Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রোমাকে একাই রুখে দিলেন সালাহ, বাভারিয়ানদের বধের নায়ক অাসেনসিও

রোমা কি প্রথমবারের মত ফাইনাল নাকি লিভারপুল তাদের আরাধ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে? রিয়াল মাদ্রিদের কাছে ৪ বছরে ২ বার পরাজয় বরণ করা বায়ার্ন কি তাদের প্রতিশোধ এবার নিতে পারবে? এরকম অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর প্রথম লেগের ম্যাচগুলোর পর স্পষ্ট। আবার কিছু প্রশ্নের জবাব এখনো পরিষ্কারভাবে না পাওয়া গেলেও উত্তরটা ভেবে নেওয়া যায়। প্রথম লেগে সালাহর জাদুর কাছে হেরে গেছে রোমা, বায়ার্ন নিজেদের মাঠে আবারো হেরেছে জিদানবাহিনীর কাছে।

সেমি ফাইনাল প্রথম লেগের ফলাফল

লিভারপুল ৫-২ রোমা

বায়ার্ন মিউনিখ ১-২ রিয়াল মাদ্রিদ

লিভারপুল বনাম রোমা

পুরো এক মৌসুমে ৪১ গোল। রোমার ভয় ছিলো তাদের প্রাক্তন খেলোয়াড়কে নিয়ে। অ্যানফিল্ডে এসে সেই ভয় সত্য হয়ে গেলো। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে মোহাম্মদ সালাহ ঠিকিই জ্বলে উঠলেন। নিজে করলেন জোড়া গোল, করালেন জোড়া গোল। এতে করে চ্যাম্পিয়নস লিগে কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম লেগে ৫-২ গোলের বড় ধরণের জয় নিয়ে ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো ক্লপবাহিনী। লিভারপুল দলে ইনজুরির কারণে জোয়েল মাটিপ ছিলেন না। তার জায়গায় লভরেনকে সেন্ট্রাল-ব্যাক পজিশনে নামিয়ে ইয়ুর্গেন ক্লপ গত ম্যাচেও নেমেছিলেন ৩-৪-৩ ফর্মেশন নিয়ে। অন্যদিকে, ইউসেবিও ডি ফ্রাঞ্চেস্কো নামিয়েছিলেন তার স্বভাবত ৩-৫-২ ফর্মেশন।

এবার লিভারপুল কি পারবে আরাধ্য শিরোপা ছুঁতে? Source: Cnnturk

পাঁচ পাঁচটা গোল লিভারপুল করলেও ম্যাচের শুরুর দিকে ভাগ্যে কাঁটা ঘুরে ছিলো রোমার দিকে। বলতে গেলো ম্যাচের প্রথম ৩০ মিনিট ছিলো রোমার দখলে। প্রথমার্ধে চেম্বারলেইন ইনজুরিতে মাঠ ছাড়লে তার পরিবর্তে মাঠে নামেন জর্জিনিয়ো ওয়াইনালদুম। ৩৬ মিনিটে প্রথম গোল এনে দেন মোহাম্মদ সালাহ। সাদিও মানে এর আগে অবিশ্বাস্য কয়েকটি গোল মিস না করলে, গোল পেতে হয়তো লিভারপুলকে এতক্ষণ অপেক্ষা করতে হতো না। ফিরমিনোর কাছ থেকে নিখুঁত পাসে ডিবক্সের এক কোনা থেকে জোরালো শটে সালাহ বল জালে জড়াতে কোন ভুল করেননি। প্রথম গোলের লিড পাবার পর ফিরমিনো, মানেরা উদযাপনে মেতে উঠলে সালাহ কোন উদযাপন করেননি, করেননি তার দ্বিতীয় গোলেও। দুই হাত তুলে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন তার পুরনো ক্লাবের কাছে। হয়তো এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চাইলেন, ক্লাবের প্রতি তার ভালোবাসা চিরদিন থাকবে। রোমাও গোল হজম করে তাদের প্রাক্তন খেলোয়াড়কে জোর করতালি দিয়ে অভিবাদন জানাতে ভুল করেনি। তাদের কাছেও সালাহর প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মানটা আজীবনের জন্য। অলরেডরা দ্বিতীয় গোলটি পায় প্রথমার্ধ শেষে যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে ফিরমিনো এবং সালাহর দারুণ বোঝাপড়ায়। ফিরমিনোর সহজ পাস থেকে আবারো সালাহর দারুণ ফিনিশিং। দ্বিতীয় গোল পেয়েও সালাহ নিশ্চুপ। তারমতো খেলোয়াড়ের যে তার পুরনো দলের বিপক্ষে গোল উদযাপন করা সাজে না।

প্রথম গোল করে হাত তুলে এভাবেই গোল উদযাপন করবেন না বলে জানিয়ে দেন সালাহ; Source: Sky News

রোমা ম্যাচসহ এই মৌসুমে এখন সালাহ পর্যন্ত ১১ টি ম্যাচ খেলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগে। কালকের জোড়া গোলের পর তার গোলসংখ্যা এখন ১০। প্রথম আফ্রিকান হিসেবে এক মৌসুমে ৯ টির বেশি গোল রেকর্ড গড়লেন তিনি। সব লিগ মিলিয়ে এই মৌসুমে ৪৭ ম্যাচে সালাহর মোট গোল ৪২। মোহাম্মদ সালাহর সামনে আছেন শুধু ইয়ান রাশ। ১৯৮৩-১৯৮৪ মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ গোল করেছিলেন। সালাহ আর মাত্র ৫ গোল পেলেই ইয়ান রাশকে ছুঁয়ে ফেলবেন, ৬ গোল করলে জন্ম নেবে নতুন ইতিহাস। এছাড়াও, এ মৌসুমে মেসি ও রোনালদোকে পিছিয়ে ফেলে সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন তিনি।

চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ব্যালন ডি অর রেসে অনেকটা এগিয়ে যাবেন সালাহ; Source: Daily Mail

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে রোমা ছিলো আরো বেশি হতবিহবল। যার ফলে আরো চেপে ধরে অলরেডরা। প্রথমার্ধে সালাহ করেছিলেন জোড়া গোল, সম্ভবত ক্লপ তার দায়িত্ব দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। যার কারণে, জোড়া গোলের পর সালাহ মাতলেন অ্যাসিস্টে। ৫৬ মিনিটে জুয়ান জেসুসকে ফাঁকি দিয়ে সালাহ দলের তৃতীয় গোল করান সাদিও মানে’কে দিয়ে। ৬০ মিনিটে আবারো ফিরমিনো-সালাহ জুটির খেল। আলেকজান্ডার আর্নল্ডের পাস পেয়ে আবারো মানোলানসকে বোকা বানান সালাহ। অবিশ্বাস্যভাবে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে মানোলাসের চোখের সামনে দিয়ে বল বাড়িয়ে দেন রবার্তো ফিরমিনোকে। ফিরমিনো এই বুদ্ধিদীপ্ত পাসকে গোলে পরিণত করতে কোন ভুল করেননি। ৬৭ মিনিটে রোমার জালে আবারো গোল। জেমস মিলনারের কর্নার থেকে হেডে দলের পঞ্চম গোল এনে দেন রবার্তো ফিরমিনো।

রোমার জালে পাঁচ গোলের মধ্যে জোড়া গোলের অবদান এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারের; Photo: Jake Walerius

লিভারপুলের খেলায় ফিরে আসার পর তাদের গতীয় প্রেসিং সহ্য করতে পারেনি রোমা। কিছুটা ভুল আর খানিকটা ভাগ্যের ফেরে অ্যানফিল্ডে পাঁচ গোল হজম করতে হয় তাদের। রক্ষণে ফ্যাজিও, কোলারভ, মনোলাস কিন্তু তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছিলেন। কিন্তু সালাহ যে অবিশ্বাস্য! তার মনোমুগ্ধকর জোড়া গোল আর বুদ্ধিদীপ্ত পাস রুখে দেবার সাধ্যি কার? রোমা রুখতে পারেনি ঠিকি কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারায়নি। যার ফলে একদম শেষ মুহূর্তে ম্যাচে ফিরে তারা দুই গোল ফেরত দেয় লিভারপুলকে। তাই তিন গোলের লিড থাকলেও স্বস্তিতে থাকতে পারবেন না ইয়ুর্গেন ক্লপ। বার্সেলোনা গল্প নিশ্চয়ই তার মনে আছে। তাই ফাইনাল নিশ্চিত করতে রোমার মাঠে যে আরেকবার লড়াকু মনোভাব নিয়ে খেলতে হবে।

বায়ার্ন মিউনিখ বনাম রিয়াল মাদ্রিদ

বায়ার্ন মিউনিখ চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা ছুঁতে পারেনি বিগত টানা পাঁচ বছর। বিপরীতে রিয়াল মাদ্রিদের সামনে টানা তৃতীয় শিরোপা ছোঁয়ার হাতছানি। গত ৪ বছরে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ২ বারই বায়ার্নকে বিদায় করে দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। তাই শিরোপা আক্ষেপের থেকে প্রতিশোধের ম্যাচ ছিলো এটি। প্রতিশোধ নেয়া তো হলো না ব্যাভারিয়ানদের, আক্ষেপ পা বাড়ালো আরো এক কদম। নিজেদের মাঠে আবারো রিয়াল মাদ্রিদের কাছে পরাজিত বায়ার্ন মিউনিখ।

ইয়ুপ হেইংকেসও পারলেন না রিয়াল মাদ্রিদ জুজু থেকে ব্যাভারিয়ানদের বের করতে; Source: Milan Gjorgjevikj

কোচ জিনেদিন জিদান মিউনিখ ম্যাচের জন্য অদ্ভুত এক একাদশ নামালেন। দলে ছিলেন না করিম বেনজেমা বা গ্যারেথ বেল। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে স্ট্রাইকার পজিশনে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর দুই উইং এর দায়িত্বে লুকাস ভাসকেজ ও ইসকো। জিনেদিন জিদানের হাতে পর্যাপ্ত খেলোয়াড় ছিলো, তাই তিনি তার মনমতো একাদশ নামাতে পেরেছিলেন। কিন্তু ইয়ুপ হেইংকেসের যে সেরা তিন সৈনিকই ছিলো মাঠের বাইরে। ম্যানুয়েল নয়ার তো অনেক আগে থেকে ইনজুরির শিকার। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে খেলতে পারেনি ডেভিড আলাবা ও আর্তুরো ভিদাল। পছন্দসই একাদশ না নামাতে পারার পরে আবারো ধাক্কা খেয়ে বসে বায়ার্ন মিউনিখ। ম্যাচের পাঁচ মিনিটে আরিয়েন রোবেন বাধ্য হয় উঠে যেতে, জেরম বোয়াটেং ইনজুরিতে মাঠ ছাড়েন ম্যাচের আধ ঘণ্টা পরে। এমনকি জাভি মার্টিনেজও মাঠ ত্যাগ করেছেন মাথায় আঘাত পেয়ে।

ইনজুরির পর মাঠ ছাড়ছেন বোয়াটেং; Source: Bein Sports

প্রথম থেকে ধাক্কা খেয়েও উত্তেজনাপূর্ণ ফুটবল উপহার দেয় বায়ার্ন মিউনিখ। প্রথমার্ধে সে তুলনায় রিয়াল মাদ্রিদ কোন সুবিধা করতে পারেনি। বায়ার্ন যেভাবে আক্রমণ শুরু করেছিলো, আক্রমণের চাপে তো মাঠে পাওয়া যাচ্ছিলো না জিদান বাহিনীকে। কিন্তু প্রথম দিকের হতাশাকে পেছনে ফেলে ধীরে ধীরে খেলায় ফিরতে গিয়েও ২৭ মিনিটে মস্তবড় ভুল করে বসে রিয়াল মাদ্রিদ। বলের খোঁজে স্বভাবগতভাবে মার্সেলো বায়ার্নের ডান কর্নারের কাছে, মাদ্রিদের বাঁপাশ ফাঁকা থাকা অবস্থাতে আক্রমণে বায়ার্ন মিউনিখ। হামেসের পায়ে বল দেখে রামোস ও কাসেমিরো দুজনই এগিয়ে যান তার দিকে। এমতাবস্থায় ডানপ্রান্ত দিয়ে বুলেটের মত ছুটে বেড়িয়ে যাওয়া জশুয়া কিমিখকে পাস দিলেন হামেস। কিমিখের সাথে পাল্লা দিয়ে গোলবারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন রবার্ট লেভানডস্কি। কেইলর নাভাস ঠিক বুঝে উঠতে পারলেন না শট কে নেবে! তাকে ভাবনাচিন্তার মধ্যে ফেলে গোল করলেন জশুয়া কিমিখ। ততক্ষণে খেলায় ফিরেছে রিয়াল মাদ্রিদ। বাকি সময় উভয় দল পাল্লা দিয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে এবং একদম শেষ মুহূর্তে মার্সেলোর বুলেট শটে ১-১ গোলের সমতা নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে দুদল।

প্রথম গোল করে বায়ার্নকে লিড এনে দেন জশুয়া কিমিখ; Source: Ronald Wittek

বায়ার্ন মিউনিখের বিপরীতে জিনেদিন জিদানের ট্যাকটিস যে ফ্লপ ছিলো সেটা প্রমাণিত। ইস্কোকে তিনি নামিয়েছিলেন উইং সামলাতে।  কিন্তু ইসকো উইং পজিশন থেকে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডেই বেশি সাবলীল। লুকাস ভাসকেজ কিছু ভালো খেললেও রোনালদো ও ক্যাসেমিরো ছিলেন নিজেদের ছায়া হয়ে। পুরোদস্তোর স্ট্রাইকার রোনালদো কখনো মিডফিল্ডে নামেন না আর মধ্যমাঠে বোঝাপড়া ঠিক না হবার কারণেও খেলায় প্রাণ নেই। ঠিক এ সময় জিদান তার ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়া চাল চাললেন। ইসকোর পরিবর্তে মাঠে নামলো মার্কো অ্যাসেনসিও। তাকে নামানোর সিদ্ধান্ত যে একদম উপযুক্ত ছিলো, রিয়াল মাদ্রিদকে লিড এনে দিয়ে অ্যাসেনসিও তা প্রমাণ করতে সময় নেন গুনে গুনে ১২ মিনিট।

অ্যাসেনসিও আবারো প্রমাণ করলেন, কেন তাকে বলা হয় সুপার সাব; Source: 360nobs

ম্যাচের বাকি সময় সহজ সুযোগ ভুল করেছেন রিবেরি ও লেভানডস্কি। ম্যাচের শেষ সময়ে লেভানডস্কি যে ছেলেমানুষি ভুল করলেন তা একদমই লেভানডস্কির মত স্ট্রাইকারের সাথে যায় না। দ্বিতীয়ার্ধে বায়ার্ন মিউনিখ আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলো ঠিকি কিন্তু রামোস ও ভারানের কারণে তাদের সকল আক্রমণ বৃথা গেছে। আর কেইলর নাভাসও বেশ কিছু গোল সেভ করেছেন দৃঢ় হাতে।

রামোসদের গোল উদযাপন; Source: Ayodeji Tunde

রিয়াল মাদ্রিদ ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে সেটা বলা ভুল হবে। তবে দুটো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা আর মিউনিখে আবারো জয় তাদের কিছুটা চিন্তামুক্ত রাখবে। এ ম্যাচে জিনেদিন জিদান তার ট্যাকটিসের যে কারিশমা দেখালেন। বাকি দুটো ম্যাচ এভাবে চললে বলা যেতেই পারে, টানা তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

ফিচার ইমেজ: Goal.com

Related Articles