Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিদায়, পেলে…

“একদিন আমরা নিশ্চয়ই একসাথে ফুটবল খেলবো, ঐ দূর আকাশে।”

২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর, দিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুর পরে এই কথাটাই বলেছিলেন এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো পেলে। ঠিক ৭৬৪ দিন পরে তিনিও পৃথিবী ছাড়লেন। ফুটবলের সবচেয়ে বড় নক্ষত্রকে নিজেদের মধ্যে পেয়ে দূর আকাশে হয়তো আজ আনন্দের বন্যা বইছে, হয়তো তাকে স্বাগত জানাতে ফুটবল হাতে মাঠে নেমে গেছেন স্বয়ং দিয়েগো ম্যারাডোনাই, কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠে, মর্ত্যের ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া।

Image Source: Getty Images

নৈপুণ্যে-অর্জনে-অবদানে-সম্মানে একজন খেলোয়াড় অনেক উঁচুতে উঠতে পারেন। মাইকেল জর্ডান আর মোহাম্মদ আলীকে তো যেমন যথাক্রমে বাস্কেটবল আর বক্সিংয়ের সর্বকালের অবিসংবাদিত সেরা খেলোয়াড় হিসেবে মেনে নেওয়া হয়, কিন্তু তাঁরাও কি পেরেছিলেন অ্যাথলেট পেলেকে ছাড়িয়ে যেতে? পেলেকে কি আদৌ ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব? সেই পেলেকে, কখনো কখনো যিনি ছাড়িয়ে গেছেন ফুটবল খেলাটাকেই!

তিনটা বিশ্বকাপ জয়, ব্রাজিলের জার্সিতে সর্বোচ্চ ৭৭টা গোল, পুরো ক্যারিয়ারে ৯২টা হ্যাটট্রিক, সাত শতাধিক স্বীকৃত গোল, আরও খুঁটিনাটি অজস্র ফুটবলীয় রেকর্ডের কথা বাদ রাখলাম, ফুটবল খেলাটাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পেছনে যে অবদান, তাতে তাঁর সমকক্ষ কে আছেন? বিভিন্ন সময়ে অনেক খেলোয়াড়ই পৃথিবীতে আসেন, যারা পুরো একটা প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করেন। কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখিয়ে ফুটবলের নেশায় বুঁদ করে রাখার সুযোগ কয়জনের কাছে আসে, আর কয়জনই বা সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেন! পেলে তো সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন এখানেই। শুধু নিজের উত্তরসূরীদের না, পেলে বিশ্বাসটা ছড়িয়ে দিয়েছেন পূর্বসূরীদের মাঝেও। ‘মারাকানাজো’র পর ক্রন্দনরত বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে দশ বছরের পেলে বলেছিলেন, “কেঁদো না বাবা, দেখো একদিন ঐ বিশ্বকাপটা ঠিকই এনে দেব আমি”।

কথা রেখেছিলেন পেলে। আট বছর পর পেলের হাত ধরেই প্রথম বিশ্বকাপের স্বাদ পেয়েছিল ব্রাজিল।  

Image Source: Getty Images

ঐ এক অর্জনেই থামলেন না পেলে। ’৬২ এর বিশ্বকাপের পুরো সময়ে মাঠে থাকতে পারেননি চোটের কারণে, তবুও ব্রাজিলের ঐ বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর নামের পাশে বিশ্বজয়ের মেডেল যুক্ত হয়েছে আরেকটি। ’৬৬-তে পারেননি বিশ্বকাপ জেতাতে, পেরেছেন ’৭০-এ। স্বীকৃত পর্যায়ে চর্মগোলককে পায়ে ছুঁয়েছেন, এমন মানুষদের মধ্যে একমাত্র পেলেই খেলোয়াড় হিসেবে জিতেছেন তিনটা বিশ্বকাপ। ফেরেঙ্ক পুসকাস হয়তো তাই বলেছিলেন,

“সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হচ্ছেন আলফ্রেডো ডি স্টেফেনো। আমি পেলেকে এই তালিকার বাইরে রাখছি। কারণ তিনি এসবের উর্ধ্বে।”

– ফেরেঙ্ক পুসকাস, সাবেক খেলোয়াড়, হাঙ্গেরি ফুটবল দল

আগেই বলেছি, এই গোল, হ্যাটট্রিক, বিশ্বকাপ, পরিসংখ্যান, এই শব্দগুলোর সামর্থ্য নেই পেলের মহত্বকে ব্যাখ্যা করার। অন্য কোনো ফুটবলারের সাথে পেলের পরিসংখ্যানের তুলনা করে হয়তো খুব সহজেই ‘সর্বকালের সেরা’র বিতর্কের সমাপ্তি টানা যায়, কিন্তু এই যে পেলেকে দেখার জন্য নাইজেরিয়ার চলমান গৃহযুদ্ধে ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়েছিল, এইটা অন্য কোনো ফুটবলারের সাথে ঘটেছে? ফুটবলার পেলে তো ছাপিয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলকেই, বিশ্ব দরবারে ফুটবলকে তুলে ধরেছেন ভালোবাসা আর শান্তি ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে।

মাত্র ষোল বছর বয়সে সান্তোসের মূল দলে যোগদানের পরে ব্রাজিলের পেশাদার লীগে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার অর্জন করেছিলেন পেলে। আর এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্সের পর ব্রাজিল সরকার তাঁকে ঘোষণা করে ‘জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ইউরোপীয় দলগুলো পেলেকে দলে ভেড়াতে চাইলেও সরকারের অনুরোধে তাঁর আর যাওয়া হয়নি। ফুটবলের বাইরে পেলের চরিত্রের মানবিক দিকটা ছিল অত্যন্ত প্রখর। ব্রাজিলের দরিদ্র শিশুদের সাহায্যার্থে খেলোয়াড়ি জীবনেই ফাউন্ডেশন করেছিলেন তিনি, খেলা ছাড়ার পরে কখনো হয়েছেন ইউনিসেফের বিশেষ দূত, কখনো জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত। ১৯৯৫ থেকে ’৯৮ এর মধ্যে ছিলেন ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রীও। এই পেলের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০০১ সালে ব্রাজিলে কার্যকর করা হয়েছে ‘পেলে ল’ নামক একটি আইন, ব্রাজিল ফুটবলে দুর্নীতির বিচারের জন্য। ১৯৯৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনে বিংশ শতাব্দীর ১০০ জন মানুষের তালিকায়ও স্থান পান পেলে।

পেলে-পরবর্তী যুগের সেরা তারকা যারা, দিয়েগো ম্যারাডোনা, মিশেল প্লাতিনি, ইয়োহান ক্রুইফ, রোনালদো নাজারিও, রোনালদিনহো, জিনেদিন জিদান, লিওনেল মেসি বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরা যে পরিমাণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, তাঁর ভিত্তিটাই গড়ে দিয়েছিলেন পেলে। বলা হয়ে থাকে, আপনি দুনিয়ার যে প্রান্তেই যান না কেন, যীশু খ্রিষ্ট আর কোকাকোলার মতোই সেই প্রান্তের মানুষ আরেকটা বিষয়ের সাথে পরিচিত, ‘পেলে’।

Image Source: Getty Images

পেলের মতো কিংবদন্তিদের দৈহিক মৃত্যু হয়, কিন্তু আত্মিক মৃত্যু হয় না। পেলে বেঁচে থাকবেন তাঁর ফুটবলীয় রেকর্ডে, পেলে বেঁচে থাকবেন নেইমার-ভিনিসিয়াসদের মাঝে, পেলে বেঁচে থাকবেন দর্শক-সমর্থকদের হৃদয়ে। পেলে বেঁচে থাকবেন ফুটবল পায়ে দৌড়ানো ব্রাজিলের ছোট্ট শিশুটার স্বপ্নে, পেলে বেঁচে থাকবেন সদ্য গোঁফ গজানো কিশোরের বিশ্বাসে, পেলে বেঁচে থাকবেন প্রবীণের ভরসায়। পেলে বেঁচে থাকবেন ফুটবলপ্রেমীদের ভালোবাসায়।

আর এই সবকিছুর জন্য ফুটবলের এই অবিসংবাদিত সম্রাটকে বিদায় নয়, ধন্যবাদ জানাতে হয়।

ধন্যবাদ, পেলে।

This article is in Bangla language. It is about the obituary of Pele, the greatest footballer of all time from Brazil.

Featured Image: Getty Images

Related Articles