Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ওয়ানডে ম্যাচের শেষ উইকেটের সফল জুটি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে এক উইকেটের ব্যবধানে জয়ী দল এবং পরাজিত দল নির্ধারিত হয়েছে ১৪ বার। এর মধ্যে গত বছরেই দু’বার এমন ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা এবং অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ড এক উইকেটে জয় পেয়েছিল। দু’টি ম্যাচই ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ উইকেট জুটিতে বিশ্ব ফার্নান্দোর সাথে অবিচ্ছিন্ন ৭৮ রান যোগ করে দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়েছিলেন কুশাল পেরেরা। অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের হয়ে এই একই কাজ করেছিলেন বেন স্টোকস। তিনি শেষ উইকেট জুটিতে জ্যাক লিচের সাথে ৭৬ রান যোগ করে ইংল্যান্ডকে এক উইকেটের জয় এনে দিয়েছিলেন।

টেস্ট ক্রিকেটে এক উইকেটের ব্যবধানে জয়ের ঘটনা ১৪টি হলেও ওয়ানডেতে এর সংখ্যা ৬১টি। টেস্টে এক উইকেটের জয়ে শেষ উইকেট জুটিতে অর্ধশত রানের জুটি হয়েছিল মোট তিনটি। ওয়ানডে ক্রিকেটেও এক উইকেটের জয়ে শেষ উইকেট জুটিতে অর্ধশত রানের জুটির ঘটনা ঘটেছে তিনবার। টেস্ট ক্রিকেটে এক উইকেটের ব্যবধানে জয়ী দল নির্ধারিত হওয়া ম্যাচগুলো যতটা আলোড়ন সৃষ্টি করে, ততটুকু আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে না সীমিত ওভারের ম্যাচগুলো। কয়েকদিন পরই ক্রিকেট প্রিয় মানুষদের প্রিয় ম্যাচের তালিকা থেকে হারিয়ে যায়। আজকের লেখায় থাকছে ওয়ানডেতে এক উইকেটের জয়ে শেষ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের পাঁচটি জুটি সম্পর্কে।

ডেরেক মারে এবং অ্যান্ডি রবার্টস – ৬৪* রান

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে। প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্রুপপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে এক উইকেটের জয় পেয়েছিল। এই ম্যাচে জয় না পেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়তো সেমিফাইনালেই খেলা হতো না। এজবাস্টনে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৬০ ওভারে সাত উইকেটে ২৬৬ রান সংগ্রহ করেছিল পাকিস্তান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬০ রান করেন অধিনায়ক মজিদ খান। এছাড়া অর্ধশতক হাঁকান মুশতাক মোহাম্মদ এবং ওয়াসিম রাজা। মজিদ খান এবং মুশতাক মোহাম্মদের রানের সাথে বলের ব্যবধান বেশি হলেও ওয়াসিম রাজা ৫৭ বলে ৫৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে ২৬৬ রানের পুঁজি এনে দিয়েছিলেন।

জয়ের নায়ক ডেরেক মারে ; Image Source: PA Image Archive

তখনকার হিসাবে ২৬৬ রান ওয়ানডে ক্রিকেটে চ্যালেঞ্জিং স্কোর। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপের কথা মাথায় রেখেও এই কথা বলা যায়। পাকিস্তানের বোলাররা শুরুটাও করেছিল দুর্দান্তভাবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৬ রান তুলতেই তিন উইকেট হারিয়ে বসে। তিনজনকেই সাজঘরে ফিরিয়েছিলেন সরফরাজ নওয়াজ। দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড। তিনি চতুর্থ উইকেটে রোহান কানহাইয়ের সাথে ৪৮ রান এবং ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বার্নাড জুলিয়েনের সাথে ৪৬ রান যোগ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তার একক প্রতিরোধ বেশিক্ষণ টেকেনি, দলীয় ১৫১ রানে এবং ব্যক্তিগত ৫৩ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসাবে সাজঘরে ফেরেন। 

জয় থেকে তখনও ১০১ রান দূরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হাতে আছে মাত্র দুই উইকেট। এমন সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ দুই উইকেট দ্রুত তুলে নিতে দলের মূল বোলারদের নিয়মিত বল করাতে থাকেন মজিদ খান। মজিদ খানের পরিকল্পনা সফল হতে না দিয়ে উইকেটে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ডেরেক মারে। তিনি দশ নাম্বার ব্যাটসম্যান ভ্যানবার্ন হোল্ডারের সাথে ৩৭ রান যোগ করেন। হোল্ডার ১৬ রান করে সরফরাজের চতুর্থ শিকার হয়ে যখন সাজঘরে ফেরেন, তখনও জয়ের জন্য শেষ ১৪ ওভারে ৬৪ রান প্রয়োজন ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের।

শেষ উইকেটের জন্য দলের মূল বোলারদের আক্রমণে রাখেন মজিদ। মারে এবং রবার্টস দক্ষতার সাথে সরফরাজ, আসিফ মাসুদ এবং নাসের মালিকের বল মোকাবেলা করেন। জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে যখন মাত্র পাঁচ রান প্রয়োজন ছিল, তখন মূল বোলারদের সবার নির্ধারিত কোটা শেষ। এমন অবস্থায় অধিনায়ক বল তুলে দেন মিডিয়াম-পেসার পারভেজ মীরের হাতে। তিনি ঐ ওভারে কোনো রান না দিয়ে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন।

শেষ ওভারের জন্য তখন অধিনায়কের হাতে অপশন ছিল লেগ স্পিনার মুশতাক মোহাম্মদ এবং পার্টটাইম বোলার ওয়াসিম রাজা। চোখ কপালে তোলার মতো সিদ্ধান্তই নিলেন বটে তিনি, শেষ ওভারের জন্য বেছে নিলেন রাজাকে। রাজা মূলত লেগ স্পিন করলেও এই ওভারে মিডিয়াম পেস করেন। তার করা প্রথম চার বল থেকে কাঙ্ক্ষিত পাঁচ রান তুলে নিয়ে দলকে এক উইকেটের নাটকীয় জয় এনে দিয়েছিলেন রবার্টস এবং মারে। রবার্টস ৪৮ বলে ২৪ রানে এবং মারে ৭৬ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন। 

জেমস ফকনার এবং ক্লিন্ট ম্যাকাই – ৫৭* রান

পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পরাজয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচে সিরিজ সমতা আনার লক্ষ্যে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ইংল্যান্ড। ব্যাট করতে নেমে ইয়ান বেলের ৬৮ রান, ইয়োন মরগানের ১০৬ রান এবং জস বাটলারের ৩৬ বলে ৪৯ রানের ইনিংসে আট উইকেট হারিয়ে ৩০০ রান সংগ্রহ করে সফরকারীরা। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে বাটলার এবং মরগানের মাত্র ৬৮ বলে ১১৭ রানের জুটিই ইংল্যান্ডকে ৩০০ রান তুলতে সাহায্য করে।

জবাবে ৩০১ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ফিঞ্চ এবং ওয়ার্নারকে দ্রুত ফেরান ক্রিস জর্ডান। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা অস্ট্রেলিয়া টপ-অর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারান ১২০ রান তুলতেই। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং ব্রাড হ্যাডিন ৬৭ বলে ৮০ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের স্বপ্ন দেখান। হ্যাডিন ২৬ রান করে এবং ম্যাক্সওয়েল মাত্র ৩৯ বলে ৫৪ রান করে সাজঘরে ফিরে গেলে ২০৫ রানে সাত উইকেট হারিয়ে জয়ের পথ কঠিন করে তোলে অস্ট্রেলিয়া। দুজনকে একই ওভারে ফিরিয়েছিলেন ব্রেসনান।

দলকে এক উইকেটের নাটকীয় জয় এনে দেওয়ার পর উদযাপন করছেন ফকনার এবং ম্যাকাই; Image Credit: Ian Hitchcock/Getty Images

সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসাবে ম্যাক্সওয়েল সাজঘরে ফিরলে ক্রিজে আসেন জেমস ফকনার। তখনও অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৯১ বলে ৯৫ রান। হাতে মাত্র তিন উইকেট। নবম ব্যাটসম্যান হিসাবে জনসন যখন প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন, তখনও অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ৩৬ বলে ৫৭ রান। হাতে মাত্র এক উইকেট। ফকনার ২৩ বলে ১৪ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন। তখন একদিকে দ্রুত রান তোলার চাপ, অন্যদিকে সঙ্গ দেওয়ার মতো রয়েছে শুধুমাত্র এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যান ম্যাকাই।

এমন পরিস্থিতিতে একাই দলকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান ফকনার। দলকে জয় এনে দেওয়ার পথে বেশি তাণ্ডব চালান বেন স্টোকসের উপর। তার বলেই হাঁকিয়েছিলেন পাঁচটি ছয়। 

স্টোকস যখন ৪৯তম ওভার করতে আসেন, তখনও জয়ের জন্য ২৫ রান প্রয়োজন ছিল। তিনি প্রথম দু’টি বল ডট দিতে সক্ষম হলেও পরবর্তী দুই বলে ফকনার দু’টি ছয় হাঁকান। দু’টি ছয় হাঁকানোর পর শেষ বলেও এক রান নিয়ে স্ট্রাইকে যান ফকনার। শেষ ওভারে তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ১২ রানের। অ্যালিস্টার কুক ভরসা রাখেন ব্রেসনানের উপর। কিন্তু ফকনারের মারমুখী ব্যাটিংয়ের সামনে ব্রেসনান কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। তার করা প্রথম তিন বলে তিনটি চার হাঁকিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে এক উইকেটের জয় এনে দেন ফকনার। তিনি এবং ম্যাকাই শেষ উইকেট জুটিতে ৩৩ বলে ৫৭* রান করেন। যার মধ্যে ম্যাকাইয়ের অবদান নয় বলে দুই। ফকনার বল হাতে দু’টি উইকেট শিকারের পর ৪৭ বলে তিনটি চার এবং পাঁচটি ছয়ের মারে অপরাজিত ৬৯ রান করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন।

টমাস ওদোয়ো এবং হিরেন ভারাইয়া – ৫৫* রান

ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগমুহূর্তে কেনিয়াতে আইসিসির ছয় সহযোগী দেশ নিয়ে আইসিসি বিশ্ব ক্রিকেট লিগের প্রথম বিভাগের আসর অনুষ্ঠিত হয়। আসরে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিক কেনিয়াই। গ্রুপপর্বের পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটিতে জয় পেয়ে ফাইনালে ওঠা কেনিয়া শিরোপা-নির্ধারণী ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে আট উইকেটের বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছিল। এই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেই গ্রুপপর্বের ম্যাচে পরাজিত হয়েছিল তারা। আসরে এছাড়া আরও একটি ম্যাচে কেনিয়ার পরাজয়ের সম্ভাবনা জেগে উঠেছিল। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঐ ম্যাচে তাদেরকে সাক্ষাৎ পরাজয়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন ওদোয়ো এবং ভারাইয়া।

টুর্নামেন্টের ৮ম ম্যাচে টসে জিতে আয়ারল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কেনিয়া। ব্যাট করতে নেমে ১৮ রানে দু’টি এবং ৫৭ রানে তিন উইকেট হারায় ক্রিকেট বিশ্বের নবাগত দল আয়ারল্যান্ড। তিন উইকেটের পতনের পর ইনিংসের বাকি গল্পটা উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড এবং কেভিন ও’ব্রায়েনকে নিয়ে। এই দু’জন চতুর্থ উইকেট জুটিতে ২২৭ রান যোগ করেছিলেন। ইনিংসের শেষ বলে রান আউট হওয়ার আগে কেভিন ও’ব্রায়েন খেলেছিলেন ১২৫ বলে ১৪২ রানের ইনিংস। পোর্টারফিল্ড অপরাজিত থাকেন ১০৪ রানে। এই দু’জনের জোড়া শতকে আয়ারল্যান্ড চার উইকেটে ২৮৪ রান করে।

জয়ের নায়ক টমাস ওদোয়ো ; Image Credit: Daniel Berehulak

২৮৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে কেনিয়া। নেহেমিয়া ওদিয়াম্বো ৬৬ রান এবং তন্ময় মিশ্র ৪৯ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখালেও জয়ের জন্য ইনিংসগুলো যথেষ্ট ছিল না। দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে একক প্রচেষ্টা চালান নয় নাম্বারে নামা টমাস ওদোয়ো। দলীয় ২৩১ রানে নয় উইকেট হারানোর পর দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন তিনি। ওদোয়ো এবং ভারাইয়া যখন জুটি বাঁধেন, তখনও জয়ের জন্য ৩৮ বলে ৫৪ রানের প্রয়োজন ছিল কেনিয়ার। শেষ উইকেট বাঁচিয়ে দ্রুত রান তুলে ছয় বল হাতে রেখেই দলকে এক উইকেটের জয় এনে দিয়েছিলেন ওদোয়ো। তিনি মাত্র ৩৬ বলে অপরাজিত ৬১ রানের ইনিংস খেলে নাটকীয় এক জয় এনে দেন কেনিয়াকে। তাকে যোগ্য সহায়তা দেওয়া ভারাইয়া ১১ বল থেকে করেন পাঁচ রান।

নাঈম ইসলাম এবং নাজমুল হোসেন – ৩৫* রান

২০০৯ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নেওয়া বাংলাদেশ চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ ম্যাচে টসে জিতে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায়। ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের তিন স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদউল্লাহর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নির্ধারিত ওভারে নয় উইকেটে ২২১ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। এক পর্যায়ে ১১৩ রানে সাত উইকেট হারিয়ে বসা জিম্বাবুয়ে ব্রেন্ডন টেইলরের অপরাজিত ১১৮ রানের কল্যাণে লড়াকু সংগ্রহ জমা করে।

জবাবে ২২২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ওপেনার তামিম ইকবাল মাত্র এক রান করে ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন। এরপর মোহাম্মদ আশরাফুল, জুনায়েদ সিদ্দিকীরাও উইকেটে থিতু হতে পারেননি। রকিবুল হাসান, সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম উইকেটে থিতু হলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি, যার ফলে ১০৫ রান তুলতেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। সাথে তামিমের ইনজুরি তো আছেই। সেখান থেকে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন দুই অলরাউন্ডার রিয়াদ এবং নাঈম। তাদের ৬৯ রানের জুটি ভাঙে রিয়াদ ৩৩ রান করে রানআউট হয়ে গেলে। 

নাঈম থেকে ছক্কা নাঈম হয়ে ওঠার ম্যাচ; Image Credit: MUNIR UZ ZAMAN/AFP via Getty Images

রিয়াদের বিদায়ের পর দুই বাঁহাতি স্পিনার আব্দুল রাজ্জাক এবং এনামুল হক জুনিয়রকে একই ওভারে সাজঘরে ফেরত পাঠান চিবাবা। ১৭৯ রানে আট উইকেট হারানোর পর দলের বিপর্যয়ে ইনজুরি নিয়েও মাঠে নামেন তামিম ইকবাল। আগের এক রানের সাথে আর মাত্র এক রান যোগ করতে তিনিও রানআউটের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন। ম্যাচে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের তৃতীয় রানআউট ছিল এটি। তার বিদায়ের পর জয়ের জন্য ৩১ বলে ৩৫ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। ক্রিজে থাকা নাঈম ইসলামকে সঙ্গ দিতে ব্যাট হাতে নামেন এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যান নাজমুল। ক্রিজে এসে প্রথম বল মোকাবেলা করতে নেমেই জোরালো এলবিডব্লিউয়ের আবেদন থেকে রক্ষা পান তিনি। 

এরপর ম্যাচের বাকি সময়টা নিজের করে নেন নাঈম। নিজের শেষ ওভার করতে আসা প্রাইসের ওভারে ওয়াইড লং-অন দিয়ে একটি ছয় হাঁকান তিনি। জিম্বাবুয়েকে জোড়া উইকেট এনে দিয়ে ম্যাচে ফেরানো চিবাবা ৪৮তম ওভার করতে এসে নাঈমের তোপের মুখে পড়ে। শেষ তিন ওভারে ২৪ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। চিবাবার ২য়, ৩য় এবং ৪র্থ বলে ছয় হাঁকিয়ে বাংলাদেশের জয়কে সময়ের ব্যাপারে পরিণত করেন নাঈম। হ্যাটট্রিক ছয় হাঁকানোর পর শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে পরবর্তী ওভারে আবারও স্ট্রাইক নিজের কাছে রাখেন তিনি।

জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে পাঁচ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। নিজের শেষ ওভার করতে আসা এমপোফু প্রথম দুই বল ডট দেন। তৃতীয় বলে ব্যাটের কানায় লেগে কিপারের পাশ দিয়ে বল সীমানা ছাড়া হলে দুই দলের স্কোর সমান হয়ে যায়। পরের দু’টি বাউন্সার দেখেশুনে খেলার পর ওভারের শেষ বলে সোজা ব্যাটে সজোরে হাঁকান নাঈম, যা বোলারের হাতে লেগে সরাসরি এক্সট্রা কাভারে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারের কাছে চলে যায়। ততক্ষণে দুই ব্যাটসম্যান জয়সূচক রানের জন্য দৌড় শুরু করে দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ফিল্ডার স্ট্যাম্পে হিট করতে না পারায় এক উইকেটের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। নাঈম ইসলাম ৯০ বলে অপরাজিত ৭৩ রান করে বাংলাদেশকে এক ওভার হাতে রেখেই জয় এনে দেন।

আব্দুল রাজ্জাক এবং শোয়েব আখতার – ৩২* রান

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পাকিস্তানের মধ্যকার ওয়ানডে সিরিজটি ছিল নাটকীয়তা এবং অনিশ্চয়তায় ভরপুর। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ৩-২ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। জয় পাওয়া দু’টি ম্যাচই ছিল এক বল হাতে রেখে এক উইকেটের জয়। দু’টি এক উইকেটের জয়ের মাঝখানের ম্যাচে মাত্র দুই রানের জন্য পরাজিত হয়েছিল পাকিস্তান। 

আবুধাবিতে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ জয়ের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাট করতে নেমে কলিন ইনগ্রামের ১০০ রান, হাশিম আমলার ৬৫ এবং জেপি ডুমিনির ৫৪ রানের উপর ভর করে নির্ধারিত ওভারে আট উইকেটে ২৮৬ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছিয়ে দেন আব্দুল রাজ্জাক ; Image Credit: AAMIR QURESHI/AFP via Getty Images

সিরিজে ১-০ তে পিছিয়ে থাকা পাকিস্তান সিরিজে ফেরার প্রত্যয়ে ২৮৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে। ৭০ রানের মধ্যে টপ-অর্ডারের চার উইকেট হারিয়ে বসে তারা। এরপর শহীদ আফ্রিদি ৫ম উইকেট জুটিতে ফাওয়াদ আলমের সাথে ৬৬ রান যোগ করে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেন। জুটিতে ৬৬ রানের মধ্যে আফ্রিদি একাই করেছিলেন ৪৯ রান।

আফ্রিদির বিদায়ের পর ফাওয়াদকে সাথে নিয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন আব্দুল রাজ্জাক। তারা দু’জন ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৮১ রান যোগ করেছিলেন। দলীয় ২১৭ রানে ৪৮ রান করা ফাওয়াদ সাজঘরে ফিরে গেলে দলকে একাই টেনে নিয়ে যান রাজ্জাক। কিন্তু অপর প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেটের পতন ঘটছিল। পরবর্তী তিন ব্যাটসম্যানই খামখেয়ালিপনায় রানআউটের শিকার হন। 

শেষ ব্যাটসম্যান হিসাবে শোয়েব আখতার যখন ক্রিজে আসেন, তখন জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১৫ বলে ৩০ রানের। ৫৯ বলে ৭৭ রানে অপরাজিত থাকা রাজ্জাক তখন একাই চেষ্টা চালিয়ে যান। শেষ দুই ওভারে ২৫ রানের প্রয়োজন ছিল। তিনি ল্যাঙ্গেভেল্টের ওভারের প্রথম পাঁচ বল খেলে একটি ছয় এবং চার হাঁকিয়ে ৫ম বলে সিঙ্গেল নিয়ে শোয়েব আখতারকে শেষ বল মোকাবেলা করার জন্য দেন।

শোয়েব ৪৯তম ওভারের শেষ বল ঠেকিয়ে দিলে শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ১৪ রানের। স্ট্রাইকে তখন রাজ্জাক। ম্যাচের ফলাফল পুরোটাই তার হাতে নির্ভর করেছিল। আগের চার ওভারে ৩৬ রান দেয়া অ্যালবি মরকেল শেষ ওভার করার দায়িত্ব পান। ওভারের প্রথম বল ডট দিলেও রাজ্জাকের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সামনে শেষ হাসি হাসতে পারেননি তিনি। ওভারের ২য় ও ৩য় বলে ছয় হাঁকিয়ে শতক পূর্ণ করা রাজ্জাক ৫ম বলে চার হাঁকিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

তার ৭২ বলে সাতটি চার এবং দশটি ছয়ের মারে সাজানো অপরাজিত ১০৯ রানের উপর ভর করেই এক উইকেটের নাটকীয় জয় পেয়েছিল পাকিস্তান। শেষ উইকেট জুটিতে শোয়েব আখতারের সাথে ১৪ বলে ৩২ রান যোগ করে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি। ৩২ রানের জুটিতে শোয়েবের অবদান ছিল শূন্য! তবে এক বল মোকাবেলা করে নিজের উইকেট বাঁচিয়ে রাজ্জাককে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারাতে সাহায্য করেন তিনি।

This article is in Bangla language. It is about the Highest successful partnership for the tenth wicket in ODI.  For references, please check the hyperlinks inside the article.

Featured Image: Bradley Kanaris/Getty Images

Related Articles