Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘শচীনের শতক মানেই ভারতের হার’- সত্যি, নাকি শুধুই মিথ?

ভারতে দেড়শ কোটির অধিক মানুষের বাস। নানা ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি, গোত্রের ভারতীয়রা সব ভেদাভেদ ভুলে মিলিত হয়েছে শুধু ক্রিকেটেই, বিশেষ করে শচীন রমেশ টেন্ডুলকার নামের মহাসমুদ্রে। সব নদীই সমুদ্রে গিয়ে মেশে, আর সব ক্রিকেটমোদীরা মেশে শচীনে। ক্রিকেট ভারতে ধর্মের মতো দেখা হয়, আর সেখানে পূজনীয় ব্যক্তি শচীন। শচীনের জীবনেও ক্রিকেট ধর্মের মতো। ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর শেষবার বাইশ গজ ছাড়ার সময় বিদায়লগ্নের ভাষণেও বলেছিলেন, ক্রিকেট তার কাছে ছিল মন্দিরে যাওয়ার সমান, প্রার্থনার সমান।

১৬ নভেম্বর শচীন ক্রিকেটকে বিদায় বললেও শেষবার ব্যাটিং করেছিলেন ১৫ নভেম্বর। কাকতালীয় ব্যাপার, শচীন প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও ব্যাটিং করেছেন ১৫ নভেম্বর। ১৯৮৯ এর ১৫ নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ১৫ নভেম্বর, মাঝের কেটে যাওয়া ২৪ বছরে ২২ গজে শচীন করেছেন অসংখ্য কীর্তি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, ওয়ানডে ও টেস্টের সর্বোচ্চ রানের সঙ্গে সর্বোচ্চ শতকের মালিকও তিনি। 

শতকের পর আকাশপানে তাকানো শচীন; Image Source: Getty Images
শতকের পর আকাশপানে তাকানো শচীন; Image Source: Getty Images

ওয়ানডে ও টেস্ট মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০ শতক করে থেমেছেন লিটল মাস্টার। ১৯৯০ সালের ৯ আগস্ট ওল্ড ট্র‍্যাফোর্ডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১১৯ রানের ইনিংস দিয়ে শুরু। এরপর আরো ৯৯ বার তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারকে করেছেন আলিঙ্গন, যার শেষটা আসে ২০১২ সালের ১৬ মার্চ মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে।

একশ শতকের মালিককে নিয়ে তার খেলোয়াড়ি জীবন কিংবা এখনো যেকোনো ক্রিকেটীয় আলোচনায়ই চর্চা হয়, শচীনের শতক মানেই নাকি ভারতের হেরে যাওয়া। এটি কতটুকু সত্য? নাকি শুধুই মিথ? তথ্য, পরিসংখ্যানে উত্তর খোঁজা যাক।

২৪ বছরের দীর্ঘ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০০ টেস্ট, ৪৬৩ ওয়ানডে এবং একটিমাত্র টি-টোয়েন্টি ম্যাচ – সব মিলিয়ে শচীন খেলেছেন ৬৬৪ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। ৪৮.৫২ গড়ে করেছেন ৩৪,৩৫৭ রান; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেস্টে ১৫,৯২১ রান ও ওয়ানডেতে ১৮,৪২৬ রান। একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শচীনের ব্যাট থেকে আসে ১০ রান। টেস্টে ৫১ ও ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪৯ বার শচীনের ব্যাট দেখেছে তিন অঙ্কের দেখা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শতকের শতক করা একমাত্র ব্যাটসম্যানও তিনি।

সেঞ্চুরির 'সেঞ্চুরি'; Source: AFP/Getty Images
সেঞ্চুরির ‘সেঞ্চুরি’; Source: AFP/Getty Images

১০০ আন্তর্জাতিক শতকে ৫৩ বার শচীন মাঠ ছেড়েছেন জয়ের হাসিতে, ২০ ম্যাচ ড্র। একটি করে ম্যাচে যথাক্রমে টাই ও রেজাল্ট আসেনি। আর শচীন পরাজয়ের বেদনায় নীল হয়েছেন ২৫টি শতকের ম্যাচে। শতকরা হিসেবে ৭৫ শতাংশ শতকের ম্যাচে পরাজিত দলে ছিলেন না শচীন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জেতা ম্যাচে সর্বোচ্চ শতকের তালিকায় ৫৫ শতকে শচীনের অবস্থান দ্বিতীয়। সর্বোচ্চ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা ব্যাটসম্যান রিকি পন্টিং। জয়ী ম্যাচে শচীনের চেয়ে তিনি শতক হাঁকিয়েছেন দুটি বেশি। তালিকার তিন নম্বরে অবস্থান বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলি, জেতা ম্যাচে কোহলির শতক সংখ্যা ৪৮। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা রয়েছেন এরপরই, এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান জেতা ম্যাচে করেছেন ৪০টি শতক। পঞ্চম স্থানে আমলার একসময়ের সতীর্থ এবি ডি ভিলিয়ার্স, তার শতক ৩৭টি। শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারাও জেতা ম্যাচে হাঁকিয়েছেন ৩৭টি শতক।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পরাজিত ম্যাচে সর্বোচ্চ শতকের তালিকায় ২৫ শতকে শচীন রয়েছেন এক নম্বরে। শচীনের চেয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৭টি শতক কম হাঁকিয়েছেন লারা, পরাজিত ম্যাচে এই ক্যারিবিয়ানের শতক সংখ্যা ১৭, শচীনের সঙ্গে পার্থক্য ৮টি শতক। ‘ইউনিভার্স বস’ নামে খ্যাত আরেক ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইল পরাজিত ম্যাচে করেছেন ১৫ শতক। দল হেরেছে এমন ম্যাচে শতকের তালিকায় চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে যথাক্রমে ভারতের বিরাট কোহলি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবনারায়ণ চন্দরপল। বিরাটের ১৪ ও চন্দরপলের ১৩ শতকের ম্যাচে হেরেছে তাদের দল।

ক্যারিয়ারের ২০০ টেস্টের মধ্যে ভারতের হয়ে ৭২ টেস্ট জয় পেয়েছেন শচীন, ৭২ ম্যাচে শতক ২০টি। জেতা টেস্টে শতকের তালিকায় শচীনের অবস্থান ষষ্ঠ। এই তালিকায় অজিদের জয়জয়কার। সেরা চারজনই অস্ট্রেলিয়ান, এরপরে একজন প্রোটিয়া ক্রিকেটার। তালিকার শীর্ষে জেতা টেস্টে ৩০ শতক পাওয়া রিকি পন্টিং। ২৫ শতক নিয়ে তিন নম্বরে স্টিভ ওয়াহ। স্যার ডন ব্র‍্যাডম্যান ও ম্যাথু হেইডেন উভয়েরই জেতা টেস্টে শতক ২৩টি করে। দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসের জেতা টেস্টে শতক ২২টি।

ক্যারিয়ারের প্রথম শতক; Image Source: Twitter
ক্যারিয়ারের প্রথম শতক; Image Source: BCCI

জয়-পরাজয় ছাড়াও অনেক সময় বড় হয়ে ওঠে টেস্ট ম্যাচের ড্র। পরাজয়ের কিনারা থেকে কোনো বীরত্বগাঁথা ইনিংসই হয়তো কখনো কখনো দলকে রক্ষা করে। তাই ড্র হওয়া ম্যাচেও শতকের গুরুত্ব অর্থবহ হয়ে ওঠে। ড্র হওয়া টেস্টে শচীনের শতক ২০টি। তার অবস্থান যৌথভাবে তালিকার দুই নম্বরে। ড্র হওয়া টেস্টে সর্বোচ্চ শতক আরেক ভারতীয় সুনীল গাভাস্কারের। এই ওপেনার ড্র হওয়া টেস্টে করেছেন ২২টি শতক। শচীনের সমান ২০টি শতক প্রোটিয়া অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিসের। শচীনের একসময়ের সতীর্থ ‘দ্য ওয়াল’ নামে খ্যাত রাহুল দ্রাবিড় ড্র হওয়া টেস্টে করেছেন ১৭টি শতক। তালিকার পঞ্চম স্থানে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যালান বোর্ডারের নাম, ড্র হওয়া টেস্টে তার শতক ১৬টি।

শচীনের ১১ টেস্ট শতকে ভারতীয় দল হেরেছে, শচীনের টেস্ট শতকের মধ্যে শতকরা হিসেবে যা ২১.৫৬ শতাংশ। পরাজিত ম্যাচে টেস্ট শতকের তালিকায় ১৪ শতক নিয়ে ব্রায়ান লারা শীর্ষে, শচীনের অবস্থান দুইয়ে। পরাজিত টেস্টে ৯টি শতক শিবনারায়ণ চন্দরপলের, ৮টি শতক পাকিস্তানের মোহাম্মদ ইউসুফের। ৭টি করে পরাজয় ম্যাচে শতক যথাক্রমে ভারতের মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন, জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, ভারতের বিরাট কোহলি, পাকিস্তানের ইউনিস খানের। ওয়ানডে ক্রিকেটে শচীনের ৪৯ শতকের মধ্যে ভারতের জয় ৩৩ ম্যাচে। যথাক্রমে একটি করে ম্যাচ টাই ও নো রেজাল্ট। ভারত হেরেছে ১৪ ওয়ানডে ম্যাচে। শতকরা ২৮.৫৭ ওয়ানডে শতকের ম্যাচে হেরেছেন শচীন।

আরেকটি ওয়ানডে শতক; Source: Getty Images
আরেকটি ওয়ানডে শতক; Source: Getty Images

ওয়ানডে ক্রিকেটে জেতা ম্যাচে শচীনের ৩৩ শতকে রয়েছেন দ্বিতীয় অবস্থানে। তার উত্তরসূরী বিরাট কোহলি জেতা ওয়ানডে ম্যাচে শতক করেছেন ৩৫টি। সাবেক অজি অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের সেখানে রয়েছে ২৫টি শতক। হাশিম আমলা ও লঙ্কান ওপেনার সনাৎ জয়াসুরিয়ার জেতা ওয়ানডে ম্যাচে শতক ২৪টি।

পরাজিত ওয়ানডে ম্যাচে শতকের তালিকায় শচীন ১৪ শতক নিয়ে শীর্ষে। ১১ শতক ক্রিস গেইলের, ৮টি জিম্বাবুয়ের ব্রেন্ডন টেইলরের। ৭টি করে শতক যথাক্রমে ভারতের বিরাট কোহলি, শ্রীলঙ্কান কুমার সাঙ্গাকারা, কোহলির সতীর্থ রোহিত শর্মা ও নিউ জিল্যান্ডের রস টেইলরের।

লম্বা এই ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ারে শচীন অসংখ্য বোলিং লাইনআপের সঙ্গে খেলেছেন। কখনো তা ছিল সবল, কখনো দুর্বল। অনেক সময় শচীনের শতকে স্কোরবোর্ডে পর্যাপ্ত রান তোলার পরও বোলারদের কল্যাণে ম্যাচ হেরেছে ভারত, যেখানে ছিল একাধিক ওয়ানডেতে ৩০০ রান পেরোনো স্কোরও। ২০০৫ সালের এপ্রিলে আহমেদাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষে, ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে পেশোয়ারে একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে যার উদাহরণ মেলে।

এছাড়া কখনো শচীনের শতকের ম্যাচে বাকি সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা তো ছিলই। ক্রিকেট যেহেতু দলগত খেলা, তাই একা কখনো শতক হাঁকিয়েও অন্যদের ব্যর্থতায় শচীনকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে পরাজয়ের গ্লানিতে।

শুরুর দিকের শতক; Image Source: Twitter
শুরুর দিকের শতক; Image Source: Times of India

শচীন নিন্দুকদের মাঝে কথিত আছে, শচীন নাকি শতকের জন্য ধীরে-সুস্থে খেলতেন। স্বাভাবিক খেলার তুলনায় খেলতেন অনেক বেশি ডট বল। অথচ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে যেখানে শচীনের স্ট্রাইকরেট ৮৬.২৪, সেখানে শতক করা ৪৯ ম্যাচে তার স্ট্রাইকরেট ৯৯.৯০! শতক করা ম্যাচে ৬,১২৮ বলে ৬,১২২ রান করেছেন শচীন। এমন নিন্দুকদের উদ্দেশ্যে শচীন চাইলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ছত্র বলতে পারতেন:

‘নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো!’

শচীন এ কথা কখনো বলেছেন কি না, সেটা জানার উপায় নেই। তবে ‘শচীনের শতক মানেই ভারতের পরাজয়’- এটি সত্যি নাকি মিথ, সেই প্রশ্নের জবাব এখন আপনার কাছেই, প্রিয় পাঠক।

আর জানতে পড়ুন- এ টু জেড শচীন টেন্ডুলকার বইটি 

This is an article in Bangla language. It is often said that most of the time when Sachin Tendulkar hit a hundred, it would bring bad luck for India. How much of this myth is truth? The writer is here to find out.

Featured Image: DNAindia

Related Articles