প্রায়ই আমরা বিশেষ কিছু খেলোয়াড় ভুল সময়ে জন্ম নিয়েছেন বলে তাদের জন্য আফসোস করি। ভুল সময়ে জন্ম নেওয়া বলতে আসলে কী বুঝায়?
সমসাময়িক সময়ে একই পজিশনে যখন দুইজন ভিন্ন খেলোয়াড় নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে হাজির হন, তখনই মূলত এই কথাটা বেশি শোনা যায়। আসলে প্রতিটা পজিশনেরই তো আলাদা আলাদা গুরুত্ব আছে, তাই একই পজিশনে দুইজন অসাধারণ খেলোয়াড় থাকলে তাদের একসাথে খেলানো সম্ভব হয় না।
এই ভুল সময়ে জন্ম নেওয়ার কথাটা অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার লেগ স্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের জন্য। তার সামর্থ্য নিয়ে কারো মনে তেমন সংশয় নেই; যখনই সুযোগ পেয়েছেন, নিজের সেরা দিয়েছেন। কিন্তু সমসাময়িক সময়ে সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন থাকায় তিনি সেভাবে সুযোগটাই পাননি। ২০০৭ সালে ওয়ার্ন যখন অবসর নিলেন, তখন অবশ্য চাইলে কিছু বছর দলের মূল স্পিনার হিসেবে খেলতে পারতেন। কিন্তু ইনজুরির কারণে সেটাও আর হয়ে ওঠেনি। ক্রিকেটের অন্যতম অব্যবহৃত প্রতিভা হিসেবে ম্যাকগিলের নামটা অনেকেই আফসোসের সাথে স্মরণ করে থাকেন।
এই তালিকায় আরো একজন স্পিনার থাকতে পারতেন, তিনিও প্রথমদিকে দলে সুযোগ পাননি সর্বকালের আরেক সেরা স্পিনারের কারণে। তবে পরবর্তীতে সুযোগ পেয়ে সেটার শতভাগ সদ্ব্যবহার করে নিজেকে কিংবদন্তি হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তিনি শ্রীলঙ্কার বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ।
উত্তর-পূর্ব প্রদেশের কুরুঙ্গেলায় ১৯৭৮ সালের ১৯শে মার্চ জন্ম, পুরো নাম মুদিয়ানসেলাগে রঙ্গনা কির্থি বান্দারা হেরাথ। শৈশবে ছিলেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান, পরবর্তীতে পেসার হিসেবে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু উচ্চতায় খর্বাকৃতির হওয়ায় কোচের পরামর্শে পেস বোলিং ছেড়ে স্পিনে মনোযোগী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পেশাদার ক্যারিয়ার শুরুর আগে অফিসে কেরানির কাজও করেছেন, ১৯৯৬ সালে সব ছেড়ে শুধু ক্রিকেটেই নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
সুফল পেতে অবশ্য খুব বেশি সময় লাগেনি, ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গল টেস্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেক ঘটে হেরাথের। অজিদের বিপক্ষে চার উইকেট তুলে নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটা দারুণভাবে করেন হেরাথ। এক লাইন-লেংথে টানা বল করার ক্ষমতা সাথে পিচ থেকে টার্ন আদায় করার দক্ষতা - সব মিলিয়ে অর্থোডক্স বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে আদর্শ ছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের পরের দিকে ক্যারম বলেও হাত পাকা করেন তিনি।
কিন্তু শ্রীলঙ্কার পুরো বোলিং লাইনআপ তখন মুরালিকে কেন্দ্র করে সজ্জিত ছিল, তাই হেরাথের জায়গা পাকা হওয়ার কোনো উপায় তখন ছিল না। ঘরের মাঠে স্পিনিং ট্র্যাক বানালে যখন দুই স্পিনারের দরকার হতো, তখন মুরালিকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য হেরাথকে দলে রাখা হতো। হেরাথের মূল কাজ ছিল নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে প্রতিপক্ষের এক প্রান্ত আটকে রাখা, সেই কাজ অবশ্য তিনি বেশ ভালোভাবেই করতেন। তবে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় না থাকার কারণে তখন তার পরিসংখ্যান আহামরি কিছু ছিল না।
টেস্টে তো তাও ঘরের মাঠে সুযোগ পাচ্ছিলেন, কিন্তু ওয়ানডেতে সেই সুযোগটাও হেরাথের কপালে জুটছিল না। অবশেষে ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক ঘটে এই বাঁহাতি স্পিনারের। সেই বছর মোট পাঁচটি ওয়ানডেতে সুযোগ পান তিনি, এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি ম্যাচে ১০ ওভারে মাত্র ২৮ রান খরচায় তুলে নিয়েছিলেন ৩টি উইকেট। কিন্তু তখন ওয়ানডেতে মুরালির পর দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে উপুল চন্দনাই নির্বাচকদের দৃষ্টিতে এগিয়ে ছিলেন, তাই দীর্ঘদিন ওয়ানডে দলে আর সুযোগই পাননি হেরাথ।
এভাবে পার্শ্বনায়কের ভূমিকায় মাঝেমধ্যে দলে ডাক পেয়ে আবার কিছুদিন পর দলের বাইরে যাওয়ার চক্রেই ঘুরপাক খাচ্ছিলেন রঙ্গনা হেরাথ, সেই ঘুর্ণিপাকের মাঝে আহামরি কোনো পারফরম্যান্স তিনি দিতে পারছিলেন না। এরই মাঝে ২০০৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে গল টেস্টে মুরালির অনুপস্থিতিতে দলের মূল স্পিনার হিসেবে খেলার সুযোগ পান তিনি। আর সুযোগটা বেশ ভালোভাবে লুফে নেন তিনি, সেই টেস্টে পাকিস্তানকে মাত্র ১৬৮ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। হেরাথের বাঁহাতের ঘূর্ণিতে মাত্র ১১৭ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান, ১৫ রানে চার উইকেট তুলে নেওয়ায় ম্যাচসেরার পুরস্কারটিও জিতে নেন তিনি।
২০১০ সালের জুলাইয়ে গলে ভারতের বিপক্ষে খেলে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান মুত্তিয়া মুরালিধরন। মূলত মুরালির অবসরের মাধ্যমেই হেরাথের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়। পার্শ্বনায়কের ভূমিকায় দীর্ঘদিন থাকা এই স্পিনারকে তখনও মূল নায়কের ভূমিকায় আসার জন্য বেশ লড়াই করতে হয়েছে। মুরালির বিকল্প হিসেবে আরেক রহস্যময় স্পিনার অজন্থা মেন্ডিসই তখন অনেকের প্রথম পছন্দ ছিলেন, এছাড়া আরেক অফ স্পিনার সুরাজ রনদিভও তখন ভালো ফর্মে ছিলেন।
তবে এই দুজনের চেয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য খুব বেশি সময় হেরাথ নেননি। ২০১১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাকি বোলাররা অনুজ্জ্বল থাকলেও হেরাথ একাই তুলে নিয়েছিলেন ১৬ উইকেট। মূলত এই সিরিজের পরই শ্রীলঙ্কার টেস্ট দলে হেরাথের জায়গা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। শ্রীলঙ্কার নির্বাচকরা বুঝতে পারেন, অধারাবাহিক মেন্ডিস কিংবা রনদিভকে দিয়ে মুরালির অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়, একমাত্র হেরাথই পারবেন মুরালির অনুপস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার বোলিং লাইনআপকে নেতৃত্ব দিতে।
হেরাথের অনবদ্য বোলিংয়ে ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় শ্রীলঙ্কা, ডারবানের ওই টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনি একাই তুলে নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। টেস্টে এমন দারুণ পারফরম্যান্সের কারণে ওয়ানডে দলে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেতে থাকেন তিনি, ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতকে নিয়ে অনুষ্ঠেয় ত্রিদেশীয় সিরিজে বেশ ভালো পারফরম্যান্স উপহার দেন তিনি। ওই বছরের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গল টেস্টে ১২ উইকেট তুলে নিয়ে টেস্ট ক্রিকে্টে প্রথমবারের মতো এক ম্যাচে দশ উইকেট তুলে নেন হেরাথ। জুনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা, মুরালির অবসরের পর এটি ছিল তাদের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়। ১৫ উইকেট তুলে নিয়ে সেই সিরিজ জয়ে স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন হেরাথ।
২০১২ সালের অক্টোবরে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার প্রথম পছন্দের দুই স্পিনার ছিলেন অজন্তা মেন্ডিস ও আকিলা দনঞ্জয়া। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভালো রেকর্ড থাকায় সেমিফাইনালে দনঞ্জয়াকে বসিয়ে হেরাথকে সুযোগ দেওয়া হয়। মাত্র ২৫ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে লঙ্কানদের ফাইনালে ওঠার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। ফাইনালে অবশ্য দনঞ্জয়াকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য আবারও সাইডবেঞ্চে ফিরতে হয়েছিল হেরাথকে, স্যামুয়েলস তাণ্ডবে সেবার রানার্সআপ হয়ে আসর শেষ করেছিল লঙ্কানরা।
ঘরের মাঠে দুর্দান্ত পারফর্ম করলেও ঘরের বাইরে হেরাথের পারফরম্যান্স সেই তুলনায় কিছুটা অনুজ্জ্বল ছিল। আসলে হেরাথ যে ধরনের স্পিনার, সেখানে পিচ থেকে ন্যূনতম সহায়তা না পেলে তার পক্ষে কিছু করাটা দুরূহ। তবুও তিনি নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা করে গেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ডারবান টেস্টে নেওয়া ৯ উইকেট ছাড়াও অজিদের বিপক্ষে সিডনি টেস্টে নিয়েছিলেন সাত উইকেট।
২০১২ সালের মতো ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও হেরাথকে সাইডবেঞ্চে বসিয়ে রেখে একাদশ সাজাচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। অথচ মেন্ডিস ও সেনানায়েকে দুজনই ডানহাতি অফ স্পিনার হওয়ায় বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের দলে জায়গা পাওয়াটাই বেশি যৌক্তিক ছিল। সুপার টেনের প্রথম দুই ম্যাচ জেতায় এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তেমন কথাবার্তা হয়নি, কিন্তু গণ্ডগোল বাধে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর। ওই ম্যাচে অজন্তা মেন্ডিস বেধড়ক মার খাওয়ায় হেরাথকে দলে আনার দাবি জোরালো হয়। শেষ পর্যন্ত নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে অভিজ্ঞ এই স্পিনারকে একাদশে ফিরিয়ে আনে শ্রীলঙ্কা।
তবে এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১১৯ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা, তখন গ্রুপপর্ব থেকেই লঙ্কানদের বিদায়কে আসন্ন ফল বলে মনে হচ্ছিল। এমন ক্রান্তিলগ্নে দলকে বাঁচানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন হেরাথ। ৩.৩ ওভারে মাত্র ৩ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে একাই গুঁড়িয়ে দেন তিনি। নিশ্চিত হারা ম্যাচ এভাবে জিতে যাওয়ায় লঙ্কানদের আত্মবিশ্বাসের পারদটাও অনেক উঁচুতে উঠে যায়, শেষপর্যন্ত ওই আসরের শিরোপা জিতে টানা ফাইনাল হারার গেরো কাটায় লঙ্কানরা।
ওই বছরের আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে কলম্বো টেস্টের প্রথম ইনিংসে হেরাথ একাই তুলে নেন ৯ উইকেট, যা বাঁহাতি বোলারদের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ২২ উইকেট শিকার করে তিনি জিতে নেন সিরিজসেরার পুরস্কার।
২০১৫ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার স্পিন বিভাগের মূল অস্ত্র ছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। ইকোনমিক্যাল বোলিং করে দলের সেই আস্থার মর্যাদা বেশ ভালোভাবেই দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচে ইনজুরিতে পড়ায় মাঝপথেই দেশে ফিরে আসতে হয় তাকে। এ ম্যাচের মধ্য দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি। পরের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটকেও বিদায় জানান।
তবে টেস্ট ক্রিকেটে খেলাটা আরো কিছুদিন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শেষ দিকে এসেও তার পারফরম্যান্স ছকে তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি। ২০১৫ সালের গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার ১৯২ রানের লিড নিয়েছিল ভারত। খাদের কিনারা থেকে দলকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন দীনেশ চান্দিমাল ও রঙ্গনা হেরাথ। প্রথমজনের অনবদ্য এক সেঞ্চুরি ও দ্বিতীয়জন একাই সাত উইকেট তুলে নেওয়ায় ম্যাচটি শ্রীলঙ্কা জিতে নেয় ৬৩ রানে।
২০১৬ সালে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে শ্রীলঙ্কা, যার নেপথ্য কারিগর ছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজে একাই ২৩ উইকেট তুলে নিয়ে অজিদের একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এই সিরিজের গল টেস্টে দ্বিতীয় শ্রীলঙ্কার হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরের সিরিজে নিয়মিত অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও সহঅধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল ইনজুরিতে থাকায় প্রথমবারের মতো দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পান হেরাথ। এই সিরিজেও গড়েন আরেক রেকর্ড, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট উইকেট তুলে নিয়ে সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার বৃত্ত পূরণ করেন তিনি। তার নেতৃত্বে খুব সহজেই সেই সিরিজ জিতে নেয় লঙ্কানরা।
২০১৭ সালে আরব আমিরাতে গিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা, আর সেখানেও নেপথ্য নায়ক ছিলেন হেরাথ। বিশেষ করে প্রথম টেস্টে পাকিস্তানকে যখন মাত্র ১৩৬ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেওয়ার পরও হেরাথের বিধ্বংসী বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কা যেভাবে জয় তুলে নেয়, তা সত্যিই অভাবনীয় ছিল। এই সিরিজের পরপরই টেস্ট থেকে অবসর নেওয়ার চিন্তা করতে থাকেন তিনি। ২০১৭ সালে নিজের প্রিয় গল স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের মাধ্যমে ৩৯ বছর বয়সে ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন হেরাথ।
৯৩ টেস্ট খেলে ২৮.০৮ গড়ে ৪৩৩ উইকেট শিকার – যেকোনো বোলারের জন্যই ঈর্ষণীয় রেকর্ড। টেস্টে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটাও হেরাথের দখলে। টেস্টের এক ইনিংসে পাঁচ বা তার বেশি উইকেট নিয়েছেন ৩৪ বার, যার মধ্যে ১২টি ছিল চতুর্থ ইনিংসে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশিবার পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড তার দখলেই। তবে মুরালির ছায়ায় ক্যারিয়ারের প্রথম এগারো বছর না কাটালে রেকর্ডটা আরো বর্ণিল হতো, সেটা বলাই বাহুল্য। মুরালির সহযোগী হয়ে থাকার সময়ে ২২ টেস্ট খেলে ৩৭.৮৮ গড়ে নিয়েছিলেন ৭১ উইকেট, সেখানে মুরালির অবসরের পর ৭১ ম্যাচে ৩৬২ উইকেট নিয়েছেন মাত্র ২৬.১৫ গড়ে!
তার চেয়েও বড় কথা, মুরালির অবসরের পর একাই শ্রীলঙ্কার টেস্ট বোলিং লাইনআপকে টেনে নিয়ে গেছেন। দলে তেমন ভালো মানের পেসার না থাকায় অন্য প্রান্ত থেকে তেমন সহায়তা তিনি পাননি। সব প্রতিকূলতাকে ছাপিয়েও মুরালির অভাব পূরণে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিয়েছেন, দলকে এনে দিয়েছেন অসাধারণ কিছু জয়। ভুল সময়ে জন্ম নেওয়ার ব্যাপারে তো কারো হাত নেই, কিন্তু সেই ভুল সময়কে নিজের গুণে কীভাবে সঠিক সময়ে পরিণত করতে হয়, তার দৃষ্টান্ত হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন রঙ্গনা হেরাথ।
খেলাধুলার চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/
ক্রিকেট সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ
This article is in Bangla language. It's about a famous cricketer named Rangana Herath. Full name Herath Mudiyanselage Rangana Keerthi Bandara Herath, who is a former Sri Lankan cricketer who is known as one of the finest left arm spinner of cricket history. For references please check the hyperlinks inside the article.
Featured Image: ISHARA S. KODIKARA/AFP via Getty Images