Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দেশের হয়ে খেলাটাই বড় গর্বের: মুশফিকুর রহিম

প্রায় ১৩ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে হয়ে উঠেছেন এক অনন্য আস্থার প্রতীক। মুশফিকুর রহিম এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক ভিত্তির নাম। নিজের ব্যাটিং, অনুশীলন, অনুপ্রেরণা ও বিশ্বকাপ নিয়ে ক্রিকইনফোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন মুশফিকুর রহিম। তার বাংলা ভাষান্তর তুলে ধরা হলো রোর বাংলার পাঠকদের কাছে। 

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়ের পর; Image Source: AFP

গত পাঁচ বছর ধরে দেশের বাইরে আপনার টেস্ট গড় ৫০। এটা কীভাবে ধরে রেখেছেন?

আমার মনে হয় না কেউ শুধু দেশের মাটিতে কিংবা শুধু দেশের বাইরে ভালো করতে চায়। আমি প্রতিটা সিরিজেই আমার সামর্থের পুরোটা দিয়ে অবদান রাখতে চাই। তবে এটা সত্যি যে, দেশের বাইরে রান করাটাকে আমি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখি। একটা ধারণা আছে যে, বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা শুধু দেশের মাটিতেই ভালো করে। আমি নিজের খেলার এই জায়গাটায় উন্নতির চেষ্টা করি এবং ভিন্ন পরিস্থিতি ও বোলিংয়ের সমস্যাটা অনুমান করার চেষ্টা করি।

তামিম, সাকিব, রিয়াদ ও আমি প্রায়ই এটা নিয়ে আলাপ করি যে, একটা ব্যাটিং গ্রুপ হিসেবে আমাদের নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্টে ভালো করতে পারিনি। তবে আশা করি পরের সুযোগে আমি ভালো করবো। নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কায় আমি আমার সামর্থ অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছি।

২০১৪ সালে কিংসটাউনে এবং ২০১৭ সালে ওয়েলিংটন ও হায়দারাবাদে তিনটি সেঞ্চুরি আছে আপনার, যা দেশের বাইরের। এর মধ্যে কোনটা আপনার পছন্দের?

ওয়েলিংটনের সেঞ্চুরিটা খুবই বিশেষ কিছু। আমি প্রথম ওয়ানডের পর ইনজুরির জন্য মাঠের বাইরে ছিলাম। আমার বা আমার দলের নিউজিল্যান্ডে ভালো রেকর্ড ছিল না। কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমি ভালো একটা ইনিংস খেলতে পারলাম। তামিম ও মুমিনুলকে ধন্যবাদ ও কৃতিত্ব দিতেই হবে। কারণ ওরা নতুন বলটা সামলে ওই কন্ডিশনের কঠিন সময়টা পার করে দিয়েছিল। এরপর আমার ও সাকিবের জন্য ইনিংসের পরবর্তী অংশে ব্যাট করাটা সহজ হয়ে গিয়েছিল।

হায়দারাবাদের সেঞ্চুরিটাও খুব পেছনে থাকবে না। ভারত বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। আর তাদের দারুণ একটা বোলিং আক্রমণ আছে। তাদের বিপক্ষে একটা সেঞ্চুরি করা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। আমি বাংলাদেশকে ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্টে নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম। ফলে এই দুটি সেঞ্চুরিই আমার কাছে বিশেষ কিছু।

আরেকটা জয় নিশ্চিত করার পর; Image Source: AFP

আপনার ক্যারিয়ারের প্রথম বছর সাতেকের তুলনায় ২০১৪ ও ২০১৫ সাল থেকে আপনার পারফরম্যান্সে বিরাট একটা উন্নতি হয়েছে। রান স্কোরিং ও স্ট্রাইক রেটে এই পরিবর্তনটা কীভাবে আনলেন?

আজকের দিনে একটা ভালো উইকেটে ৩০০ রানও নিরাপদ নয়। আমি বুঝতে পেরেছি, আজকের দিনের এই ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের সময়ে খেলায় আরো কিছু শট যোগ করাটা অসম্ভব কিছু নয়। ১১ থেকে ৪০ ওভারে স্পিন হোক আর পেস, মিড অফ ও মিড অন আপনি সার্কেলের ভেতর পাচ্ছেন। এখানে অফস্পিনার ও বাহাতি স্পিনারের বিপক্ষে বাউন্ডারির সুযোগ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আমি এই সময়ে আমার শটসে উন্নতি করার চেষ্টা করেছি। আপনি যদি ভালো স্ট্রাইক রেট ধরে রাখতে পারেন, তাহলে সহজে রান করতে পারবেন। কারণ বোলার তখন চাপে থাকবে। আপনি যদি ১০০-এর ওপরে স্ট্রাইক রেটে রান করেন, দলেরও উপকার হবে। অন্য ব্যাটসম্যান যদি থিতু হতে একটু সময়ও নেয় তাহলে সে পরে এটা কাজে লাগাতে পারবে।

আমি আমার খেলার এই ব্যাপারটায় উন্নতি করতে চেয়েছি। এই উন্নতিটা করতে অনেক সময় লেগেছে। আমাকে আমার খেলাটা ভালো করে বুঝতে হয়েছে। বিশেষ করে কোন জায়গাটায় আমি আরো আক্রমণ করতে পারি, এটা বুঝতে হয়েছে।

আমাকে আমাদের আগের কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহেকে কিছু কৃতিত্ব দিতে হবে। আমি তার সাথে খোলামেলাভাবে এ নিয়ে কথা বলেছি এবং তিনি আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার এভাবেই আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলে যাওয়া উচিত। একটা সময় ছিল যখন দ্রুত কিছু উইকেট হারালে আমি খোলসে ঢুকে যেতাম। তখন ধীরে খেলতাম। কিন্তু তিনি আমাকে বললেন, স্কোর বোর্ড নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। উইকেট ভালো হলে নিজের সামর্থে বিশ্বাস রেখে শট করে যাওয়াই ভালো।

আমি আল্লাহর রহমতে ২০১৫ বিশ্বকাপে এটা করতে পেরেছি। এত বড় টুর্নামেন্টে ওরকম সব বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে এরকম খেলতে পারা আমাকে খুব আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।  এমনকি ওখানে আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচও সহজ ছিল না।

গত জুলাই মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩০ রানের একটা ঝড়ো ইনিংস খেলে খেলাটা বদলে দিলেন। আবার গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ এক ঘণ্টা ব্যাটিং করে নিশ্চিত করলেন ওখানে বাংলাদেশের প্রথম জয়। এই যে পরষ্পর বিপরীত দুই ব্যাটিং, সেখানে আপনি ঠিকমতো সাড়া দিলেন। এখানে মানসিক দিক ও দক্ষতার ব্যাপারটা কতটা কাজ করে?

দুটোর একটা সমন্বয় দরকার হয়। একটা মারকুটে ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনাকে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে বদলাতে হবে। এটা একটা মানসিক শক্তির ব্যাপার। আপনার মনে হবে উইকেটে নেমে এসে শট করি বা স্পিনের বিপক্ষে খেলি; কিন্তু আপনার নিজেকে সামলাতে হবে। এটা একটা অনুশীলনেরও ব্যাপার।

এসব পরিস্থিতিতে আমাকে ফিটনেসও খুব উপকৃত করেছে। আপনি যদি ৬০ সেকেন্ডের বদলে ৫০ সেকেন্ডে একটা চক্কর দিতে পারেন, সেটা নিজের ফিটনেস লেভেল নিয়ে একটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস তৈরী করে। আমি সবসময় আগে থেকে নিজেকে প্রস্তুত রাখি এবং কল্পনা করার চেষ্টা করি যে, কী হতে যাচ্ছে।

অনুশীলনের ফাঁকে; Image Source: AP

কোনটা কঠিন- ঝড়ো গতির ইনিংস, নাকি অনেক সময় ধরে নিজেকে সামলে রাখা?

দুটোই কঠিন পরিস্থিতি। বিশেষ করে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের জন্য। আমরা এ ধরনের পরিস্থিতি রোজ রোজ সামলাই না। ভারতীয় খেলোয়াড়রা এরকম পরিস্থিতিতে দশ বারের মধ্যে নয় বারই জেতার ক্ষমতা রাখে। আমরা এরকম পরিস্থিতিতে হয়তো ছয় মাসে বা এক বছরে একবার মুখোমুখি হই। ফলে এটা আমাদের জন্য বেশি ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায়। আপনি এরকম পরিস্থিতি থেকে যখন বের হয়ে আসতে পারবেন, তখন আপনার সামর্থের উপর আরো বিশ্বাস তৈরি হবে।

বাংলাদেশের হয়ে ১২ বছর খেলে ফেলার পরও সেই একইভাবে অনুশীলন করে যাওয়ার অনুপ্রেরণাটা কী?

আমি মনে করি না যে, আমি এখনো আমার সামর্থের সেরাটা বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পেরেছি। এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রেরণা। আপনার দেশকে ১২-১৩ বছর ধরে প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা একটা বিশাল ব্যাপার। আমি আমার ক্যারিয়ার শেষে এটা অনুভব করতে চাই যে, আমাকে যে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, আমি তার প্রতি সুবিচার করতে পেরেছি। এটাই আমার ক্ষুধাটা ধরে রাখে। 

বাংলাদেশের হয়ে খেলাটা আপনার জন্য কতটা গর্বের ব্যাপার?

দেশের প্রতিনিধিত্ব করার ব্যাপারে গর্বটাই আসলে প্রথম ও চূড়ান্ত শব্দ হওয়া উচিত। আমরা পরিবার থেকে মাসের পর মাস দূরে থেকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করি। কিন্তু দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে বড় ব্যাপার আর নেই। আপনি যখন জানবেন যে, আপনার জন্য ১৮-২০ কোটি মানুষ প্রার্থনা করছে, একজন রিকশাওয়ালা হয়তো তার সারাদিনের আয়ের আশা ছেড়ে খেলা দেখছে; এটাই আমাকে তাড়িত করে। আর কোনো বাড়তি প্রেরণার দরকার হয় না। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু নেই।

দশ বছর ধরে সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ ও মাশরাফির সাথে খেলে যাওয়াটা কেমন অনুভূতি?

আমার গত চার-পাঁচ বছরের ধারাবাহিকতার একটা বড় কৃতিত্ব এই চার খেলোয়াড়ের। আমি যখন সাকিব, তামিম বা রিয়াদ ভাইয়ের সাথে ব্যাট করি, তখন ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যায়। ক্রিকেট তো একক খেলা না। এখানে জুটিটা খুব দরকারি। আর আমাদের সবারই ম্যাচ জেতানো জুটি করার অভিজ্ঞতা আছে। এই পাঁচ জন, আমরা গত চার-পাঁচ বছর ধরে অনেক চেষ্টা করছি। আমরা সর্বোচ্চ স্তরে পারফর্ম করার উপায়টা শিখেছি। এরকম একটা প্রজন্মের সাথে ক্রিকেট খেলাটা একটা প্রাপ্তি। মাশরাফি ভাই তো অতুলনীয়। সাকিব, তামিম ও রিয়াদ ভাই বিশ্বমানের খেলোয়াড়।

তামিম বলেছেন, বিশ্বের সেরা দশ ব্যাটসম্যানের মধ্যে নিজেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা তার বড় একটা প্রেরণা। আগামী পাঁচ বছরে আপনার চেষ্টাটা কী থাকবে?

আমারও অবশ্যই একই ধরনের লক্ষ্য আছে। তবে আমার মূল চিন্তাটা থাকে সর্বশেষ সিরিজের থেকে পরের সিরিজটাতে যেন নিজের একটু হলেও উন্নতি করতে পারি। আমার ছোটবেলার স্বপ্ন হলো বাংলাদেশের হয়ে ম্যাচ উইনার হওয়া। এখনও এটা আমি উপভোগ করি। হয়তো কিছু ম্যাচে ব্যর্থ হই। আবার কিছু ভালো দিন আসে। আমি আশা করি, দশ ম্যাচে অন্তত আট-নয়টা যেন ভালো দিন আসে।

যখন অধিনায়ক ছিলেন; Image Source: Getty Images

২০১৯ বিশ্বকাপের সামনের এই সময়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

একটা বড় আসরে ভালো করতে হলে একটা দলের গতি দরকার হয়। কোনো দল খেলতে গেল আর জিতলো, এটা হয় না। আমরা যদি এশিয়া কাপ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ ও নিউজিল্যান্ডে ভালো করি, অবশ্যই সেটা দল হিসেবে আমাদের আত্মবিশ্বাসী করবে। আমাদের মতো দলের জন্য এটা জরুরি।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এখন অতীত। এখন আমাদের সামনে অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। আমার মনে হয়, আমাদের পুরো দল এই গতি তৈরি করতে পারবে। নিজেদের অসাধারণ কিছু পারফরম্যান্স দিয়ে আমরা বিশ্বকাপটাকে স্মরণীয় করে রাখতে পারি।

ফিচার ছবি- AFP

Related Articles