Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ২০১০: ‘অসাবধানী’ জার্মানির বিপক্ষে ‘সংঘবদ্ধ’ স্পেনের গোল

২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপে জার্মানি বনাম স্পেন ম্যাচটির কথা মনে আছে তো? কার্লোস পুয়োলের একমাত্র গোলে জার্মানিকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠে আসে স্পেন। পুয়োলের করা সেই গোলটির মাহাত্ম্য এজন্য স্প্যানিশদের কাছে অনেক বেশি৷ কিন্তু গোলটি কি ছিল শুধুই সাধারণ একটি গোল? মাঝেমধ্যে কিছু গোলের পেছনেও থাকে অনেক গল্প। এটা তেমনই একটা গল্প।

বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে স্পেন আর জার্মানি যখন পাশাপাশি মাঠে নামে, জার্মানরা সবদিক থেকেই স্পেনের থেকে এগিয়ে ছিল। টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স বলুন, কিংবা শক্তিমত্তা, কিংবা শারীরিক গঠন – সব দিক থেকেই জার্মানরা ছিল এগিয়ে। বিশাল গড়নের জার্মানদের পাশে স্প্যানিশদের ‘বাচ্চা’ই মনে হচ্ছিল।

সেমিফাইনালে দুই দলের প্রথম একাদশের খেলোয়াড়েরা; Image Credit: Getty Images

ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য অবস্থায়। স্পেন প্রাণপণে ঠেকিয়ে রাখে জার্মানদের অ্যাটাক। টমাস মুলারের অনুপস্থিতি এদিন ভালোই ভোগায় জার্মানদের। সুযোগ অবশ্য ধরা দিয়েছিল লুকাস পোডোলস্কির পায়ে, কিন্তু তা ঠেকিয়ে দেন ইকার ক্যাসিয়াস।

তবে স্প্যানিশরা যে শুধু আক্রমণ ঠেকাচ্ছিল তা নয়, আক্রমণেও উঠছিল। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় তাদের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। বল দখলের লড়াই জার্মানরাও স্পেনের সাথে খেলেছে প্রায় সমান সমানে। তিকিতাকা খেলেও স্পেন অন্য ম্যাচগুলোর মতো নিজেদের পায়ে সেভাবে বল রাখতে পারেনি। কিন্তু আক্রমণের দিক দিয়ে জার্মানদের তুলনায় পরিষ্কার এগিয়ে ছিল স্পেন। ম্যাচশেষে দেখা যায়, স্প্যানিশদের ১৩ বার আক্রমণের বিপরীতে মাত্র ৫ বার আক্রমণের সুযোগ বের করতে পারে জার্মানরা। এই খেলায় যদি স্পেন হারত, তাহলে তা তাদের উপর একরকম অবিচারই হতো বৈকি।

পরিসংখ্যান দেখে বলুন, খেলায় আসলে কারা এগিয়ে ছিল? Credit: Sofascore

বিরতির সময় এরপর আসে স্প্যানিশদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন।  প্রথমার্ধে তারা যে কয়টি কর্নার নিয়েছিল, সবগুলোই ছিল শর্ট কর্নার। তুলনামূলক লম্বা জার্মানদের বিপক্ষে কর্নার থেকে গোল করতে এটিই ছিল একমাত্র কৌশল। নাহলে কোনোভাবেই জার্মানদের সাথে হেডে যুদ্ধে পারা যাচ্ছিল না।

সেই পরিকল্পনার প্রস্তাবটি আসে খোদ পুয়োলের কাছ থেকেই।  পুয়োল জাভিকে পরিকল্পনাটি বলেন। যে কর্নার থেকে বলটি বাতাসে ভাসিয়ে কোনোমতে যেন পেনাল্টি স্পটের আশেপাশে ফেলেন৷ তাতে করে পুয়োল বাইরে থেকে এসে হেড করবেন। কোচ ভিসেন্তে দেল বস্কও এতে সায় দেন।

কর্নার নেয়ার মুহুর্তে পুয়োলের অবস্থান দেখুন, একদম বক্সের দাগে। তার সামনে বক্সে পিকে ও রামোস, যারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল ডিফেন্ডারদের আটকাতে। Image Credit: FIFA

এখন কথা হচ্ছে, পরিকল্পনাটি কি হুট করেই মাথায় এসেছিল?

না। কারণ ঠিক একইরকম একটি পরিকল্পনা পেপ গার্দিওলা করেছিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে। সেখানে পুয়োলের করা হেডটি ফিরে আসে ক্রসবারে লেগে। কিন্তু শুধু দুইজনে এই গোল হয় না, সেখানে আরেকজনকে থাকতে হয় যে হেড করা ব্যাক্তিকে ফাঁকা জায়গা বানিয়ে দেবেন। বার্সার সেই ম্যাচে এই কাজটি করেছিলেন পিকে।

বল যাচ্ছিল পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি, সেই সাথে পুয়োলও ঢুকছিলেন বক্সে; Image Credit: FIFA

ম্যাচ-পূর্ববর্তী পরিকল্পনায় জার্মানরা কীভাবে ডিফেন্ড করে, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছিল স্পেন। তাদের বিপক্ষে এই টেকনিক কাজে লাগতে পারে তাই অ্যারো-অনুশীলন হয়। কিন্তু অনুশীলনে গোল করার কাজটি করতেন সার্জিও রামোস। রামোস (৬’০”) ছিলেন পুয়োলের (৫’১০”) থেকে লম্বা, কিন্তু পিকের (৬’৪”) থেকে খাটো। পিকেকেই তাই বেশি বিপদজনক মনে করে সবাই মার্ক করত। তাই পিকে গোলের চেষ্টা করার চাইতে জায়গা বানানোর দায়িত্ব নেন। আর সেই কাজে পিকে’কে সহায়তা করার কথা ছিল হৃষ্টপুষ্ট গড়নের পুয়োলের।

বলের গতিকে কাজে লাগিয়ে হেড নিতে একদম জায়গা মত পৌছে গিয়েছেন পুয়োল। রামোস তার কাজ করে ফেলেছেন। বাকি ছিল পিকের কাজ শুধু। জার্মানির সবচেয়ে লম্বা ডিফেন্ডার পেয়র মার্টেসাকার গোলরক্ষকের বক্সে দাঁড়িয়ে শুধু দেখছিলেন দৃশ্য। ঘুণাক্ষরেও তিনি ভাবেন নি যে বল বাইরে পড়বে; Image Credit: FIFA

পরিকল্পনা অনুযায়ী মুহূর্তটি আসে খেলার ৭২ মিনিটে। কর্নার নিতে যান জাভি। এখানেই অল্প একটু পরিবর্তন আসে পরিকল্পনায়। অনুশীলন হয়েছিল তো রামোসকে দিয়ে। কিন্তু প্রথমার্ধের ব্যর্থতার পর পুয়োল নিজেই এই কাজের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি থাকবেন বক্সের বাইরে, আর তার জন্য ভিতরে জায়গা বানাবেন পিকে ও রামোস। সিদ্ধান্তটি অনেকটাই আত্মঘাতী ছিল, কারণ এজন্য তাদের ৪ জন ডিফেন্ডারের ৩ জনকেই উঠে আসতে হয়েছে জার্মানির বক্সে। কোনোভাবে জার্মানি যদি বল পেয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে যায়, তবে সেখানে তাদের আটকানোর কেউ থাকবে না৷ এই আশংকা পুয়োলেরও ছিল। কিন্তু তিনি এতটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে এই আশংকা মাথায় নিয়েও উপরে উঠে আসেন। তার তখন একটিই সংকল্প, হয় গোল দেব, না হয় গোল খাব।

এক ছবিতে গোলের পেছনে পিকে ও রামোসের ভূমিকা। পিকের লাফটি হেড দেয়ার জন্য মনে হলেও আসলে তার উদ্দেশ্য ছিল খেদিরাকে সামনে যেতে বাঁধা দেয়া; Image Credit: FIFA

কর্নার নেন জাভি, একদম পরিকল্পনামাফিক। বল উড়ে আসে জার্মানির বক্সের একদম মাঝামাঝি। পুয়োল তখনও বক্সের বাইরে, কেউ তাকে বিপদজনক মনে করেনি, তাই মার্কও করেনি৷ বল বক্সে ঢোকামাত্র ছুটন্ত ট্রেনের মতো দৌড়ে আসেন পুয়োল। ঝাঁকড়া চুলের পুয়োল দৌড়ে ঢোকেন বক্সে, পেশীবহুল পায়ের উপর ভর করে লাফিয়ে ওঠেন বাতাসে; চওড়া কাঁধ ও ঘাড়ের পেশী ব্যবহার করে সমস্ত শক্তি নিয়ে আসেন মাথায়। ভেংচানো একটা মুখভঙ্গিতে হেড করেন বলে। স্পেনের ৫ নম্বর জার্সিধারী খেয়োয়াড়ের এই হেড এতটাই গতিসম্পন্ন ছিল যে বল প্রায় জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যাবে অবস্থা।  ম্যানুয়েল নয়্যারের কোনো প্রচেষ্টাই বলকে জালের ছোঁয়া পাওয়া থেকে আটকাতে পারেনি। নিঁখুত এক পরিকল্পনার এক দুুর্দান্ত এক্সিকিউশনে গোল করেন স্পেনের ৫ নাম্বার জার্সিধারী এই ডিফেন্ডার।

চেষ্টা করেছিলেন নয়্যার, কিন্তু এই বুলেটক্ষিপ্র শটের কাছে তার সব চেষ্টাই বিফলে; Image Credit: Michael Steele

এখানে পুয়োলকে গোলের জন্য জায়গা বানিয়ে দিয়েছিলেন পিকে ও রামোস। কর্নার নেয়ামাত্র তারা জার্মান ডিফেন্ডারদের নিজেদের দিকে সরিয়ে নেন। রামোস দাঁড়িয়ে যান, তার পেছনে আটকা পড়েন ক্লোসা। আর বল উড়ে যাচ্ছিল পিকের দিকে। পিকে লাফ দিয়েছিলেন। তার সামনে এসে হেড দিয়েছিলেন পুয়োল। আর পিকের দীর্ঘকায় শরীরের পেছনে আটকা পড়েন খেদিরা। এজন্য পুয়োলকে কারোর সাথেই বল দখলের লড়াই করতে হয়নি।

দলগত পরিকল্পনা সফল হওয়ার পর উৎযাপনে ব্যস্ত স্পেনের খেলোয়াড়েরা। অন্যদিকে এতক্ষণ স্প্যানিশদের ঠেকিয়ে রেখে পরে ব্যর্থ হওয়ার হতাশায় বল ছুড়ে মারছেন ম্যানুয়েল নয়্যার; Image Credit: Simon Bruty

গোলের পর পুরো দল বুনো উল্লাসে মেতে উঠে পুয়োলকে ঘিরে। গোলটিই শুধু আসে পুয়োলের মাথা থেকে। কিন্তু গোলটির পেছনে ছিল স্পেন দলের অনেকেই। একটি দলীয় পরিকল্পনায় গোল পায় তারা। কারোর একক নৈপুণ্যে গোলটি আসেনি, সবারই আলাদা আলাদা দায়িত্ব ছিল, এবং সবাই সেটি খুব সুন্দরভাবে পালন করে।

এই এক দলগত গোলে জার্মানিকে হারায় স্পেন। সেই সাথে আদায় করে নেয় প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার টিকিট। সেখানে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে জিতেও যায় তারা।

কিন্তু এই শেষ। এরপর বিশ্বকাপের মঞ্চে স্পেনকে আর ২০১০ সালের স্পেনের মতো পাওয়া যায় নি। ২০১৪ সালে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায়, ২০১৮ সালে দ্বিতীয় পর্ব এবং ২০২২ সালে এসেও সেই রাউন্ড অফ সিক্সটিনেই মরক্কোর কাছে হেরে শেষ হয় তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা।

কোথায় অভাব ছিল স্পেনের? হয়তো পুয়োলের মতো একজন মাস্টারমাইন্ডের অভাব, হয়তো জাভির মতো নিখুঁত এক্সিকিউশনারের অভাব; যে অভাব এখনো পুরণ করতে পারেননি কেউই। তবে শুধু পুয়োল-জাভি কেন? বাকিদের অভাবও কি পুরণ করতে পেরেছে স্পেন? নিশ্চয়ই নয়৷ না হয় কেনই বা প্রতিবার এভাবে বিদায় নিতে হচ্ছে তাদের!

This article is in Bangla language. This is on Spain's famous goal against Germany in the semi-final of the 2010 FIFA World Cup, leading them to the world cup final for the very first time.

Feature Image Credit: Getty Images

References:
1. https://sportsfinding.com/puyol-i-told-xavi-you-put-it-that-i-either-score-a-goal-or-a-german-enters-the-goal/48847/
2. https://bleacherreport.com/articles/416795-fifa-world-cup-2010-latest-careless-germans-beaten-by-carles
3. https://thesefootballtimes.co/2020/05/21/david-villa-at-the-2010-world-cup-the-goalscorer-who-became-a-legend/

Related Articles