু হেইডেনের পর ঐ আসরে তিনিই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন।

প্রথম দুই বিশ্বকাপে অপরাজেয় থাকার পর ২০১১ সালে প্রথম পন্টিংয়ের নেতৃত্বে ম্যাচ হারে অস্ট্রেলিয়া; Image Source: AFP

রিকি পন্টিং অধিনায়ক হিসাবে প্রথম পরাজয়ের স্বাদ পান ২০১১ সালে নিজের শেষ বিশ্বকাপ আসরে। উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত এই আসরে পাকিস্তানের কাছে গ্রুপ পর্বে এবং ভারতের কাছে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ব্যাট হাতেও ছন্দে ছিলেন না পন্টিং। ভারতের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ১০৪ রানের ইনিংস ছাড়া পুরো আসর জুড়েই নিষ্প্রভ ছিলেন তিনি। ছয় ইনিংস ব্যাট করে ৩৪.৩৩ ব্যাটিং গড়ে করেছিলেন ২০৬ রান। সময়মত জ্বলে উঠলেও অস্ট্রেলিয়াকে কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়া থেকে রক্ষা করতে পারেননি তিনি।

কুমার সাঙ্গাকারা

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারা। ওয়ানডেতে তিনিই একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা চার ইনিংসে শতক হাঁকানোর অনন্য কীর্তি গড়েছেন। এই কীর্তি তিনি গড়েছেন বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজিত ১০৫ রান, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৭ রান, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০৪ রান এবং স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে টানা চার ইনিংসে শতক হাঁকিয়েছিলেন সাঙ্গাকারা, এটা করে দেখালেন বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে; Image Source: Getty Images

কুমার সাঙ্গাকারা ২০০৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মোট চারটি বিশ্বকাপের আসরে শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এই চার আসরে ৩৭ ম্যাচ খেলে পাঁচটি শতক এবং সাতটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৬.৭৪ ব্যাটিং গড়ে ১,৫৩২ রান সংগ্রহ করেছেন। নিজের প্রথম বিশ্বকাপ আসর ২০০৩ সাল বাদে বাকি তিন আসরে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে দশ ম্যাচে ২৫.১৪ ব্যাটিং গড়ে তিনি মাত্র ১৭৬ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

২০০৭ এবং ২০১১ সালের বিশ্বকাপ আসরে শ্রীলঙ্কা ফাইনাল খেলেছিল। এতে বেশ বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা। ২০১১ সালে তো তিনি শ্রীলঙ্কার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ২০০৭ সালে ১১ ম্যাচে চারটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৫.০০ ব্যাটিং গড়ে ৩৫০ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ২০১১ সালের আসরেও তার ব্যাটে রানের ফুলঝুরি ছুটেছিল। নয় ম্যাচের মধ্যে আট ইনিংসে ব্যাট করে একটি শতক এবং তিনটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৯৩.০০ ব্যাটিং গড়ে ৪৬৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

২০১৫ সালে দুর্দান্ত ফর্মে থাকার পরেও ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন কুমার সাঙ্গাকার ; Image Source: Getty Images

২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আসর বসার আগে সবাইকে অবাক করে দিয়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কুমার সাঙ্গাকারা জানান, এই বিশ্বকাপের মধ্য দিয়েই তিনি রঙিন পোশাক তুলে রাখবেন। নিজের শেষ বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন সাঙ্গাকারা। সাত ম্যাচে চারটি শতক হাঁকিয়ে অবিশ্বাস্য ১০৮.২০ ব্যাটিং গড়ে ৫৪১ রান করেছিলেন তিনি। তার এমন নৈপুণ্যের পরেও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয় শ্রীলঙ্কাকে।

ব্রায়ান লারা

ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারা তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সোনালি সময় শেষ হওয়ার পর থেকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১৯৯২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মোট পাঁচ আসরে প্রতিনিধিত্ব করেও দলগত তেমন কোনো সাফল্যের দেখা পাননি। তবে ব্যক্তিগত অর্জনের দিক বিবেচনা করলে তিনি বিশ্বকাপে বেশ সফল ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপে সর্বমোট ৩৪ ম্যাচ খেলে দুটি শতক এবং সাতটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। ৪২.২৪ ব্যাটিং গড়ে ১,২২৫ রান সংগ্রহ করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছেন।

ব্রায়ান লারা; Image Source: Getty Images

ব্রায়ান লারা ১৯৯২ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ আসরে আট ম্যাচ খেলে চারটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৪৭.৫৭ ব্যাটিং গড়ে ৩৩৩ রান করেছিলেন। ‘৯৬ এর বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচ খেলে একটি করে শতক এবং অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৫৩.৮০ ব্যাটিং গড়ে ২৬৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ঐ আসরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে তার অসাধারণ ব্যাটিংয়ের উপর ভর করেই জয় পেয়েছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাত্র ৯৪ বলে ১১১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সেমিফাইনালের টিকেট এনে দিয়েছিলেন তিনি।

ইংল্যান্ডের অনুষ্ঠিত ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো সময় কাটেনি ব্রায়ান লারার। পাঁচ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছিল সর্বসাকুল্য ১০৬ রান।

দলের বিপদের সময় লারার ব্যাট জ্বলে উঠতো; Image Source: Icc-Cricket.com

২০০৩ সালে একটি করে শতক এবং অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৪১.৩৩ ব্যাটিং গড়ে ২৪৮ রান সংগ্রহ করেছিলেন। ২০০৭ সালে নিজের শেষ বিশ্বকাপ আসরে বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হয়েছিলেন লারা। নয় ম্যাচে তার সংগ্রহে ছিলো মাত্র একটি অর্ধশত রানের ইনিংস। পুরো টুর্নামেন্টে ৩৮.৪২ ব্যাটিং গড়ে ২৬৯ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।

আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডি ভিলিয়ার্স

২০১৮ সালে হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় না জানালে এবিডি ভিলিয়ার্স ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপেও দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতেন। দক্ষিণ আফ্রিকার এই দৃষ্টিনন্দন ব্যাটসম্যান ২০০৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপের তিনটি আসর খেলেই সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় শীর্ষে পাঁচে জায়গা করে নিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের মধ্যে বিশ্বকাপে তার চেয়ে বেশি রান সংগ্রহ করতে পারেননি আর কোনো ব্যাটসম্যান।

বিশ্বকাপে কমপক্ষে ২০ ইনিংস ব্যাট করা ব্যাটসম্যানদের মাঝে সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় ভিলিয়ার্সের ; Image Source: Getty Images

এবিডি ভিলিয়ার্স বিশ্বকাপে মোট ম্যাচ খেলেছেন ২৩টি। যার মধ্যে ২২ ইনিংসে ব্যাট করে চারটি শতক এবং ছয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ঈর্ষণীয় ৬৩.৫৬ ব্যাটিং গড়ে এবং ১১৭.২৯ স্ট্রাইক রেটে ১,২০৭ রান সংগ্রহ করেছেন। বিশ্বকাপে কমপক্ষে ২০ ইনিংস ব্যাট করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার ব্যাটিং গড় সবচেয়ে বেশি। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় শীর্ষ ৩৭ জন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেটও ভিলিয়ার্সের দখলে।

২০০৭ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপ আসরে ধারাবাহিকভাবে রান করলে তার রান সংখ্যা আরও বাড়তে পারতো। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে তিনি দশ ম্যাচের মধ্যে চার ম্যাচেই শূন্য রানে ফিরে গিয়েছিলেন। বাকি ছয় ইনিংসের মধ্যে একটি শতক এবং দুটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন। টুর্নামেন্ট শেষে তার মোট সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৭.২০ ব্যাটিং গড়ে ৩৭২ রান। উপমহাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। মাত্র পাঁচ ম্যাচে দুটি শতক এবং একটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৮৮.২৫ ব্যাটিং গড়ে করেছিলেন ৩৫৩ রান।

প্রায় সবধরনের শট খেলতে পারেন ভিলিয়ার্স; Image Source: Icc-cricket.com

এবিডি ভিলিয়ার্স ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিলেন। আসর জুড়ে ধারাবাহিকভাবে রান করেছেন অবিশ্বাস্য স্ট্রাইক রেটে। তার ব্যাটে চড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রায় বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত ভাগ্য সহায় হয়নি তাদের। তিনি ‘১৫ বিশ্বকাপে আট ম্যাচের সাত ইনিংসে ব্যাট করে একটি শতক এবং তিনটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৯৬.৪০ ব্যাটিং গড়ে এবং ১৪৪.৩১ স্ট্রাইক রেটে ৪৮২ রান সংগ্রহ করেছিলেন।

This article is in Bangla language. It is about top five batsmen with most runs in world cup. Please click on the hyperlinks to look for references.  

Featured Image: AFP

Related Articles