Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফুটবলের ভূতুড়ে যত গোল

গোল বলের খেলা ফুটবল পুরোটাই অনিশ্চয়তায় ঢাকা। কখন কী যে ঘটবে বলা মুশকিল। দোলাচালের এই খেলায় হয়েছে বহু গোল। ম্যারাডোনার সাতজনকে কাটিয়ে করা শতাব্দীর সেরা গোলসহ হালের মেসি-রোনালোদোদের চমক জাগানিয়া গোলও। তবে ইতিহাস ঘাটালে পাওয়া যাবে কিছু ভূতুড়ে গোলও। ম্যাচ কিংবা ফলাফল ছাপিয়ে সেগুলো উঠে এসেছে আলোচনায়। আজ আমরা জানবো এ রকম কিছু অদ্ভুত গোল সম্পর্কে।

কিসলিং এর ভূতুড়ে গোল

২০১৩ সালের অক্টোবর মাস। হফেনহাইমের সাথে খেলার জন্য তাদের মাঠে উপস্থিত হয় বেয়ার লেভারকুসেন। সেই ম্যাচটি ২-০ গোলে সহজে জিতলেও ম্যাচ ছাপিয়ে আলোচনায় ছিলো বেয়ার লেভারকুসেনের দ্বিতীয় গোলটি।

সেই গোলটি করেছিলেন স্টেফান কিসলিং। গোলটি অদ্ভুত ছিলো দুটি কারণে। প্রথমত, বল জালেই প্রবেশ করেনি। দ্বিতীয়ত, বল জালের পাশ দিয়ে বাইরে চলে যেতে দেখলেও হফেনহাইমের খেলোয়াড়েরা রেফারির দেওয়া গোলের সিদ্ধান্তে প্রতিবাদও করেনি।

ঘটনাটি ঘটে ম্যাচের ৬৬ মিনিটে। বাঁ দিক থেকে উড়ে আসা কর্নারে হেড করেন কিসলিং। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বলটি সাইড নেটে লেগে পাশ দিয়ে চলে যায়। গোল মিসের হতাশায় মাথায় হাত দেওয়া কিসলিং পরক্ষণেই আবিষ্কার করেন তার সতীর্থরা উল্লাস করছেন। হতবুদ্ধি হওয়া কিসলিং পরে নিজেই দেখতে পান বল জালের ভেতর। অন্যদিকে রেফারিও গোলের হুইসেল দিয়ে দেন।

কিন্তু আদতে সত্যিকার অর্থেই বল জালে প্রবেশ করেনি। হফেনহাইমের সাইডের জালের সুতাগুলো কিছুটা হালকা ও ভঙ্গুর ছিলো বিধায় সেটি ছিঁড়েই বল জালে প্রবেশ করে। কিসলিংসহ আরো বেশ কয়েকজন সেই ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও রেফারির চোখ এড়িয়ে যায় সেটি। তাই রেফারির ভুল হুইসেলে গোলের উৎসব শুরু করেন কিসলিংসহ বেয়ার লেভারকুসেনের অন্য খেলোয়াড়েরাও।

জেরোয়েন যোয়েটের অদ্ভুত আত্মঘাতী গোল

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ঘটনা। ডাচ লিগে পয়েন্ট টেবিলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে থাকা ফেইনুর্ড ও পিএসভি আইন্দহোভেন একে অপরের মুখোমুখি হয়। শিরোপা লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দলের জন্যই ম্যাচটি ছিলো মহাগুরুত্বপূর্ণ। অদ্ভুত আত্মঘাতী গোলের জন্য এরকম একটি ম্যাচই বেছে নেন পিএসভি গোলরক্ষক জেরোয়েন যোয়েট।

ম্যাচের তখন ৮২ মিনিট। শ্বাসরুদ্ধককর ম্যাচে সেই সময়ে স্কোরলাইন ১-১। ফেইনুর্ডের মাঠ থেকে ড্র ফলটাও আইন্দহোভেনের জন্য সন্তুোষজনকই বলা চলে। ম্যাচের সেই মূহুর্তে কর্নার কিক পায় ফেইনুর্ড। স্পটকিক থেকে উড়ে আসা বলে হেড করেন ভ্যান ডার হেইডেন। দুর্বল হেডটি আটকিয়ে দেন যোয়েট। এতটুকু পর্যন্ত ঠিকই ছিলো।

কিন্তু পরক্ষণেই বলকে হাত দিয়ে টেনে বুকের কাছে আনার সময় মস্ত বড় ভুল করে ফেলেন যোয়েট। হেইডেনের হেড আটকানোর সময় যোয়েটের শরীর গোল লাইনের ভেতরে থাকলেও বল ছিলো লাইনের বাইরে। কিন্তু বল টেনে নেওয়ার ফলে বলও চলে যায় গোললাইনের ভেতরে। তাই সাথে সাথেই আবেদন জানায় ফেইনুর্ড খেলোয়াড়েরা। রেফারি সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বাজিয়ে দেন গোলের বাঁশি।

যোয়েট স্বভাবজাত রিফ্লেক্সে বল নিজের দিকে টেনে নিয়েই হাস্যকর ভুলটি করেন, যে ভুলের মাশুল পিএসভি আইন্দহোভেন দেয় ম্যাচটি ২-১ গোলে হেরে।

বাতাসের সাহায্যে গোল

২০১৬ সালে এফএ কাপের প্রিলিমিনারি রাউন্ডে একে অপরের মুখোমুখি হয় গুয়ের্ন্সে ও থেমসমিড। আগস্টে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই ম্যাচে থেমসমিড জিতে নেয় ২-০ গোলে। তবে ম্যাচের চেয়ে আলোচনায় বেশি ছিলো থেমসমিডের করা দ্বিতীয় গোলটি।

থেমসমিডের মাঝমাঠের খেলোয়াড় স্কট কিঞ্চ ম্যাচের মাঝামাঝি সময়ে অনেক দূরপাল্লার শট নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বারের আশেপাশে তো দূরে থাক, তার নেওয়া বাজে শটটি প্রায় কর্না র ফ্ল্যাগের কাছাকাছি চলে যায়।

তারপরই ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। প্রচন্ড এক দমকা হাওয়ায় বলটি মাঠের বাইরে না গিয়ে বরং ঘুরতে ঘুরতে চলে আসে গুয়ের্ন্সের ডি বক্সে। হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়া গুয়ের্ন্সের রক্ষণের খেলোয়াড়েরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই হেড দেন থেমসমিডের একজন খেলোয়াড়। কিন্তু সেই হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসলে ফিরতি বল রিবাউন্ড করে জালে জড়ান জ্যাক মেহোনি। আর ২-০ এগিয়ে গিয়ে পরের রাউন্ডও নিশ্চিত করে থেমসমিড।

অন্যদিকে দূরপাল্লার গোল দিতে চাওয়া স্কট ফিঞ্চের বাজে শটটি রুপান্তরিত হয় দুর্দান্ত এক এসিস্টে। যদিও সবই বাতাসের কেরামতি!

ডেরেন বেন্টের বিচ বলের গোল

আগের দুই মৌসুমে টটেনহাম হটস্পারের হয়ে হতাশাজনক পারফরম্যান্স করে ভাগ্যকে ফেরাতে ২০০৯ সালে সান্ডারল্যান্ডে পাড়ি জমান ডেরেন বেন্ট। সেই মৌসুমে দুর্দান্ত খেলে করেন ২৪ গোল। তবে ২৪টি গোলের মধ্যে একটিকে বেশ ভালোভাবেই মনে রাখবেন বেন্ট। লিভারপুলের সাথে করা সেই জয়সূচক গোলটি ম্যাচে ব্যাবধান গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি অদ্ভুত হওয়ার কারণেও মনে রাখবেন ফুটবলপ্রেমীরা।

২০০৯ সালের অক্টোবরে হোম ম্যাচে লিভারপুলের মুখোমুখি হয় সান্ডারল্যান্ড। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে রাইট ফ্ল্যাঙ্ক থেকে একটি লো ক্রস উড়ে আসে লিভারপুলের ডি বক্সে। কোনো রক্ষণের খেলোয়াড় সেটি নিরাপদে ক্লিয়ার না করতে পারায় সেটি গিয়ে পড়ে ডেরেন বেন্টের পায়ে। সামনে ফাঁকা বার থাকলেও ডিফেন্ডারের জটলার মধ্যে ফাঁক খুঁজে গোল করাও কষ্টসাধ্য ছিলো বেন্টের জন্য। অন্যদিকে লিভারপুল গোলরক্ষক পেপে রেইনাও ফাঁকা জায়গা পুরোটা কভার করে রেখেছিলেন।

বেন্টের নেওয়া শটটি যখন পেপে রেইনার দিকেই ছুটে যাচ্ছিলো ঠিক তখনই ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। দর্শকদের থেকে ছুটে আসা একটি বিচ বল এসে পড়ে মাঠে। বেন্টের শট সেই বিচ বলে লেগে দিক পরিবর্তন করে পেপে রেইনাকে বোকা বানিয়ে আশ্রয় নেয় জালে। হতবুদ্ধি লিভারপুল খেলোয়াড় ও পেপে রেইনা রেফারির কাছে গোল বাতিল করার আবেদন জানালেও তা নাকচ করে দেন রেফারি। ডেরেন বেন্টের সেই অদ্ভুতুড়ে গোলে শেষপর্যন্ত ১-০ জয় নিয়ে সেদিন মাঠ ছাড়ে সান্ডারল্যান্ড।

ট্যাকল থেকে গোল

এক রবিবার বিকেলে অন্যান্য দিনের মতোই ইংল্যান্ডে অ্যামেচার ফুটবলের খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে অন্য দিনের মতো সেদিন মাঠের অবস্থা এতটা ভালো ছিলো না। কাদার পাশাপাশি মাঠের ঘাসের অবস্থাও বাজে ছিলো।

সেই সান্তা ক্রুজ স্টেডিয়ামেই শুরু হয় ইংল্যান্ডের নিচের দিকের ঘরোয়া লিগের এক ম্যাচ। টুসক্যানি ও লামেজিয়া নামে দুই দল একে অপরের মুখোমুখি হয়। সেদিন পুরো ম্যাচের মূল হিরো বনে যান ডমিনিকো জামপাগলিওনি।

খেলার মাঝে নিজের অর্ধে প্রতিপক্ষের কাছ বল হারান জামপাগলিওনি। তড়িৎ গতিতে সেই বল উদ্ধারের জন্য ট্যাকল করেন লামিজিয়ার এই মাঝ মাঠের খেলোয়াড়। কর্দমাক্ত মাঠের সুবাদে ট্যাকলটি পরিণত হয়ে অনেকটা লম্বা দূরুত্বের শটের মতো। অন্যদিকে টুসক্যানি গোলরক্ষক বল প্রতিপক্ষের অর্ধে দেখে কিছুটা অন্যমনস্ক ছিলেন সেই সময়। সেই সুযোগে লামিজিয়ার করা ট্যাকলটি উড়ে গিয়ে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে খুঁজে নেয় জালের আশ্রয়।

দেখতে অদ্ভুত হলেও গোলটি নান্দনিকও ছিলো বটে। ডমিনিকোর সেই অদ্ভুত গোলেই সেদিন প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে জয় নিয়ে ফেরে লামিজিয়া। তবে ডমিনিকো নিজেও চিন্তা করেননি ট্যাকলটি গোল হতে যাচ্ছে। চিন্তা করেনি আশেপাশের কোনো খেলোয়াড়ও। মাঝে মাঝে অচিন্তনীয় ঘটনা ঘটে বিধায় ফুটবল রহস্যজনক, ফুটবল সুন্দর।

Featured Image : Goal.com

Description : Tgis article is about strangest goal ever scored in football.

References : References are hyperlinked in the article.

Related Articles