Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মরিনহোর ‘তৃতীয় মৌসুম’ কুফা কি শুরু হয়ে গেলো?

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে জয়ের ধারা ধরে রেখেছে টটেনহ্যাম হটস্পার, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুল। এদিকে ওয়েঙ্গার চলে যাওয়ার পর নতুন যুগে কিছুতেই আলোর পথ খুঁজে পাচ্ছে না আর্সেনাল। উনাই এমেরির অধীনে প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে ২৬ বছরের মধ্যে লিগে সবচেয়ে বাজে শুরু করলো গানাররা। আর লিগের দ্বিতীয় ম্যাচেই হোঁচট খেয়ে ভক্তদের আশঙ্কাটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। 

শনিবার প্রিমিয়ার লিগে মোট ছয়টি ম্যাচ ছিল। এ দিন ওয়েম্বলিতে ফুলহ্যামকে আতিথ্য দেয় টটেনহ্যাম। ম্যাচের শুরু থেকেই ফুলহ্যামের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকে স্পার্সরা। তবে ফরোয়ার্ডদের একের পর এক গোল মিসে কিছুতেই গোলের দেখা পাচ্ছিলো না উত্তর লন্ডনের এই দলটি। ম্যাচের ৪৩ মিনিটে লুকাস মউরার দারুণ এক গোলে এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু গোল খেয়ে ভেঙে পড়েনি ফুলহ্যাম, ৫২ মিনিটে রেকর্ড পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে দলে আসা মিত্রোভিচের গোলে সমতায় ফেরে দলটি। তবে সেই সমতা খুব বেশিক্ষণ টিকে থাকেনি, ৭৪ মিনিটে কেভিন ট্রিপিয়ারের দারুণ এক ফ্রি-কিকে আবারো এগিয়ে যায় টটেনহ্যাম। আর ৭৭ মিনিটে গোল করে আগস্ট মাসে গোল না পাওয়ার কুফা ভাঙার সাথে দলের ৩-১ গোলের জয়টাও নিশ্চিত করেন হ্যারি কেইন;

পেশাদার ক্যারিয়ারে আগস্ট মাসে প্রথম গোলের দেখা পাওয়ার পর হ্যারি কেইন; Image Source : The Independent

সপ্তাহের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ম্যাচে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে আর্সেনালের মুখোমুখি হয় চেলসি। দুই দলের নতুন দুই কোচ মাউরিজিও সারি ও উনাই এমেরির মুখোমুখি হওয়াটা লন্ডন ডার্বির উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলো। ম্যাচ শুরুর ৯ মিনিটের মাথায় মার্কোস আলন্সোর পাস থেকে গোল করে চেলসিকে এগিয়ে দেন পেদ্রো।  ম্যাচের ১৯ মিনিটে গোল শোধ করার দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিলো আর্সেনাল, কিন্তু সহজতম সুযোগটা হেলায় নষ্ট করেন অবামেয়াং। উল্টো এর পরের মিনিটে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আলভারো মোরাতা। 

দুই গোলে পিছিয়ে পড়লেও খেলায় ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে আর্সেনাল। ম্যাচের ৩১ মিনিটে সেই সুযোগও চলে আসে। তবে এবার সুযোগ নষ্ট করেন হেনরিখ মিখিতারিয়ান। ম্যাচের ৩৭ মিনিটে দারুণ এক গোল করে সেটার শাপমোচনটা তিনিই করেন। আর এর ৩ মিনিট পরেই মিখিতারিয়ানেরই পাস থেকে অ্যালেক্স ইয়োবির গোলে খেলায় সমতা ফেরায় আর্সেনাল। এরপর দুই দলের ফরোয়ার্ডরাই একের পর এক গোলমিসের মহড়া দিতে থাকে। শেষপর্যন্ত বদলি হিসেবে নেমে খেলায় ব্যবধান গড়ে দেন চেলসির ইডেন হ্যাজার্ড। ৮১ মিনিটে তার পাস থেকে আলন্সোর করা গোলে ৩-২ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে চেলসি। 

সারির অধীনে শুরুটা দারুণ হয়েছে চেলসির; Image Source : Sportkeeda

প্রথম দুই ম্যাচেই জিতে সারির প্রিমিয়ার লিগের অভিষেকটা দুর্দান্তভাবেই হলো। অল্প কয়েক দিনেই চেলসি যেভাবে সারির ট্যাকটিসের সাথে মানিয়ে নিয়েছে, তাতে সারিবল;নিয়ে ব্লুজ ফ্যানরা বড় আশা করতেই পারে। অন্যদিকে প্রথম দুই ম্যাচে হেরে এমেরির প্রিমিয়ার লিগ অভিষেকটা খুব বাজেভাবে হলেও এখনই গানারদের হতাশ হওয়ার আসলে কিছু নেই। প্রথম দুই ম্যাচেই আর্সেনালের প্রতিপক্ষ বেশ কঠিন ছিল। তাই এমন ফলাফল অস্বাভাবিক কিছু না। ফলাফল যা-ই হোক, এমেরির দল যেভাবে খেলেছে তাতে সামনের দিনগুলোতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের সাথে খেলা হলে গানারদের জ্বলে উঠার বেশ জোরালো সম্ভাবনা আছে। লিগ না জিতুক, অন্তত শীর্ষ চারে থেকে যদি আর্সেনাল এবার লিগ শেষ করতে পারে, তবে সেটাই এমেরির প্রথম মৌসুম বিবেচনায় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। 

শনিবারের বাকি ম্যাচগুলোও বেশ নাটকীয় ছিল। অন্তিম মুহূর্তে কেনেডির পেনাল্টি মিসে কার্ডিফ সিটির বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। থিও ওয়ালকট ও রিচার্লিসনের গোলে সাউদাম্পটনকে ২-১ গোলে হারিয়ে এবারের লিগে নিজেদের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে এভারটন। জেমি ভার্ডির লাল কার্ড পাওয়া সত্ত্বেও উলভারহ্যাম্পটনকে ২-০ গোলে হারিয়েছে লেস্টার সিটি। আর প্রথমে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়লেও ওয়েস্টহ্যামকে তাদের মাঠেই ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে বোর্নমাউথ। 

রবিবার ঘরের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে হাডার্সফিল্ডের বিপক্ষে রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। প্রতিপক্ষকে গুনে গুনে আধ ডজন গোল দিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা! ম্যাচের শুরু থেকেই হাডার্সফিল্ডের উপর তাণ্ডব চালাতে থাকে সিটি। ২৫ মিনিটে গোলরক্ষক এডারসনের লংপাস থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে নেন সার্জিও আগুয়েরো। ৩১ মিনিটে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। এই গোলের মাধ্যমে দীর্ঘ তিন মাস পর আবারো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে গোলের দেখা পেলেন জেসুস। এর চার মিনিট পরেই আগুয়েরো আবার গোল করলে প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় ম্যানসিটি। তবে ৪৩ মিনিটে ধারার বিপরীতে গোল খায় সিটিজেনরা, স্ট্যানকোভিচের গোলে ব্যবধান ৩-১ করে হাডার্সফিল্ড। 

দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে সিটিজেনদের বড় জয়ের ভিত গড়ে দেন আগুয়েরো; Image Source : ghanasoccernet.com

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ডেভিড সিলভার দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে ব্যবধান ৪-১ করে ম্যানসিটি। ৭৫ মিনিটে মেন্ডির পাস থেকে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক পূরণ করেন আগুয়েরো। ৮৪ মিনিটে কঙ্গলোর আত্মঘাতী গোলে হাডার্সফিল্ডের লজ্জাজনক হারের ব্যবধানটা আরেকটু বেড়েছে। ৬-১ গোলের এই জয় দিয়ে সিটিজেনরা প্রমাণ করলো, গতবারের মতো এবারের লিগজয়ে তারাই সবচেয়ে ফেভারিট। আরেক ম্যাচে বার্নলির বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে ওয়াটফোর্ড।

ইপিএলের এবারের মৌসুমের প্রথম অঘটনটা ঘটে গিয়েছে রবিবারেই। ব্রাইটনের মাঠে গিয়ে ৩-২ গোলে হেরে এসেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড! ম্যাচের শুরু থেকেই রেড ডেভিলদের বেশ ছন্নছাড়া লাগছিলো, আর এই সুযোগে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে বারবার তাদের কাঁপিয়ে দিচ্ছিলো ব্রাইটন। ম্যাচের ২৫ মিনিটে গ্লেন মারের গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ব্রাইটন। তবে এই গোলের জন্য মারের দক্ষতার সাথে ইউনাইটেড সেন্টারব্যাক লিয়েন্ডলফের জঘন্য মার্কিংয়েরও যথেষ্ট অবদান ছিল। এর দুই মিনিট পরেই ডাফির গোলে ব্যবধানটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। এই গোলের সময়ে পুরো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড রক্ষণভাগ যেভাবে ডাফিকে আনমার্কড রেখেছিলো, সেটার কোনো ব্যাখ্যা আসলেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। 

ব্রাইটনের বিপক্ষে বড্ড বিবর্ণ ছিলেন পগবা; Image Source : Daily Express 

ম্যাচের ৩৪ মিনিটে হেড থেকে গোল করে রেড ডেভিলদের খেলায় ফেরার আশা জাগান রোমেলু লুকাকু। কিন্তু ৪৩ মিনিটে এরিক বাইয়ির করা ফাউলে ব্রাইটন পেনাল্টি পেলে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই সেই আশার বেলুন চুপসে যায়। পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান ৩-১ করেন প্যাসকেল গ্রস। এরপর পুরো দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে খেলায় ফেরার বহু চেষ্টা করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। তবে তাতে লাভ তেমন কিছু হয়নি। অন্তিম মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে পগবার গোলটা শুধুমাত্র ব্যবধানই কমিয়েছে, ৩-২ গোলের হারে মৌসুমের শুরুতেই বেশ বড় ধাক্কা খেলো রেকর্ড ২০ বারের লিগ চ্যাম্পিয়নরা।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অভ্যন্তরীণ অবস্থা যেরকম আছে, তাতে এই মৌসুমটা তাদের জন্য বেশ কঠিন হতে যাচ্ছে। ব্রাইটনের বিপক্ষে হার সেই আশঙ্কাকেই হয়তো আরেকটু বাড়িয়ে দিলো। তার উপর রেড ডেভিলদের কোচ হিসেবে এটা জোসে মরিনহোর তৃতীয় মৌসুম। শেষ দুবারই নিজের তৃতীয় মৌসুমে ব্যর্থতার দায়ে মরিনহোকে যথাক্রমে রিয়াল মাদ্রিদ ও চেলসির কোচের পদ ছাড়তে হয়েছিলো। সেই ধারা বজায় থাকলে এই মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে আরো অনেক কঠিন সময় পার করতে হবে।মরিনহোর তৃতীয় মৌসুমের কুফার ব্যাপারটা অনেকে হেসে উড়িয়ে দিতেই পারেন, কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের টিম ম্যানেজমেন্ট যে ভুল পথে এগোচ্ছে সেটাকে হেসে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো অবকাশই নেই। 

এবারের দলবদলে মরিনহোর চাহিদা ছিল একজন বিশ্বমানের সেন্টারব্যাক। ইউনাইটেডের বর্তমান দলে একজন ভালো সেন্টারব্যাক ঠিক কতটা দরকারি সেটা মোটামুটি সবাই অনুধাবন করতে পারছে। সবাই পারলেও ইউনাইটেডের টিম ম্যানেজমেন্ট সেটা বুঝতে পারেনি। এ কারণে পুরো দলবদল চেষ্টা করেও তারা একজন ভালো সেন্টারব্যাককে দলে ভেড়াতে পারেনি! মরিনহোর রক্ষণাত্মক ফর্মেশনে সাফল্য পেতে হলে অসাধারণ কিছু ডিফেন্ডার দলে থাকতেই হবে। কিন্তু লিয়েন্ডলফ, জোন্স কিংবা স্মলিং কি সেই অসাধারণের কাতারে পড়েন? এই মৌসুমেও ভাগ্যের শিকে না ছিঁড়লে তৃতীয় মৌসুমের কুফা ধরে রেখে মরিনহো হয়তো চাকরি হারাতে পারেন। কিন্তু ভুলের সাগরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড যেভাবে ডুবে যাচ্ছে, সেখান থেকে কি তারা উঠতে পারবে? যদি না পারে, তাহলে বিশ্ব ফুটবলে এসি মিলানের মতো আরেক পরাশক্তি ক্লাবের পতন হয়তো খুব দ্রুতই দেখতে হবে। 

দ্বিতীয় গেমউইকের শেষ ম্যাচে সোমবার অ্যাওয়ে ম্যাচে ক্রিস্টাল প্যালেসের মুখোমুখি হয় লিভারপুল। শুরু থেকেই খেলার নিয়ন্ত্রণ লিভারপুলের কাছেই ছিল, তবে পাল্টা আক্রমণে বেশ কয়েকবার তাদের কাঁপিয়ে দিয়েছিলো প্যালেস। প্রথমার্ধে টাউনসেন্ডের নেওয়া শট বারে লেগে ফিরে না এলে প্রথম গোলটা প্যালেসই পেয়ে যেতো। যদিও প্রথমার্ধেই কাঙ্ক্ষিত লিডের দেখা পেয়ে যায় লিভারপুল, সালাহর আদায়কৃত পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন অধিনায়ক জেমস মিলনার। 

লিগের শুরুটা দারুণভাবে করেছে লিভারপুল; Image Source : worldsportsnes.com

দ্বিতীয়ার্ধে গোলশোধ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকে ক্রিস্টাল প্যালেস। বেশ কিছু ভালো আক্রমণও তারা সাজিয়েছিল, তবে সেসব আক্রমণ দারুণভাবে ঠেকিয়ে দিয়েছেন অলরেডদের গোলরক্ষক অ্যালিসন। খেলার ৭৫ মিনিটে সালাহকে ফাউল করে প্যালেস ডিফেন্ডার ওয়ান-বিসাকা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে ক্রিস্টাল প্যালেসের ম্যাচে ফেরার আশা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। ৯৩ মিনিটে সালাহর অ্যাসিস্টে মানের গোলটা লিভারপুলের জয় পুরোপুরি নিশ্চিত করেছে। আগের মৌসুমগুলোতে ক্লপের দলের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ছোট দলগুলোর বিপক্ষে পয়েন্ট খোয়ানো। ক্রিস্টাল প্যালেসের মাঠে গিয়ে এই ২-০ গোলের জয় সেই সমস্যা সমাধানের বড় একটা আভাস দিয়ে গেলো। 

দুই ম্যাচের দুটিতেই জিতে মোট ছয়টি দলের বর্তমান পয়েন্ট ৬। তবে গোল ব্যবধানে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে রয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি, দ্বিতীয় স্থানে লিভারপুল আর তৃতীয় স্থানে চেলসি। আর দুই ম্যাচের সবগুলোতে হেরে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে আছে মোট চারটি দল। মাত্র তো লিগ শুরু হলো, সামনের দিনগুলোতে পয়েন্ট টেবিলে আরো অনেক অদল-বদল আসবে। সেই ধাক্কা সামলে কোন দল নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ফিচার ইমেজ : ESPN

Related Articles