Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

২০০৪ সালের ভারত-পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজ: একবিংশ শতাব্দীর সেরা ওয়ানডে সিরিজ

বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট ছাড়াও ক্রিকেটের একটা বড় আকর্ষণ দুই দেশের মধ্যে আয়োজিত দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ। সারাবছর এই সিরিজগুলোই ক্রিকেটপ্রেমীদের ক্রিকেটের সাথে সংযুক্ত করে রাখে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের আগমনে এই সিরিজগুলোর আবেদন কিছুটা কমে গেলেও আগে কিন্তু এই সিরিজগুলোর ব্যাপারে ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ ছিল আকাশছোঁয়া। দেখতে দেখতে এই শতাব্দীর ১৮ বছর কেটে গেছে, এই আঠারো বছরে অসংখ্য ক্রিকেট সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, এই শতাব্দীতে এখন পর্যন্ত সেরা ওয়ানডে সিরিজ কোনটি, তবে আপনার উত্তর কী হবে? এতগুলো সিরিজ থেকে মাত্র একটি সিরিজ বেছে নেওয়া আসলেই খুব কষ্টকর, তবুও খড়ের গাদায় সূচ খোঁজার মতো আমরাও চেষ্টা করেছি সেরা ক্রিকেট সিরিজ খুঁজে বের সেই সিরিজ নিয়ে বিস্তারিত কিছু লিখতে।

সেই ঐতিহাসিক ভারত বনাম পাকিস্তান ওয়ানডে সিরিজ (২০০৪)

ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথ ক্রিকেটের এক অনন্য সৌন্দর্য, এই দু’দল ক্রিকেটবিশ্বকে বহু ধ্রুপদী ম্যাচ উপহার দিয়েছে। তবে এই শতাব্দীতে এই দু’দল যে কয়টি সিরিজ খেলেছে তাতে নিঃসন্দেহে সেরা ২০০৪ সালে পাকিস্তানের মাঠে অনুষ্ঠেয় সিরিজটি। সেবার দীর্ঘ ছয় বছর পর আবারো অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। তাই উত্তেজনার পারদ এমনিতেই অনেক উপরে ছিল। তাছাড়া পাকিস্তানের মাঠে আগে কখনোই সিরিজ জেতা হয়নি ভারতের। তাই সেবার পাকিস্তানের মাঠ থেকে সিরিজ জিতে ঘরে ফেরার ব্যাপারে সৌরভ গাঙ্গুলির ভারত ছিল বদ্ধপরিকর। উত্তেজনার পারদ আরো উঁচুতে উঠে যায় প্রথম ওয়ানডের নাটকীয়তার পরেই।

মহারণের আগে দুই অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি ও ইনজামাম-উল-হক; Image Source : Sportskeeda

করাচিতে স্যামসাং কাপের প্রথম ওয়ানডেতে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক ইনজামাম-উল-হক। কিন্তু ইনিংসের শুরুতে শেওয়াগের বেধড়ক পিটুনিতে মনে হচ্ছিলো টসে হারাটা বুঝি সৌরভ গাঙ্গুলির জন্য শাপে বরই হয়েছে। দলীয় ৬৯ রানে শচীন টেন্ডুলকার ব্যক্তিগত ২৮ রানে ফিরে গেলেও শেওয়াগ ঝড় থামেনি। মাত্র ৫৭ বলে ৭৯ রান করে শেওয়াগ যখন আউট হয় তখন ভারতের সংগ্রহ ১৪.২ ওভারে ১৪২/২! অর্থাৎ ওভারপ্রতি ভারতের রান ছিল দশেরও উপরে!

টি-টুয়েন্টি আসার আগের যুগে এরকম উড়ন্ত সূচনার কথা খুব কম দলই ভাবতে পারতো। এমন সূচনার পর মনে হচ্ছিলো সেদিন বুঝি ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবারের মতন ৪০০ রানের ঘটনা ঘটেই যাবে। কিন্তু ব্যক্তিগত ৪৭ রানে গাঙ্গুলি আউট হওয়ার পর মাত্র ৩ রানে যুবরাজ সিং ফিরে গেলে ২২০/৪ স্কোরলাইনে কিছুটা চাপে পড়ে যায় ভারত। এরপর দ্রাবিড় আর কাইফের জুটি রানরেটে আগের সেই ঝড়টা চালু রাখতে না পারলেও ভারতের ইনিংস বেশ বড় সংগ্রহের দিকেই যাচ্ছিলো। তবে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১ রান দূরে থেকে ৯৯ রানে শোয়েবের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান দ্রাবিড়। শেষপর্যন্ত ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ৩৪৯ রান যা সেই যুগে পাহাড়সম সংগ্রহ ছিল।

৩৫০ রানের টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে মাত্র ৩৪ রানের মধ্যে ইয়াসির হামিদ ও ইমরান ফারহাত আউট হয়ে গেলে মনে হচ্ছিলো পাকিস্তান বুঝি অসহায় আত্মসমর্পণই করবে। কিন্তু কিসের কী! তৃতীয় উইকেট জুটিতে মোহাম্মদ ইউসুফের সাথে ইনজামামের ১৩৫ রানের জুটিতে খেলায় পুরোপুরি ফিরে আসে পাকিস্তান।

পুরো সিরিজজুড়েই ভারতীয় বোলারদের উপর তাণ্ডব চালিয়েছিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক ইনজামাম; Image Source : Sportskeeda

ব্যক্তিগত ৭৩ রানে ইউসুফ ফিরে গেলেও ইউনুস খানকে সাথে নিয়ে তাণ্ডব চালাতে থাকেন ইনজামাম। মাত্র ১০২ বলে ১২২ রানের ইনিংস খেলে ইনজামাম যখন সাজঘরে ফেরেন, তখন পাকিস্তান এই রেকর্ড রান তাড়ার দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই টিকে ছিলো। কিন্তু ইনজামাম আউট হওয়ার পরে কেউ আর হাল ধরতে না পারায় নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে পাকিস্তান। শেষ ওভারে তিন উইকেট হাতে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৯ রান। কিন্তু আশীষ নেহরার অসাধারণ শেষ ওভারে ভারত ম্যাচ জিতে নেয় পাঁচ রানে। তবে দল হারলেও ম্যাচসেরার পুরস্কার কিন্তু যায় ইনজামামের পকেটেই।

শেষ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করে ভারতকে জয় এনে দেওয়ার পর আশীষ নেহরা; Image Source : Cricktracker

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রাওয়ালপিণ্ডিতে টসে জিতে ব্যাটিং নিতে আর ভুল করেননি ইনজামাম। আগের ম্যাচ মিস করা আফ্রিদির ঝড়ো ৮০ ও আরেক ওপেনার ইয়াসির হামিদের দায়িত্বশীল ৮৬ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৬ উইকেটে ৩২৯ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ দাঁড় করায় পাকিস্তান। ৩৩০ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকলেও একপাশ আগলে ইনিংস এগিয়ে নিচ্ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে শচীনের ১০৫ রানের জুটির পর মনে হচ্ছিলো ম্যাচটা বুঝি ভারত জিতেই যাবে। কিন্তু ১৩৫ বলে ১৪১ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে টেন্ডুলকার আউট হয়ে যাওয়ার পর বাকি ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মিছিলে শামিল হলে তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। ২৪৫/৩ স্কোরলাইন থেকে ভারত অলআউট হয় ৩১৭ রানে, অথচ তখনো ভারতের ইনিংসের আট বল বাকি ছিল! ১২ রানের জয়ে সিরিজে ১-১ এ সমতা ফেরায় স্বাগতিক পাকিস্তান, তবে গত ম্যাচের ইনজামামের মতো এ ম্যাচেও পরাজিত দলে থেকেও ম্যাচসেরা হন শচীন টেন্ডুলকার।

বৃথা যায় টেন্ডুলকারের ১৪১ রানের ধ্রুপদী ইনিংস; Image Source : NDTV Sports

টানা দুই ম্যাচে রান উৎসবের পর তৃতীয় ম্যাচটা হয় কিছুটা লো স্কোরিং। পেশোয়ারে টসে হেরে ব্যাটিং এ নেমে পাকিস্তানী পেসার শাব্বির আহমেদের বোলিং তোপে মাত্র ৩৭ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত। শেষপর্যন্ত যুবরাজ সিং এর ৬৫ রানের কল্যাণে ৯ উইকেটে ২৪৪ রানের সম্মানজনক সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত।

২৪৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ম্যাচসেরা ইয়াসির হামিদের দায়িত্বশীল ৯৮ রানে ভর করে জয়ের কক্ষপথে বেশ ভালোভাবেই ছিল পাকিস্তান। কিন্তু ইরফান পাঠানের বলে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ইয়াসির হামিদ যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, জয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে তখনও ৭২ রানে দূরে পাকিস্তান। তবে সপ্তম উইকেটে আব্দুল রাজ্জাক ও মঈন খানের অবিচ্ছিন্ন ৭৪ রানের জুটিতে ১৬ বল আগেই জয়ের বন্দরে পৌছায় পাকিস্তান। ৪ উইকেটের এই জয়ের ফলে সিরিজে ২-১ এ এগিয়ে যায় পাকিস্তান।

শাব্বির আহমেদের বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরছেন শেওয়াগ; Image Source : Getty Images

লাহোরে চতুর্থ ওয়ানডেতে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইনজামাম। ইনজি নিজে ১২৩ রান করলে ২৯৩ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় পাকিস্তান। সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা রানের চাকাটা সচল রাখতে গিয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছিলেন। ফলে ১৬২ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত! কিন্তু রাহুল দ্রাবিড় ও মোহাম্মদ কাইফের অপরাজিত ১৩২ রানের জুটিতে ২৯৪ রানের বড় টার্গেট ভারত টপকে যায় পাঁচ ওভার হাতে রেখেই! দ্রাবিড় ৭৬ ও কাইফ ৭১ রানে অপরাজিত ছিলেন। তবে দল পাঁচ উইকেটে হারলেও ম্যাচসেরার পুরস্কারটা ইনজামামই পান। ভারতের এই জয়ের ফলে সিরিজে আসে ২-২ এর সমতা।

রাহুল দ্রাবিড়ের সাথে অনবদ্য এক জুটি গড়ে ২৯৩ রানের পাহাড় অতিক্রম করার পর উল্লসিত মোহাম্মদ কাইফ; Image Source : Sportskeeda

সিরিজ নির্ধারণী শেষ ওয়ানডেটাও অনুষ্ঠিত হয় সেই লাহোরেই। এই ম্যাচেও টসে জিতে সিরিজের সবগুলো ম্যাচেই টসে জিতেন ইনজামাম। এবার ইনজামাম নেন আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত। ৭৯ রানে দুই ওপেনারকে হারানোয় কিছুটা চাপে পড়ে ভারত। তবে অধিনায়ক গাঙ্গুলি ও লক্ষ্মণের ৯২ রানের জুটিতে সেই চাপ সামলে ওঠে ভারত। গাঙ্গুলি ৪৫ রানে আউট হলেও আগের তিন ম্যাচে রান না পাওয়া লক্ষ্মন এ ম্যাচে নিজের দায়িত্বে ছিলেন অবিচল। লক্ষ্মণের ১০৪ বলে ১০৭ রানের ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৯৩ রানে। এর আগের ম্যাচেই পাকিস্তানের দাঁড় করানো ঠিক একই লক্ষ্য ভারত এই একই মাঠে বেশ অনায়াসে চেজ করায় এই রানচেজের ব্যাপারে পাকিস্তান বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল।

ভারতীয় পেসার ইরফান পাঠানের বোলিং তোপে মাত্র ৫৮ রানেই ৪ উইকেট খুইয়ে বসে পাকিস্তান! তবে সেই সিরিজে অসাধারণ ব্যাটিং করা ইনজামাম তখনও ক্রিজে থাকায় পাকিস্তানের আশার প্রদীপ কিছুটা তখনো বেঁচে ছিল। কিন্তু দলীয় ৮৭ রানে কার্তিকের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে টেন্ডুলকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্যক্তিগত ৩৮ রানে আউট হয়ে যান ইনজি! এরপর মঈন খানের ৭২ ও শোয়েব মালিকের ৬৫ রান পাকিস্তানের হারের ব্যবধানটাই শুধু কমিয়েছে। পাকিস্তানকে ৪০ রানে হারিয়ে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জিতে প্রথমবারের মতো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় ভারত। ইরফান পাঠান মাত্র ৩২ রান খরচায় ৩ উইকেট নিলেও ম্যাচসেরা হন ভিভিএস লক্ষণ। তবে পুরো সিরিজে বুক চিতিয়ে লড়াই করে সিরিজ সর্বোচ্চ ৩৪০ রান করার পুরস্কার হিসেবে সিরিজসেরার পুরস্কারটা ইনজামামের পকেটেই যায়।

পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবারের মতন সিরিজ জয়ের পর ট্রফি নিয়ে উল্লসিত ভারত; Image Source : DNA India

কেন এই সিরিজটি বাকি সিরিজগুলোর চেয়ে আলাদা?

ভারত-পাকিস্তানের এই সিরিজ শুধুমাত্র অসাধারণ কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচের জন্যই বিখ্যাত তা কিন্তু নয়। ক্রিকেটের প্রচলিত বেশ কিছু সমীকরণ বদলে দেওয়ার জন্যেও এই সিরিজ বিখ্যাত। সেসময়ে কোনো দলের সংগ্রহ ২৫০ ছাড়ালেই সেটাকে “জয়ের জন্য যথেষ্ট” হিসেবে বিবেচনা করা হতো আর স্কোরলাইন ৩০০ ছাড়িয়ে গেলে সেই দল জয় উদযাপনের পরিকল্পনা শুরু করে দিতো। কিন্তু এই প্রচলিত ধারণাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখায় ভারত-পাকিস্তানের এই ওয়ানডে সিরিজ। এই সিরিজে প্রথমে ব্যাট করা দলের গড় সংগ্রহ ছিল প্রায় ৩০২ রান! তারচেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে রানচেজে নেমে এই রানের পাহাড় দেখে প্রতিপক্ষ ভড়কে যায়নি, টার্গেট যত বড়ই হোক, পরে ব্যাট করা দল প্রতিম্যাচেই সেই টার্গেটের বেশ কাছাকাছি গিয়েছিলো। এই হাইস্কোরিং ম্যাচগুলো দেখে ক্রিকেটবিশ্ব দুটি ধারণা খুব ভালোভাবে পেয়েছিলো।

  • ১। ৩০০+ হলেই “যথেষ্ট হয়ে গিয়েছে” এই ধারণা ভুল। প্রথম ওয়ানডেতে তো সাড়ে তিনশ রানই পার হয়ে যাচ্ছিলো পাকিস্তান! তাই, স্কোরলাইন ৩০০+ হলেই সন্তুষ্ট হওয়ার উপায় নেই, বরং চেষ্টা করতে হবে স্কোরলাইন যতটা পারা যায় বড় করার।
  • ২। কোনো টার্গেটই অনতিক্রম্য নয়। এই সিরিজের প্রতিটা ম্যাচের রানচেজই এই ধারণাটা বেশ ভালোভাবে স্থাপন করে দেয়। টার্গেট যত বড়ই হোক, শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেললে সেই লক্ষ্য পূরণ হওয়া সম্ভব।

এর ফলে ক্রিকেটবিশ্বের বাকি দলগুলোও নিজেদের গেমপ্ল্যান নিয়ে নতুন করে ভাবা শুরু করে, যার ফলে এই সিরিজের পরে প্রায় প্রতিটি দলেরই গড় রান বেড়ে যায়, বেড়ে যায় বড় বড় রানচেজের সংখ্যাও। এই সিরিজের মাত্র দুই বছর পরেই জোহান্সবার্গের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪৩৪ রানচেজ দ্বিতীয় ধারণাটাকে পুরোপুরি স্থাপন করে দেয়। আর এসব দিক বিবেচনা করেই এই সিরিজকে এই শতাব্দীর সেরা ওয়ানডে সিরিজ বলা হয়েছে।

শেষ কথা

সেই ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজের প্রায় চৌদ্দ বছর বছর হয়ে গেছে, কিন্তু সেই ম্যাচগুলো আজও স্মৃতির পাতায় অম্লান। আজ সেই রামও নেই, নেই সেই অযোধ্যাও। ভারত-পাকিস্তান সর্বশেষ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হয়েছিলো প্রায় ছয় বছর আগে, দুই দেশের সম্পর্কে যেভাবে অবনতি হচ্ছে তাতে নিকট ভবিষ্যতেও এই দুই দেশের মধ্যকার ধ্রুপদী লড়াইয়ের মেলা দেখার সম্ভাবনাও খুব কম। অথচ আগে ক্রিকেটবিশ্বের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সিরিজ।

অবশ্য শুধু ভারত-পাকিস্তান সিরিজ নয়, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের চাপে সবধরনের দ্বিপাক্ষিক সিরিজেই বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে। আজ ভারতের এক টি-টুয়েন্টি লিগের জন্য প্রায় দুই মাসের জন্য সবধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অলিখিত নির্বাসনে চলে যায়! যেভাবে সবকিছু যাচ্ছে তাতে হয়তো কোনো একসময়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজের ব্যাপারটাই ক্রিকেট থেকে উঠে যাবে। সারাবছর খেলোয়াড়েরা টাকার জন্য বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দাপিয়ে বেড়াবে আর মাঝেমধ্যে কিছু প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ, সাথে চার বছর পর বিশ্বকাপে নিজ দেশের হয়ে খেলবে।

সত্যি যদি এরকম কিছু হয় তাহলে ক্রিকেটপ্রেমীদের ২০০৪ সালের সেই স্যামসাং কাপের মতো ধ্রুপদী সিরিজগুলোর ম্যাচ নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। এসব প্রতিকূলতার মাঝেও আশায় ঘর বাঁধি, একসময় ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগের দাপট কমে আসবে। ঘুচে যাবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, ক্রিকেটবিশ্ব আবারো উপভোগ করতে পারবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মহারণ।

 

This article is in Bangla language. It's an article about a famous ODI series between India and Pakistan.

Featured Image: espncricinfo.com

Related Articles