Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পাথিরানার বোলিং অ্যাকশনটা কেন মালিঙ্গার চেয়ে ভালো?

বহুদিন বাদে খেলা দেখতে বসে আপনি বনে গেলেন রিপ ভ্যান উইঙ্কল। যেন পৃথিবী আটকে আছে ১০ বছর আগেই। এখনো উইকেটের পেছনে দাঁড়াচ্ছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, ডাইভ মারছেন, হাতের ইশারায় ম্যাচের কলকাঠি নাড়ছেন। ধীরলয়ের রানআপে ওই যে বল করতে আসছেন, ‘আরে, এ যে লাসিথ মালিঙ্গা!’

আপনার উৎসাহ দমিয়ে দিলেন পাশে বসা বছর তেরোর কিশোর। গড়গড় করে জানিয়ে দিলো, মালিঙ্গার মতো দেখতে লাগল যাকে, তিনি আসলে মাথিশা পাথিরানা। মালিঙ্গারই স্বদেশি, বয়স ২১ ছুঁলো গত ডিসেম্বরেই। খেলছিলেন বেশ কিছু সময় ধরেই, তবে পাদপ্রদীপের আলোটা ভালো করে পড়ল এই আইপিএলে। আর আপনার বিভ্রমটাও যৌক্তিক। তাকে নতুন মালিঙ্গাই বলছে সবাই।

খেলাটা আপনার খুঁটিয়ে দেখার স্বভাব ছিল বরাবরই। একটু দেখেই বুঝলেন, পাথিরানা যেন কিছুটা আলাদা। নস্টালজিয়া নয়, আপনি মুগ্ধ হলেন নতুন আবির্ভূত এই তারকার টেকনিকে। সাইড-আর্ম অ্যাকশনের ব্যাকরণ যেন লেখা হলো এই তরুণের হাতেই। অস্ফুটেই বলে ফেললেন, ‘না, ও ঠিক মালিঙ্গা না।’

কীভাবে, বোঝানোর দায় বর্তালো এরপর। বোলিং বায়োমেকানিক্সের জটিল জ্ঞানটা গেঁথে দিতে চাইলেন কচি মস্তিষ্কে, যতটুকু সহজে যায় আরকি। 

শুরুটা মালিঙ্গার বোলিং বিশ্লেষণ করেই। মালিঙ্গার ক্ষেত্রে যেটা হতো, তিনি আন-অর্থোডক্স হয়েছিলেন কেবল হাতের ব্যবহারে। কিন্তু, তার বাকি শরীরটা অনুসরণ করত গতানুগতিক বোলিংয়ের সব নিয়মই।

যেমন, তার ব্যাক-ফুট ল্যান্ডিংটা হতো অনেকটা ফাইন লেগ বা ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ বরাবর। বোলিং হাতটা আনুভূমিকভাবে নড়াচড়া করলেও শরীরটা এগোতে চাইত পেছন থেকে সামনে। কিন্তু, হাতের ডাউনসুইং পর্যায়ে (মালিঙ্গা বা পাথিরানার ক্ষেত্রে সাইডসুইংই হবে, নিচে না নেমে হাত ভূমির সমান্তরালে যায় যেহেতু) তার বোলিং হাতটা চলে যেত শরীরের পেছনে। অর্থাৎ, শরীরের সাপেক্ষে হাতের অবস্থানটা হতো একদম বিপ্রতীপ। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেত দুইয়ের যে সংযোগস্থল, মেরুদণ্ডে। ‘ল্যাটেরাল টুইস্টিং’ হতো শিরদাঁড়া বরাবর। 

Image credit: Jio Cinema

ফাস্ট বোলারদের যত ধরনের চোট দেখা যায়, তার মধ্যে পিঠের চোটই সবচেয়ে কমন। আর বায়োমেকানিক্স বলে, মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙার জন্য ল্যাটেরাল টুইস্টিং বহুলাংশে দায়ী। ক্যারিয়ার লম্বা করতে চাইলে, পিঠের ইনজুরি এড়াতে চাইলে ফাস্ট বোলারদের তাই এই মোচড় এড়িয়ে চলতেই হবে। 

কিন্তু, মালিঙ্গার বোলিং অ্যাকশন আর শরীরের গঠনটাই এমন ছিল যে, ল্যাটেরাল টুইস্টিং এড়াতে চাইলে বোলিংটাই আমূল বদলে ফেলতে হতো। কিন্তু মালিঙ্গা চাননি সেটা। মালিঙ্গার টেস্ট ক্যারিয়ার যে লম্বা হলো না, অনেক বেছে বেছে খেললেন জীবনের শেষ দিকে, সেটার পেছনে পিঠের ইনজুরির বড় ভূমিকা।

মালিঙ্গার করা ভুল থেকে পাথিরানা যে শিক্ষাটা নিয়েছেন, তিনি ল্যাটেরাল টুইস্টিংটা এড়িয়ে চলতে চাইছেন তার ব্যাকফুট ল্যান্ডিংয়ে। পাথিরানার ল্যান্ডিংটা হচ্ছে মিড উইকেটের দিকে। আর ব্যাকফুটটাকে ঘোরাচ্ছেন না, বরং পায়ের পাতার একটা পাশ তুলে ধরছেন। ব্যাটারের নড়াচড়ার দিকে লক্ষ্য রাখার কোনো ইচ্ছাও তার নেই, যে কারণে ব্যাকফুট কন্ট্যাক্টে তার চোখ-মাথাও তাক করা মিড উইকেটের দিকে। যে মোচড়ের কথা বলা হচ্ছিল মালিঙ্গার ক্ষেত্রে, সেটা তার নেই।

Image credit: Jio Cinema

মালিঙ্গার সঙ্গে পাথিরানার পার্থক্য রয়েছে ফ্রন্টফুট কন্ট্যাক্টেও। ব্যাকফুট কন্ট্যাক্টেই মালিঙ্গা ব্যাটারের দিকে তাকিয়ে থাকতেন বলে শরীর ঘোরানোর (সামনের পা যে মুহূর্তে ক্রিজে পড়ছে) কোনো দরকার ছিল না তার, যে কারণে তার শরীরটা ফ্রন্ট-ফুট কন্ট্যাক্টে তার সামনের কাঁধ এগোত ওপর থেকে নিচে। আর পাথিরানা ব্যাকফুট কন্ট্যাক্টে তাকাচ্ছেন মিড উইকেটের দিকে, যে কারণে ফ্রন্টফুট কন্ট্যাক্টে তার শরীর ঘোরানোর প্রয়োজন পড়ছে ব্যাটারের দিকে – যা মোটেও মালিঙ্গার মতো ওপর-নিচে নয়।

Image credit: Jio Cinema

বোলিংয়ের পুরো প্রক্রিয়াটাই ডমিনো ইফেক্টের মতো। প্রক্রিয়ার শুরুতে যা করা হচ্ছে, শেষটা হবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখিয়ে। ব্যাকফুট কন্ট্যাক্টে ল্যাটেরাল টুইস্টিং হওয়ার কারণে ফ্রন্টফুট কন্ট্যাক্টে এসে মালিঙ্গার শরীরটা হেলে পড়ত বাঁয়ে – যাতে করে চোটে পড়ার সম্ভাবনা তো বাড়ছেই, ভরবেগটা পুরোপুরি ব্যাটারের দিকে যাচ্ছে না বলের গতিও কমে যায় কিছুটা।

Image credit: Jio Cinema

কিন্তু, পাথিরানার অ্যাকশনে তাকিয়ে দেখুন। বল ছাড়ার সময় শরীরের কাঠামোটা একদম সরলরেখায়, হাত আড়াআড়ি না ঘুরিয়ে ঘোরাতে পারছেন প্রায় সরলরেখায়। যে কারণে মালিঙ্গার চেয়ে লম্বা হওয়া সত্ত্বেও বল ছাড়তে পারছেন অনেক নিচ থেকে।

এতটুকু বলে থামলেন আপনি। প্রশ্ন ছুটে এলো অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই, এত নিচ থেকে বল ছাড়ার সুবিধা কী?

প্রথম সুবিধাটা অবশ্যই বৈচিত্র‍্য। ক্রিকেট যেহেতু খুব দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানোর খেলা, ব্যাটিংটা অনেকটা মাসল মেমোরি-নির্ভর। চিরাচরিত বোলিং অ্যাকশনে বল ছাড়লে ব্যাটারদের জন্য খেলা তাই সহজ, মন দ্রুত পড়ে নিতে পারে বলের লাইন, লেংথ, গতি। কিন্তু, সাধারণের চেয়ে একটু আলাদা কিছু করলেই দ্বিধা তৈরি হয় ব্যাটারদের মনে, ৪০০ মিলি সেকেন্ডে প্রতিক্রিয়া দেখানোর খেলায় এই দোলাচলটা বড় ভয়ংকর।

এমনিতে গড়পড়তা ডানহাতি ফাস্ট বোলাররা বল ছাড়েন মিডল স্টাম্পের চেয়ে ৪৬ সেন্টিমিটার ডান থেকে। ব্যাটাররা অভ্যস্ত সেদিকে তাকিয়েই। কিন্তু পাথিরানার বেলায় তাদের তাকাতে হচ্ছে লেগ স্টাম্পেরও বাইরে, এবং নিচে। এই বৈচিত্র‍্যের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই তো ভীষণ কঠিন।

মালিঙ্গা নিচ থেকে বল করতেন, মালিঙ্গা আরও নিচে। Image credit: Jio Cinema

নিচু পাল্লায় বল ছাড়ার কারণে বল বাউন্সও করে কম, আর কম বাউন্সের ডেলিভারিতে ছক্কা মারা কঠিন, এ কথা বলেন সবাই। এখনকার আমলের লেগ স্পিনাররা পেছনের পা বাঁকিয়ে বলটা নিচ থেকে ছাড়তেই চেষ্টা করেন তাই। পাথিরানাকে যে ছয় মারা কঠিন, পরিসংখ্যান ঘেঁটে প্রমাণটা বের করলেন আপনার সহচরই। এবারের আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ম্যাচের আগ পর্যন্ত মাত্র ৫টা ছয় হজম করেছেন তিনি, সংখ্যাটা যুগ্মভাবে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন, পাথিরানা তার বেশিরভাগ বলই করেছেন ডেথ ওভারে। ইনিংসের ওই পর্যায়ে কমপক্ষে ৫০ বল করেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে তার চেয়ে কম ছক্কা খাননি আর কেউ।

এরকম ডিসকাস থ্রোয়ের মতো বল ছাড়েন দেখে ফাস্ট বোলিংয়ের বিজ্ঞানটাও উল্টে যায় তার ক্ষেত্রে। সাধারণত ফাস্ট বোলারদের বলের ওপর কাজ করে ব্যাকস্পিন। কিন্তু, পাথিরানার বলে ‘ম্যাগনাস এফেক্ট’-এর কারণে কাজ করছে সাইড স্পিন, অনেকটা স্পিনারদের মতো। যে কারণে স্পিনারদের মতোই বলে বাড়তি ড্রিফট পান তিনি।

ব্যাকস্পিন না থাকার কারণে তার দ্রুতগতির ইয়র্কারগুলো ডিপও করে শেষ মুহূর্তে। মানে, মনে হয় যেন বাতাসে ভাসতে থাকা বলটা হুট করেই পড়ে গেল মাটিতে। আপনার এই ব্যাখ্যাটা সহজেই ধরে গেল অনূর্ধ্ব-১৩ যুবার মাথায়। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে নেহাল ওয়েদারার উইকেটটা দেখে তারও নাকি মনে হচ্ছিল, ‘বলটা ব্যাট এড়িয়ে চলে গেল আচমকাই।’  

যে যুগের ক্রিকেটে ছক্কা মারতে জানাটাই শেষ কথা, সেখানে একজন বোলারকে ছয় মারা যাচ্ছে না, মুগ্ধ হওয়ার জন্য এটুকুই ছিল যথেষ্ট। কিন্তু, তার বোলিংয়ে যে এত গুণ, জেনেটেনে পাথিরানার বিরাট ভক্তই হয়ে গেলেন সেই তেরো বছর বয়সী ক্রিকেট-পোকা। সামনের বিশ্বকাপে ‘মাথিশা’ নামাঙ্কিত একটা জার্সিও নাকি চাই তার।

সামনের দিনগুলোও নাকি কেবলই পাথিরানার।

This article is in Bangla language. This article is a biomechanical analysis on Pathirana and Malinga's bowling action. Necessary images are attached inside.

Featured image © Rajasthan Royals

Related Articles