Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রমডয়টার: ফুটবল মাঠের ছায়ামানব

ফুটবল মাঠজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় থাকে স্পেস বা ফাঁকা জায়গা, চাইলেও কোনো কোচ তাদের দলের রক্ষণের এসব ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে পারেন না। জমাট রক্ষণ বলতে আমরা যা বুঝি, সেটি মূলত প্রায় নিশ্ছিদ্র রক্ষণ, যেগুলোর ছিদ্রগুলো খুব যত্নের সাথে অন্য কোনোভাবে রক্ষা করা হয়।

সে কথা থাক। আপনি কি জানতেন, মাঠের এই ছিদ্র বা স্পেস ব্যবহার করে খেলে এমন একটি পজিশন আছে? জানলে ভালো, তবে যারা জানেন না, তারাও জেনে নিন যে আছে। এই পজিশনের নাম রমডয়টার, ফুটবল মাঠের স্পেস ব্যবহার করাই যার কাজ।

‘রমডয়টার’ একটি জার্মান শব্দ, এর অর্থ ‘স্পেস ব্যবহারকারী’ বা ‘ছিদ্রান্বেষী’। একটু ব্যাখ্যা করতে হলে, স্পেস ব্যবহার করা যার কাজ তাকেই বলা হয় রমডয়টার।এটি ফুটবলে একটি তুলনামূলক নতুন শব্দ, এটি প্রচলিত হয় ২০১৪ সালের দিকে, থমাস মুলারের খেলার স্টাইল বোঝানোর উদ্দেশ্যে।

থমাস মুলারকে নিয়ে একটা কথা বলা হয়,

‘যেখানে স্পেস, সেখানেই মুলার!’

থমাস মুলারই একমাত্র নিখুঁত রমডয়টার; Image Source : People’s Post Media

সহজ কথায় বললে, রমডয়টারের কাজ এটাই। প্রতিপক্ষের রক্ষণে সবসময়ই বিভিন্ন জায়গায় খালি জায়গা বা স্পেস তৈরি হয় বিভিন্ন কারণে। যেকোনো একজন খেলোয়াড় তার নিজের পজিশন ছেড়ে সরে গেলে সেখানে একটি স্পেসের সৃষ্টি হয়, কিংবা কাউকে ম্যান মার্ক করতে গিয়ে ডিফেন্ডার অনেক সময় ফাঁকা জায়গা তৈরি করে। রমডয়টারের কাজ এখানেই, এরকম যে স্পেসের সৃষ্টি হয় সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা। রমডয়টার খেলা শুরু করেন আক্রমণভাগের যেকোনো পজিশনে, সেটি হতে পারে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, হতে পারে লেফট কিংবা রাইট উইং, আবার হতে পারে স্ট্রাইকারও। কিন্তু, খেলা শুরুর পর আর এসব পজিশনের প্রতি থোড়াই কেয়ার থাকে রমডয়টার হিসেবে খেলা খেলোয়াড়ের! তিনি তখন পুরো মাঠজুড়ে বিচরণ করতে থাকেন, যেখানে স্পেস খুঁজে পান সেখানেই অপারেট করেন। থমাস মুলারের খেলা একটু কষ্ট করে লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন, একজন রমডয়টারের কাজ কী। মুলার সাধারণত অ্যাটাকিং মিডফিল্ড কিংবা রাইট উইংয়ে খেলা শুরু করেন। কিন্তু সময় যত গড়াতে থাকে, মুলার তার পজিশন ছেড়ে চলে আসেন স্পেসে, যেগুলো তার দলের অন্যান্য খেলোয়াড়েরা তার জন্য সৃষ্টি করেছেন। এভাবেই মুলার স্ট্রাইকার না হয়েও জার্মানির হয়ে মাত্র দুই বিশ্বকাপে দশ গোল করেছেন, এভাবেই মুলার দেশ ও ক্লাবের জার্সিতে নিয়মিত গোল করেন।

রমডয়টার এমন একটি পজিশন, যাকে আটকানো খুবই দুঃসাধ্য। কেননা, রমডয়টার অনেকটা ছায়ার মত। ছায়াকে যেমন আপনি হাজার চেষ্টা করেও মুঠোর ভেতর ভরতে পারবেন না, তেমনিভাবে রমডয়টারকেও আটকানো যায় না। তবে আলোর অভাবে যেমন ছায়া তৈরি হয় না, তেমনি স্পেসের অভাবেও রমডয়টার কাজ করতে পারে না। তো, স্পেস কীভাবে বন্ধ করা যায়? সহজ হিসাব, ম্যান মার্কিং বন্ধ করে জোনাল মার্কিং ঠিকমতো বজায় রাখলেই আর অগাধ ফাঁকা স্পেস তৈরি হবে না, রমডয়টারও ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না। অথবা দলের একজনকে একদম দেহরক্ষীর মতো মার্ক করতে দেওয়া যায় রমডয়টারকে। কিন্তু এতে সমস্যা হচ্ছে, রমডয়টার এতবার নিজের পজিশন ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যান যে, এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলে দলের ডিফেন্সিভ শেইপের বারোটা বেজে যাবে, মাঠের বিভিন্ন অংশে দল হাস্যকরভাবে আউটনাম্বারড হয়ে যাবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, রমডয়টার এতটাই কার্যকর একটি পজিশন হলে শুধু মুলারকেই কেন খেলতে দেখা যায় এই পজিশনে? আরও অনেক বেশি দল কেন এই পজিশনকে কাজে লাগায় না? প্রশ্নটির উত্তর খুব সহজ, রমডয়টার একটি বিপজ্জনক পজিশন; শুধু প্রতিপক্ষ না, নিজের দলের জন্যও। কেন? একজন রমডয়টার অবশ্যই বারবার তার জায়গা বদল করবেন স্পেসে মুভ করার জন্য, কখনোই নিজের জায়গায় স্থির থাকবেন না। এর ফলে যা হয়, দলের যে নির্দিষ্ট শেইপ বা আকার থাকে, তা ঠিক রাখা বেশ কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময়ই দেখা যায় একজন রমডয়টার নিজের রাইট উইঙ্গার পজিশন ছেড়ে ডি বক্সে স্ট্রাইকারের জায়গায় আছেন, ফলে ডান প্রান্ত সামলানোর পুরো চাপটা পড়ে রাইটব্যাকের উপর। এসময় প্রতিপক্ষ কাউন্টার অ্যাটাক করলে তো কথাই নেই, ফাঁকা জায়গা দিয়ে ডেকে আনবে সর্বনাশ। এজন্য রমডয়টারকে খেলানোর জন্য প্রয়োজন খুবই ভালোমতো যন্ত্রের মতো কাজ করতে পারা একটি দল, যাদের আছে অসামান্য স্ট্যামিনা, যারা নিজেদের মধ্যে জায়গা পরিবর্তন করে স্পেস কভার করতে পারে খুব দ্রুত। এবার বলুন, এই সব বৈশিষ্ট্য কোন দলের আছে?

রমডয়টার ব্যবহার করার জন্য আদর্শ দল জার্মানি; Image Source : SportingNews

সহজ উত্তর, জার্মানি। ক্লাবের হিসাব করলে বায়ার্ন মিউনিখের দলও অনেকটা এরকমই, কিন্তু তাদের দলে ইঞ্জিনের মত খেলোয়াড়ের সংখ্যা কম। কিন্তু জার্মানি দলে দেখা যায় এক-দুইজন ছাড়া বাকি সবাই প্রচন্ড পরিশ্রমী, মুহূর্তের মধ্যে তারা পজিশন বদলাতে পারেন, সমানতালে নব্বই মিনিট দৌঁড়ে বেড়ান, মাঠে করেন অক্লান্ত পরিশ্রম।

আরেকটি প্রশ্ন আসে এখান থেকে, ২০১৪ পরবর্তী মুলার এরকম ধূসর কেন? বিশেষত গত দুই বছর ধরে মুলার যেন আগের সেই ভয়ংকর ফিনিশার নন, বরং তাকে মনে হয় একজন সাধারণ খেলোয়াড়। কারণটা কী?

কারণ বেশ কয়েকটি। প্রথম কারণ, জার্মানির ও বায়ার্নের স্টাইল পরিবর্তন। বায়ার্নে পেপ গার্দিওলা পাসিং ফুটবল খেলানো শুরু করলে তার প্রভাব পড়ে জার্মানি জাতীয় দলেও, জোয়াকিম লো নিজেও আর খেলাচ্ছিলেন না ক্লাসিক জার্মান ফুটবল। পেপ তার নিজস্ব স্টাইল থেকেই মুলারের সেরাটা বের করে আনতে পারলেও লো তেমন পারছিলেন না, ফলে তখন জার্মানির হয়ে ধূসর হতে শুরু করেন মুলার।

বাস্তির প্রস্থানে বিবর্ণ হয়ে পড়েছেন মুলার; Image Source : Sky Sports

দ্বিতীয় যেই কারণটির কথা বলা যায়, সেটি হলো বাস্তিয়ান শোয়াইনস্টাইগার। জার্মানি জাতীয় দলের বাস্তব প্রতিফলন বলা যায় বাস্তিকে, যিনি আদতেই ছিলেন একজন ইঞ্জিন। একাই মাঠে দুই-তিনজনের তৈরি করা স্পেস কভার করতে পারতেন, ছিল দুর্দান্ত স্ট্যামিনা। সুতরাং দেখা যেত, মুলার রমডয়টার হিসেবে খেলে নিজের দলে যেই স্পেস ফেলে রেখে যেতেন, সেটা বাস্তি কভার করে ফেলতেন। কিন্তু ২০১৬ পরবর্তী জার্মানি দলে বাস্তি ছিলেন না, এর ফলে মুলারকে নিজের স্বাভাবিক খেলার বাইরে অনেক দিকে চোখ ফেরাতে হয়েছে। এই বাইরে চোখ ফেরানোই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে, মুলার তার স্বাভাবিক খেলা আর খেলতে পারেননি। 

আরেকজন আছেন, যিনি মুলারকে বিপদে ফেলেছেন। তার নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। রোনালদোর নাম শুনে অনেকেই বেশ অবাক হতে পারেন, ব্যাখ্যা করছি।

এখন অনেকটা রমডয়টারের মতই খেলেন রোনালদো; Image Source : Goal

২০১৪ সালের পর থেকেই রোনালদো তার খেলার ধরণ বদলে ফেলেছেন, আগের মত উইং থেকে খেলার প্রবণতা ঝেড়ে ফেলেন তিনি, বরং ফলস উইঙ্গারের মত খেলতে শুরু করেন। ম্যাচ শুরু করতেন লেফট উইংয়েই, তবে ম্যাচ শুরুর পর আক্রমণভাগের যে স্পেসগুলো থাকতো, সেখানে জায়গা করে নেন তিনি, ঠিক মুলারের মতোই। এবং যখন রোনালদোর মতো বিশ্বসেরাদের একজন এভাবে খেলা শুরু করেন, কাটাছেঁড়া তাকে নিয়ে হয় ঢের বেশি। আর এই কাটাছেঁড়ার ফলেই বিপদে পড়ে গেছেন মুলার, তিনি যে রোনালদো নন! তাই রোনালদোকে আটকাতে না পারলেও কোচরা ঠিকই পারছেন মুলারকে আটকে ফেলতে, মুলার হয়ে পড়েছেন বিবর্ণ।

সাম্প্রতিক সময়ে আরেকজন ফুটবলার উদ্ভুত হয়েছেন রমডয়টার হিসেবে, যার নাম ডেলে আলি। স্পার্সের এই মিডফিল্ডারকেও দেখা যায় মাঠে কোনো নির্দিষ্ট পজিশনে না থেকে আক্রমণভাগের যেকোনো পজিশনে মুভ করতে। সহজ কথায়, যেখানে স্পেস দেখেন, আলি সেখানেই মুভ করে স্পেস থেকে নিজের খেলা খেলে যান। ইংলিশ ফুটবলের মতো কঠিন জায়গায় এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ডেলে আলি যেমন প্রশংসার দাবিদার, তেমনি সেটার দাবি করতে পারে তার দলও। একজন রমডয়টারকে সামলানো যে সহজ কোনো ব্যাপার না!

ডেলে আলির খেলার ধরণটাও রমডয়টারের মতোই; Image Source : Fox Sports Asia

রমডয়টার ফুটবলের একটি বিরল পজিশন। থমাস মুলার বাদে নিখুঁত রমডয়টার ফুটবল কখনোই দেখেনি, খুব সম্ভবত ভবিষ্যতেও আর দেখবে না। ফুটবলটা আস্তে আস্তে হয়ে যাচ্ছে এগারোজন সমানতালে খেলে যাবার খেলা, সেখানে রমডয়টার হিসেবে একজনকে খেলানোটা বিলাসিতাই। সুতরাং থমাস মুলারকে দেখুন, উপভোগ করুন। কে জানে, এরকম কাউকে আর হয়তো কখনোই দেখবেন না!

An article on the position named 'Raumdeuter' in which, Thomas Muller has excelled and shown his best form. 

The article speaks in detail about the position, its strengths and weaknesses, also stating the players who have played in this position. 

Featured Image: Mashable.com

Related Articles