Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যে কীর্তিতে মুশফিক অনন্য…

ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় মুশফিকুর রহিমের নামটা একটু ভিন্ন কালিতেই লেখা উচিত। নিদেনপক্ষে স্যার ডন ব্র‍্যাডম্যানের আগে তো বটেই! যে কীর্তি গড়ে ফেলেছেন, তাতে অমন দাবি করা অযৌক্তিক নয় মোটেই। উইকেটরক্ষক হিসেবে ওই বেঁটেখাটো মতো লোকটি সেঞ্চুরিরই দেখা পাননি, সেখানে মুশফিকুর রহিম কি না ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন দুইটি!

বেশ নিম্নমানের রসিকতা, বাতুলতাও বৈকি। ব্র্যাডম্যান উইকেটকিপিং করেননি কোনোদিন, আর তাতেই ক্রিকেটের সবচেয়ে বিখ্যাত চরিত্রটিকে দুইয়ে ঠেলে দেয়ার দুঃসাহসিক কাজটি করায় লেখককে গালমন্দ করতে শুরুও করে দিতে পারেন অনেকে। তা গালাগাল যতই দিন, মুশফিকের কীর্তিকে ফেলনা ভাবার উপায় নেই। ব্র‍্যাডম্যান না করুন, ক্রিকেট ইতিহাসে তো আরও ৭৫৮ জন ক্রিকেটার কিপিং করেছিলেন। এবং একাল-সেকাল-সবকাল মিলিয়ে উইকেটরক্ষকরা দ্বিশতক করবার মতো ঘটনার জন্ম দিতে পেরেছিলেন মাত্র নয়বার, একমাত্র হিসেবে কেবল মুশফিকুর রহিমই যে মাইলফলক ছুঁতে পেরেছেন সর্বোচ্চ দু’বার! মুশফিককে তাই ইতিহাসের পাতায় বিশেষ মর্যাদায় ঠাঁই দিতেই হয়।

সাথে এ শতকে আসা অন্য দ্বিশতকের কীর্তিগুলোও একটু জেনে নেয়াটা মন্দ নয়।

Image Credit: Raton Gomes/BCB

অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার ২৩২*, বিপক্ষ ভারত

ক্রিকেটের স্মরণীয় ম্যাচগুলোর তালিকায় এই ম্যাচটি বিশেষ গুরুত্ব এমনিতেই দাবি করতো। সে ম্যাচে যে ক্রিকেট তার সবচেয়ে আলোচিত দ্বিশতকের দেখা পেয়েছিল। এবং সে কীর্তিটি ফ্লাওয়ারের নয়।

‘লারা, নাকি শচীন’ এই তর্কের অবসান ঘটিয়েছিলেন সেই ‘৯৮-‘৯৯ সালেই৷ ব্র‍্যাডম্যানের পরের ক্রিকেটারটির নাম শচীন, ততদিনে এ জাতীয় ঘোষণাও দিয়ে ফেলেছিলেন অনেকে। তবুও নিন্দুকদের মুখ থামানো কি অত সোজা? পথটা তো তৈরি করেছিলেন শচীন নিজেই। টেস্টে লারার তৎকালীন সর্বোচ্চ সংগ্রহ যেখানে ৩৭৫, ওই ম্যাচের আগে শচীন দ্বিশতকের দেখাই পেয়েছিলেন মোটে একবার।

নতুন শতাব্দীর শুরুতে জিম্বাবুয়েকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়ে, শচীন পেয়েছিলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় দ্বিশতকের দেখা। শচীনের সঙ্গে দ্রাবিড় আর শিবসুন্দর দাসের শতকে ভারত প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল ৬০৯ রানে।

নাগপুরের স্পিনধরা উইকেটে জিম্বাবুয়ে এ রান টপকে যাবে, এমন আশা করাটা বাড়াবাড়িই হতো। ভারতের জয় তাই দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে ৩৮২ রানে গুটিয়ে দিয়ে যে পথে অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছিল ভারত। ম্যাচের বাকি তখনও প্রায় দুইদিন।

দু’শোর পথে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার; Image Credit: Getty Images 

প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের হয়ে শতকের দেখা পেয়েছিলেন গ্র‍্যান্ট ফ্লাওয়ার। ভাইকে দেখেই কি না কিছু করবার তাড়না বোধ করেছিলেন ফ্লাওয়ার ভাইদের অপরজন, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারও! দ্বিতীয় ইনিংসে দল যখন দাঁড়িয়ে ৩ উইকেট হারিয়ে ৬১ রানে, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার নেমেছিলেন তখন।

অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলকে নিয়ে সেখান থেকে গড়লেন ২০৯ রানের জুটি৷ ক্যাম্পবেল দেখা পেলেন শতকের, তিনি ক্রিজ ছাড়লেন পঞ্চম দিন সকালে। অপরপ্রান্তে থাকা অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার অবশ্য ক্রিজ ছাড়লেন একদম ড্র নিশ্চিত করে। ততক্ষণে তার স্কোর দুইশো ছাড়িয়েছে।

ওই বীরত্বপূর্ণ ইনিংসের কথা ভাবলে ফ্লাওয়ারের অবশ্য দুঃখই হবার কথা। ম্যাচটা যে শচীন টেন্ডুলকার কিনে নিয়েছিলেন প্রথম ইনিংসের পরই। শচীনের কাছে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের অপরাজিত ২৩২ আর এমন কী!

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ২০৪, বিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা

উইকেটরক্ষক হিসেবে তার চেয়ে ভালো কেউ ছিল কি না, তা নিয়ে তর্ক তুলতে পারেন কেউ কেউ। ব্যাটসম্যান হিসেবে তার চেয়ে ভালো অনেকেই আছেন, কেউ এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেলে তিনিও দোষী সামান্যই। তবে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে তার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কেউ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলে, তাকে ক্রিকেটের পাঠ নতুন করেই নিতে হবে। উইকেটরক্ষক হিসেবে গিলির চেয়ে ভালো কোনো ব্যাটসম্যান নেই তো!

উইকেটরক্ষকের কাজটা যে কেবলই উইকেটের পেছনে নয়, তারা ভূমিকা রাখতে পারেন উইকেটের সামনেও, এর প্রমাণ দিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচেই, জোহানেসবার্গের ওই দ্বিশতক তাই তেমন কোনো চমক হয়ে আসেনি ক্রিকেটবিশ্বে। যেমন আসেনি লোয়ার অর্ডারকে সাথে নিয়ে ক্যাঙারুদের স্কোরটাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়াও। কাজটা তো তিনি এর আগেও অনেকবারই করেছেন।

Image Credit: Touchline/Getty Images

ম্যাথু হেইডেনের শতক অস্ট্রেলিয়াকে এমনিতেই এগিয়ে দিয়েছিল বড় সংগ্রহের দিকে। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে, দুই উইকেট খুঁইয়েই স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছিল ২২৪ রান, যার মাঝে ৯৫-ই এসেছিল হেইডেনের ব্যাটে। সেখান থেকে ২৯৩ রানে পৌঁছাতে আরও তিন উইকেট খোয়ালেও অজি শিবিরে কাঁপুনি ধরেছিল বলে মনে হয় না। সাতে ব্যাট করতে নেমেছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, তখন যার ব্যাটিং গড় ৫১.১২!

শুরুটা করেছিলেন বেশ ধীরেসুস্থেই, ষষ্ঠ বলে নিয়েছিলেন প্রথম রান। প্রথম চার এসেছিল নবম বলে, প্রথম পঞ্চাশ ৮৯ বলে। সেখান থেকে চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে, স্টিভ ওয়াহর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি যখন ড্রেসিংরুমে ফিরলেন, ততক্ষণে নামের পাশে রানসংখ্যা দুইশো ছাড়িয়েছে, বলসংখ্যা মাত্র ১২৩টিই বেড়েছে!

গিলক্রিস্টের সঙ্গে ডেমিয়েন মার্টিনের সেঞ্চুরিতে অজিরা প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল ৬৫০ পেরিয়ে। দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৫৯ আর ১৩৩ রানে অলআউট হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য গিলক্রিস্টকে হারিয়েছিল ৮৮ রানে, এক ইনিংস খেলেই যে গিলি করেছিলেন অপরাজিত ২০৪! তবে শেষমেষ ম্যাচটা যে জয়ের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি প্রোটিয়া শিবির, সেটা বলাই বাহুল্য।

কুমার সাঙ্গাকারা ২৩০, বিপক্ষ পাকিস্তান

Image Credit: AFP/Getty Images

বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্যে স্যার ডন ব্র‍্যাডম্যানের পাশে বসতে পেরেছিলেন একমাত্র তিনিই। টেস্ট ক্রিকেটে তার দ্বিশতকের সংখ্যা যে ডনের মতোই ১২টি। তবে অবাক করা ব্যাপার হলো, এর মাত্র একটিই এসেছিল উইকেটরক্ষণ করে!

লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমেছিল পাকিস্তান। শুরুতে ভাস, পরবর্তীতে চারিথা বুদ্ধিকা আর মুরালির বোলিং তোপে পাকিস্তান গুটিয়ে গিয়েছিল ২৩৪ রানেই। তবে এই রান দেখেও শ্রীলঙ্কা স্বস্তির শ্বাস ছাড়তে পেরেছিল, এমনটি বলার জো নেই। পাকিস্তানের হয়ে নতুন বলটা হাতে তুলতেন ওয়াকার ইউনুস আর শোয়েব আকতার!

প্রমাণও মিলেছিল শুরুর বলেই। ওয়াকার-শোয়েব কম্বিনেশনে প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরত এসেছিলেন মারভান আতাপাত্তু। ২৯৮ মিনিট আর ৬৭ ওভার কিপিংয়ের পর কুমার সাঙ্গাকারাকে ক্রিজে যেতে হয়েছিল এক বল ব্যবধানেই। তবে পরের ৪২০ মিনিট ধরে ক্রিজে যে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটলো, তাতে কে জানবে ওই ক্লান্তির কথা! যে ইনিংসটি সাঙ্গাকারা খেলেছিলেন, তা বর্ণনের সাধ্য এই সামান্য লেখকের নেই। ওরকম ইনিংস স্রেফ চোখে দেখতে হয়!

ইনিংস বলার চেয়ে অবশ্য ‘ব্যাটিং শিক্ষার আসর’ বলাই শ্রেয়। কভার ড্রাইভটা তার মতো শৈল্পিক ভঙ্গিমায় খেলা আর কারও পক্ষেই সম্ভব হতো না। সেদিন যেন নেমেছিলেন সেই কভার ড্রাইভেরই এক প্রদর্শনী নিয়ে। কভার থেকে লং-অফ, এই সীমানায় সেদিন রান নিয়েছিলেন ১৩৭, যার ভেতর ১০০-ই এসেছিল চার আর ছয়ে!

কভার ড্রাইভগুলোর শিল্পমূল্য অমূল্য বলেই সে কথা আগে বলতে হলো। নইলে ৯৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণের ওই ইনিংসে রান তো উইকেটের সবদিক থেকেই এসেছিল। ঝড়টাও বয়ে গিয়েছিল সব পাকিস্তানি বোলারদের ওপর দিয়েই। তবুও তাদের মাঝেও শোয়েব আর ওয়াকারের ক্ষেত্রে মাত্রাটা ছিল একটু বেশি। দু’জনই সেদিন রান দিয়েছিলেন ওভারপ্রতি চারের বেশি। আর কুমার সাঙ্গাকারা খেলেছিলেন ৩২৭ বলে ২৩০ রানের ইনিংস।

পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিশতকের পরে কুমার সাঙ্গাকারা, তবে সালটি ২০১১; Image source: Associated Press 

১ম ইনিংসে শ্রীলংকা তার ব্যাটে চড়ে থেমেছিল ৫২৮ রানে। পাকিস্তান দুই ইনিংস মিলিয়ে পেরিয়েছিল শ্রীলঙ্কার এই পাহাড়সম সংগ্রহ, সে অবশ্য মাত্র ৩১ রানের জন্যেই। ৬.২ ওভারেই লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে শ্রীলঙ্কা পেয়েছিল এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের স্বাদ, প্রথমবারের মতো!

মহেন্দ্র সিং ধোনি ২২৪, বিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া

সময়টা ঠিক পক্ষে ছিল না তার। ভারতকে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ জেতানোর উপলক্ষটাও ঠিকমতো উদযাপন করতে পারেননি এর পরপরই ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ৪-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হবার কারণে। পরের বছরের শুরুতে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের কাছেও যখন হারতে হলো ২-১ ব্যবধানে, ভারতের তিলকে জুটলো আট বছর পরে দেশের মাটিতে সিরিজ হারের লজ্জা। আর বিশ্বকাপ জিতিয়েও ধোনি তখন অধিনায়কত্ব হারানোর শঙ্কায়! অস্ট্রেলিয়া ভারত সফরে এল ঠিক সে সময়টাতেই।

চেন্নাইয়ের টার্নিং পিচে প্রথম ইনিংসে ৩৮০ তুলে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করেছিল অজিরাই। বোলিংয়ে নেমে জেমস প্যাটিনসনের নতুন বলের ঝড়ে ম্যাচ থেকে এক অর্থে ছিটকেই পড়েছিল ভারত। ৮১ রান করে ভারতের ১৯৬ রানের সময় শচীনও যখন পথ ধরলেন প্যাভিলিয়নের, ধোনির সামনে রীতিমতো পাহাড় টপকানোর চ্যালেঞ্জ।

চিরকালের বিজয়ী ধোনি সে চ্যালেঞ্জও জিতেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের স্বপ্নকে ধূলিস্মাৎ করার মিশনে নেমে তৎকালীন ‘ভবিষ্যৎ অধিনায়ক’ বিরাট কোহলিকে নিয়ে শুরুতে গড়েছিলেন ১২৮ রানের জুটি। কৃতিত্বের বেশিরভাগটা ধোনিরই বেশি, রান-বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সে জুটিতে ৭১ বলে করেছিলেন ৭২। কোহলি ১০৭ রানে বিদায় নিলেও ধোনি ফিরেছিলেন নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে, আরও ১৫২ রান যোগ করে।

ভারতের নামের পাশে ততক্ষণে যোগ হয়ে গিয়েছিল ১৯২ রানের লিড। চিপকের ধীরগতির উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে মাত্র ৫০ রানের লক্ষ্য পেতে ওই রানই ছিল যথেষ্ট।

দু’শোর পথে ধোনি, Image source: BCCI

মুশফিকুর রহিম ২০০, বিপক্ষ শ্রীলঙ্কা

অপেক্ষাটা শুধু মুশফিকের একার ছিল না। ছিল আশরাফুলের, সেই সাথে পুরো বাংলাদেশের। টেস্টের আঙিনায় ১২ বছর কাটিয়েও যে একজন দ্বিশতকধারী ব্যাটসম্যানের দেখা পাচ্ছিল না বাংলাদেশ! অবশেষে ২০১৩ সালে এসে যে অপেক্ষার অবসান ঘটেছিল, ঘটিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম।

বাংলাদেশের টেস্ট গৌরবগাঁথার চিরস্মরণীয় এক ছবি; Image Credit: Associated Press

গলের পাটা পিচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণা করেছিল ৫৭০ রানে। দারুণ ব্যাটিং উইকেটের পাশাপাশি দেড়দিন স্থায়ী শ্রীলঙ্কার ইনিংসও অবশ্য পারেনি বাংলাদেশ শিবির থেকে হারের শঙ্কা দূর করতে। তামিম ইকবাল ফিরে গিয়েছিলেন দ্বিতীয় দিন চা-বিরতির আগেই, মুমিনুল আর মাহমুদউল্লাহর পরপর বিদায়ে চার উইকেট খোয়া গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার চেয়ে ৩৯৩ রান পিছিয়ে থাকতেই।

আরও একবার ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের শঙ্কা যখন চোখ রাঙাচ্ছে, দেশের টেস্ট ক্রিকেটকে ঠিক তখনই গৌরবের রঙে রাঙানোর উপলক্ষ বানালেন দু’জন, মোহাম্মদ আশরাফুল আর মুশফিকুর রহিম।

দুজনের মধ্যেকার ২৬৭ রানের জুটিতে বাংলাদেশ ১ম ইনিংসে লিড নিয়েছিল ৬৮ রানের। আশরাফুল ফিরেছিলেন ১৯০ রানে, মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়ে।

ম্যাচের ফলের খাতায় ড্র লেখা হলেও গোটা বাংলাদেশ জানে, ওই ম্যাচে জয়ী দল তো বাংলাদেশই।

মুশফিকুর রহিম ২১৯*, বিপক্ষ জিম্বাবুয়ে

উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে দুইশো পেরোনোর পরবর্তী কৃতিত্বটাও মুশফিকের। মাঝে অবশ্য পেরিয়ে গিয়েছিল অর্ধ দশক। বাংলাদেশিদের মাঝে ডাবল সেঞ্চুরির কৃতিত্বে মুশফিকের পাশে বসেছিলেন সাকিব আল হাসান, মুশফিকের দুইশো পেরিয়ে গিয়ে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে করেছিলেন ২১৭, তারও আগে আরেক বীরত্বের কাব্য লিখে দ্বিশতক করেছিলেন তামিম ইকবাল। বিদেশ বিভূঁইয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করলেও দেশের মাটিতে সে স্বাদ মুশফিকের তখনো পাওনাই ছিল। অবশেষে সে আক্ষেপ ঘুচল ২০১৮ সালে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।  

সেদিন অবশ্য মুশফিককে কিছু একটা এমনিতেই করতে হতো। টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামাটা বাংলাদেশের জন্যে নতুন কিছু না। তবে প্রতিপক্ষ দলটার নাম যখন ছিল জিম্বাবুয়ে, তখন দ্বিতীয় টেস্ট জিতে মান বাঁচানোটাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।

তবে বাংলাদেশ দলের টপ-অর্ডারের যেন এমন সম্ভ্রমহানিতে কোনো আপত্তি ছিল না। উদ্বোধনী জুটি প্যাভিলিয়নে ফিরেছিল দলীয় ১৬ রানেই, খানিক বাদে মোহাম্মদ মিঠুনও ফেরত গিয়েছিলেন বলে স্কোরকার্ড দেখাচ্ছিল ২৬-৩! সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল মুশফিক-বীরগাঁথার।

মুমিনুলকে নিয়ে প্রথমে গড়েছিলেন ২৬৬ রানের, চতুর্থ উইকেটে যা দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাস-সর্বোচ্চ সংগ্রহে। পাল্টা আক্রমণটা অবশ্য মুমিনুলের কাছ থেকেই এসেছিল বেশি, ক্যারিয়ারের সপ্তম টেস্ট শতকে পৌঁছেছিলেন ১৫০ বলে। মুমিনুল ১৬১ রানে ফিরলেও মুশফিক ফিরেছিলেন এর পরদিন দুপুরে, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ডাকে। তার আগেই অবশ্য নাম তুলে ফেলেছিলেন ইতিহাসে, ৪২১ বল আর ১৮ চারের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ২১৯ সংখ্যাটি। বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ টেস্ট সংগ্রহ হয়ে যা টিকে আছে এখন অব্দি!

মুশফিক, আবার; Image Credit: MUNIR UZ ZAMAN / AFP

বিজে ওয়াটলিং ২০৫, বিপক্ষ ইংল্যান্ড

৬৮ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে এর আগেও তিনি শতকের দেখা পেয়েছিলেন ৭ বার। সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতের বিপক্ষে দলের বিপর্যয়ে, অংশ ছিলেন দু’টি সাড়ে তিনশোর্ধ্ব রানের জুটির। তবে চিরকাল তাকে আঁধারে রেখে আলোটা কখনো কেড়ে নিয়েছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, কখনো আবার কেন উইলিয়ামসন। অ্যান্ড্রু ফিদেল ফার্নান্দোর ওই উপমাই যেন তার গায়ে যথার্থ, ‘নিউ জিল্যান্ডার অফ নিউ জিল্যান্ড!’

অবশেষে তিনি যেন প্রচারের আলোয় এলেন গত বছরের শেষক্ষণে। নিউ জিল্যান্ডে গিয়েছিল ইংল্যান্ড, প্রথম টেস্টে প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে তুলেছিল ৩৫৩, পরে বোলিংয়ে নেমে কারেন, লিচ আর স্টোকস মিলে ১২৭ রানেই তুলে নিয়েছিলেন কিউইদের ৪ উইকেট। ব্র‍্যাডলি-জন ওয়াটলিংয়ের গল্পের শুরুটা এরপরই।

শুরুতে হেনরি নিকোলসের সঙ্গে গড়েছিলেন ৭০ রানের জুটি, যা ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন ডি গ্র‍্যান্ডহোমের সঙ্গে গড়া ১১৯ রানের জোটে, এবং আগের দুই জুটিকে ছাড়িয়ে গিয়ে মিচেল স্যান্টনারের সঙ্গে গড়েছিলেন ‘রেকর্ডগড়া’ ২৬১ রানের জুটি। নিউ জিল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে সপ্তম উইকেট জুটিতে এখন এটিই সর্বোচ্চ।

এবার নায়ক ওয়াটলিংই; Image credit: Phil Walter/ Getty Images 

স্যান্টনার ততক্ষণে পেয়ে গিয়েছিলেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের দেখা, ওয়াটলিংও যার দেখা পেয়েছিলেন অষ্টমবারের মতো। তবে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতকের দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল আরও একটু, খেলতে হয়েছিল উইকেটরক্ষকদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭৩ বল, মারতে হয়েছিল ২৪ চার আর ১ ছয়। শেষ অব্দি ২০৫ রান করে বিজে ওয়াটলিং ফিরেছিলেন আর্চারের বলে ক্যাচ দিয়ে। তবে তার আগেই নিশ্চিত করেছিলেন, নিউ জিল্যান্ড পেরিয়েছে ৬০০ রানের কোটা।

ম্যাচ শেষ হতে হতে দেখা গিয়েছিল, দুই দলের মাঝে পার্থক্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিজে ওয়াটলিংয়ের ওই ইনিংসটিই। ম্যান অফ দ্য ম্যাচ তাই অবধারিতভাবে তিনিই, ৬৭ ম্যাচশেষে দ্বিতীয়বারের মতো!

This article is in Bangla language. This article is on double-hundreds scored by a wicketkeeper. Necessary hyperlinks are attached inside.

Featured Image © AFP via Getty Images.              

Related Articles