Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রিকার্ডো পাওয়েল: ক্ষয়ে যাওয়া এক প্রতিভা

ফাইনাল ম্যাচ, পরে ব্যাটিং করতে হচ্ছে, টার্গেট ২৫৫ রান।

১৯৯৯ সালের বিবেচনায় তো বটেই, রানবন্যার এই যুগেও স্পোর্টিং পিচে এটা তাড়া করা খুব সহজ বিষয় নয়। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের মাথায় ক্রিকেট বহির্ভূত আরো যে বিষয়টা সিন্দবাদের ভূতের মতো চেপে ছিল, সেটা হচ্ছে বিগত ৬ বছরে কোনো ফাইনাল ম্যাচ জিততে না পারার ব্যর্থতা। ১৯৯৩/৯৪ সালে ব্রায়ান লারার অসাধারণ সেঞ্চুরিতে শারজায় পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হবার পর থেকে আরো ৯ টা টুর্নামেন্ট খেলে ৩ টাতে ফাইনালে উঠলেও শেষ হাসিটা আর হাসতে পারছিলো না উইন্ডিজ।

অবশ্য বাস্তবিকভাবে বিষয়টা খুব বেশি বিস্ময়েরও ছিল না। ডেসমন্ড হেইন্স, ভিভ রিচার্ডসরা অবসরে যাওয়ার পর থেকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল কিছুটা পুনর্গঠনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলো। এক ব্রায়ান লারা বাদে আর কোনো নতুন খেলোয়াড়ের মাঝে তেমন ধারাবাহিকতার লক্ষণও পাওয়া যাচ্ছিলো না। তরুণদের বেশিরভাগই ঝুঁকে যাচ্ছিলো বাস্কেটবলের দিকে। এর মাঝে ক্রিকেট বোর্ডের সাথে বিদ্রোহ করে ব্রায়ান লারাসহ আরো কয়েকজন খেলোয়াড় অবসরে চলে গেলেন। পরে মধ্যস্থতা করে ফেরত আসলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের দুর্দশা পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব হচ্ছিল না।

ভিভ রিচার্ডসদের প্রজন্ম যাওয়ার পর থেকেই উইন্ডিজ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাঝে যাচ্ছিল; Image Source: IMDb

রাহুল দ্রাবিড়ের অপরাজিত সেঞ্চুরিতে ভারত যখন ২৫৪ রানের স্কোর দাঁড় করালো, তখন ফেভারিট হিসেবে ভারতকে মেনে নেওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে কেবল একটা এক্স ফ্যাক্টরই ছিল, ব্রায়ান লারা। ‘লারার দিনে পৃথিবীর কোনো বোলিং আক্রমণই তাকে ম্যাচ জেতানো থেকে বিরত রাখতে পারবে না’ – এরকম একটা বিশ্বাস ক্রিকেটপ্রেমীদের সাথে সাথে বিপক্ষে দলের খেলোয়াড়দের ভেতরেও ছিল। সেই কারণে সবাই চাইতো, যত দ্রুত সম্ভব লারাকে ফিরিয়ে দিতে। ১৫তম ওভারে মাত্র ৬০ রানের মাথায় যখন ৩য় ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্রায়ান লারা ব্যক্তিগত ১৮ রান করে আউট হলেন, তখনই ম্যাচ মোটামুটি শেষ। বেশিরভাগ দর্শক খেলা দেখা ফেলে অন্য কাজে মন দিলো।   

ব্রায়ান লারার উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল ছিল সেই সময়ের উইন্ডিজ দল; Image Source: Sporting News

১৭ তম ওভারে জিমি এডামস আউট হবার পর মাঠে নামলেন মাত্র চার ম্যাচের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক তরুণ। রান বাকি তখনও ১৮৮। সদ্যই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পাওয়া এই তরুণের পরের কয়েক ঘন্টার তাণ্ডবে ম্যাচে যে নাটকীয়তা তৈরি হলো, সেটা নিশ্চিতভাবেই ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম একটা সেরা ইনিংস। মাত্র ৯৩ বলে ১২৪ রানের সেই ইনিংসটি গত শতাব্দীর সেরা ওয়ানডে ইনিংসের তালিকায় ১৬ নম্বরে আছে।

নাটকীয় মূহুর্ত তৈরির সেই নায়কের নাম রিকার্ডো পাওয়েল।

সেই ম্যাচের অনেক আগে থেকেই সম্ভাবনাময় উইন্ডিজ তরুণের তালিকায় রিকার্ডো পাওয়েলের নাম ছিল। ১৯৯৭ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে। ঘরোয়া ক্রিকেটে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করার কারণে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ দলে তার জায়গা হয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটাতে সুযোগ পেলেও ১৮ বল খেলে মাত্র ৪ রান করার পর দল থেকে বাদ পড়ে যান। এরপর আবার সুযোগ মেলে বিশ্বকাপের পর সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত সেই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে। 

অভিষেকটা বিশ্বকাপে হলেও সেটা স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি; Image Source: espncricinfo.com

প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাত্র ৩৬ বলে অপরাজিত ৫১ রানের একটা ইনিংস খেলে তিনি জানান দেন যে, তাকে নিয়ে প্রত্যাশা করাটা ভুল ছিল না। ভারতের বিপক্ষে পরের ম্যাচে খেলেন ৪৪ বলে ৪৬ রানের আরেকটা ইনিংস। তবে ইনিংস দুটোই ছিল দলের সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা অবস্থায়। ফাইনাল ম্যাচের চাপ অন্য যেকোনো সময় থেকেই আলাদা, এর উপর আবার অল্প রানেই ৪ উইকেটের পতন, নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে টিকে থাকার সাথে সাথে আস্কিং রানরেটের দিকেও লক্ষ্য রাখা – সব মিলিয়ে এমন পরিস্থিতিতে রিকার্ডো পাওয়েলের উপর সেই ম্যাচে নির্ভর না করাটাই স্বাভাবিক ছিল।

ক্যারিয়ারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্স স্মরণীয়ই ছিল; Image Source: Getty Images

তবে মাঠের খেলা ভিন্নরকম ছিল। পাওয়েল নেমেই পেলেন আরেক সিনিয়র খেলোয়াড় শিবনারায়ন চন্দরপলকে। সচরাচর ম্যাচের এইরকম পরিস্থিতিতে দু’টি কাজ করতে হয়। প্রথমত, সিনিয়র খেলোয়াড়কে স্ট্রাইক বেশি দিতে হয়, এবং দ্বিতীয়ত, উইকেট টিকিয়ে রেখে ধৈর্য্য ধরে খেলতে হয়। কিন্তু এসব নিয়মকানুন তো হয় সাধারণ মানুষদের জন্য। প্রতিভাবানরা কখনো কোনো নিয়মের ধার ধারেন না, বরং তারা যেটা করে সেটাই একটা সময়ে নিয়মে পরিণত হয়। এই কারণেই ৫৮ বলে ৬১ রানের পার্টনারশিপে চন্দরপলের অবদান ৩৪ বলে মাত্র ১৮। চন্দরপল যখন আউট হলেন, তখনও রান বাকি ১২৭। কোনো স্বীকৃত ব্যাটসম্যানও নেই সাথে। তরুণ হলেও পাওয়েল বুঝে গেলেন, ম্যাচটা জিততে হলে যা কিছু করার তাকেই করতে হবে। কেবল টিকে থাকলেই চলবে না, বরং বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তোলার কাজটাও তাকেই করতে হবে।  

বোলার পেরিকে নিয়ে এরপর গড়লেন ১১৮ রানের একটা জুটি, যেখানে পেরির অবদান ৫৫ বলে মাত্র ৩৬ রান। মাত্র ৪৪ বলে ব্যক্তিগত অর্ধশতক এবং ৭২ বলে ব্যক্তিগত শতক করে দায়িত্বটা বেশ ভালোভাবেই পালন করলেন পাওয়েল। ৯৩ বলে ১২৪ রানের একটা অসাধারণ ইনিংস খেলে যখন আউট হলেন, তখন উইন্ডিজের জেতার জন্য প্রয়োজন ২৯ বলে মাত্র ৯ রান। ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত উইন্ডিজই জিতে নেয়। ৯টি টুর্নামেন্ট হারার পর ১০ম টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারাটা সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের জন্য অনেক বড় মাপের অর্জন ছিল।

রিকার্ডো পাওয়েল তার প্রথম পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ৩ ম্যাচে ১১০.৫ গড় আর ১২৭.৭৪ গড়ে ২২১ রান করে ব্যক্তিগতভাবে জিতে নেন ফাইনালের ম্যাচসেরা আর টুর্নামেন্টের সিরিজসেরা পুরষ্কার।  

এত চমৎকার একটা শুরুর পর স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণে অনেকেই তাকে স্যার ভিভ রিচার্ডসের উত্তরসূরীও ভাবতে শুরু করেন। ফাইনাল ম্যাচের সেই ইনিংসের ২ ম্যাচ পরই ৭৩ বলে ৭৬ রানের একটা ইনিংস খেলে কক্ষপথেও ছিলেন পাওয়েল। কিন্তু এরপরই তার কক্ষচ্যুতি ঘটে। পরের টানা ১৭ ইনিংসে একটা অর্ধশতকের দেখা পেতেও ব্যর্থ হন। অধারাবাহিকতার কারণে একটা পর্যায়ে ক্যারিয়ার গড় ৫০ থেকে নেমে এসে ২৫ এর কাছাকাছি পৌঁছে। মূলত আক্রমণাত্মক এবং ওপেনিং থেকে আট নম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন পজিশনে ব্যাটিং করার কারণেই হয়তো বা দলে নিজের অবস্থান স্থিতিশীল করে তুলতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ২০০৫ সালে পাওয়েল উইন্ডিজের হয়ে তার শেষ ম্যাচটা খেলে ফেলেন। ক্যারিয়ারে করেছেন ২৪.৮২ গড় এবং ৯৬.৬৬ স্ট্রাইকরেটে মোট ২,০৮৫ রান। একজন স্পেশালিষ্ট লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের জন্য পারফরম্যান্সটা যথেষ্টই বাজে। তবে এই সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারেও তিনি কিছু কীর্তি গড়ে গিয়েছেন। কমপক্ষে ১,০০০ রান করেছেন এমন ওয়েষ্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানের মাঝে তার স্ট্রাইকরেটই সর্বোচ্চ। এছাড়া ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তিনি ৭৫টি ছক্কা মেরেছেন, যা কিনা ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানদের মাঝে ৬ষ্ঠ সর্বোচ্চ।

দুইটি টেস্ট খেলা হলেও তেমন কিছু করতে পারেননি; Image Source: Getty Images

মূলত ওয়ানডে স্পেশালিস্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করায় টেস্টের জন্য বরাবরই উপেক্ষিত ছিলেন। ক্যারিয়ারে মাত্র ২টি টেস্ট খেলেছেন, যার মাঝে একটি ছিল ব্রায়ান লারার রেকর্ড গড়া সেই ৪০০ রানের ম্যাচটি।

টুকটাক বোলিং করতেন। খন্ডকালীন বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ১১ টি উইকেটও পেয়েছেন, যেখানে তার সেরা বোলিং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ রানে ২ উইকেট। এছাড়া অধিনায়ক ব্রায়ান লারা এবং কার্ল হুপারের কাছে খুব দ্রুত ওভার শেষ করার জন্য রিকার্ডো পাওয়েল ছিলেন প্রথম পছন্দ।  

ব্যক্তিগত জীবনে রিকার্ডো পাওয়েল বিয়ে করেছিলেন ক্যারিবিয়ান টিভির টক শো উপস্থাপক বাসিয়া এলিসিয়া পাওয়েলকে। মাঝে স্ত্রী’র স্তন ক্যানসারের জন্য কিছুদিন খেলা থেকে দূরেও ছিলেন। পরবর্তীতে ফিরে এসে আর তেমনভাবে ক্যারিয়ার টেনে নিয়ে যেতে পারেননি। বর্তমানে আমেরিকাতে স্থায়ী বসবাস করছেন, এবং আমেরিকার ক্রিকেট নির্বাচকদের চেয়ারম্যান হিসেবে সেখানকার ক্রিকেট উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন।

বর্তমানে ব্যস্ত আছেন আমেরিকান ক্রিকেটের উন্নতির কাজে Image Source: Guyana Chronicle

মাইকেল হোল্ডিং এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরো অনেক গ্রেটের মতে, রিকার্ডো পাওয়েল হচ্ছেন একজন নষ্ট হয়ে যাওয়া প্রতিভা। তবে ব্যক্তিগতভাবে রিকার্ডো পাওয়েল তার ক্যারিয়ারের কিছুটা অপূর্ণতা থাকলেও সেটা নিয়ে দুঃখিত নন। বরং তার যে ইনিংসগুলো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ম্যাচ কিংবা সিরিজ জিততে সহায়তা করেছে, সেগুলোর স্মৃতি স্মরণ করেই তিনি সুখী। হয়তো ক্যারিয়ারে আরো বড় কিছু অর্জন করা সম্ভব ছিল, কিন্তু যতটুকু পেয়েছেন ততটুকু নিয়েই তিনি সামনে এগোতে চান। বর্তমানে ইএসপিএন-এর সাথে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হিসেবেও কাজ করে চলেছেন। এছাড়া তার লক্ষ্য হচ্ছে আমেরিকান ক্রিকেটের উন্নতি ঘটানো, এবং প্রাথমিকভাবে আমেরিকান ক্রিকেটকে তৃতীয় বিভাগ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে উঠানো।  

সত্যি সত্যি যদি তার উদ্দেশ্য সফল হয়, তাহলে সমগ্র ক্রিকেটের জন্যেই সেটা মঙ্গল। এই কাজে সফল হলে ক্যারিয়ার নিয়ে যতটুকু অপূর্ণতা আছে, সেই আক্ষেপটাও হয়তো পাওয়েলের মুছে যাবে।

This article is in Bangla language. This article is about Ricardo Powell, who is one of the greatest hitters in cricket history. But due to inconsistency, he is regarded as a wasted talent. Now he is working for the development of U.S.A cricket. Necessary sources are hyperlinked with this article.

Feature Image: USA Cricket

Related Articles