Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নটিংহ্যাম ফরেস্টের এক ফুটবলীয় রূপকথার গল্প

ইংল্যান্ডে দ্বিতীয় বিভাগের লিগ থেকে এ বছর প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসা দলটি লীডস ইউনাইটেড। একটু কল্পনা করুন তো, এ বছর প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসা দলটি এসেই জিতে নিল প্রিমিয়ার লিগ, অর্জন করে নিল আগামী বছরের চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার যোগ্যতা! আপনি হয়তো ভাবছেন, এ আর এমন কী! তাহলে কল্পনার পরিধি আরেকটু বড় করুন, চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে গিয়ে লীডস তবে শিরোপা ঘরে নিয়ে এলো। শুধু আগামী মৌসুমেই না, পরের মৌসুমেও চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের চ্যাম্পিয়ন খেতাব অক্ষত রাখল। ইএফএল কাপ জিতল, অপরাজিত থাকার দৌড়ে তাদের চেয়ে এগিয়ে আছে কেবল ইনভিন্সিবল আর্সেনাল। পাগলের প্রলাপ মনে হচ্ছে? মনে হওয়ারই কথা। কিন্তু এমন ঘটনাই ঘটিয়েছিল ইংল্যান্ডের একটি দল। প্রিমিয়ার লিগে নবাগত দল হয়েও মাত্র ৫-৬ বছরের মধ্যে সম্ভাব্য প্রায় সব ক’টা ট্রফি জেতা দলটির নাম নটিংহ্যাম ফরেস্ট।

১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ডের সেকেন্ড ডিভিশনের লিগে টিকে থাকতে রীতিমতো হাবুডুবু খাচ্ছিল নটিংহ্যাম। এমনকি তাদের এক কমিটি মেম্বার তো এই দলের উন্নয়নের আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু দৃশ্যপট পুরোই পাল্টে গেল এক ইয়র্কশায়ারবাসীর আগমনে। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে বেহাল অবস্থায় থাকা এই ক্লাবের দায়িত্ব নিলেন ব্রায়ান ক্লাফ, নেমে পড়লেন নটিংহ্যাম রূপকথার গল্প লিখতে।

১৯৭৫ সালের ৬ জানুয়ারি ব্রায়ান ক্লাফকে দলে আমন্ত্রণ জানান নটিংহ্যাম ফরেস্টের চেয়ারম্যান জিম উইলমার © Getty Images

ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা কোচ হিসেবে খ্যাত ক্লাফ নটিংহ্যামে আসার আগে খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিলেন না। ১৯৭২ সালে ডার্বি কাউন্টির হয়ে ফার্স্ট ডিভিশন জিতলেও ক্লাবের বোর্ডের ডিরেক্টরদের সাথে ঝামেলার কারণে পরের বছরই ক্লাব ছাড়তে বাধ্য হন। কিছুদিন ব্রাইটনে থাকার পর দায়িত্ব নেন লীডস ইউনাইটেডে। কিন্তু এলান্ড রোডে ক্লাবের তারকা খেলোয়াড়দের সাথেও ঝামেলা বাধার কারণে দায়িত্ব নেয়ার মাত্র ৪৪ দিনের মাথায় আবারও ক্লাব ছাড়েন ক্লাফ।

ক্লাফের আগমনের আগে নটিংহ্যামের অবস্থাও ছিল শোচনীয়। ফার্স্ট ডিভিশন আর সেকেন্ড ডিভিশনে ওঠানামাই হচ্ছিল কেবল। ৯৭ বছরের ইতিহাসে টপ ডিভিশনের শিরোপা ক্লাবে এসেছে কেবল একবার। আর জেতা হয়েছে দুটো এফএ কাপ।

বেশিরভাগ ফুটবল-পণ্ডিতরাই নটিংহামে ক্লাফের কোনো ভবিষ্যৎ দেখছিলেন না, সফলতা দূরে থাক। তাদের এই বাণী হয়তো বাস্তবরূপ নিত, যদি না ক্লাফের সাবেক সহকারী পিটার টেইলার তার সাথে সিটি গ্রাউন্ডে যোগ দিতেন।

পিটার টেইলারকে সহকারী হিসেবে না আসলে হয়তো রূপকথার গল্পটাই লেখা হতো না ক্লাফের © PA IMAGES

নটিংহ্যামে ক্লাফের সফলতার পেছনে কারণ ছিল তার স্কাউটিং। প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের স্কাউটিং করতেন ক্লাফ। ফরেস্টের এই স্বপ্নযাত্রায় পাঁচজন খেলোয়াড় সবসময় ছিলেন দলেঃ ভিভ এন্ডারসন, মার্টিন ও’নিল, ইয়ান বোয়ার, টনি উডকক এবং জন রবার্টসন। এদের পাশাপাশি দলের ভিত শক্ত করতে খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করতে থাকেন ক্লাফ। এমন সব খেলোয়াড় তার দলের শক্তি হয়ে  দাঁড়ায় যাদের নিয়ে কাজ করার সাহস কোনো হাই-প্রোফাইল কোচ দেখাতেন না। কিন্তু এদের নিয়ে নিজের দল গড়েছিলেন ক্লাফ।

বারে হাতাহাতির জন্য কুখ্যাতি ছিল কেনি বার্নসের। এই বার্নসকে ক্লাফ সেন্টার ফরওয়ার্ড থেকে গড়ে তোলেন এক দুর্দান্ত সেন্ট্রালব্যাক হিসেবে, ভক্তরা যাকে আদর করে ডাকতো ‘স্কটিশ ববি মুর’। ফ্রি টান্সফারে নিউক্যাসল থেকে দলে এসেছিলেন ফ্রাঙ্ক ক্লার্ক। ক্লাফ আসার আগে জন রবার্টসনকে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছিল চতুর্থ বিভাগের এক দলে, ক্লাফ এসে এই ট্রান্সফার থামান। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত গোলকিপার পিটার শিলটনকে দলে আনা হয়েছিল চড়া দামে। রেকর্ড ১ মিলিয়নে ট্রেভর ফ্রান্সিসকে দলে ভিড়িয়েছিলেন ক্লাফ। তার আগে ইংলিশ ফুটবলে কারো ট্রান্সফার ফি সাত অঙ্ক ছোঁয়নি।

রেকর্ড এক মিলিয়ন পাউন্ডে নটিংহ্যাম ফরেস্টে যোগ দেন ট্রেভর ফ্রান্সিস © Fotosports International

মাত্র ৫২ পয়েন্ট নিয়ে টপ ডিভিশনে উঠে আসে ক্লাফের দল। ফুটবল ইতিহাসে প্রোমোটেড ক্লাবের ইতিহাসে এই পয়েন্ট ছিল পঞ্চম সর্বনিম্ন। দলের এরকম অবস্থায় ক্লাফের সঙ্গী হন তার সাবেক সহকারী পিটার। পিটারের আগমনে যেন নতুন রূপ পায় ফরেস্ট। ক্লাফ-পিটারের হাত ধরে ক্লাবে ফিরে আসে নতুন প্রাণ। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে প্রোমোটেড দল হিসেবে ফরেস্টের লক্ষ্য ছিল টপ ডিভিশনে টিকে থাকা। কিন্তু সবাইকে তাক লাগিয়ে প্রথম মৌসুমেই টপ ডিভিশন চ্যাম্পিয়ন হয় নটিংহ্যাম ফরেস্ট। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা লিভারপুল তাদের চেয়ে সাত পয়েন্টে পিছিয়ে ছিল। বব পেইসলির লিভারপুলকে টেক্কা দেয়া খুব সহজ কাজ ছিল না। সেই দুরূহ কাজটি করে দেখিয়েছেন ক্লাফ এবং তার দল ফরেস্ট। সেবার প্রথমবারের মতো লিগ কাপও জিতেছিল ফরেস্ট।

 বব পেইসলির লিভারপুলকে ২-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবার ইউরোপিয়ান কাপ জয়ের পথে ফরেস্ট © Getty Images

১৯৭৮-৭৯ মৌসুমের ইউরোপিয়ান কাপ খেলার সুযোগ অর্জন করে নেয় নটিংহ্যাম ফরেস্ট। ফরেস্টের খেলা পড়ে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুলের সাথে। বার্টলস এবং ব্যারেটের গোলে ঘরোয়া ‘রাইভাল’ লিভারপুলকে ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় ফরেস্ট। সেমিফাইনালে এফসি কোলনের বিপক্ষে বেশ বেগ পেতে হয় ক্লাফের দলকে। ২-০ গোলে পিছিয়ে থাকা ফরেস্ট তিন গোল দিয়ে নিজেদের কামব্যাকের ইতিহাস প্রায় লিখেই ফেলেছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এক গোল দিয়ে ম্যাচ ৩-৩ গোলে ড্র করে অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে ঘরে ফিরে যায় জার্মান দলটি। তবে ফিরতি লেগে আর সুবিধা করতে পারেনি কোলন, তাদের ঘরের মাঠে ইয়ান বোয়ারের গোলে ১-০ গোলে জিতে ফিরে আসে ফরেস্ট।

ইউরোপ জয়ের লড়াইয়ে ফাইনালে মিউনিখের অলিম্পিয়াস্তাদিওনে ফরেস্টের প্রতিপক্ষ ছিল মালমো। মৌসুমের শুরুতে প্রায় দল ছেড়ে যাওয়া সেই জন রবার্টসনের ক্রস থেকে হেডারে গোল করেন এক মিলিয়ন পাউন্ডের ট্রেভর ফ্রান্সিস। প্রথমবারের মতো খেলতে এসে নটিংহ্যাম ফরেস্ট ইউরোপিয়ান কাপ জিতে নেয়।

প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ব্রায়ান ক্লাফের নটিংহ্যাম ফরেস্ট © Getty Images

এই সময়টায় আরও একটি রেকর্ড গড়তে থাকে ইংল্যান্ডের এই দলটি। টানা ৪২ ম্যাচ অপরাজিত ছিল ফরেস্ট, যে রেকর্ডটি ভাঙতে পেরেছে কেবলমাত্র ওয়েঙ্গারের আর্সেনাল। পরের মৌসুমে মাঠে নেমে লিগ কাপ জিতে ক্লাফের দল, কিন্তু এবার তাদের লিগ হারাতে হয় বব পেইসলির লিভারপুলের কাছে। ফরেস্টের অপরাজিত থাকার দৌড় এই লিভারপুলের কাছেই শেষ হয়। ইউরোপিয়ান সুপারকাপে ফরেস্টের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল কাতালান ক্লাব বার্সেলোনা। হোম ম্যাচে চার্লি জর্জ এবং অ্যাওয়ে ম্যাচে বার্নসের গোলে ২-১ গোলে ম্যাচ জিতে ইউরোপিয়ান সুপার কাপও নিজেদের করে নেয় ফরেস্ট।

সে মৌসুমে ফরেস্টের শিরোপা ধরে রাখার মিশনটা বেশ শ্বাসরুদ্ধকর ছিলো। কোয়ার্টার ফাইনালে ডায়নামো বার্লিনের কাছে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে হারার পর জার্মানি গিয়ে বার্লিনকের তাদেরই মাঠে ৩-১ গোলে হারায় ফরেস্ট। আয়াক্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালের আমস্টারডামে থাকতে হয়েছিল ফরেস্ট দলকে। সেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা ছিল যাচ্ছেতাই। পিটার শিলটনকে প্র্যাক্টিস করতে হয়েছিল হোটেলের পেছনে সামান্য একটু জায়গায়, কারণ পুরো এলাকায় আর কোথাওই এক টুকরো ঘাসও ছিল না। এত বিচ্ছিরি অবস্থার মুখোমুখি হবার পরও আটকে রাখা যায়নি নটিংহ্যাম ফরেস্টকে। দুই লেগ মিলিয়ে আয়াক্সকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ক্লাফের দল।

ট্রেভর ফ্রান্সিসের যে গোলে নিজেদের প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ জেতে নটিংহ্যাম © Getty Images

এবারের ফাইনাল মাদ্রিদের সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। প্রতিপক্ষ জার্মান ক্লাব হামবুর্গ। ফাইনালের আগেই নানান রকম সমস্যায় পড়েন ব্রায়ান ক্লাফ। ফাইনালের কয়েক সপ্তাহ আগে ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ম্যাচে ট্রেভর ফ্রান্সিসের পায়ের রগ ছিড়ে যায়। ফ্রান্সিস তখন দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। ডায়নামো বার্লিন এবং আয়াক্সের বিপক্ষে দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গোল এই ফ্রান্সিসই করেছিলেন। ফাইনালে দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়কে না পাওয়াটা ফরেস্টের জন্য ছিল একটা ধাক্কার মতো।

ক্লাফের সমস্যা এখানেই শেষ হয়নি। জন রবার্টসন এবং স্ট্যান বৌলস ছিলেন বেস্ট ফ্রেন্ড। কিন্তু জন রবার্টসনের টেস্টিমোনিয়াল ম্যাচের জন্য বৌলসকে দলে রাখেননি ক্লাফ। রাগে-ক্ষোভে ফাইনালের আগে দল ছেড়ে বেরিয়ে যান বৌলস। ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল আর খেলা হয়নি তার।

শেষমেষ ১৫ জনের দল নিয়ে ফাইনাল খেলার জন্য মাদ্রিদের জন্য রওনা দেয় ক্লাফ এবং তার দল ফরেস্ট। পাঁচজন বদলি খেলোয়াড়ও ক্লাফ পাননি ফাইনালে নামানোর জন্য। বেঞ্চে ছিলেন জন ও’হেয়ার, ব্রাইন গান, ডেভিড নিঢাম এবং সাবেক সান্ডারল্যান্ড গোলকিপার জিম মন্টগোমারি।

মাত্র ১৫ জনের স্কোয়াড নিয়ে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল খেলতে রওনা দিয়েছিলেন ব্রায়ান ক্লাফ © Getty Images

ফ্রান্সিসের খালি জায়গা পূরণ করার দায়িত্ব পড়েছিল ১৮ বছর বয়সী গ্যারি মিলসের কাঁধে। “আমি কোনোদিন এটা স্বপ্নেও ভাবিনি” – গ্যারি মিলসের ভাষ্য ছিল এই। গ্যারি বার্টলসের সাথে ফরোয়ার্ড লাইনে ম্যাচ শুরু করলেও ম্যাচের মধ্যে মিডফিল্ডে নেমে যান মিলস। ফরেস্টের কাছে পাঁচজন মিডফিল্ডার নিয়ে খেলা ছাড়া উপায় ছিল না। ক্লাফের সহকারী পিটার টেইলার পরে স্বীকার করেন যে ফ্রান্সিসের অনুপস্থিতিতে পুরো খেলার ধরনই পাল্টাতে হয়েছিল তাদের।

ম্যাচের আগে গুঞ্জন উঠেছিল যে পিটার শিলটন ফাইনাল খেলতে পারবেন না। কিন্তু নিজের কাঁধে পেইনকিলিং ইনজেকশন নিয়ে ঠিকই মাঠে নেমে পড়েন ইংলিশ ফুটবলের অন্যতম সেরা এই গোলকিপার। মাঠে নেমে শিলটন বুঝিয়ে দিলেন, কেন ফরেস্টের তাকে দরকার।

ফাইনালে হামবুর্গকে একবারও জালে বল জড়াতে দেননি পিটার শিলটন © Getty Images

ম্যাচের প্রথম দিকেই ফেলিক্স ম্যাগাথের ফ্রি-কিক ঠেকিয়ে দেন শিলটন, ফলে তার আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে উঠে যায়। পয়েন্ট ব্লাঙ্ক থেকে ইয়ুর্গেন মিলেওস্কির গোল ফিরিয়ে আরও একবার ফরেস্টের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূ্ত হন শিলটন। ম্যাচের আগে অনুশীলনের তেমন একটা সুযোগ পাননি, কিন্তু মাঠে তার খেলা দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না।

তখন হামবুর্গ দলের পশ্চিম জার্মানির ম্যানি কাল্টজকে নিয়ে বেশ হাইপ উঠেছিল। ম্যানি কাল্টজ তার ‘বানানা ক্রস’-এর জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ক্লাফ অবশ্য তাকে নিয়ে তেমন একটা চিন্তিত ছিলেন না, শুধু বলেছিলেন,

“আমাদের দলে স্থূলকায় একজন আছে, ভেতরে ভেতরে যে কি না খুবই প্রতিভাবান, স্কিলফুল, অসাধারণ একজন লেফটব্যাক।”

কথাটা বলেছিলেন রবার্টসনকে নিয়ে। তার বাঁকা হাসিতে মনে হচ্ছিল যে তিনি বুঝি জানেন যে, এই স্থূলকায় লোকটার হাত ধরেই ইতিহাস রচনা হবে নটিংহ্যাম ফরেস্টের।

জন রবার্টনের একমাত্র গোলেই নিজেদের চ্যাম্পিয়ন খেতাব অক্ষত রাখে ফরেস্ট © Getty Images

ম্যাচের ২০ মিনিটে বামপ্রান্তে বল পেলেন রবার্টসন। কাল্টজকে পেরিয়ে খুব দ্রুত ঢুকে গেলেন ভিতরে। বার্টলসের সাথে ওয়ান-টু-ওয়ান খেলে বল আবার নিলেন নিজের দখলে। কিগানের কাছ থেকে দূরে সরে ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট করে করলেন অসাধারণ এক গোল।

বাকি সময়টা ফরেস্ট শুধু নিজেদের লিড ধরে রাখার কাজেই ব্যস্ত ছিল। দুই সেন্টারব্যাক ল্যারি লয়েড এবং কেনি বার্নস ছিলেন অসাধারণ। বার্নসের দায়িত্ব ছিল কিগানকে আটকে রাখা। এই দায়িত্ব বেশ ভালোভাবে পালন করেছেন বার্নস।

ট্রফি হাতে জন রবার্টসন (বামে) এবং কেনি বার্নস (ডানে) © Getty Images

এদিকে শিলটনও নিজের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধে পিটার এনগোলির দুর্দান্ত এক শট ফিরিয়ে দেন তিনি। ম্যাচের ৬০ মিনিট পার হওয়ার পর আবারও শট নেয়ার সুযোগ হয় হামবুর্গের। কিন্তু কাল্টজের শটটি পোস্টে বাড়ি খেয়ে ফিরে আসে। ইভান বুলিয়ানের একটি শট বারের বেশ দূর দিয়ে চলে যায়। অবশেষে ক্লান্তি জেঁকে ধরে ফরেস্ট দলকে। ফ্রাঙ্কের বদলি হিসেবে নামেন গান, মিলসের বদলি হিসেবে আসেন ও’হেয়ার। বার্টলস এতটাই ক্লান্ত ছিলেন যে আর শটই নিতে পারছিলেন না গোল অভিমুখে।

১৯৮০ ইউরোপিয়ান কাপ জিতে নিজেদের ইউরোপ জয়ের মুকুট অক্ষত রাখে নটিংহ্যাম ফরেস্ট © PA Images / Alamy Stock Photo

নব্বই মিনিট শেষে বাঁশি বাজল ম্যাচ শেষের। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপ জয় করল দুই মৌসুম আগে টপ ডিভিশনে উঠে আসা নটিংহ্যাম ফরেস্ট। আবেগের আতিশয্যে আইটিভি কমেন্টেটর ১৩ মিলিয়ন টিভি দর্শকের সামনে ভুলবশত বলে বসলেন যে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হামবুর্গ। তবে ধারাভাষ্যকারের এই ভুলটা একপাশে সরিয়ে রেখেই টানা চতুর্থবারের মতো ইংল্যান্ডে আসলো ইউরোপিয়ান কাপ।

রিয়াল মাদ্রিদ, বেনফিকা, ইন্টার, আয়াক্স, বায়ার্ন মিউনিখ, লিভারপুল – সব কয়টা দলই নিজেদের ইউরোপজয়ের মুকুট অক্ষত রাখতে পেরেছে। কিন্তু সেই তালিকায় যুক্ত হলো নতুন নাম নটিংহ্যাম ফরেস্ট। এই কৃতিত্বের বড় অংশীদার হলেন ব্রায়ান ক্লাফ এবং তার সহকারী পিটার টেইলর।

Related Articles