Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রসঙ্গ স্টাইকরেট এবং তামিম

বাংলাদেশের ক্রিকেটে বেশ অজনপ্রিয় ব্যক্তি পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার, বর্তমানে ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে মন্তব্য করে সবার বিরাগভাজন হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেল ‘রমিজ স্পিকস’-এ বেশ সরব সাবেক এই পাকিস্তানি ওপেনার।

বিশ্বকাপের আগে সবগুলো দল নিয়ে এই চ্যানেলে কথা বলেছেন তিনি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে বানানো এক ভিডিও’তে রমিজ রাজা কথা বলেন পাকিস্তানি পরিসংখ্যানবিদ মাজহার আশরাফের সঙ্গে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তারা বাংলাদেশের দূর্বলতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন দু’টি বিষয়।

রমিজ রাজা; Image Credit: Imran Ahmed

প্রথমত, বাংলাদেশের প্রতি একশ রানে ৯.৫ ভাগ রান আসে ছক্কায়। মানে, দেড় ছক্কা থাকে। তাদের মত ছিল, বিশ্বকাপে সফল হতে আরও বেশি ছক্কা মারতে হবে। বিশ্বকাপে কয়েকটি ম্যাচে বাংলাদেশ দল দেখিয়েছে, ছক্কার সে ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

দ্বিতীয়ত, তারা উল্লেখ করেন তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিতে বল খরচের বিষয়টি। তামিম প্রতিটি সেঞ্চুরিতে গড়ে ১২৫ বল খরচ করেন। মানে, সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে এই বল খেলেন তিনি। যেখানে ভারতের ভিরাট কোহলি ১০০ বলে, ইংল্যান্ডের জনি বেয়ারস্টো ৭৬ বল, জ্যাসন রয় ৮৩ বলেই সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। এই ২৫-৫০ বলের ফারাককে বড় করে তুলে ধরেছেন তারা। তাদের মতে, এই ফারাক বাংলাদেশের দলীয় স্কোরে প্রভাব ফেলছে। মানে, তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, তামিমের স্ট্রাইকরেটের বিষয়টি।

বিশ্বকাপের পর থেকে এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝেও একই বিষয়ের আলোচনা ঠাঁই পাচ্ছে। বিশ্বকাপে অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের রান পাওয়া-না পাওয়ার চেয়ে হঠাৎ করেই ওয়ানডেতে তার স্ট্রাইকরেট নিয়ে উচ্চকিত সমর্থকরা। ফিসফাস বলুন, অস্ফুট স্বরে আলোচনা বলুন, তামিমের স্ট্রাইকরেট-কেন্দ্রিক আলোচনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঝড় তুলছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের সফলতা, ধারাবাহিকতা, অবদান ভুলেচুকে তার স্ট্রাইকরেট নিয়ে সরব সবাই। কেউ কেউ কয়েক কাঠি এগিয়ে থেকে এমনও লিখে বসছেন, ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান নাকি স্বার্থপরের ন্যায় ব্যাটিং করছেন। নিজের গড় বাড়াচ্ছেন, নিজের রানটা বাড়িয়ে নিচ্ছেন। কঠোর এসব সমালোচনা কতটা যৌক্তিক, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তামিমভক্তরা।

Image Credit: Getty Images

আলোচনার সূত্রপাত যেভাবে

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-২০ মিলে ২১ সেঞ্চুরির মালিক (গত ২০ জুন পর্যন্ত) এই বাঁহাতি ওপেনারের ব্যাট বিশ্বকাপের শুরুর দিকে প্রত্যাশার দাবি মেটাতে পারছে না। শুরুর পাঁচ ম্যাচে একটি হাফ সেঞ্চুরিসহ ১৬৯ রান করেছেন তিনি। আর এসব ইনিংসে ইংল্যান্ডের কন্ডিশন, ম্যাচের গতি-প্রকৃতি, উইকেটের ধরন, অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইকরেট বিবেচনায় তার ব্যাটিংটা সমালোচনার মুখে পড়ে যাচ্ছে।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২৯ বলে ১৬, নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩৮ বলে ২৪, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৯ বলে ১৯, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৫৩ বলে ৪৮, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৭৪ বলে ৬২ রান, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫৩ বলে ৩৬ রান, ভারতের বিপক্ষে ৩১ বলে ২২ এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ২১ বলে ৮ রান করেছেন তামিম, যেখানে তাদের স্ট্রাইকরেট ৭১.৬৫! এই বিশ্বকাপেই বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাকিব ৬০৬ রান করেছেন ৯৬.০৪ স্ট্রাইকরেটে, মুশফিক ৩৬৭ রান করেছেন ৯২.৬৮ স্ট্রাইকরেটে, মাহমুদউল্লাহ ২১৯ রান করেছেন ৮৯.৭৫ স্ট্রাইকরেটে, সৌম্য সরকার ১৬৬ রান করেছেন ১০১.২২ স্ট্রাইকরেটে, লিটন দাস ১৮৪ রান করেছেন ১১০.১৮ স্ট্রাইকরেটে।

বলাই বাহুল্য, সতীর্থদের ঊর্ধ্বগামী স্ট্রাইকরেটই দৃষ্টিকটু করে তুলছে তামিমের ব্যাটিংকে!

Image Credit: AP

তবে শুধু দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের মাঝেই নয়, বাংলাদেশ দলের থিংক ট্যাংকারদের মাঝেও আছে এমন সুর। ধীরে ধীরে অন্য ব্যাটসম্যানরা ভালো করতে শুরু করায় তামিমের বেশি বল ব্যয়টা তাদের মাঝেও চিন্তার খোরাক যোগাচ্ছে। সৌম্য-লিটনদের উপর অনেক চাপ দেয়া হচ্ছে কি না, সেই ভাবনার উদয় হয়েছে দলের অভ্যন্তরে।

বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের এক বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, তামিমের স্ট্রাইকরেট নিয়ে দোটানা আছে তাদের মাঝেও। তবে বিশ্বকাপের আগে এসব নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে রাজি নয় টিম ম্যানেজমেন্ট।

সূত্র জানায়,

‘তামিম আমাদের খুব নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান, দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ও একপ্রান্ত ধরে লম্বা ইনিংস খেলছে। শেষ দিকে উইকেট থাকলে চালিয়ে খেলতে পারছে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। আবার তার এই ভূমিকার কারণে অন্য ওপেনারদের উপর চাপ বাড়ছে, সৌম্য-লিটনরা নিজেদের সহজাত খেলাটা খেলতে পারছে না। প্রতি ম্যাচে গিয়েই রান তোলার চাপ, দায়িত্বটা তাদের নিতে হচ্ছে। এটা যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই খুব কঠিন। সব ম্যাচে গিয়েই মারা সম্ভব নয়। 

কিন্তু তামিম ধীরে শুরু করায় ওদেরকে মারতে হচ্ছে। তাতে তারা আউটও হয়ে যাচ্ছে অনেক সময়। এবং সমালোচনার মুখে পড়ছে। তামিমের রান-বলের দূরত্ব যদি আর একটু কমে আসতো, তাহলে ওই চাপটা পড়তো না ওদের উপর। আর সৌম্য-লিটন কিন্তু অনেক প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। নিজেদের সামর্থ্য দেখিয়েছে, বড় ইনিংস খেলতে পারে। ওরা আক্রমণাত্মক, কিন্তু ওদেরকেও যদি সেট হতে একটু সময় দেয়া যেত, অমন চালিয়ে খেলার চাপটা কমানো যেত, তাহলে ওরা কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারতো।’ 

Image Credit: The Daily Star

এবার বিশ্বকাপের আগেও সংবাদমাধ্যমকে এই বাঁহাতি ওপেনার বলেছিলেন, দল তাকে একটা ভূমিকা দিয়েছে। যেখানে লম্বা ইনিংস খেলা, ব্যাটিংয়ে ইনিংসের সিংহভাগ সময় একপ্রান্ত ধরে খেলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তাকে। এবং তাই ওপেনিংয়ে এসে বেশ রয়ে-সয়ে শুরু করতে হচ্ছে তাকে। যদিও টিম ম্যানেজমেন্টের এই বিশ্বস্ত সূত্র, তামিমের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন।

সূত্র আরও জানায়,

‘তামিম যেটা মিডিয়ায় বলছে, তাকে রোল দেয়া হয়েছে, এটা ঠিক না। সে সিনিয়র, তাকে দায়িত্ব নিতেই হবে। এটাই স্বাভাবিক। তার কাছে সবাই বড় ইনিংস আশা করে। রোল দেয়া হয়েছে বলার চেয়ে তার বলা উচিত, সে এখন নিজের খেলাটা খুব ভালো বুঝতে পেরেছে। কীভাবে এগোতে হবে, ইনিংস তৈরি করতে হবে, গেম সেন্স, সবকিছুর উন্নতি হয়েছে।’ 

তামিমের ক্যারিয়ার কী বলে?

Image Credit: Getty Images

২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক তামিমের। তাও ওয়ানডেতে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে। তারপর গত এক যুগে বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে এই একটা নামই স্থির হয়েছে। এর মাঝে এসেছে এবং হারিয়ে গেছে অনেক নাম। এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২০২ ম্যাচে ৩৫.৫৩ গড়ে ১১ সেঞ্চুরিসহ ৬,৮৯২ রান করেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার, যেখানে তার ক্যারিয়ার স্ট্রাইকরেট ৭৭.৭৪। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আসলে এমন স্ট্রাইকরেটেই ব্যাটিং করে গেছেন তিনি।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অন্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাকিব ৮২.৭৪, মুশফিক ৭৯.০৪, মাহমুদউল্লাহ ৭৬.৪৪, লিটন দাস ৮৮.১৭, সৌম্য সরকার ৯৮.৫৭ স্ট্রাইকরেটে রান করেছেন। সেদিক থেকে ক্যারিয়ার গ্রাফের হিসেবে সতীর্থদের অনেকের চেয়েই খুব একটা পিছিয়ে নেই তামিম।

তামিমের ক্যারিয়ারকে দুইভাগে ভাগ করলেও দেখা যায় প্রায় অভিন্ন চিত্র। তার স্ট্রাইকরেটে বড় হেরফের হয়নি। ২০০৭ সালে অভিষেকের পর থেকে ২০১৫ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত (২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত) ১৪১ ওয়ানডেতে ৪ হাজার ১২৫ রান করেছেন তিনি ২৯.৬৭ গড়ে, যেখানে ছিল ৪ সেঞ্চুরি এবং স্ট্রাইকরেট ৭৭.৪৯।

২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকেই আসলে ওয়ানডেতে একটা বড় রকমের পরিবর্তন চোখে পড়ছে তামিমের ব্যাটিংয়ে। ঠিক খোলনলচে না হলেও পরিবর্তনটা দৃষ্টিগোচর হয়েছে সবার। এই সময়ে বিশ্বের বড় বড় ব্যাটসম্যানদের মতোই দুর্দান্ত ধারাবাহিকতায় রান করেছেন তিনি। ধারাবাহিকতার দিক থেকে কোহলি, রুট, উইলিয়ামসন, স্মিথদের কাছাকাছিই বলা যায় তার অবস্থান।

Image Credit: Getty Images

২০১৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৬৩ ওয়ানডেতে ২,৭৭৬ রান করেছেন তিনি, যেখানে ব্যাটিং গড় ৫৪.৬৯, স্ট্রাইকরেট ৭৮.৯৩, সঙ্গে আছে ৭ সেঞ্চুরি। বলা বাহুল্য, তার এই সাত সেঞ্চুরির ছয়টিতেই ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরিগুলোর পূর্ণতা আসলে এখানেই। আর এই সাত সেঞ্চুরির ইনিংসগুলোতে তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে যথাক্রমে ১১২, ১০৮, ১১০, ১২৭, ১২৪, ১৪৬, ১২০ বল খেলেছেন তামিম।

২০১৫ সালের ১৭ এপ্রিল মিরপুরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৩৫ বলে ১৩২ রান, ১৯ এপ্রিল একই ভেন্যুতে একই দলের বিরুদ্ধে ১১৬ বলে ১১৬ রান করেন তামিম। ২০১৬ সালে তার সেঞ্চুরি একটি। ১ অক্টোবর মিরপুরে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ১১৮ বলে ১১৮ রান করেছিলেন। ২০১৭ সালে করেছিলেন দু’টি সেঞ্চুরি। ২৫ মার্চ ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪২ বলে ১২৭ রান, ১ জুন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ১৪২ বলে ১২৮ রান করেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালেও দু’টি সেঞ্চুরি পেয়েছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ও সফল ব্যাটসম্যান তামিম। ২২ জুলাই গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১৬০ বলে ১৩০ রান, ২৮ জুলাই সেন্ট কিটসে একই প্রতিপক্ষের সঙ্গে ১২৪ বলে ১০৩ রান করেছিলেন তিনি।

২০১৫ বিশ্বকাপ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সিনিয়র তিন ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা তামিমের চেয়ে কম রান করেছেন ওয়ানডেতে। তবে তাদের স্ট্রাইকরেট অবশ্য তার চেয়ে বেশি। এই সময়টাতে মুশফিক ৮৭.৮২, সাকিব ৮৯.৩৩, মাহমুদউল্লাহ ৮২.০৬ স্ট্রাইকরেটে রান তুলেছেন। আর এই চতুষ্টয়ই ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের মেরুদণ্ড।

অন্যরা ভালো করায় চোখে পড়ছে তামিমের স্ট্রাইকরেট

Image Source: News18 

বিশেষজ্ঞরা অবশ্য তামিমের স্ট্রাইকরেট নিয়ে আলোচনা ঠিক নয় বলেই মনে করেন। তাদের মতে, অন্য ব্যাটসম্যানরা ভালো করায় চোখে পড়ছে তামিমের স্ট্রাইক রেট।

মুশফিক-তামিমদের ব্যাটিং গুরু ও বাংলাদেশের প্রখ্যাত কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিম এই বিষয়ে বলেছেন,

‘এই বিশ্বকাপে তো আসলে তামিম এখনও সেভাবে ব্যাটিং করতেই পারেনি। যেটা স্বাভাবিকভাবে হয়, তামিম দেখেশুনে ধীরে শুরু করে। সবাই তো একই গতিতে শুরু করে না। তামিম একটু ধীরে শুরু করে, তারপর ও সেট হয়ে রান করা শুরু করে। ওই জায়গায় ও শুধু গত ম্যাচেই যেতে পারছিল, মানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। এছাড়া অন্য কোনো ম্যাচে কিন্তু ওই জায়গায় যেতে পারেনি। তাই ওর স্ট্রাইকরেট নিয়ে আলোচনার অবকাশ আমি দেখি না। কারণ, ওই জায়গায় গেলে তারপর না ও ওর খেলাটা শুরু করতে পারে। ওই জায়গায় ও যেতে পারেনি আসলে। আর আমাদের দলের কৌশল হলো, ও যাতে উইকেটটা না দেয়। আমরা যদি উদাহরণস্বরূপ ডেভিড ওয়ার্নারকেও দেখি, ওয়ার্নারেরও শুরুর দিকে স্ট্রাইকরেট অত বেশি না। ও ধীরে শুরু করে, সাবধানে শুরু করে। নিশ্চিত করে, উইকেট যাতে না হারায়। অনেক দল আছে এমন, তামিমও সেভাবেই চেষ্টা করছে। ওর স্ট্রাইকরেট নিয়ে আসলে চিন্তা করার কিছু নাই। ও খুব ভালো ফর্মে নাই, সেটা নিয়ে চিন্তা করতে পারে সবাই।’

মিডল অর্ডার ভালো করায় তামিমের ব্যাটিং চোখে পড়ছে। নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেছেন,

‘তামিমের ক্যারিয়ারে স্ট্রাইকরেট কত, সেটা তো আমরা জানি। এখনও সে এটাই ধরে রেখেছে। আমাদের দলের সাথে এটাই মানায় যে, ও লম্বা ইনিংস খেলতে পারে, বড় ইনিংস খেলতে পারে। এবং ওর পাশাপাশি অন্যরা খেলে। এখন একটু চোখে পড়ছে, কারণ মিডল অর্ডার খুব ভালো খেলছে। মিডল অর্ডার ভালো না খেললে ওর এই ইনিংসটাই আমাদের কাছে খুব মূল্যবান ছিল। তামিম একটা ৭০, ৮০, ৯০ বা ১০০ রান করবে, ওই স্ট্রাইকরেটে। এবং ওর পাশাপাশি অন্য ব্যাটসম্যানরা ওদের মতো করে স্ট্রোকপ্লে করে যাবে। আমার মনে হয়, এটা নিয়ে খুব আলোচনা করার কিছু নেই।’

শাহরিয়ার নাফীস; Image Credit: The Daily Star

বাংলাদেশের প্রথম টি-২০ ম্যাচের অধিনায়ক শাহরিয়ার নাফিসের কন্ঠেও একই সুর। বিশ্বকাপে ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো’তে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। তামিমের স্ট্রাইক রেট প্রসঙ্গে শাহরিয়ার নাফিস বলেছেন,

‘তামিম যখন আসছে, এমনই খেলছে। তামিম ওর মতোই খেলবে। এমন কিন্তু না যে, ওর খেলা পড়ে গেছে। তামিম বরাবরই কিন্তু এভাবে খেলে আসছে, কম-বেশি। আমার কাছে মনে হয়, তামিমের খেলা পরিবর্তন হয় নাই, বরং আশপাশের খেলাটা পরিবর্তন হয়েছে। সৌম্য, সাকিব, মুশফিক, লিটন বেশি স্ট্রাইকরেট নিয়ে খেলছে। এ কারণে মনে হচ্ছে যে, তামিম স্লো খেলছে। তামিম তো এমনই খেলছে। তামিমের ক্যারিয়ার স্ট্রাইকরেট খুব বেশি ওঠানামা করেনি মনে হয়। আশেপাশের ব্যাটসম্যানদের খেলার ধরনটা পরিবর্তন হওয়ার কারণেই মনে হচ্ছে তামিম বেশি স্লো, বা ওকে নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে আসলে।’

তবে এমন সমালোচনা ঠিক নয় বলেই মনে করেন শাহরিয়ার নাফিস। তিনি বলেছেন,

‘মাঝখানে অনেকদিন তামিমের সঙ্গে স্থায়ী কোনো পার্টনার ছিল না। তখন কিন্তু তামিমের খেলাটাই মূখ্য ছিল। তামিমের খেলাটাই কিন্তু আমাদের জন্য স্ট্রেন্থ ছিল। এখন যেহেতু সবাই পারফর্ম করতেছে, এ কারণে হয়তো মানুষ কথা বলতেছে। কিন্তু আমি মনে করি, কথা বলার দরকার নাই।’

This article is in Bangla language. It is about the strike rate controversy of Tamim Iqbal and what came with it. This article contains several quotes from specialists and analysts, and several insights on this issue. Necessary hyperlinks are provided inside the article.

Featured Image: Getty Images

Related Articles