Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে চমকপ্রদ ও অবিস্মরণীয় কিছু ঘটনা

ক্লাব ফুটবলের নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জনপ্রিয় দ্বৈরথ রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনার ম্যাচটি। প্রতিটি এল ক্লাসিকোই যেন একেকটা আখ্যান। কিন্তু তবুও কিছু ম্যাচ বা কিছু ঘটনা আছে যেগুলো এল ক্লাসিকো তথা ফুটবল ইতিহাসেই উল্লেখযোগ্য, আজ এমনই কিছু অবিস্মরণীয় টুকরো টুকরো ঘটনা নিয়ে এই লেখাটি সাজানো।

রিয়াল ১১-১ বার্সেলোনা

১৯৪৩ সালে দুই লেগের কোপা দেল রে সেমি ফাইনালে মুখোমুখি রিয়াল ও বার্সা। প্রথম লেগে রিয়ালকে ৩-০ গোলে হারায় বার্সেলোনা। পরের লেগটি স্পেনের শাসকদের জন্য হয়ে দাঁড়ায় সন্মানের লড়াই। মাদ্রিদের জনগণ শুরু থেকেই তেতে ছিল। ম্যাচের পরিবেশটা বার্সার জন্য ছিল এক নরকের মতো। এত কয়েন উড়ে আসছিল যে, বার্সা গোলরক্ষক নিজের লাইন ছেড়ে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন, যাতে কোনো কয়েন গায়ে না লাগে। সেই ম্যাচে রিয়াল ১১-১ ব্যবধানে জয়লাভ করে। বহুল প্রচলিত গুজব যে, এই ম্যাচের আগে নাকি শাসকগোষ্ঠীর এক কর্মকর্তা বার্সার ড্রেসিংরুম ঘুরে আসেন!

ডি স্টেফানো আর ক্রুয়েফে যুগাধিপত্য দুই ক্লাবের

১৯৫০ সালের দিকে আর্জেন্টিনায় খেলতে থাকা সেরা প্রতিভা আলফ্রেডো ডি স্টেফানোর দিকে শ্যেনদৃষ্টি পড়ে রিয়াল-বার্সা দুই ক্লাবেরই। তবে চুক্তিগত ঝামেলা ছিল এমন যে, স্টেফানোর মালিকানা দুই ব্যবসায়ী পক্ষের অর্ধেক করে ছিল। একপক্ষ রিয়ালের কাছে ৫০ ভাগ বিক্রি করে, আর অপর পক্ষ বার্সার কাছে! লেগে যায় ধুন্ধুমার ঝামেলা দুই ক্লাবে। শেষাবধি এমন প্রস্তাবও আসে যে, উভয় ক্লাবেই এক মৌসুম করে উল্টে-পাল্টে খেলতে হবে! কিন্তু ডি স্টেফানো শেষপর্যন্ত রিয়ালে যোগ দেন, এখানেও শাসকগোষ্ঠীর হস্তক্ষেপের গুজব আছে। স্টেফানো হয়ে যান রিয়ালের সর্বকালের সেরা। রিয়ালে যোগ দেয়ার সপ্তাহখানেক পরের এল ক্লাসিকোতে বার্সার সাথে ৪টি গোল করে বার্সাকে ৫-০ গোলে হারান। স্টেফানোর হাত ধরে রিয়াল টানা ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতে। স্পেন ও ইউরোপে রিয়ালে একচ্ছত্রাধিপত্য তৈরি হয়।

রিয়ালের স্টেফানোর উত্তর ছিল ইয়োহান ক্রুয়েফ। ১৯৭০ সালের দিকে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান এই প্রতিভাকে নেয়ার জন্য রিয়াল ও বার্সার মধ্যে আবার লড়াই শুরু হয়। কিন্তু এবার আর রিয়াল নয়, জয়ী হয় বার্সা। ক্রুয়েফের মধ্যে বার্সা পায় তাদের ভবিষ্যৎ সাফল্য। ক্রুয়েফ আপাদমস্তক গণতন্ত্রকামী লোক ছিলেন। বার্সায় যোগ দিয়েই বলেন, “আমি এমন কোনো ক্লাবে খেলব না যে ক্লাবের সাথে স্বৈরশাসকদের সম্পর্ক আছে।” খুব সহজেই বার্সা সমর্থকদের নয়নের মনি হয়ে দাঁড়ান। যোগ দেয়ার মাসখানেকের মধ্যে রিয়ালকে রিয়ালের মাঠে ৫-০ গোলে হারায় বার্সা। ক্রুয়েফ নিজে একটি গোল করেন আর তিনটি গোল বানিয়ে দেন। তাঁর হাত ধরেই ১৪ বছর পর প্রথম লীগ জেতে বার্সা। বার্সার বিখ্যাত একাডেমী লা মাসিয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা তিনিই, যেখান থেকে এসেছেন আজকের জাভি, মেসি, পুয়োল, ইনিয়েস্তারা। কোচ হিসেবে বার্সাকে জেতান ৪টি লীগ, এনে দেন তাদের ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। বার্সা আজকে যা, তাঁর পেছনে ক্রুয়েফের এত বেশী অবদান যে বলে শেষ করার মতো না।

পাঁচ গোলের ঐতিহাসিক পাল্টা জবাব

আধুনিক বার্সার স্থপতি ইয়োহান ক্রুয়েফ কোচ হওয়ার আগে বার্সা বেশ দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। অপরদিকে রিয়াল মাদ্রিদ টানা ৫ বার চ্যাম্পিয়ন। সেই সময় দায়িত্ব নিলেন ক্রুয়েফ। ৫-০ গোলে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে মাদ্রিদের আধিপত্যের অবসান করেন, শুরু হয় বার্সা-রাজত্ব। টানা  টি লীগ জিতে নেয় বার্সা। তথৈবচ রিয়াল ১৯৯৫ সালে বার্সার আধিপত্য খর্ব করে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে বার্সাকে ক্রুয়েফের দলকেই ৫-০ তে হারিয়ে। অবাক করার ব্যাপার ছিল এটাই যে, ডেনিশ সুপারস্টার মাইকেল লাউড্রপ দুবারই ৫-০ ম্যাচে খেলেছেন বিজয়ী দলের হয়ে!

শুয়োরের মাথা

বার্সেলোনার প্রতীক বলা হতো লুই ফিগোকে, সেই সময়ে বার্সার অধিনায়কও ছিলেন তিনি। বার্সেলোনার সেরা খেলোয়াড়কে ইতিহাসের বিতর্কিততম ট্রান্সফারের মাধ্যমে রিয়ালে নিয়ে আসেন পেরেজ। পেরেজ নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পদে জিতলে ‘বার্সেলোনার হৃদয়’ কেড়ে নিয়ে আসবেন। নিয়ে এলেন তাঁদের নয়নের মধ্যমণি লুই ফিগোকে। আঁতে ঘা লাগে বার্সেলোনা সমর্থকদের। রিয়ালের হয়ে প্রথম যে ম্যাচে ফিগো বার্সার মাঠে আসেন, শুরু থেকেই তাঁর পায়ে বল যাওয়ামাত্র প্রচণ্ড দুয়ো দিতে থাকে বার্সা ফ্যানরা। সাইডলাইনের পাশে ফিগো গেলেই লাইটার, বিয়ার ক্যান এসব ছুঁড়ে মারতে থাকে। তবে সব ছাপিয়ে আলোচনায় আসে একটি শুকরের মাথা। এই মাথাটিকে এখনো বার্সা ফ্যানরা তাঁদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম হিসেবেই গণ্য করে।

দাঁড়িয়ে অভিবাদন

ফিগোর ঘটনার উল্টো ঘটনাও ক্লাসিকোতে আছে। রোনালদিনহোর বার্সেলোনা রিয়ালের মাঠে আসেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে সেরা ফর্মে থেকে, লা লীগায় তখন বার্সার দাপট। সেদিন রিয়ালের মাঠে সম্ভবত তাঁর জীবনের অন্যতম স্মরণীয় খেলাটি দেন রোনালদিনহো। মাঝমাঠ থেকে দুইবার একই কায়দায় বল নিয়ে পুরো ডিফেন্সকে বোকা বানিয়ে গোল করেন দু-দুটি। সেদিনের ম্যাচটি রামোসের জন্য ছিল দুঃস্বপ্ন। ৩-০ গোলে হারার পরও মন্ত্রমুগ্ধ এক বার্নাব্যু স্টেডিয়াম উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানায় বার্সা জাদুকরকে

গার্ড অব অনার

প্রথমে গার্ড অব অনার ব্যাপারটা একটু খোলাসা করা যাক। রীতি হলো, লীগ চলাকালীন কোনো দল যদি কয়েক ম্যাচ হাতে রেখেই লীগ জয় গাণিতিকভাবে নিশ্চিত করে ফেলে, তবে বাকি ম্যাচগুলো যেসব দলের সাথে, তারা ম্যাচ শুরুর আগে দুটো লাইন করে চ্যাম্পিয়ন হতে যাওয়া দলকে অভিবাদন জানায়। ২০০৮ সালে রিয়াল বার্সেলোনার আধিপত্য ভেঙে লীগ জয় নিশ্চিত করে ফেলে কয়েক ম্যাচ হাতে রেখেই, যার মধ্যে একটি ছিল বার্নাব্যুতে বার্সার সাথে। রীতি মেনে বার্সাও রিয়ালকে গার্ড অব অনার দেয়। ফেভারিটের মতো খেলেই রিয়াল সেই ম্যাচ ৪-১ ব্যবধানে জিতে নেয়।

উদযাপনের মাধ্যমে বার্তা

১৯৯৯ সালে ক্যাম্প ন্যুতে ক্লাসিকো। রিয়াল-বার্সায় একঝাঁক বিশ্বসেরা খেলোয়াড় খেলছে তখন। রিয়াল প্রথমে গোল দিলেও রিভালদোর দেয়া গোলে ম্যাচে ফেরে বার্সা। এরপর এগিয়েও যায়, জয় সন্নিকটে দেখে পুরো বার্সা স্টেডিয়াম সোল্লাসে মত্ত। ঠিক এই সময়ই রাউল স্রোতের বিপরীতে গিয়ে গোল করে বার্সাকে জয়বঞ্চিত করেন। পুরো ক্যাম্প ন্যু থেমে যায়। গোল করেই রাউল ঠোঁটের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে পুরো স্টেডিয়ামকে থামতে। এই উদযাপনকে রিয়ালে ‘সেলিব্রেশন অব দ্য ডিকেড’ বলা হতো তখন।

এরপরের আইকনিক উদযাপন জেরার্ড পিকের। ২০১১-১২ মৌসুমে জোসে মরিনহোর রিয়ালকে ৫-০ গোলে হারায় পেপ গার্দিওলার বার্সা। পাঁচ নম্বর গোলটির পর পিকে একে একে পাঁচ আঙুল বের করে দেখান সেই বিখ্যাত ‘পাঁচ’।

রিয়ালকে ৫-০ গোলে হারানোর পর পিকের সেই বিখ্যাত সেলিব্রেশন; Source: FC Barcelona Noticias

এর পরেরবার জবাব দেন রোনালদো। টানা তিনবার লীগ জেতার পর সেবার বার্সার আধিপত্য ভাঙার চেষ্টায় থাকা রিয়াল চার পয়েন্টে এগিয়ে। ম্যাচ আরো চারটা বাকি। ধরাই হচ্ছিল এই ম্যাচ বার্সা জিতলে তারা আবার লীগ জেতার দৌড়ে ফিরবে এবং বাকি চার ম্যাচে রিয়াল পয়েন্ট হারাবে, সাথে লীগও। আবার রিয়াল জিতে যাওয়া মানে লীগ জয় নিশ্চিত। ক্যাম্প ন্যুতে জয়ের কথা ভাবাও তখন ভয়ের কথা। সেই ক্লাসিকোতে প্রথমে রিয়াল এগিয়ে গেলেও বার্সা গোল শোধ করে দেয়, পুরো ৯৯ হাজার বার্সা সমর্থক চিৎকার করছে গোলের জন্য, রিয়াল ব্যাকফুটে। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে মেসুত ওজিলের একটি ম্যাজিকাল থ্রু-বলে রোনালদো ভালদেসকে বোকা বানিয়ে তাঁর সেই বিখ্যাত ‘কালমা’ সেলিব্রেশন করে, হাত দিয়ে বোঝাচ্ছিলেন যে, “থামো! আমি আছি।” সেবার সত্যিই লীগ জিতে যায়  রিয়াল।

গত মৌসুমে লীগে রিয়াল মাদ্রিদ বেশ এগিয়ে থাকলেও ঘরের মাঠে ক্লাসিকোর আগে বেশ কিছু পয়েন্ট হারালে সমীকরণ এমন জায়গায় পৌছে যে, রিয়াল জিতলে লীগ প্রায় নিশ্চিত, কিন্তু হারলে বার্সা আবার রেসে ফিরবে। পরবর্তীতে মাদ্রিদের ম্যাচগুলো ছিল কঠিন আর পা ফসকালেই বার্সা চ্যাম্পিয়ন। টানটান উত্তেজনার সেই ম্যাচে পিছিয়ে পড়া রিয়াল ৮৬ মিনিটে সমতায় ফিরলেও শেষ মিনিটে মেসি গোল করে বার্সাকে লীগ দৌড়ে ফিরিয়ে আনেন। গোলের পর রিয়াল সমর্থকদের দিকে নিজের জার্সিটি তুলে ধরে দেখান মেসি। তবে শেষ অবধি লীগ রিয়ালের ঘরেই ওঠে।

কিন্তু এই মৌসুমের শুরুতে বার্সেলোনার সাথে সুপার কাপের ফাইনালে বার্সার মাঠে এগিয়ে গিয়েও লিড ধরে রাখতে পারেনি রিয়াল। খেলা তখন সমতায়, দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই দারুণ এক শটে অসাধারণ গোলে রিয়ালকে জয় ও মূল্যবান অ্যাওয়ে গোল এনে দেন রোনালদো ৮০ মিনিটে। সেলিব্রেশনের এক পর্যায়ে তিনিও তাঁর জার্সিটি ক্যাম্প ন্যু দর্শকদের সামনে তুলে দেখান যেন সেই ম্যাচের প্রতিশোধ হিসেবেই!

ফিচার ইমেজ: en.as.com

Related Articles