Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টেনিস: গ্র্যান্ড স্ল্যাম এবং উন্মুক্ত যুগের সূচনা | শেষ পর্ব

[১ম পর্ব পড়ুন]

‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার হয় ১৯৩৩ সালে। সেই বছর জ্যাক ক্রফোর্ড নামে এক অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড় ইংল্যান্ড, ফ্রান্স আর অস্ট্রেলিয়ার টুর্নামেন্ট জিতে নেন। জন কিয়ারান নামে এক মার্কিন সাংবাদিক লিখলেন, যদি এই ক্রফোর্ড ইউএস চ্যাম্পিয়নশিপেও জয়ী হন, তাহলে তিনি ‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ জিতেছেন বলতে হবে।

জ্যাক ক্রফোর্ড; Image Source: tennis.com.au

‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ মূলত কন্ট্রাক্ট ব্রিজের একটি টার্ম। এর মাধ্যমে মোটাদাগে বড় কোনো জয় বোঝানো হয়। ১৯৩০ সাল থেকে গলফের এক বর্ষপঞ্জিতে সব বড় শিরোপা জয়ের কৃতিত্বকে ‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ বলা হতো। কিয়ারান টেনিসের জন্য এটি প্রয়োগ করেন। এক বর্ষপঞ্জিতে চারটি প্রধান আসর জিতলে খেলোয়াড় ‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ জিতেছেন বলা হতো, সাথে অলিম্পিক যোগ হলে হতো ‘গোল্ডেন স্ল্যাম’। এখান থেকে প্রধান আসরগুলোও ‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ নামে পরিচিতি পায়।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ইউএস টুর্নামেন্টে ক্রফোর্ডকে রানারআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তবে পাঁচ বছর পর ইতিহাসের প্রথম ‘গ্র্যান্ড স্ল্যাম’ জয়ের কৃতিত্ব দেখান মার্কিন খেলোয়াড় ডোনাল্ড বাজ।

উন্মুক্ত যুগ বা ওপেন এরা

উইম্বলডন, ইউএস, অস্ট্রেলিয়ান আর ফ্রেঞ্চ ওপেন এই চারটি আমরা টেনিসের গ্র্যান্ড স্ল্যাম বলে জানি। মূলত ১৯৬৮ সালে ওপেন এরা বা উন্মুক্ত যুগ শুরু পর এগুলো বর্তমান রূপ লাভ করে। কিন্তু এই ওপেন এরা কী জিনিস?

ওপেন এরার বিষয়টি ভিন্ন। এজন্য ফিরে যেতে হবে বিংশ শতকের শুরুতে। নানা দেশে তখন বসত টেনিসের আসর। সেখানে খেলতেন কারা? আসর উন্মুক্ত ছিল কেবল অপেশাদার বা অ্যামেচার খেলোয়াড়দের জন্য। তাহলে পেশাদার কারা ছিলেন?

তখনকার দিনে প্রতিযোগিতায় আজকের দিনের মতো কাড়ি কাড়ি প্রাইজমানি ছিল না। ফলে যারা এখানে অংশ নিতেন তারা খেলতেন অর্থ ছাড়াই। এরাই অ্যামেচার বা অপেশাদার। তাদের যাতায়াত আর খাওয়ার খরচ বাবদ কিছু অর্থ আয়োজকেরা দিতেন। অর্থ নিয়ে না খেললেও তারা ছিলেন দক্ষ টেনিস খেলোয়াড়, এবং তাদের র‍্যাঙ্কিং হতো আলাদা করে। টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের তালিকায় অপেশাদার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকতেন তারা।

অন্যদিকে প্রফেশনাল বা পেশাদাররা অর্থের বিনিময়ে খেলতেন। তারা মূলত দেশে দেশে ঘুরে বিভিন্ন স্পন্সরের আয়োজিত প্রদর্শনীমূলক খেলায় অংশ নিতেন। খেলাই ছিল তাদের পেশা, যেখানে অপেশাদারদের পেট চালাতে অন্য কাজ করা লাগত। ফলে প্রথম সারির অনেক অপেশাদার খেলোয়ার পেশাদারের ভূমিকায় নেমে যান। তাদের প্রধান সমস্যা ছিল- আন্তর্জাতিক আসরগুলোর দরজা পেশাদারদের জন্য বন্ধ ছিল। 

পেশাদার টেনিসের সূচনা হিসেবে ধরা হয় ১৯২৬ সাল। তখন চার্লস পাইল নামে ধনাঢ্য এক ক্রীড়াব্যক্তিত্ব তৎকালীন র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকা ফরাসি সুজান ল্যাংলেনকে ৫০,০০০ মার্কিন ডলার দেন। শর্ত ছিল- ল্যাংলেন যুক্তরাষ্ট্রে এসে তাদের চ্যাম্পিয়ন মেরি কে. ব্রাউনের সাথে বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনীমূলক খেলা খেলবেন। পাইল আরো চার পুরুষ খেলোয়াড়কেও দলে ভিড়িয়ে নেন।

মেরি ব্রাউন আর সুজানে ল্যাংলিন অর্থের বিনিময়ে ম্যাচ খেলেছিলেন © fineartamerica.com

আশাতীত সফল হয় পাইলের পরিকল্পনা। প্রতিটি খেলা দেখতে সব জায়গাতে ভিড় জমায় বহু মানুষ। খেলাগুলোও হয় যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় টেনিসের মাঠে। পরবর্তী চার দশক এরকম প্রদর্শনীমূলক আসর খেলেই পেশাদাররা আয় করতেন, যেখানে তাদের খেলতে হতো অপেশাদার চ্যাম্পিয়নদের সাথে।

পেশাদার খেলোয়াড়দের মধ্যেও র‍্যাঙ্কিং থাকত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিনী জ্যাক ক্রেমার ছিলেন পেশাদার চ্যাম্পিয়ন। ১৯৫০ সাল থেকে তিনি কাজ শুরু করেন পর্দার পেছনে, পেশাদার টেনিসের জনপ্রিয়তা বাড়াতে। তৎকালীন নামকরা টেনিস তারকা ফ্রাঙ্ক সেজম্যান, টনি ট্র্যাবার্ট, লিউ হোড আর কেন রজওয়েলের মতো আরো অনেককে পেশাদার সার্কিটে নিয়ে আসেন তিনি। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম শীর্ষ টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন জ্যাক ক্রেমার © Los Angeles Times

পেশাদার টেনিসে অর্থের ছড়াছড়ি দেখে অপেশাদারদের অনেকের মাঝেই ভাবান্তর দেখা দেয়। পকেট ভারী করতে যাতায়াত আর খাবারের খরচ বাবদ অতিরিক্ত অর্থের বিল দিতে থাকেন তারা। উদ্দেশ্য- বাকি অর্থ নিজেদের ট্যাঁকে গোঁজা। টেনিস অ্যাসোসিয়েশনগুলো সব বুঝেও চোখ বন্ধ করে রাখল। কারণ এরাও যদি পেশাদারদের দলে নাম লেখায়, তাহলে তাদের আসরই বন্ধ হয়ে যাবে। 

বড় বড় স্পন্সররা নিয়মিত পেশাদার প্রতিযোগিতার আয়োজন করত, অংশগ্রহণ করলে মিলত মোটা অঙ্কের অর্থ। তাদের মূল প্রতিযোগিতাগুলো ছিল ওয়েম্বলি প্রো, ইউএস প্রো আর ফ্রেঞ্চ প্রো। 

পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়েরা তাদের নিজস্ব টুর্নামেন্ট খেলে বেড়াতেন; Image Source: usopen.org

বিভিন্ন দেশের টেনিস নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো চাইছিল পেশাদার-অপেশাদার ভেদাভেদ তুলে সবাইকে আসরে আমন্ত্রণ জানাতে। এজন্য প্রাইজমানির পরিকল্পনাও ছিল তাদের। কিন্তু আন্তর্জাতিক লন টেনিস অ্যাসোসিয়েশন চূড়ান্তভাবে রক্ষণশীল মনোভাব দেখায়। তারা কিছুতেই এই প্রস্তাবে সাড়া দিল না।

১৯৬০ সাল আসতে আসতে অপেশাদার তালিকার প্রথম সারির প্রায় সবাই নাম কাটিয়ে নেয়। উইম্বলডন, ফরাসি আর ইউএস চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে এলো নিচের সারির খেলোয়াড়েরা। স্বাভাবিকভাবেই দর্শক তাদের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না, ফলে লোকসানের সম্মুখিন হলেন আয়োজকেরা।

সেই বছরের গ্রীষ্মে আন্তর্জাতিক লন টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে পেশাদারদের জন্য গ্র্যান্ড স্ল্যামের দরজা উন্মুক্ত করে দেয়ার প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হলো। রক্ষণশীলদের চাপে প্রস্তাব ব্যর্থ হয়ে যায়। এরপর জাতীয় টেনিস সংস্থাগুলো অ্যাসোসিয়েশনকে বাইরে রেখে নিজেদের স্থানীয় আসরে পেশাদার আর অপেশাদার সবাইকে আমন্ত্রণের পরিকল্পনা করতে থাকে।

১৯৬২ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন শীর্ষ টেনিস খেলোয়াড়, কিংবদন্তী রড লেভার পেশাদার হয়ে যান। তার পথে ধরে আরেক দফা বড় বড় খেলোয়াড়েরা তাদের ফেডারেশনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

টেনিসের কিংবদন্তী রড লেভার © Tim Graham/Fox Photos

১৯৬৭ সালে গড়ে ওঠে পেশাদার টেনিসের দুটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান, ন্যাশনাল টেনিস লীগ আর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ টেনিস। প্রথমটি ছিল ইউএস ডেভিস কাপ চ্যাম্পিয়ন জর্জ ম্যাককলের কাজের ফসল। দ্বিতীয়টি নিউ অর্লিয়েন্সের ব্যবসায়ী ডেভ ডিক্সন আর ডালাস অয়েল আর ফুটবল ক্লাবের মালিক লামার হান্টের অধীন। অপেশাদার সার্কিটে বাকি যেসব নামকরা খেলোয়াড় ছিলেন, তাদের প্রায় সবাইকে টেনে নিয়ে যায় এই দুই প্রতিষ্ঠান। ফলে সেই বছর কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম আয়োজন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়েই দ্বিধায় পড়ে যায় অ্যাসোসিয়েশন।

বাধ্য হয়ে ১৯৬৮ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক লন টেনিস ফেডারেশন নতি স্বীকার করল। পেশাদার-অপেশাদার সবার জন্য মূল আসরগুলো উন্মুক্ত করে দেয় তারা।সূচনা হয় ওপেন এরা বা উন্মুক্ত যুগের। 

নতুন আইনের অধীনে প্রথম টুর্নামেন্ট হয়েছিল ১৯৬৮ সালের এপ্রিলে, ইংল্যান্ডের বোর্নমাউথে। ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে প্রথম হন যথাক্রমে কেন রজওয়েল আর ভার্জিনিয়া ওয়েড।

প্রথম ওপেন গ্র্যান্ড স্ল্যাম হিসেবে আয়োজিত হয় উইম্বলডন। ২৬,১৫০ পাউন্ড প্রাইজমানি (৬২,৭৬০ মার্কিন ডলার) রাখা হয় অংশগ্রহণকারী সবার জন্য। শিরোপা জেতেন রড লেভার, পান ২,০০০ পাউন্ড। বিলি জিন কিং মেয়েদের চ্যাম্পিয়ন হলেও তার জন্য বরাদ্দ ছিল ৭৫০ পাউন্ড।

উইম্বলডনে হয়েছিল ওপেন এরার প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম; Image Source: tennishead.net

ওপেন এরার প্রথম ইউএস চ্যাম্পিয়নশিপে প্রাইজমানি ছিল এক লাখ ডলার। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হন আর্থার অ্যাশ। ১৯৬৯ সালে হিসেবে প্রথম পেশাদার হিসেবে শিরোপার গ্র্যান্ড স্ল্যাম গড়েন রড লেভার।

আর্থার অ্যাশ; Image Source: people.com

পরবর্তী দুই দশকের মধ্যে গ্র্যান্ড স্ল্যাম আসরগুলোতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের প্রাইজমানির ব্যবস্থা হয়ে যায়। বড় বড় স্পন্সররা ভিড় জমাতেন এসব আসরে। লোক উপচে পড়ত একেকটি খেলা দেখতে। শীর্ষ পর্যায়ের খেলোয়াড়েরা বছরে প্রায় এক মিলিয়ন ডলার কামাতে পারতেন।

খেলোয়াড়দের সংগঠন

ওপেন এরার আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল টেনিস খেলোয়াড়দের নিজস্ব সংগঠন তৈরি। নিজেদের দাবিদাওয়া আদায় ও খেলোয়াড়দের অধিকার সুরক্ষার জন্য পুরুষ ও নারীদের আলাদা সংস্থা গড়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে পুরুষ খেলোয়াড়েরা বানান দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব টেনিস প্রফেশনালস (The Association of Tennis Professionals/ATP)। ১৯৭৩ সালে জন্ম নেয় উইম্যান্‌স টেনিস অ্যাসোসিয়েশন। ১৯৭৭ সালে আন্তর্জাতিক লন টেনিস অ্যাসোসিয়েশনও নাম পরিবর্তন করে হয় আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন (International Tennis Federation /ITF)।

পুরুষ ও নারী টেনিস খেলোয়াড়েরা আলাদা সংগঠন গড়ে তোলেন; Image Source: tennisworldusa.org

আজ অবধি ইংল্যান্ডের উইম্বলডন, ইউএস ওপেন, অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আর ফ্রেঞ্চ ওপেন চলে আসছে টেনিসে মূল আসর হিসেবে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন দিয়ে জানুয়ারিতে বর্ষপঞ্জী আরম্ভ হয়, এরপর মে-তে ফ্রান্স আর জুনে উইম্বলডন হয়ে সেপ্টেম্বরে শেষ হয় যুক্তরাষ্ট্রে। প্রথম আর শেষ প্রতিযোগিতা খেলা হয় হার্ড কোর্টে (অ্যাস্ফল্ট/কনক্রিটজাতীয় শক্ত মেঝেতে), উইম্বলডন ঘাসে। আর ফ্রেঞ্চ ওপেন মাটি বা ক্লে কোর্টে।

Related Articles