Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ব্যক্তিগত সেরা পারফরমেন্স

আকরাম খানের নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফির শিরোপা নিজেদের ঘরে তুলে নিয়ে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। সেখান থেকে শুরু। এরপর আস্তে আস্তে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল একের পর এক সাফল্য পেতে শুরু করে। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেয় বাংলাদেশ। এরপরের বছরেই টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়ে যায় টাইগাররা। মাত্র তিন বছর আগে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। অনেকেই কানাঘুষো করছিল, খুব তাড়াহুড়ো হয়ে গেলো না! হ্যাঁ, টেস্ট ক্রিকেটের জন্য বাংলাদেশ তখন পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত ছিলোনা। টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের গুছিয়ে নিতে বাংলাদেশের অনেক সময় লেগেছিলো। প্রথম জয় পেতে পাঁচ বছর এবং দ্বিতীয় জয় পেতে নয় বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। সর্বোপরি, টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়াতে বাংলাদেশের ক্রিকেটে মঙ্গল বয়ে এসেছে।

টেস্ট ক্রিকেটে না হোক, লিমিটেড ওভারের ক্রিকেটে ঠিকই বাংলাদেশ সফলতার মুখ দেখেছিল। বর্তমানে টেস্ট ক্রিকেটেও অনেকটা নিজেদের গুছিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ১০০টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। যার মধ্যে নয়টিতে জয় তুলে নেওয়ার পাশাপাশি ১৫টি ম্যাচ ড্র করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। আজকের লেখার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের সেরা ব্যাটিং পারফরমেন্স। ম্যাচের পরিস্থিতি এবং প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা বিবেচনা করে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের খেলা উল্লেখযোগ্য ইনিংসগুলোকে নিয়ে সাজানো থাকবে এই লেখা।

আমিনুল ইসলাম১৪৫ বনাম ভারত

টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে ভারতের বিপক্ষে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বাংলাদেশ কতটা পরিপক্ব সেটা পরিমাণ করার প্রথম সুযোগ আসে ১০শে নভেম্বর, ২০০০ সালে। নাঈমুর রহমান দুর্জয় টস ভাগ্যে জয়লাভ করে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। দলীয় ৪৪ রানে দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরার পর ক্রিজে আসেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। পুরোদস্তর টেস্ট মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন তিনি। কে বলবে, এটি ছিলো বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিন? আর আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।

ভারতের বিপক্ষে ১৪৫ রানের ইনিংস খেলে দর্শকদের অভিনন্দনের জবাব দিচ্ছেন বুলবুল; Source – Cricketers101.com

ভারতের বিপক্ষে প্রথম দিনশেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছয় উইকেটে ২৩৯ রান। আমিনুল ইসলাম ব্যাট করছিলেন ৭০* রানে। দ্বিতীয় দিনে তিনি ঠাণ্ডা মাথায় অভিষেক টেস্টে শতক তুলে নেন এবং বাংলাদেশকে শুভসূচনা এনে দেন। শেষপর্যন্ত ৩৮০ বলে ১৪৫ রান করে দলের নবম ব্যাটসম্যান হিসাবে সাজঘরের পথ ধরেন আমিনুল ইসলাম। তার শতকের উপর ভর করে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে সমানে সমানে লড়াই করার পরেও দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়।

মোহাম্মদ আশরাফুল১১৪ বনাম শ্রীলঙ্কা

২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের ছয় তারিখে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। এই ম্যাচ দিয়ে মাত্র ১৭ বৎসর ৬১ দিন বয়সে আশরাফুলের টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে। নিজের অভিষেক ম্যাচ খেলেন শ্রীলঙ্কার মাটিতে চামিন্দা ভাস, মুত্তিয়া মুরালিধরনের মতো বোলারদের বিপক্ষে। কলোম্বোতে টসে জিতে বাংলাদেশকে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। মুরালিধরন এবং ভাসের বোলিং তোপের মুখে পড়ে মাত্র ৯০ রানে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায়। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন সাত নাম্বারে ব্যাট করতে নামা আশরাফুল। জবাবে জয়াসুরিয়া, আতাপাত্তু এবং জয়াবর্ধনের ধ্বংসাত্মক ব্যাটিংয়ের উপর ভর করে পাঁচ উইকেটে ৫৫৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। পাঁচ উইকেটের মধ্যে দুটিই ছিল স্বেচ্ছায় আউট। আতাপাত্তু ২০১ এবং জয়াবর্ধনে ১৫০ রান করে রিটায়ার্ড আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন।

প্রথম ইনিংসে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করার সুবাদে সাত নাম্বার থেকে উপরে উঠিয়ে ছয় নাম্বারে ব্যাট করতে পাঠানো হয় আশরাফুলকে। আশরাফুল যখন ক্রিজে আসেন, তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ চার উইকেটে ৮১ রান! সেখান থেকে আমিনুল ইসলাম এবং নাঈমুর রহমানের সাথে জুটি বেঁধে নিজের প্রথম টেস্ট শতক তুলে নেন মোহাম্মদ আশরাফুল। মাত্র ১৭ বৎসর ৬১ দিন বয়সে টেস্ট শতক হাঁকিয়ে সবচেয়ে কমবয়সী ক্রিকেটার হিসাবে টেস্ট শতক হাঁকানোর কীর্তি গড়েন আশরাফুল। তিনি পাকিস্তানের মুশতাক মোহাম্মদের ১৭ বৎসর ৭৮ দিন বয়সে করা শতকের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েন, যা এখন পর্যন্ত অক্ষত। ২১২ বলে ১৬ চারের সাহায্যে ১১৪ রান করার সুবাদে বাংলাদেশ ইনিংস পরাজয়ে পরাজিত হলেও মুরালিধরনের সাথে যৌথভাবে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন আশরাফুল।

জাভেদ ওমর১১৯ বনাম পাকিস্তান

২০০৩ সালের ২৭শে আগস্ট পাকিস্তানের পেশোয়ারে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। এটি তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল। শোয়েব আখতার তখন আগুনের গোলার মতো বল ছুড়তেন। উদীয়মান উমর গুল এবং লেগি দীনেশ কানেরিয়াকে নিয়ে গঠিত পাকিস্তানের বোলিং লাইনআপ বেশ শক্তিশালী ছিল। বাংলাদেশের অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। সুজনের সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল, সেটা প্রমাণ করেন জাভেদ ওমর এবং হাবিবুল বাশার। হান্নান সরকার মাত্র ছয় রান করে দলীয় ১৩ রানে সাজঘরে ফিরে গেলেও প্রথম দিনশেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল দুই উইকেটে ২৪০ রান। হাবিবুল বাশার ৯৭ রান করে ফিরে গেলেও জাভেদ ওমর ৯৬* রানে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেন তিনি।

জাভেদ ওমর; Source – Deshakalyan Chowdhury

জাভেদ ওমর যখন সাজঘরে ফেরেন, তখন বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে তিন উইকেটে ৩১০ রান সূর্যের আলোতে চিকমিক করছিলো। সেখান থেকে মাত্র ৩৬১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিলো টাইগাররা, মাত্র ৯৬ রানেই গুটিয়ে যায় তারা। প্রথম ইনিংসে জাভেদ ওমর আদর্শ টেস্ট মেজাজে ব্যাট করে ৩৫৭ বলে ১১৯ রান করেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের চিরাচরিত সমস্যা হলো, এক ইনিংসে খুব বাজে ব্যাটিং করে ম্যাচ হাত ছাড়া করা। পেশোয়ারেও শেষপর্যন্ত সেটাই হয়েছিলো। অলোক কাপালির হ্যাট্রিকের সুবাদে প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়ার পরেও ম্যাচটি নয় উইকেটের বড় ব্যাবধানে পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ।

খালেদ মাসুদ পাইলট১০৩* বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ

২০০৪ সালের মে মাসের ২৮ তারিখে সেন্ট লুসিয়ায় শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মুখোমুখি হয় সফরকারী বাংলাদেশ। এই টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যান শতক হাঁকিয়েছিলেন। তার মধ্যে খালেদ মাসুদ পাইলটের শতকটি ছিল সময়োপযোগী। ম্যাচ বাঁচাতে পাইলট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ব্রায়ান লারার নেতৃত্বে ক্রিস গেইল, সারওয়ান, চন্দরপলদের নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপ বেশ শক্তিশালী ছিলো। এমতাবস্থায় টসে জিতে ফিল্ডিং করার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেননি অধিনায়ক হাবিবুল বাশার। ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই হান্নান সরকার কোনো রান না করে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলে শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে দলকে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান অধিনায়ক বাশার। তার ১১৩ রান এবং নয় নাম্বারে ব্যাট করতে নামা মোহাম্মদ রফিকের ১১১ রানের উপর ভর করে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রান সংগ্রহ করে।

খালেদ মাসুদ পাইলট; Source – Tom Shaw

ইতিপূর্বে বেশ কয়েকটি টেস্ট ম্যাচে এমন ঘটনা ঘটেছে, বাংলাদেশ এক ইনিংসে ভালো করলে তো অপর ইনিংস মুখ থুবড়ে পড়েন। এই ম্যাচেও এমন শঙ্কা তৈরি হয়েছিলো। প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৭৯ রানে ছয় উইকেট এবং ১২৩ রানে সাত উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলো বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন খালেদ মাসুদ। তার ২৮১ বলে ১০৩* রানের অনবদ্য ইনিংসের সুবাদে বাংলাদেশ নয় উইকেটে ২৭১ রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করে। শেষপর্যন্ত ম্যাচটি অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়। তৎকালীন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ ড্র করা বাংলাদেশের জন্য অঘোষিত জয়ের সমান।

মোহাম্মদ আশরাফুল১৫৮* বনাম ভারত

২০০৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর চট্টগ্রামের এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে সিরিজের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন। রাহুল দ্রাবিড় এবং গৌতম গম্ভীরের শতকের উপর ভর করে ভারত প্রথম ইনিংসে ৫৪০ রান সংগ্রহ করে। জবাবে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়াতে থাকে বাংলাদেশ। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে যান মোহাম্মদ আশরাফুল। আফতাব আহমেদ এবং খালেদ মাসুদের সমর্থনে বাংলাদেশকে প্রায় ফলো-অনের হাত থেকে রক্ষা করেই দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষরক্ষা আর হলো না, একপ্রান্ত আগলে রাখলেও অপরপ্রান্তে পর্যাপ্ত সঙ্গীর অভাবে শেষপর্যন্ত ১৫৮* রানে অপরাজিত থাকলেন। তার এই ইনিংসটি তৎকালীন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের সেরা ব্যক্তিগত ইনিংস ছিল।

ভারতের বিপক্ষে শতক হাঁকানোর পর উদযাপন করছেন আশরাফুল; Source – Espn Cricinfo

মোহাম্মদ আশরাফুল ১৯৪ বলে সাজানো ১৫৮* রানের ইনিংসে বেশকিছু দৃষ্টিনন্দন শট খেলেছিলেন। মাত্র ২০ বৎসর বয়সী আশরাফুলের প্রতিটি শটে আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। তিনি ব্যাট হাতে কতটা প্রতিভাধর ব্যাটসম্যান ছিলেন, সেটা তার এই ইনিংসটিকে দেখেই উপলব্ধি করা যায়। বাংলাদেশ শেষপর্যন্ত টেস্ট ম্যাচটি ইনিংস ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলো। তবুও আশরাফুলকে ম্যাচসেরার পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হলো। কতটা মানসম্পন্ন ব্যাটিং করেছিলেন, সেটা এই পুরস্কারেই স্পষ্ট।

হাবিবুল বাশার৯৪ বনাম জিম্বাবুয়ে

২০০৫ সালের ৬ই জানুয়ারি চট্টগ্রামের এম.এ আজিজ স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি অন্যসব ম্যাচের মতো সাধারণ ছিলো না। কারণ এই ম্যাচেই বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো জয়লাভ করে। বাংলাদেশের অধিনায়ক হাবিবুল বাশার টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার নাফিস ইকবাল এবং জাভেদ ওমর উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৯১ রান। জাভেদ ওমর ৩৩ রান এবং নাফিস ইকবাল ৫৬ রান করে সাজঘরে ফিরে গেলে দলের হাল ধরেন হাবিবুল বাশার। তিনি আশরাফুল এবং রাজিন সালেহের সাথে জুটি গড়ে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান। ‘মিস্টার ফিফটি’ নামে পরিচিত হাবিবুল বাশার এই ম্যাচেও মাত্র ছয় রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন। তার ১২৪ বলে ১৪ চারে সাজানো ৯৪ রানের ইনিংসটি প্রথম দিনের খেলা শেষ হওয়া মাত্র তিন ওভার আগে ইতি ঘটে।

হাবিবুল বাশার সুমন; Source – Espn Cricinfo

হাবিবুল বাশারের বিদায়ের পরেও বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড সচল ছিলো। রাজিন সালেহের ৮৯ রান, মোহাম্মদ রফিকের ৬৯, খালেদ মাসুদের ৪৯ এবং মাশরাফির ৪৮ রানের উপর ভর বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৪৮৮ রান সংগ্রহ করে। প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহ জমা করার প্রধান ভূমিকা পালন করেন হাবিবুল বাশার। দ্রুত দুইটি উইকেট হারানোর পর ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব তিনিই পালন করেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও দলীয় সর্বোচ্চ ৫৫ রান করেন হাবিবুল বাশার। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ ২২৬ রানে জিম্বাবুয়েকে পরাজিত করে নিজেদের প্রথম টেস্ট জয় তুলে নেয়।

নাফিস ইকবাল১২১ বনাম জিম্বাবুয়ে

দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ নিজেদের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম জয় তুলে নিয়েছিলো। সিরিজের শেষ ও দ্বিতীয় টেস্টে হার এড়াতে পারলেই প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয়ের গৌরব অর্জন করবে বাংলাদেশ। এই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের শেষ টেস্ট খেলতে নামে ২০০৪ সালের জানুয়ারির ১৪ তারিখে। টসে জিতে জিম্বাবুয়ে আগে ব্যাটিং করে ২৯৮ রান সংগ্রহ করে। বাংলাদেশের হয়ে একাই সাত উইকেট শিকার করেন এনামুল হক জুনিয়র। জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২১১ রানে গুটিয়ে গেলে জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানের লিড পায়। দ্বিতীয় দফা ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক তাতেন্দা তাইবুর ১৫৩ রানের ইনিংসের উপর ভর জিম্বাবুয়ে ২৮৬ রান সংগ্রহ করে। প্রথম ইনিংসের লিড সহ বাংলাদেশের সামনে জয়ের জন্য ৩৭৪ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। টেস্ট ক্রিকেটের চতুর্থ ইনিংসে এই রান তাড়া করে ম্যাচ জেতা বেশ কষ্টসাধ্য। ম্যাচ ড্র করতে হলেও বাংলাদেশকে খেলতে হবে দেড়’শ ওভার।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচানো শতক হাঁকানোর পর নাফিস ইকবাল ; Source – Farjana K. Godhuly

শুরু থেকেই দুই ওপেনার নাফিস ইকবাল এবং জাভেদ ওমর রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাট চালিয়েছিলেন। এই দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ৮৩ ওভার ব্যাট করে ১৩৩ রান যোগ করেছিলেন। জাভেদ ওমর ২৫৮ বলে ৪৩ রান করে ফিরে গেলেও নাফিস ইকবাল একপ্রান্ত আগলে রেখে নিজের প্রথম টেস্ট শতক তুলে নিয়েছিলেন। তার ৩৫৫ বলে ১২১ রানের ইনিংসটির ইতি ঘটে পানিঙ্গারার বলে টেইলরের হাতে ক্যাচ দেওয়ার মাধ্যমে। ততক্ষণে বাংলাদেশ ১১৬ ওভার খেলে ফেলেছিল। নাফিস ইকবাল ফিরে গেলেও শেষপর্যন্ত অপরাজিত থেকে ম্যাচ ড্র করে ফেরেন রাজিন সালেহ এবং খালেদ মাসুদ।

শাহরিয়ার নাফিস১৩৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া

২০০৬ সালের ৯ই এপ্রিল ফতুল্লার নারায়ণঞ্জ ওসমানী স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ব্রেট লি, দুর্দান্ত ফর্মে থাকা শেন ওয়ার্ন, স্টুয়ার্ট ম্যাকগেইল, স্টুয়ার্ট ক্লার্কের পাশাপাশি অভিজ্ঞ গিলেস্পিকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং লাইনআপ ছিলো বেশ শক্তিশালী। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন হাবিবুল বাশার। প্রতিপক্ষের বাঘা বাঘা বোলারদের নাম দেখে ভড়কে যাননি তরুণ শাহরিয়ার নাফিস। উল্টো তাদের বেধড়ক পিটিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন দিনের শুরু থেকেই। হাবিবুল বাশার এবং রাজিন সালেহও যোগ্য সমর্থন দিয়েছিলেন শাহরিয়ার নাফিসকে। তৎকালীন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী শেন ওয়ার্ন কোনো পাত্তাই পাননি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের সামনে। বিশেষ করে শাহরিয়ার নাফিস বেশ সাবলীলভাবে তাকে মোকাবেলা করেছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শতক হাঁকানোর পথে শাহরিয়ার নাফিসের একটি শট; Source – Farjana K. Godhuly

শাহরিয়ার নাফিস যখন সাজঘরে ফেরেন তখন তার নামের পাশে ১৮৯ বলে ১৯টি চারের সাহায্যে ১৩৮ রান। প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশ পাঁচ উইকেটে ৩৫৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন। শেন ওয়ার্ন না পারলেও আরেক লেগ স্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগেইল বাংলাদেশের আট ব্যাটসম্যানকে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। যার দরুন প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত শুরুর পরেও বাংলাদেশ ৪২৭ রানে থেমে যায়। শেষপর্যন্ত অ্যাডাম গিলক্রিস্ট এবং রিকি পন্টিংয়ের অতিমানবীয় দুটি ইনিংসের কাছে বাংলাদেশ জয়ের খুব কাছে গিয়েও খালি হাতে ফিরে এসেছিলো।

মাশরাফি বিন মর্তুজা৭৯ বনাম ভারত

২০০৭ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার পরপরই বাংলাদেশ সফরে আসে ভারত। তিন ম্যাচের একদিনের সিরিজ ২-০তে জয়ের পর দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলে ২০০৭ সালের ১৮ই মে। চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে মাশরাফির করা প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ওয়াসিম জাফর। এরপর দীনেশ কার্তিক এবং রাহুল দ্রাবিড়ের অর্ধশতকের পর শচীন সৌরভের শত রানের ইনিংসের উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো ভারত। তা আর হতে দেননি মাশরাফি, তিনি চার উইকেট এবং শাহাদাৎ হোসেন তিন উইকেট শিকার করলে ভারত আট উইকেটে ৩৮৭ রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করে। কাগজে-কলমে আট উইকেট দেখালেও মূলত নয়জন ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলো। অনিল কুম্বলে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন।

অর্ধশতক হাঁকানোর পর উচ্ছ্বসিত মাশরাফি ; Source -AFP

অনেকেই বলতে পারেন। আরও কত লম্বা ইনিংস রয়েছে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের। সেসব থাকতে মাশরাফির ৭৯ রানের ইনিংসটির গুরুত্ব কী! মাশরাফির এই ইনিংসের কল্যাণেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ভারতের টেস্ট ম্যাচ ড্র করতে সক্ষম হয়েছিলো। চট্টগ্রামের বৃষ্টি বিঘ্নিত টেস্ট ম্যাচে ভারতের ৩৮৭ রানের জবাবে মাত্র ১২২ রানে সাত উইকেট এবং ১৪৯ রানে আট উইকেট হারিয়ে বেশ চাপের মুখে ছিলো বাংলাদেশ। ফলো-অনে পড়ার শঙ্কাও উঁকি দিচ্ছিলো। সেখান থেকে শাহাদাৎ হোসেনকে সাথে নিয়ে ফলো-অন এড়ানোর পাশাপাশি ৯১ বলে ৭৯ রানের সময়োপযোগী ইনিংস খেলেন মাশরাফি। যার দরুন শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচটি দাপটের সাথেই ড্র করেছিলো। বল হাতে পাঁচ উইকেট এবং ৭৯ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলার সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার মাশরাফির হাতেই ওঠে।

তামিম ইকবাল১২৮ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ

বাংলাদেশ তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেসময় খবর আসলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মূল দল বোর্ডের সাথে ঝামেলার কারণে সিরিজ বয়কট করেছে। তখন বাধ্য হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় দলকে দিয়ে সিরিজটি চালিয়ে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। যেকোনো দল তাদের নিজস্ব মাটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে ভয়ংকর। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাকআপ প্লেয়ারও সমীহ করার মতোই ছিলো। যা প্রথম টেস্টের প্রথম দিনেই টের পেয়েছিলো বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের ৯ই জুলাই কিংস্টনে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাচটি তিনটি কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিদেশের মাটিতে প্রথম জয়, তামিম ইকবাল প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন এই ম্যাচে এবং মাশরাফির সাদা পোশাকে শেষ ম্যাচ। নতুন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার এটি প্রথম পরীক্ষা ছিল। ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া দলের হাল ধরে দলীয় সর্বোচ্চ ৩৯ রান করেন অধিনায়ক মাশরাফি। এতে করে প্রথম ইনিংসে স্কোরবোর্ডে সম্মানজনক সংগ্রহ দাঁড় করাতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। পরে বোলিং করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন মাশরাফি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম শতক হাঁকানোর পর উদযাপন করছেন তামিম ইকবাল ; Source – wideweb.com

বাংলাদেশকে ২৩৮ রানে গুটিয়ে দিয়ে প্রথম ইনিংসে ৬৯ রানের লিড নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের সামনে তখন কঠিন পরীক্ষা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আনকোরা দলের সাথে ম্যাচ হারার উপক্রম। এমতাবস্থায় ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান তামিম ইকবাল। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে হার্ড হিটার ব্যাটসম্যানের তকমা আঁটা ছিল তার নামের পাশে। সেই তামিমই নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে। তামিম ইকবাল যখন ২৪৩ বলে ১২৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন, তখন বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে রান সংখ্যা ছিল দুই উইকেটে ২২৮! সেখান থেকে মাত্র ৩৪৫ রানে গুটিয়ে গেলেও বোলারদের কল্যাণে ম্যাচটি ৯৫ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ।

সাকিব আল হাসান৯৬* বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংস্টন টেস্টে জয়লাভ করে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে থেকে গ্রেনাডায় খেলতে নামে টাইগাররা। প্রথম টেস্টে মাশরাফির ইনজুরির দরুন এই ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বল হাতে দুই ইনিংসে আট উইকেট শিকারের পর চাপের মুখে ৯৬* রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেছিলেন।

৯৬* রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ছেন সাকিব ; Source – Associated Press

ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ২১৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৬৭ রান তুলতেই চার ব্যাটসম্যানের উইকেট খুইয়ে বসে। এমতাবস্থায় ঘাবড়ে না গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমণ করেন সাকিব আল হাসান। তার ৯৭ বলে ১৩টি চার ও একটি ছয়ের সাহায্যে সাজানো ৯৬* রানের ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ চার উইকেটে জয়লাভ করে। এতে করে প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় করে দেশে ফিরে টাইগাররা।

তামিম ইকবাল ১৫১ বনাম ভারত

২০১০ সালের জানুয়ারির ২৪ তারিখে মিরপুর শের-এ বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম টেস্ট জিতে নিয়ে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে ছিল ভারত। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। রিয়াদের ৯৬* রানের উপর ভর করে কোনোরকম সম্মানজনক সংগ্রহ দাঁড় করার স্কোরবোর্ডে।

ভারতের বিপক্ষে শতক হাঁকানোর পর ড্রেসিংরুমের দিকে ব্যাট দেখাচ্ছেন তামিম ইকবাল ; Source – Associated Press

২০০৭ সালের বিশ্বকাপের ম্যাচ থেকেই জহির খান এবং তামিম ইকবালের মাঝে দ্বৈরথ সৃষ্টি হয়। সেই দ্বৈরথে প্রথম দেখায় জয় পান জহির খান। প্রথম ইনিংসে তামিম ইকবাল রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মকব্যাট করতে থাকেন তামিম ইকবাল। দলীয় ১৯ রানের মাথায় ইমরুল কায়েস ফিরে গেলেও জুনায়েদ সিদ্দিকির সাথে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ২০০ রান। দিনের শেষভাগে ৫৫ রান করা জুনায়েদ ফেরার পর নাইটওয়াচম্যান হিসাবে শাহাদাৎ হোসেন ব্যাট করতে আসেন। জুটি ভাঙার পর তামিম ইকবালও বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকলেন না। এবারও তাকে সাজঘরের পথ দেখান জহির খান। আউট হওয়ার আগে ভারতীয় বোলারদের তুলোধোনা করে ১৮৩ বলে ১৮টি চার এবং তিনটি ছয়ের সাহায্যে ১৫১ রান করেন। এই অসাধারণ ইনিংস খেলার পরেও বাংলাদেশের লজ্জাজনক হার এড়াতে পারেননি তিনি। একপর্যায়ে বাংলাদেশের রান ছিল তিন উইকেটে ২৯০! সেখান থেকে মাত্র ২২ রান যোগ করতেই শেষ সাত উইকেট হারায় বাংলাদেশ। যার ফলে জয়ের জন্য ভারতের মাত্র দুই রান দরকার ছিল।

তামিম ইকবাল১০৩ বনাম ইংল্যান্ড

তামিমের এই শতকটির মাহাত্ম্য একটু বেশিই। যা তার উদযাপনেই বোঝা যায়। কারণ শতকটি যে ক্রিকেটের মাতৃভূমি লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে করেছেন তামিম। প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই প্রিয় প্রতিপক্ষ থাকে, সেদিক বিবেচনায় তামিমের প্রিয় প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। তাছাড়া ঐ পঞ্জিকাবর্ষে তামিমের সময়টা বেশ দারুণ কেটেছে। ২০১০ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশ সফরে আসা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন তামিম। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ইংল্যান্ড সফরে যান তিনি। লর্ডস টেস্টের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের করা ৫০৫ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে তামিমের হাত ধরে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। মাত্র ৬২ বলে আট চারের সাহায্যে ৫৫ রান করার পর দুর্ভাগ্যক্রমে রান আউটের ফাঁদে পড়েন তামিম ইকবাল। ৫৫ রান করলে তো আর লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম উঠে না। তাই তামিমকে শতক করেই নাম লেখাতে হবে। প্রথম ইনিংসে ২৮২ রানে অল আউট হয়ে বাংলাদেশ ফলো-অনে পড়ে।

লর্ডস টেস্টে শতক হাঁকানোর পর তামিমকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন ইমরুল কায়েস ; Source – Getty Images

ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে আবারও শুভসূচনা এনে দেন তামিম ইকবাল। এবার তার সঙ্গী ইমরুল কায়েসও উইকেটে থিতু হয়ে যান। এই দুজন উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১৮৫ রান! তার মধ্যে তামিম ইকবাল ১০০ বলে ১৫টি চার এবং দুটি ছয়ের মারে ১০৩ রান করে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম লেখান। টপ অর্ডারদের ব্যাটে বাংলাদেশ লর্ডস টেস্ট থেকে ভালো কিছু আশা করতে না করতেই মিডল অর্ডারদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় আরও একটি বড় পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ নিতে হলো বাংলাদেশকে। সিরিজে তামিম ইকবালের দুর্দান্ত ফর্ম বজায় ছিলো। লর্ডস টেস্টে শতকের পর ম্যানচেস্টারেও শতক হাঁকিয়েছিলেন তিনি।

সাকিব আল হাসান১৪৪ বনাম পাকিস্তান

১৭ই ডিসেম্বর ২০১১ সাল। মিরপুর টেস্টে টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। বৃষ্টির কারণে উইকেট ভেজা থাকার কারণে বোলাররা বাড়তি সুবিধা পাবে, এমনটা ভেবেই অধিনায়কের আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত। তার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, সেটা প্রমাণ করেন দুই পেসার উমর গুল এবং আইজাজ চিমা। মাত্র ৪৩ রান তুলতেই বাংলাদেশের চার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে। বড় ধরনের ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ার হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেন ছয় নাম্বারে ব্যাট করতে নামা সাকিব আল হাসান। শাহরিয়ার নাফিসের সাথে পঞ্চম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১৮০ রান। ৯৭ রান করা শাহরিয়ার নাফিস প্রথম দিনের শেষভাগে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেও সাকিব ১০৮* রান করে অপরাজিত থেকে দিনের খেলা শেষ করেন।

শেষ বিকালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পূরণ করার পর সাকিবের শান্তশিষ্ট উদযাপন ; Source – CricketWorld.com

দ্বিতীয় দিনেও বেশ সাবলীলভাবে ব্যাট করছিলেন সাকিব। তার ২৫২ বলে ১৪৪ রানের ইনিংসটির সমাপ্তি ঘটে অধিনায়ক মুশফিকের সাথে ভুলা বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে। এরপর দ্রুতই বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের লেজ গুটিয়ে যায়। বল হাতেও সাকিব আল হাসান সফল ছিলেন এই ম্যাচে। প্রথম ইনিংসে ছয় উইকেট সহ ম্যাচে শিকার করেছেন সাত উইকেট। যার সুবাদে বাংলাদেশ ম্যাচ হারলেও সাকিব আল হাসান ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন।

মুশফিকুর রহিম২০০ বনাম শ্রীলঙ্কা

ঐতিহাসিক গল টেস্ট। এই টেস্টের কথা এখনও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দাগ কেটে আছে। এই ম্যাচে শুধুমাত্র মুশফিকুরের ইনিংসটিকে এককভাবে বেস্ট পারফরমেন্স বলা ঠিক হবে না। কারণ এই ম্যাচে আশরাফুলও ১৯০ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন। গলে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। সাঙ্গাকারা, থিরিমান্নে এবং চান্দিমালের শতকের উপর ভর করে চার উইকেটে ৫৭০ রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করেন অধিনায়ক ম্যাথিউস। শ্রীলঙ্কার পাহাড়সম রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৭৭ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফলো-অনে পড়ার আশঙ্কা জাগিয়ে তুলেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ান মোহাম্মদ আশরাফুল এবং মুশফিকুর রহিম। এই দুজন যখন ক্রিজে একসাথে হন, তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ চার উইকেটে ১৭৭ রান। মোহাম্মদ আশরাফুল যখন ১৯০ রান করে সাজঘরে ফেরেন তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ পাঁচ উইকেটে ৪৪৪ রান! মাত্র ১০ রানের জন্য দেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান হিসাবে নাম লিখাতে ব্যর্থ হলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।

বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে ডাবল সেঞ্চুরি করার পর মুশফিকুর রহিমের উদযাপন ; Source – ABC

আশরাফুল না পারলেও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ঠিকই ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। মুশফিক ৩২১ বলে ২২টি চার এবং একটি ছয়ের সাহায্যে ঠিক ২০০ রান করে সাজঘরে ফেরেন। শেষ দিকে নাসিরের ১০০ রানের ইনিংসের সুবাদে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে লিড নেয়। বাংলাদেশ ১৯৬ ওভার ব্যাট করে ৬৩৮ রান করে! শেষপর্যন্ত অনেক প্রাপ্তির গল টেস্ট অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়।

মমিনুল হক১৮১ বনাম নিউজিল্যান্ড

‘লিটল মাস্টার’, ‘পকেট ডায়নামো’, ‘ছোট মরিচ’ সহ অনেক নামেই তাকে ডাকা শুরু হয়ে গিয়েছিল। অভিষেকের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে তার ব্যাটে রান। সে আর কেউ নন, মমিনুল হক। দেখতে যত শান্তশিষ্ট ব্যাট হাতে ঠিক ততটাই ভয়ানক। ২০১৩ সালের ৯ই অক্টোবর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টে আগে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ড স্কোরবোর্ডে ৪৬৯ রান জমা করে। জবাব দিতে নেমে মাত্র আট রানে দুই ওপেনারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপরের দৃশ্যপট জুড়ে শুধু মমিনুল হকের নাম। মার্শাল আইয়ুব, সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিমের সাথে জুটি বেঁধে ক্যারিয়ারের প্রথম দ্বিশতকের এগিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ান কোরি অ্যান্ডারসন। তার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে আটকা পড়ার আগে মমিনুল হক ২৭৪ বলে ২৭টি চারের মারে ১৮১ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন। মমিনুল হক যখন আউট হন, তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল পাঁচ উইকেটে ৩০১ রান। যার মধ্যে মমিনুলেরই ১৮১ রান রান!

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শতক হাঁকানোর পর উদযাপন করছেন মমিনুল হক ; Source – Wisden India

শেষপর্যন্ত ম্যাচটি অমীমাংসিতভাবে শেষ হলেও আরও একটি কারণে বাংলাদেশের কাছে ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই ম্যাচেই সোহাগ গাজী শতক হাঁকানোর পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে হ্যাট্রিক সহ ছয় উইকেট শিকার করেন। প্রথম ইনিংসে দুই উইকেট সহ ম্যাচে আট উইকেট এবং শতক হাঁকানোর সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কার তার হাতেই ওঠে।

সাকিব আল হাসান১৩৭ বনাম জিম্বাবুয়ে

বাংলাদেশের জয় পাওয়া টেস্ট ম্যাচগুলোতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস সাকিব আল হাসানের। ২০১৪ সালের ৩ই নভেম্বর খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনি ১৩৭ রান করেন। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের জয় পেতে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছিলো। কিন্তু খুলনা টেস্টে সাকিবের ব্যাটে বলে অসাধারণ নৈপুণ্যে কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছিল।

শতকের পাশাপাশি ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছিলেন সাকিব আল হাসান ; Source – Clickittefaq.com

সাকিব আল হাসান শুধু ব্যাট হাতেই নন, বল হাতেও এই ম্যাচে উজ্জ্বল ছিলেন। শতকের পর ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করে ইয়ান বোথাম এবং ইমরান খানদের পাশে নিজের নাম লিখিয়েছিলেন। তার অনবদ্য পারফরমেন্সে জিম্বাবুয়েকে উড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশ তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ তে নিজেদের করে নিয়েছিলো।

ইমরুল কায়েস১৩০ বনাম জিম্বাবুয়ে

জিম্বাবুয়ের সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্ট ম্যাচে চট্টগ্রামে জয়ের আশায় মাঠে নামে টাইগাররা। এই ম্যাচে জয় পেলেই জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করার গৌরব অর্জন করবে বাংলাদেশ। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েসের জোড়া শতকে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। এই দুজন উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে যোগ করেন ২২৪ রান। তামিম ইকবাল করেন ১০৯ রান করে ফিরে গেলেও ইমরুল কায়েস ১৩০ রান করে থামেন।

ইমরুল কায়েস ; Source – Cricket Australia

এই ম্যাচে আরও একজন ব্যাটসম্যান শতক হাঁকিয়েছিলেন। ঘরের ছেলে মমিনুল হক দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩১* রান করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন। বেস্ট পারফরমেন্সের তালিকায় ইমরুল কায়েসের নামের আগে তার নাম থাকার কথা। কিন্তু ইমরুল কায়েস শুরু করেছিলেন শূন্য থেকে। ম্যাচের ফলাফলে তার শতকের মাহাত্ম্য অন্য দুটি শতকের একটু বেশিই।

তামিম ইকবাল২০৬ বনাম পাকিস্তান

ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেওয়ার পর খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষে বাংলাদেশ ২৯৬ রানে পিছিয়ে। এমতাবস্থায় ম্যাচ বাঁচানোটাই কঠিন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশের সামনে। বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস কষলেন ভিন্ন সমীকরণ। শুরু থেকেই পাকিস্তানি বোলারদের চাপে রেখে রানের চাকা সচল রেখেছিলেন। ম্যাচের তৃতীয় দিনশেষে বাংলাদেশ ছিল কোণঠাসা। সেখান থেকে চতুর্থ দিনশেষে বেশ শক্ত অবস্থানে তারা। যার পুরো কৃতিত্বটা তামিম এবং ইমরুলের।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করার পর উচ্ছ্বসিত তামিম ইকবাল ; Source – Espn Cricinfo

উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে রেকর্ড ৩১২ রান যোগ করেছিলেন এই দুজন। ইমরুল কায়েস ২৪০ বলে ১৬টি চার এবং তিনটি ছয়ের সাহায্যে ১৫০ রান করে ফিরে গেলেও তামিম ইকবাল দ্রুত দ্বিশতকের দিকে ছুটছিলেন। ১৮২ রান থেকে টানা দুই বলে দুই ছয় হাঁকিয়ে পৌঁছে গেলেন ১৯৪ রানে, ইয়াসির শাহের করা ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে আবারও স্ট্রাইকে আসেন তিনি। কোনো দেরি না করেই জুনায়েদ খানের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছয় হাঁকিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন তামিম ইকবাল। শেষপর্যন্ত তার দুর্দান্ত ইনিংসটি থামে ২০৬ রানে। মাত্র ২৭৮ বলে ১৭টি চার এবং সাতটি ছয়ের মারে এই রান করেন তিনি। যার সুবাদে শেষপর্যন্ত বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ম্যাচ ড্র করে বাংলাদেশ।

তামিম ইকবাল১০৪ বনাম ইংল্যান্ড

চট্টগ্রামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচ হাতের মুঠো থেকে ফসকে যায় বাংলাদেশের। মিরপুরে দ্বিতীয় শেষ টেস্টে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে মাত এক রানে ফিরে যান উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস। প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিয়ে নিজের প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বেশ ভালোভাবেই রানের চাকা সচল রেখেছিলেন তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে মমিনুল হকের সাথে ১৭০ রান যোগ করার পর মঈন আলীর বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন তামিম ইকবাল। তামিম ইকবাল ১৪৭ বলে ১২টি চারের মারে ১০৪ রান করে যখন সাজঘরে ফেরেন তখন দলীয় সংগ্রহ দুই উইকেটে ১৭১ রান! সেখান থেকে মাত্র ২২০ রানের মধ্য গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ৮ম টেস্ট শতক হাঁকানোর পর উদযাপন করছেন তামিম ইকবাল ; Source – Twitter

দ্বিতীয় ইনিংসেও গুরুত্বপূর্ণ ৪০ রান করেন তামিম। শেষপর্যন্ত মিরপুর টেস্টে মিরাজের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে ঐতিহাসিক জয় পায় বাংলাদেশ। লো স্কোরিং ম্যাচের দুই ইনিংসেই তামিম ইকবাল রান পেয়েছিলেন। অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার ভিড়ে তামিমের রানগুলো ছিল মহামূল্যবান।

সাকিব আল হাসান২১৭ বনাম নিউজিল্যান্ড

২০১৭ সালের শুরুতে ওয়েলিংটনে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিপক্ষের পেসারদের চেয়ে এখানকার বৈরী আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নেওয়া বাংলাদেশের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল। দলের অনেক ব্যাটসম্যানের মধ্যে মধ্যে ভেতর ভেতর চাপা ভয় কাজ করছিলো। সকল ভয়কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তামিম ইকবাল। নিউজিল্যান্ডের পেসারদের তুলোধুনা করে মাত্র ৫০ বলে ১১টি চারের মারে ৫৬ রান করেছিলেন। তামিমের পর মমিনুল হকও ফিফটি করেন। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের আসল ভেলকি দেখিয়েছেন সাকিব আল হাসান এবং মুশফিকুর রহিম। এই দুজন যখন ক্রিজে একসাথ হন, তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ চার উইকেটে ১৬০ রান। তাদের জুটি যখন ভাঙে, তখন বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে পাঁচ উইকেটে ৫১৯ রান! কেউ হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি এমন কিছু একটা হতে যাচ্ছে। সাকিব এবং মুশফিক পঞ্চম উইকেট জুটিতে রেকর্ড ৩৫৯ রান যোগ করে থামলেন। মুশফিকুর রহিম ২৬০ বলে ১৫৯ রান করে আউট হওয়ার পর এই জুটি ভাঙে।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর সাকিবের সাদামাটা উদযাপন ; Source – সংগৃহীত

মুশফিক আউট হওয়ার পর সাকিব বেশিক্ষণ ক্রিজে না টিকলেও কাজের কাজটুকু আগেই করে দিয়ে যান। আউট হওয়ার আগে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি খেলে যান। তিনি ২৭৬ বলে ৩১টি চারের মারে করেন ২১৭ রান। ম্যাচের আগে যেমন কেউ ভাবেনি বাংলাদেশ আট উইকেটে ৫৯৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করবে। ঠিক এমনটাও কেউ ভাবেনি যে, এতো রান করে ইনিংস ঘোষণা করার পরেও বাংলাদেশ ম্যাচটি হেরে ফিরবে। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো সূচনা পেয়েছিলো বাংলাদেশ। ইমরুল এবং মুশফিকের ইনজুরির পাশাপাশি পঞ্চম দিনের সাতসকালে সাকিব কাণ্ডজ্ঞানহীন শট খেলে আউট হওয়ার পর ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ।

মুশফিকুর রহিম১২৭ বনাম ভারত

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের পথচলা শুরু করেছিলো প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিপক্ষে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের ১৬ বছরের পথচলায় একবারও বাংলাদেশকে নিজেদের দেশে টেস্ট খেলতে আমন্ত্রণ জানায়নি ভারত। অবশেষে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাত্র একটি টেস্ট খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানায় ভারত। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারতীয় টেস্ট দল নিজেদের মাটিতে অপরাজেয়। সেই সাথে জাদেজা, অশ্বিন ছিলেম টেস্ট ক্রিকেটের বর্তমান সেরা দুই বোলার হিসেবে। ব্যাটিং লাইনআপ বরাবরই ভারতের স্ট্রং। তাই টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে দু’বার ভাবেনি ভারত। শুরুতে রাহুলের উইকেট হারালেও বিরাটের ডাবল সেঞ্চুরি এবং মুরালি বিজয় ও ঋদিমান সাহার সেঞ্চুরিতে ছয় উইকেটে ৬৮৭ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। ভারতের বিশাল সংগ্রহের জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানেরা দ্রুত ফিরে যান। মিডল অর্ডারে আবারও প্রতিরোধ গড়েন সাকিব এবং মুশফিক। এই দুজন পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১০৫ রান যোগ করেন। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা সাকিব আল হাসান ১০৩ বলে ১৪টি চারের সাহায্যে ৮২ রান করে অশ্বিনের বলে তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে উমেশ যাদবের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন।

ভারতের বিপক্ষে শতক হাঁকানোর উচ্ছ্বসিত মুশফিকুর রহিম ; Source – Associated Press

সাকিব আল হাসান ফিরে গেলেও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম বেশ দক্ষতার সাথে ভারতীয় স্পিনারদের মোকাবেলা করছিলেন। মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে আরও একটি বড় জুটি গড়েছিলেন। দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসাবে আউট হওয়ার আগে ২৬২ বলে ১৬টি চার এবং দুটি ছয়ের সাহায্যে ১২৭ রান করেন। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিং করার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও বেশ ভালোভাবেই নিজের ইনিংস শুরু করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই অশ্বিনের বলে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন। শেষপর্যন্ত বাংলাদেশ ড্র-এর সম্ভাবনা জাগিয়েও বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলো বাংলাদেশ।

সাকিব আল হাসান১১৬ বনাম শ্রীলঙ্কা

বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি ছিলো গৌরবের। প্রায় দেড় যুগ ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলা বাংলাদেশ এই ম্যাচ দিয়ে নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচ খেলে। কলোম্বো টেস্টে আগে ব্যাট করে দীনেশ চান্দিমালের ১৩৮ রানের ইনিংসের উপর ভর করে শ্রীলঙ্কা ৩৩৮ রান সংগ্রহ করে। জবাব দিতে নেমে শুরুটা বেশ ভালোভাবেই করেছিলেন দুই ওপেনার তামিম এবং সৌম্য। তাদের দেখানো পথেই হাঁটছিলেন ইমরুল ও সাব্বির। কিন্তু হঠাৎ করেই খেই হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। দুই উইকেটে ১৯২ রান থেকে চার উইকেটে ১৯২ রান। হ্যাটট্রিক বল মোকাবেলা করতে আসা সাকিব আল হাসান ছিলেন বেশ আগ্রাসী মেজাজে। দিনের যখন মাত্র কয়েকটি ওভার বাকি, সেসময় তিনি খেললেন আট বলে ১৮* রানের ইনিংস। তার মধ্যে একবার ক্যাচ দিয়েও রক্ষা পেয়ে যান। হঠাৎ সাকিবের কী হলো! এই উত্তরটা খুঁজতেই সবাই ব্যস্ত ছিল।

বাংলাদেশের শততম টেস্টে সাকিব শত রানের ইনিংস খেললেন ; Source – সংগৃহীত

কোনোমতে ঐদিনের খেলা শেষ করে নতুন সকালে নতুনভাবে শুরু করেন সাকিব। প্রত্যেকটা বলের দোষ-গুণ বিবেচনা করে খেলছিলেন। ভিন্নরূপের সাকিব আল হাসান শেষপর্যন্ত ১৫৯ বলে ১১৬ রান করলেন দেশের শততম টেস্ট ম্যাচে। সাকিবের শতকের পাশাপাশি, অভিষিক্ত মোসাদ্দেকের ৭৫ রানের ইনিংসের উপর ভর করে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে লিড নেয়। সাকিব আল হাসান বল হাতেও সফল ছিলেন। চার উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে বড় রানের লিড নিতে দেননি। নিজেদের শততম টেস্টে ১৯১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবালের সময়োপযোগী ৮২ রানের উপর ভর করে বাংলাদেশ চার উইকেটের জয় তুলে নেয়।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ব্যক্তিগত ইনিংসগুলোর তালিকা করতে গেলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে হবে। কারণ প্রত্যেকের ইনিংসগুলোই নিজ নিজ জায়গা থেকে সেরা। যেমন, আবুল হাসান রাজুর অভিষেক টেস্টে দশ নাম্বারে নেমে শতক। মোহাম্মদ আশরাফুলের ১৯০ রানের ইনিংসটিকে আলাদা উল্লেখ করা হলেও ইমরুল কায়েসের ১৫০ রানের ইনিংসটিও কম গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না।

ফিচার ইমেজ: Philip Brown

Related Articles