Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রিয়াল-বার্সা দুই দলেরই তারকা যারা

ফুটবল ফ্যানমাত্রই জানেন রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার বিখ্যাত দ্বৈরথের কথা। চা-দোকান থেকে ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা- কোথাও শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে একসুরে আসতে পারেন না দুই ক্লাবের সমর্থকেরা। অথচ এমন কিছু তারকা খেলোয়াড় আছেন যারা এই চিরবৈরিতার বেড়াজাল ভেদ করে অপর ক্লাবে খেলার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। চলুন আজ এমনই কিছু তারকা খেলোয়াড়কে চিনে নেয়া যাক।

রোনালদো

রিয়াল ও বার্সা দুই দলের হয়েই পিচিচি ট্রফি জেতেন রোনালদো; Source: Quora

পিএসভি থেকে তরুণ রোনালদো বার্সেলোনায় এসেছিলেন সেই আমলের সেরা প্রতিভা হিসেবে। বার্সায় এসে মানিয়ে নিতে যেন একটুও সময় নিলেন না। সেই আমলের রেকর্ড ৪৭ গোল করে ‘ফিফা প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার’ জিতে নেন। কিন্তু চুক্তি জটিলতার সুযোগ নিয়ে ইন্টার মিলান রেকর্ড ট্রান্সফার ফি দিয়ে তাঁকে কিনে নেয়। ইতালিতে রোনালদো নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। মারাত্মক দুটি ইনজুরি থেকে ফিরে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতার পর রিয়াল প্রেসিডেন্ট পেরেজের শ্যেন-নজরে পড়েন। পেরেজ তখন গ্যালাকটিকো-১ গড়ছেন। রোনালদো যোগ দেন রিয়ালে। জিদান, ফিগো, রাউলদের পাশে নিয়ে দুটি লা লীগা জেতেন রিয়ালের হয়ে। দুই ক্লাবের হয়েই এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশী গোল করার জন্য পিচিচি ট্রফি জেতেন।

জর্জ হ্যাজি

‘রোমানিয়ান ম্যারাডোনা’ খ্যাত হ্যাজি; Source: maxresdefault

হ্যাজিকে বলা হতো ‘রোমানিয়ান ম্যারাডোনা’। বুখারেস্টের হয়ে তাঁর পারফর্মেন্সে মুগ্ধ হয়ে রিয়াল তাঁকে দলে ভেড়ায়। কিন্তু রিয়ালে এসে তাঁর গোলের জন্য সংগ্রাম শুরু হয়। রিয়াল অধ্যায়টা তিনি তাড়াতাড়িই শেষ করে দিয়ে ইতালিতে যান ব্রেশিয়ার হয়ে খেলতে। সেই ক্লাব হলো পরের মৌসুমে অবনমিত। দ্বিতীয় বিভাগেই খেললেন তিনি, দেখা যায় তাঁর সেই আগের ফর্ম। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে ভালো করার পর তৎকালীন বার্সা কোচ ক্রুয়েফ তাঁকে বার্সায় নিয়ে আসেন। কিন্তু ক্রুয়েফের বার্সাও তখন ডুবন্ত নৌকা। বার্সাতেও তাঁর ভাগ্য আর সুপ্রসন্ন হয়নি। সম্ভবত তিনিই এক অভাগা খেলোয়াড় যিনি রিয়াল-বার্সা দুই ক্লাবের হয়ে খেলেও কোনো লীগ জিততে পারেন নি!

বার্নড সুস্টার

বার্সা জার্সিতে সুস্টার; Source: These Football Times

সুস্টারকে ‘হিম্মতওয়ালা’ বলতেই হবে আপনার! ভাল মিডফিল্ডার ছিলেন তিনি। ১৯৮০ সালে বার্সায় যোগ দেন। আট বছর খেলেছেন বার্সায়, হয়ে ওঠেন বার্সার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কিছু ঝামেলার জন্য যোগ দিয়ে বসলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালে! আলোড়ন পড়ে গেল, তিনি বললেন তাঁর সিদ্ধান্তের সঠিক প্রমাণ অচিরেই দেখতে পাবেন সবাই। হলোও তাই। আট বছরে বার্সায় একটি লীগ জেতা সুস্টার রিয়ালে এসে টানা দুটি লীগ জিতে নেন দু’বছরেই। রিয়াল ফ্যানরা খুব খুশি হচ্ছেন? কিন্তু রিয়াল থেকে তিনি সরাসরি যোগ দেন রিয়ালের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এটলেটিকো মাদ্রিদে। সাহস আছে বৈকি! অবশ্য কোচ হিসেবে রিয়ালকে তিনি একটি লীগও জেতান পরবর্তীতে। সুস্টারের বার্সায় কাটানো ৮ বছরের চেয়ে রিয়ালে কাটানো সাড়ে তিন বছর ছিল ঢের বেশী ফলপ্রসূ।

লুইস এনরিকে

রিয়াল থেকে বার্সা ফ্যানদের কাছে অধিক জনপ্রিয় এনরিকে; Source: Sokkaa

রিয়ালের সুস্টারের জবাব হিসেবে বার্সা সহজেই এনরিকেকে দেখাতে পারে। এনরিকের শুরুটা ছিল রিয়ালের হয়ে। গেটাফে থেকে রিয়ালে আসেন সম্ভাবনাময় একজন প্লেয়ার হিসেবে। কিন্তু রিয়ালে কাটানো ৫ বছর তাঁর খুব একটা ভালো কাটেনি। দলে স্থায়ী হতে পারেননি কোনোবারই, একটি লীগ ও একটি লীগ কাপ জিতলেও তাতে তাঁর অবদান নিয়মিতদের মতো ছিল না। চুক্তি শেষে সরাসরি বার্সায় যোগ দেন। বার্সা তাঁর কাছে ছিল নিজেকে প্রমাণ করার জায়গা। ক্রুয়েফের অধীনে নিজেকে মেলে ধরেন, গোলস্কোরিং ভালো থাকায় বনে যান ফরোয়ার্ড।

বার্সায় আট বছর কাটান, ছিলেন অধিনায়কও; ক্লাসিকোতে রিয়ালের সাথে গোল করে উদ্দাম উদযাপন করেছেন। দুটি লীগ, দুটি লীগ কাপ সহ আরো ট্রফি জেতেন সেখানে। তিনি প্রায়ই বলতেন, রিয়ালে তিনি সঠিক মুল্যায়ন পেতেন না। বার্সার সমর্থকদের কাছে প্রিয় হয়ে ওঠা এনরিকে কোচ হিসেবেও দু’হাত দিয়ে ঢেলে দিয়েছেন বার্সাকে। প্রথম বছরে বার্সাকে ট্রেবল সহ পাঁচটি ট্রফি জেতান, পরের বছর আবার লীগ ও লীগ কাপ আর টালমাটাল এক মৌসুমে বিদায় নেওয়ার সময়ও জেতান লীগ কাপ।

মাইকেল লাউড্রপ

এক সময়কার সতীর্থের বিরুদ্ধে লাউড্রপ; Source: The Hard Tackle

জিদানের মতো বা কাছাকাছি স্কিলের কোনো খেলোয়াড়ের নাম বলতে বললে অনেকেই এখনো লাউড্রপের নাম বলে থাকেন। এই বিখ্যাত ডেনিশ যোগ দেন বার্সেলোনায়। ক্রুয়েফের বিখ্যাত ‘ড্রিম টিম’ এর অন্যতম প্রধান সদস্য ছিলেন তিনি। রোমারিওর সাথে গড়ে উঠে অদম্য এক জুটি। লাউড্রপ ছিলেন পরিপূর্ণ একজন মিডফিল্ডার। তাঁর আর রোমারিওর সেই বিখ্যাত জুটি বার্সাকে এনে দেয় টানা চারটি লীগ! অসাধারণ এই খেলোয়াড়ে মজে ছিলেন সব বার্সা ফ্যানই। কিন্তু ক্রুয়েফের সাথে ঝামেলা হওয়ায় রাগে বার্সা ছাড়েন তিনি। যোগ দেন রিয়ালে। রাগের বদলা ঠিকই নেন রিয়ালকে বেশ কয়েক বছর বার্সা-আধিপত্যের অবসান করানোর মধ্য দিয়ে, লীগ জিতিয়ে। তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা হলো, তিনি বার্সার হয়ে রিয়ালকে ৫-০ গোলে হারান, আবার রিয়ালের হয়েও বার্সাকে ৫-০ গোলে!

স্যামুয়েল ইতো

অনেকে জেনে আশ্চর্য হবেন যে ইতোর শুরুটা ছিল রিয়ালে; Source: foottheball.com

একটু খটকা লাগছে কি? ইতো তো বার্সার! হ্যাঁ, ইতোর অমরত্বপ্রাপ্তি বার্সাতেই, কিন্তু তাঁর শুরুটা হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদে। রিয়াল যুবদল থেকে খেলে আসা ইতো রিয়ালে ভালভাবে স্থায়ী হতেই পারেননি। তিন মৌসুমে তিনবারই ধারে খেলেছেন অন্য ক্লাবে, রিয়ালের হয়ে সাকুল্যে ৩ ম্যাচ! সেই ইতোকে বিক্রি করে দেয়া হয় মায়োর্কার কাছে। সেখানে ইতোর আসল রূপ দেখা যায়, হয়ে ওঠেন গোলমেশিন। বার্সার নজর যায় ইতোর দিকে, ইতো যোগ দেন বার্সায়। সেখানে ডেকো, রোনালদিনহোকে পাশে নিয়ে গড়ে তোলেন ভয়ঙ্কর এক আক্রমণভাগ। রাইকার্ডের অধীনে জেতেন দুটি লীগ। সবচেয়ে বড় কথা, ১৯৯৪ সালের পর বার্সাকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতান। তাঁর বার্সা ক্যারিয়ারে জেতা তিনটি লীগ ও দুটো চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সবগুলোতেই তাঁর ছিল অনন্য অবদান। দুই ফাইনালেই ছিল তাঁর গোল। খুব সংক্ষেপে বললে, ইতো বার্সা ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা একজন খেলোয়াড়।

লুইস ফিগো

একসময়কার বার্সা লিজেন্ড ফিগো হয়ে যান বার্সা ফ্যানদের চোখের বিষ; Source: Bleacher Report

লুইস ফিগো ছিলেন বার্সায় অনেকটা প্রবাদপ্রতিম এক ব্যক্তিত্ব। কাতালানরা তাকে ঘরের ছেলের মতোই ভাবতো। তিনি ছিলেন বার্সার প্রতীক। বার্সা সমর্থকরা তাঁকে প্রচন্ড ভালবাসতো। ওদিকে চার বছরের ব্যবধানে দুটো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ফেলেছে রিয়াল মাদ্রিদ। তখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সন্নিকটে রিয়ালে। যেহেতু দল সফল, তাই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লরেঞ্জোকেই ফেভারিট ভাবা হচ্ছিল। তাকে চ্যালেঞ্জ জানালেন স্পেনের অন্যতম সেরা ধনী ব্যবসায়ী ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। নবাগত পেরেজের প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি নির্বাচিত হলে ‘বার্সার প্রতীক’ ফিগোকে যেভাবেই হোক দলে আনবেন। এর জন্য ফিগোর এজেন্টের সাথে পেরেজের গোপনে চুক্তিও হলো। ফিগোর এজেন্ট ভেবেছিলেন পেরেজ ডাহা ফেল করবেন নির্বাচনে। তাই গোপন চুক্তি করে কিছু টাকাও নেন।

পেরেজের শর্ত ছিল, তিনি না জিতলে টাকা ফেরত চাইবেন না, কিন্তু জিতলে যেকোনো মূল্যে ফিগোকে এনে দিতেই হবে। এটা প্রকাশিত হলে স্পেনে তথা পুরো ফুটবল জগতে আলোড়ন পড়ে যায়। তীব্র বচসা চলতেই লাগল দু’দলের মাঝে। অনেকের সন্দেহ ছিল, পেরেজ আসলেই পারবেন কিনা। তখন পেরেজ ঘোষণা দিয়ে বসেন, তিনি নির্বাচিত হয়ে যদি ফিগোকে রিয়ালে না আনতে পারেন, তবে সারা বছর তিনি ৮৮,০০০ রিয়াল ফ্যানকে বিনা টিকিটে খেলা দেখাবেন মাঠে। পেরেজ জিতলেন সেই নির্বাচন, বহু কাহিনীর পর রেকর্ড ফি দিয়ে রিয়ালে নিয়ে আসলেন ফিগোকে। বার্সার হয়ে দুটি লীগ ও দুটি লীগ কাপ জিতে আসা ফিগো রিয়ালেও ছিলেন সমান সফল। রিয়ালকে দুটো লীগ জেতান তিনি। জেতেন তাঁর ক্যারিয়ারের আরাধ্য চ্যাম্পিয়ন্স লীগও। রিয়াল সমর্থকদের কাছে আদৃত হলেও বার্সা সমর্থকরা ক্ষমা করেনি তাঁকে। রিয়ালের হয়ে বার্সার একসময়কার প্রতীক যখন বার্সার মাঠে খেলতে আসেন, পুরো বার্সা স্টেডিয়াম যেন ফেটে পড়ে। স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে বড় করে ঝোলানো ছিলো ‘Pigo’, ‘Traitor’ এমন সব ব্যানার। ফিগো কর্নার নিতে যাওয়ার সময় তার দিকে সমানে লাইটার, আপেল, বোতল, কমলা এসব ছুঁড়ে মারতে থাকে দর্শকরা। সব ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে উঠে তাঁর দিকে ছুঁড়ে দেয়া একটি শুকরের কাটা মাথা। লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও একে রেখে দেয়া হয় সযত্নে। এই মাথাটিকে বার্সা ফ্যানরা তাদের দলের প্রতি বেইমানির প্রতীক হিসেবেই ভেবে থাকে।

ফিচার ইমেজ: YouTube 

Related Articles