Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হাত হারানোর ঝুঁকিতে ছিলেন সাকিব: দায় কার?

সাকিব আল হাসানের মুখে একটা হাসি সবসময়ই লেগে থাকে।

ঘুম থেকে যখন উঠলেন, তখনও সেই হাসিটা ছিলো। কিন্তু প্রবল ব্যথায় অস্থির হয়ে উঠলেন। ব্যথা প্রতিদিনই বাড়ছিলো। কিন্তু এতটা বেড়ে যাবে, তিনি কল্পনা করেননি। সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা, টিকিট অবধি কাটা হয়ে গেছে। এখন সমস্যা হলো, এত ব্যথা নিয়ে যাবেন কী করে!

ঠিক করলেন ঢাকাতেই একজন চিকিৎসক দেখানো যাক। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে গেলেন এপোলো হাসপাতালে। বিসিবির সাথে এই হাসপাতালের চুক্তি থাকায় জায়গাটা সাকিবের পরিচিত; চিকিৎকরাও পরিচিত।

চিকিৎসক সাকিবের আঙুল দেখে শিউরে উঠলেন, ‘এই আঙুল নিয়ে তো মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপনই করা সম্ভব না। আপনি এই হাত নিয়ে ক্রিকেট খেলেছেন?’

সাকিব সেই হাসিটা উপহার দিলেন। জিজ্ঞেস করলেন, আঙুলের অবস্থা খারাপ কি না।

হাসপাতালের বিছানায় সাকিব; Image Source: Facebook

চিকিৎসক আরও গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘আঙুলের অবস্থা তো খারাপ বটেই। কিন্তু ব্যাপারটা শুধু আর আঙুলে আটকে নেই। ভেতরের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে হাতের অন্যান্য অংশেও।’

তাহলে এখন উপায়?

চিকিৎসক জানালেন, এখনই ছোট একটা অস্ত্রোপচার করে ভেতর থেকে পুঁজ বের করতে হবে। এটা নিয়ে আর এক মুহুর্ত বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। পুঁজ বের করতে আর কয়েক ঘন্টা দেরি হলে চিরতরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে এই হাত।

এবার সাকিব সত্যিই ভয় পেলেন। দ্রুত অস্ত্রোপচার করা হলো। বেঁচে গেলো এবারের মতো সাকিব আল হাসানের বাম হাত; মানে, বোলিং হাত।

হ্যাঁ, বিশ্বাস করেন আর না-ই করেন, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তার বাম হাত হারানোর ঝুঁকিতে পড়ে গিয়েছিলেন। এই ঝুঁকি নিয়েই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করেছেন। এই ঝুঁকি নিয়েই এশিয়া কাপের প্রথম কয়েকটা ম্যাচ খেলছেন। সাকিব কিছু বুঝতে পারেননি।

সাকিব নিজে চিকিৎসক নন, তাই তিনি বুঝতে পারেননি। কিন্তু যারা এটা বোঝার দায়িত্বে ছিলেন, সেই বিসিবির চিকিৎসক বা বিসিবির ফিজিও-ও নাকি কিছু বুঝতে পারেননি। সাকিব ফিজিওর কাছে বারবার জিজ্ঞেস করেছেন, এই অবস্থায় খেলা চালিয়ে গেলে কোনো সমস্যা হবে কি না। জানতে চেয়েছেন, এই অবস্থায় খেললে বড় কোনো ক্ষতি হবে কি না। কিন্তু ফিজিও সবসময়ই উত্তর দিয়েছেন, কোনো সমস্যা নেই।

এই কথার ওপর ভরসা করে হাত হারাতে বসেছিলেন সাকিব আল হাসান।

হাতটা বেঁচে গেলেও এখন সাকিবকে অন্তত তিন মাসের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হচ্ছে। ওষুধ দিয়ে সংক্রমণ কমানোর পর হবে অস্ত্রোপচার। তারপর অন্তত ছয় সপ্তাহ পুনর্বাসন শেষে ফিরতে পারবেন মাঠে।

নেপথ্যের ঘটনা

সাকিবের আঙুলের এই ইনজুরিটার শুরু গত জানুয়ারি মাসে।

বাংলাদেশে চলছিলো জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট। সেই টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে বাম হাতের কনিষ্ঠা ফেটে যায় তার। মাঠে ফিল্ডিং করতে গিয়ে যখন পড়ে গেলেন, তখন দূর থেকে মনে হয়নি গুরুতর ইনজুরি। কিন্তু ক্যামেরা কাছে নিতেই বোঝা গেলো ভয়াবহভাবে ফেটে গেছে আঙুল। দ্রুত তোয়ালে দিয়ে হাত জড়িয়ে মাঠ থেকে নিয়ে যাওয়া হলো সাকিবকে। তাকে ছাড়াই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেললো বাংলাদেশ। আর ফাইনালে আরেকটা পরাজয়ের মুখ দেখলো।

সেই ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন সাকিব; Image Source: Dhaka Tribune

সেই পরাজয়ের চেয়েও বড় হয়ে উঠলো, সাকিব বেশ কিছুদিনের জন্য ছিটকে গেলেন মাঠ থেকে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এরপর ছিলো টেস্ট সিরিজ। ওই টেস্ট সিরিজেই আবার ফিরে পাওয়ার কথা ছিলো অধিনায়কত্ব। কিন্তু সেই সিরিজেই সাকিব খেলতে পারলেন না। তার বদলে অধিনায়কত্ব করলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজও মিস করলেন তিনি। সেখানেও রিয়াদ প্রক্সি দিলেন। এরপর এলো নিদাহাস ট্রফি।

শুরুতে বোর্ড আশা করেছিলো সাকিব শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এই ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলতে পারবেন। তাই তাকে রেখেই দল ঘোষণা করা হলো। কিন্তু সাকিবের ব্যথা আর কমে না। শেষ অবধি তাকে ছাড়াই রিয়াদের অধিনায়কত্বে খেলা শুরু করলো বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে দারুণ খেলতে থাকলো বাংলাদেশ দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা পরিণত হলো সেমিফাইনালে, যে জিতবে সে ফাইনালে।

এই অবস্থায় সাকিব যোগ দিলেন দলের সাথে। নাটকীয় সেই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ ফাইনালে গেলো। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে আরেক নাটকীয় ম্যাচে হারতে হলো। এই তালগোলে সবাই ভুলে গেলো যে, সাকিব সুস্থ হওয়ার আগেই দলে যোগ দিয়েছেন।

আঙুলের ওই অবস্থা নিয়েই তিনি গেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে।

সেখানে প্রতিদিন ব্যথা বাড়ে, ফোলা বাড়ে। সাকিবকে ব্যথানাশক ইনজেকশন দেওয়া হয়। আর সাকিব এভাবে খেলতে থাকেন। এর মধ্যে ফিজিও বা কেউ খেয়ালও করেন না যে, ভেতরে ভেতরে সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। এক চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে তিনি শুধু জানালেন, অস্ত্রোপচার একটা করাতে হবে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে দেশে ফিরেই সাকিব বললেন, তিনি দ্রুত অস্ত্রোপচার করিয়ে ফেলতে চান। সম্ভব হলে এশিয়া কাপের আগেই। কিন্তু বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সংবাদ মাধ্যমে বললেন, তিনি জানেনই না, সাকিবের অস্ত্রোপচার লাগবে। এরপর জানালেন, সাকিব খেলবেন।

সাকিবের আঙুলের প্রথম ইনজুরির পর অবস্থা; Image Source: Facebook

সাকিবের সাথে বিসিবি সভাপতির কথা হলো, সাকিব এশিয়া কাপে খেলার সিদ্ধান্ত নিলেন।

তবে এশিয়া কাপে যাওয়ার আগে একটি ইংরেজী পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাতকারে সাকিব বললেন, তিনি ২০ বা ৩০ শতাংশ ফিট আছেন। তখন কেউ বোঝেনি; এখন বোঝা যাচ্ছে, সংক্রমণের ব্যাপারটা বাইরে থেকে কেউ না বুঝলেও ভেতরে ভেতরে সাকিবকে ভোগাতে শুরু করেছিলো। ওই অবস্থা নিয়ে সাকিব এশিয়া কাপে তিনটি ম্যাচ খেলে ফেললেন।

এরপর আর পারলেন না। ব্যথা আর ফোলা এতটাই বেড়ে গেলো যে দুবাই থেকে চলে এলেন ঢাকায়। উদ্দেশ্য ছিলো, দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে অস্ত্রোপচার করাবেন। সেটা আর হয়ে উঠলো কই!

সাকিব নিজে যা বলছেন

এখন হাতের কী অবস্থা?

আমি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম কী অবস্থা, সেটা বোঝার জন্য। তারা দেখে বললেন, আর কয়েক ঘণ্টা দেরি হলে হাতটা নষ্ট হয়ে যেতো। তখন আর আমার আসলে দেশের বাইরে যাওয়ার সময় ছিল না। থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুরের তো ভিসা নেওয়া ছিল না। আমেরিকায় গেলে অনেক দেরি হয়ে যেতো। তাই এখানেই ছোট একটা অপারেশন করে পুঁজটা বের করে ফেলা হয়েছে। অনেকটা পুঁজ বের করতে হয়েছে।

হাতটাই নাকি নষ্ট হয়ে যেতে পারতো?

আমি তো ডাক্তার না, তাই আমি বুঝতে পারিনি। যে ডাক্তার দেখলেন, তিনি বললেন, হাতের এই অবস্থা নিয়ে ক্রিকেট খেলা তো দূরে থাক, কোনো কাজই করা যায় না। তারা দেখে বললেন, এটা শুধু আঙুলের সমস্যা নেই। এটা পুরো হাতে ছড়িয়ে পড়ছিল। তাই সাথে সাথে কিছু একটা করা দরকার ছিল।

চিকিৎসা চলছে হাতে; Image Source: Prothom Alo

আপনাকে কি তাহলে জোর করে এশিয়া কাপে খেলানো হলো? তার ফল এটা?

আমার সাথে পাপন ভাইয়ের এটা নিয়ে সরাসরি কথা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, যদি কোনো উপায় থাকে, এশিয়া কাপটা খেলো। কিন্তু না পারলে তো জোর করা যাবে না। পরে আমি ফিজিওকে জিজ্ঞেস করলাম। তাকে প্রশ্ন করেছিলাম— আমি এই অবস্থায় খেললে কি আরো খারাপ কিছু হতে পারে? বা এটা কি এরকমই থাকবে? ফিজিও বলেছিল, নতুন করে খারাপ কিছু হবে না। তাই খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

সেক্ষেত্রে ফিজিও (তিহান চন্দ্রমোহন) ধরতে পারলেন না কেন? ওনার ভুলেই তো এই অবস্থা হলো?

কাউকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। তবে ওনার তো কিছু দায় থাকেই। আমি ওনাকে বারবার করে জিজ্ঞেস করেছি। উনি বলেছে, নতুন করে খারাপ হবে না হাতের অবস্থা। কিছুদিন পর অপারেশন করালেও সমস্যা নেই।

Related Articles