Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জিরু বনাম বেনজেমা: বিশ্বকাপ দলে কে ছিলেন বেশি যোগ্য?

ফুটবলার তৈরির একটি বড় কারখানা হলো ফ্রান্স। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা তাদের পাইপলাইনে প্রচুর ফুটবলার পেয়ে থাকে প্রতি বছরই। কিন্তু মূল একাদশে তো ১১ জনের বেশি সুযোগ পায় না। আবার কোনো টুর্নামেন্টের জন্য স্কোয়াড তৈরি হয় মাত্র ২৩ জনের, সেখানে স্বপ্নভঙ্গও হয় অনেকের। এই স্কোয়াড বাছাই করার সময় অনেক কিছুই দেখা হয়, যার মধ্যে অন্যতম খেলোয়াড়ের বয়স, বর্তমান পারফরম্যান্স, পারস্পরিক বোঝাপড়া, এবং টিমম্যানশিপ। ফ্রান্সের বর্তমান একাদশে স্ট্রাইকার হিসেবে আমরা বেশিরভাগ সময়েই দেখি অলিভিয়ের জিরুকে। এই জিরু দলে সুযোগ পেতে পেছনে ফেলেছেন করিম বেনজেমা, অ্যালেক্সান্ডার লাকাজেটের মতো স্ট্রাইকারকে। যদি ক্লাবের খেলায় জিরু আর বেনজেমার পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করা হয়, তবে জিরুকে অগ্রাধিকার দিতে দ্বিতীয়বার ভাবতেই হবে। কিন্তু ফ্রান্সের বর্তমান কোচ দিদিয়ের দেশম কেন জিরুকেই তার দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হিসেবে রাখছেন?

এই আলোচনায় আসার আগে বেনজেমার ফ্রান্স জাতীয় দলে খেলার সময়ের পরিসংখ্যান ও বাদ পড়ার কারণটা দেখা যাক। দলে তার অভিষেক হয়েছিল কোচ রেমন্ড ডমেনেখের হাত ধরে ২০০৭ সালে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে। অভিষেক ম্যাচেই ১ গোল করে নিজেকে জানান দিয়েছিলেন অঁরি-আনেলকাদের সামনে। পরের ৮০টি ম্যাচে করেন আরো ২৭টি গোল। ২০১৪ বিশ্বকাপে বেনজেমা ছিলেন দলের অটোচয়েস। সেখানেও ৫ ম্যাচে করেন ৩ গোল এবং ২ অ্যাসিস্ট। সেই বিশ্বকাপে ২টি ম্যাচে বেনজেমা খেলেন লেফট উইংয়ে। জিরু তখন ছিলেন স্ট্রাইকার আর ম্যাথিউ ভালবুয়েনা রাইট উইঙ্গার। এই ম্যাথিউ ভালবুয়েনার সাথে কেলেঙ্কারিই তার কাল হয়ে দাঁড়ায় প্রথমে। ভালবুয়েনা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন, তার আপত্তিকর ভিডিও দিয়ে বেনজেমা তাকে ব্ল্যাকমেইল করছে। এরপরই বেনজেমার জন্য জাতীয় দলের দরজা একরকম বন্ধ হয়ে যায়। এর জেরে বাদ পড়েন ২০১৬ ইউরো, ২০১৮ বিশ্বকাপ থেকে। এরপর বেনজেমাকে জাতীয় দলে আর ডাকা হয়নি, যদিও তাকে এটাও বলা হয়নি যে তাকে আর ডাকা হবে না।

ম্যাথিউ ভালবুয়েনা ও বেনজেমা। এই ভালবুয়েনাই ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ আনেন; Image Credit: Andrew Couldridge/Action Images

শুধু খেলোয়াড় হিসেবে বেনজেমা আর জিরুকে পর্যালোচনায় কিছু টেকনিক্যাল বিষয় ছাড়াও গোলস্কোরিং, ব্যক্তিগত ও দলগত অর্জন সবদিকেই জিরু থেকে অনেক এগিয়ে বেনজেমা। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের এই ফরোয়ার্ডের চেয়ে চেলসির অলিভার জিরুকেই ফ্রান্সের কোচ দেশম তার দলে প্রাধান্য দিয়েছেন দলের প্লেয়িং স্টাইলের জন্য।

বেনজেমার পরিবর্তে জিরুর ক্রমাগত সুযোগ পাওয়া নিয়ে দুইজনের তুলনা দিতে গিয়ে হতাশায় মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন, তিনি ‘ফর্মুলা ওয়ান কার’ আর জিরু ‘গো কার্ট’। মডার্ন ফুটবলে কোনো খেলোয়াড় অন্য কোনো খেলোয়াড়কে উদ্দেশ্য করে এভাবে বলার ঘটনা খুবই বিরল। উত্তর দিতে অবশ্য দেরি করেননি জিরু, নিজেকে বলেছিলেন ‘বিশ্বকাপজয়ী গো কার্ট’। পরে অবশ্য বেনজেমা নিজের সাফাই গেয়েছেন, বলেছেন, তিনি শুধুই তুলনা করতে চেয়েছিলেন এই দুইটা গাড়িকে রূপক হিসেবে ধরে। যেমন তার আর রোনালদোর মধ্যে তিনি ‘গো কার্ট’ আর রোনালদো ‘ফর্মুলা ওয়ান কার’।

কোন খেলোয়াড় কতটা ভালো, সেটা জানার ক্ষেত্রে তার পারফরম্যান্সের সাথে দেখতে হবে প্লেয়িং স্টাইলও। যেমন লেওয়ান্ডস্কি একজন ফিনিশার। দলে তিনি টার্গেটম্যান হিসেবে খেলেন। তার কাছ থেকে আমরা নিয়মিতভাবে অ্যাসিস্ট আশা করতে পারি না। একইভাবে জিরু আর বেনজেমার প্লেয়িং স্টাইল অনুযায়ী ফ্রান্স দলে তাদের চাহিদা আলাদারকম।

এই দু’জনের তুলনা করতে তাই তাদের পুরো ক্যারিয়ারটিই দেখতে হবে। বেনজেমা আর জিরুর ক্যারিয়ারে সূচনা কিংবা উত্থান সবই ছিল আলাদা। বেনজেমা যখন লিঁওতে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন, তখনই তাকে বলা হতো ‘নেক্সট বিগ থিং’। সামির নাসরি, হাতেম বেন আরফা, জেরেমি মেনেজ, তাদের সাথে বেনজেমা – সবাই ধারণা করছিল ভবিষ্যৎ ফরাসি ফুটবলে নেতৃত্ব তারাই দেবেন।

অনুর্ধ-১৭ ইউরো ২০০৪ জয়ী বাঁ থেকে বেনজেমা, বেন আরফা ও নাসরি; Image Credit:SportsMob

যে সময়ে লিঁওতে বেনজেমার ক্যারিয়ার শুরু হয়, তখন ফ্রান্সে ছিল লিঁওরই রাজত্ব। সেই রাজত্বে থাকায় বেনজেমার ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল খুবই মসৃণ। ২০০৪ এ যখন অভিষেক হয় তখনও লিঁও চ্যাম্পিয়ন। মূলদলের বেশ কয়েকজন ক্লাব ছাড়ায় ১৯ বছর বয়সী বেনজেমাকে যখন ২০০৬ সালে মূল দলে নিয়মিত করা হয়, সেই মৌসুমেই নিজের জাত চিনিয়ে ৫১ ম্যাচে করেন ৩১টি গোল। সেই মৌসুমে লিঁও জেতে তাদের ইতিহাসের প্রথম ডমেস্টিক ডাবল, আর বেনজেমা জায়গা পান ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায়।

২০০২ সাল থেকে টানা ৭ বছরের চ্যাম্পিয়ন লিঁও ২০০৮-০৯ মৌসুমে তৃতীয় হয়, লিঁও ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান বেনজেমাও। ঐসময় স্পেনে কোচ পেপ গার্দিওলার উত্থান দেখছে বিশ্ব। ফ্লোরেন্টিনো পেরেজ নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে দলে ভিড়িয়েছিলেন কাকা, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, রাউল অ্যালবিওল ও করিম বেনজেমাকে। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে, রিয়ালে রোনালদোর ছায়ায় কিছুটা ঢাকা পড়লেও রোনালদো ক্লাব ছাড়ার পর রিয়ালের অ্যাটাকিং লাইনের নেতৃত্ব আসে তার কাছেই। রিয়ালের ইতিহাসের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পাশাপাশি তাদের হয়ে জিতেছেন ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ, ৩টি স্প্যানিশ লিগ।

ক্লাব ফুটবলের পরিসংখ্যানে পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে বেনজেমা; Image Credit: Author/Roar Media

অন্যদিকে জিরু তার ক্যারিয়ারের প্রথম পেশাদার চুক্তি পান ২১ বছর বয়সে লিগ-টু’র ক্লাব গ্রেনোবলে। কিন্তু সেখানে প্লেয়িং টাইম না পেয়ে লোনে যোগ দেন তৃতীয় সারির ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্যাট ন্যাশনালে। সেখানে ১৪ গোল তাকে আবার লিগ-টু’তে ফিরিয়ে আনে। এই ফর্ম চলমান থাকায় লিগ-ওয়ান এর ক্লাব মন্টপেলিয়ারের নজরে আসেন। সেখানে প্রথম মৌসুমে ১২ গোল এবং পরের মৌসুমে ২১ গোল করে তাদের লিগ জেতান। তখনও আন্তর্জাতিকভাবে সেভাবে স্পটলাইটে আসা হয়নি তার, তবে স্বদেশী আর্সেন ওয়েঙ্গারের মনে ধরেতার খেলা। আর্সেনালের জন্য একজন পারফেক্ট খেলোয়াড় হিসেবে ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের রিলিজ ক্লজ পে করে তাকে আনা হয় এমিরেটসে।

আর্সেনালে সময়টুকু সেভাবে সফল যায়নি তার জন্য। যে পরিমাণ গোল আশা করা হয়েছিল প্রতি মৌসুমে, প্রতিবারই হয়েছিলেন ব্যর্থ। তবে আর্সেনাল প্রতিবারই ছিল ইংলিশ ফুটবলের টপ ফোরে, সেই সাথে যে তিনটি এফএ কাপ জেতে আর্সেনাল, দু’টির ফাইনালেই ম্যাচ উইনিং অ্যাসিস্ট করেন অ্যারন রামসিকে, আর অন্যটায় নিজেই গোল পান। আর্সেনাল থেকে এরপর নিজের পরিচয়ের খোঁজে পাড়ি জমান চেলসিতে। 

জিরুকে শুধু গোলস্কোরিং অ্যাবিলিটি দিয়ে বিবেচনা করা যাবে না, তিনি আসলে স্কোরার থেকেও বেশি কিছু। আর্সেনাল ২৫৩ ম্যাচে ১০৫ গোল করা জিরুর মূল ক্ষমতা ছিল অফ দ্য বল মুভমেন্টে। ডিফেন্ডারকে ড্র্যাগ করে জায়গা থাকা সরিয়ে দিতেন, দুই উইংয়ে থাকা পোডলস্কি, সানচেজ, ওয়ালকট, আরশাভিনের জন্য প্রচুর জায়গা তৈরি করে দিতেন। শারীরিকভাবেও বেশ শক্তসামর্থ্য হওয়ায় ডিফেন্ডারদের সাথে বল দখলের লড়াইতেও জিতে যেতেন প্রায়ই। চেলসিতেও একাদশে অনিয়মিত হয়েও ‘সুপার সাব’ হয়ে বেশ কিছু ম্যাচেই পয়েন্ট বাঁচিয়েছেন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে চেলসিকে ইউরোপা লিগ জেতানোর পথে নিজে ছিলেন টপ স্কোরার।

আর্সেনালে যে রোলটা পালন করতেন, সেটাই তিনি নিয়ে আসেন ফ্রান্সে।  যখন বেনজেমার পাশে খেলতেন, তখন এই জিরুর জন্যই প্রচুর স্পেস পেতেন বেনজেমা। বেনজেমা গোল স্কোরিংয়ের দিকে অবশ্যই অনেক এগিয়ে থাকবেন জিরুর চেয়ে। যে দলে জিরুকে নিয়ে দিদিয়ের দেশম বিশ্বকাপ জিতেছেন, সেই দলে বেনজেমা থাকলে কি দলের পারফরম্যান্স আরো ভাল হতে পারত? সে উত্তর কেবল ‘যদি-কিন্তু’র খাতায়ই রয়ে যাবে।  

ফ্রান্সের হয়ে বেনজেমা এবং জিরুর তুলনামূলক পরিসংখ্যান; Image Credit: Author/Roar Media

জিরু ছাড়াও দেশমের দলে মূল অ্যাটাকার ছিলেন আরো চারজন। তারা হলেন আঁতোয়া গ্রিজমান, কিলিয়ান এমবাপ্পে, টমাস লেমার ও উসমান দেম্বেলে। এর চারজনের মধ্যে সাধারণ গুণ: সবাই প্রচণ্ড গতিসম্পন্ন। দেশমের মূল পরিকল্পনাই ছিল গ্রিজমান, এমবাপ্পে ও দেম্বেলের অফ দ্য বল রানিং, পজিশনিং সেন্স কাজে লাগানো।

কিন্তু বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই বুঝতে পারেন, কিছু একটার যেন অভাব রয়ে যাচ্ছে। তারা দৌড়াচ্ছে বটে, কিন্তু যোগসূত্র বাঁধার কেউ নেই। সেই ম্যাচে তাদের তিনজনের পারফরম্যান্সই ছিল তাদের নামের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। সেই ম্যাচের এক-চতুর্থাংশ বাকি থাকতে নামেন জিরু, আর স্ট্রাইকার পজিশন থেকে ডিপে নেমে গুছানো অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্সকে সরিয়ে নিজের দিকে নিয়ে আসেন। এতে ডিফেন্স লাইনে একটা জায়গা ফাঁকা হয়ে প্রচুর স্পেস তৈরি হয়। সেদিক দিয়ে পল পগবা বল নিয়ে এগিয়ে ফ্রান্সের জয়সূচক গোলটি করেন।

শুধু ক্রোয়েশিয়া নয়, বাকি সব ম্যাচেই এমন ছিল ফ্রান্সের স্কোয়াড; Image Credit: Author

সেই ম্যাচের পর দিদিয়ের দেশম আর জিরুকে বসাননি। পেরুর সাথের ম্যাচটা বলেন, কিংবা আর্জেন্টিনার সাথে, পর্দার আড়ালে মূল নায়ক ছিলেন জিরুই। আর্জেন্টিনার সাথের ম্যাচে জিরুর ফিজিক্যালিটিকে টক্কর দিতে রোহো আর ওটামেন্ডিকে লেগে থাকতে হয়েছিল জিরুর সাথেই। এতে দুই পাশে বিশাল জায়গা খালি পান এমবাপ্পে আর গ্রিজমান। প্রথম গোলের পেনাল্টিটাও এভাবেই পেয়েছিলেন এমবাপ্পে। আর চতুর্থ গোলের সময় ফ্যাজিও বোকা বনে গিয়েছিলেন, রীতিমতো উভয় সঙ্কটে পড়েছিলেন এই ভেবে যে জিরুর সাথে থাকবেন না এমবাপ্পের সাথে। ফলাফল, আবারও ফসকে গিয়ে বল আর্জেন্টিনার জালে। পুরো টুর্নামেন্টে এভাবে খেলেছেন, স্ট্রাইকার হয়েও একটিও অন-টার্গেট শট না নিয়েই টুর্নামেন্ট শেষ করেন জিরু। তবে কাজের কাজ হয়েছে তাতেই, দলকে এনে দিয়েছেন বিশ্বকাপ। 

দিদিয়ের দেশমের সিস্টেমকে অনেকেই সেকেলে বলেন, কিন্তু দলগত পারফরম্যান্স বের করতে এর জুড়ি নেই। জিরুর উপর এই স্পেস তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়াতে বাকি ক্রিয়েটিভ খেলোয়াড়েরা সেই তৈরিকৃত ফাঁকা জায়গাগুলোকে কাজে লাগিয়েছেন দারুণভাবে।

বিশ্বকাপে জিরুর পারফরম্যান্স; Image Credit: Mykhel

গ্রিজমান, এমবাপ্পে এবং পগবার মতো খেলোয়াড়দের নিয়ে ফ্রান্সের যে স্কোয়াড ছিল, তাতে বিশ্বকাপের আগেই তাদের অনেকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করে দেয়। তবে জিরু যে দলের জন্য ‘এক্স ফ্যাক্টর’ হিসেবে ভূমিকা পালন করছিলেন, সেটা রয়ে গেল সবার অন্তরালেই। অন্যদের মতো তার তেমন গতি নেই, বলা যায় দলের সবচেয়ে স্লো খেলোয়াড় তিনিই। কিন্তু লিংক-আপ-প্লে করার যে ক্ষমতা, সেটা জিরুর অন্য যে কারোর থেকেই বেশি। টপ লেভেলে এসে স্ট্রাইকার পজিশনে থেকেও এই ভূমিকা এত কার্যকরভাবে সম্পন্ন করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। আবার তার উচ্চতা তার জন্য একটি বড় সুযোগ। সেট পিসের সময় ভয়াবহ একটা এরিয়ার থ্রেট হিসেবে তিনি বক্সে থাকেন। আবার একইভাবে এরিয়াল ব্যাটেল জিততে সেট পিস ডিফেন্ড করার সময়েও নিজেদের বক্সে চলে আসেন। গোল-কিক থেকে হাওয়ায় ভাসা বল হেড দিয়ে জিতে তা উইংয়ে থাকা প্লেয়ারের দৌড়ের চ্যানেলে সাপ্লাই করতেও খুবই পারদর্শী তিনি। ফ্রান্স তাই জিরুর কাছ থেকে সরাসরি গোলস্কোরিং কম পেলেও বাকি কিছু সেক্টরে প্রচুর সুবিধা পায়। আবার অন্যদিকে ফ্রান্স জাতীয় দলের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায়ও ইতঃমধ্যেই জিরু ৪৪টি গোল নিয়ে চলে এসেছেন দ্বিতীয় স্থানে, তার সামনে শুধু রয়েছেন থিয়েরি অঁরি।

ক্রিস্টাল প্যালেসের বিরুদ্ধে করা জিরুর পুস্কাসজয়ী স্কর্পিয়ন কিক গোল; Image Credit: Getty Image

ফরাসি দলে জিরুর ভ্যালু তাই গোলস্কোরিং দিয়ে বোঝা দুষ্কর। তিনি একটি ‘নির্দিষ্ট সিস্টেমের খেলোয়াড়’। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের পাশাপাশি অন্য যেকোনো একটি ম্যাচের তুলনা করলেই বোঝা যাবে ফ্রান্স দলটি কতটুকু বদলে গিয়েছিল তার উপস্থিতিতে।

যদি বিশ্বকাপে জিরুর জায়গায় বেনজেমা থাকতেন, তবে কি তিনি একই রোল প্লে করতেন? বেনজেমার স্বাভাবিক খেলার স্টাইল হলো ডিফেন্ডারের সাথে লেগে থাকবেন, ফুলব্যাকের অবস্থান কোথায় তা দেখে ওয়াইড এরিয়ায় থাকবেন, না হলে একটু ডিপে নেমে ডি-বক্সের কাছাকাছি থাকবেন। তাই বেনজেমা যত ভালো খেলোয়াড়ই হয়ে থাকেন না কেন, দেশমের ট্যাকটিক্সে তাই জিরুই ছিলেন সবচেয়ে ভালো পছন্দ।

বয়সের দিকে দেখলে তাদের দু’জনেই এখন আছেন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে। ক্লাব ক্যারিয়ার আর সামগ্রিক বিবেচনায় হয়তো ব্যক্তিগত আর দলগত উভয় অর্জনেই জিরুর থেকে যোজন যোজন এগিয়ে থাকবেন বেনজেমা। তা সত্ত্বেও ইতিহাসে অলিভিয়ের জিরুর গল্পটি লেখা থাকবে অন্যভাবে, যেখানে সাফল্যের জন্য শুধু ‘সিস্টেমের খেলোয়াড়’ হলেই চলে। জিরুর লিংকআপ-প্লে, বল হোল্ডিং ক্যাপাবিলিটি, মাঠে নিঃস্বার্থভাবে সতীর্থদের বল বানিয়ে দেওয়া, ওয়ার্করেট ছাড়া রাশিয়ায় ফ্রান্স তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপটি না-ও পেতে পারত। তাই দিদিয়ের দেশম যে বেনজেমার পরিবর্তে জিরুর ওপর আস্থা রেখেছিলেন, সময় এবং ট্যাকটিক্সের হিসেবে তা ছিল শতভাগ সঠিক সিদ্ধান্ত।

Related Articles