Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফিফা বর্ষসেরা কোচ: জিদানের দ্বিতীয়, নাকি দেশম কিংবা দালিচের প্রথম?

ক্লাব ফুটবলের কোনো মৌসুমে সর্বোচ্চ অর্জন চ্যাম্পিয়নস লিগ, তারপর হয়তো লিগের অর্জনকেই ধরা হবে। আবার কোনো মৌসুমে কোনো ক্লাব যদি এ দুটো শিরোপা জিততে পারে, তাহলে তো কথাই নেই। বছর শেষে বর্ষসেরার পুরস্কারগুলো তাদের কাছেই চলে আসবে। কিন্তু প্রতি ৪ বছর পরপর এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে। ৪ বছর পর যখন বিশ্বকাপ আসে, তখন চ্যাম্পিয়নস লিগকে সরিয়ে তা অর্জন করে নেয় সর্বোচ্চ অর্জনের মর্যাদা। বর্ষসেরা পুরস্কারের রীতিনীতিও পাল্টে যায়। যেমন- ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো চ্যাম্পিয়নস লিগে দানবীয় পারফরম্যান্স করে শিরোপা জিতলেও উয়েফা বর্ষসেরার মঞ্চে প্রাক্তন দলের সদস্য লুকা মদ্রিচের বিশ্বকাপের অর্জনের কাছে তিনি হেরে যান।

২০১৮ বিশ্বকাপের বছর না থাকলে হয়তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিফা বর্ষসেরা পেতে পারতেন জিদান। কারণ রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে যে এ বছর ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তিনি। তার সাথে সেরা তিনে নমিনেশন পাবার সম্ভাবনা ছিলো প্রিমিয়ার লিগ জেতা পেপ গার্দিওলা ও ইউরোপা জেতা ডিয়েগো সিমিওনের। কিন্তু এবার সবকিছুই নির্ভর করছে বিশ্বকাপের উপর। ফিফার বর্ষসেরা কোচের পুরস্কারের তাই এবার লড়াই বিগত বছরগুলোর মতো হবে না। জিনেদিন জিদানের ক্লাবের সাফল্যের পাশাপাশি জ্লাৎকো দালিচ ও দিদিয়ে দেশমের বিশ্বকাপ সাফল্যের মাত্রা একই।

গত বছর ফিফার সেরা কোচ নির্বাচিত হয়েছিলেন জিদান; Image Source: Goal.com

ফেভারিট দল হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপে যায়নি ক্রোয়েশিয়া। গিয়েছিলো পূর্ণাঙ্গ একটি দল নিয়ে, যে দলে প্রত্যেক খেলোয়াড়ই দারুণ আত্মবিশ্বাসী। কয়েক বছরের ভেতর ক্রোয়েশিয়া দলের এমন পরিবর্তনের পেছনের নায়ক অবশ্যই জ্লাৎকো দালিচ। কোনো এক বিশেষ মন্ত্রে তিনি যেন ক্রোয়েশিয়া দলের সবকিছুতেই পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগিয়ে দিয়েছিলেন।

 জ্লাৎকো দালিচ, ক্রোয়েশিয়াকে বিশ্বকাপ ফাইনালে তোলা কোচ; Image Source: Birla.net

ক্রোয়েশিয়া দলের তারকা খেলোয়াড় কারা? পেরেসিচ, সুবাসিচ বা মানজুকিচ জাতীয় দল বা ক্লাবের জন্য জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হলেও তাদের নাম সেভাবে লোকমুখে উচ্চারিত হয় না। তাই ক্রোয়েশিয়ার তারকা খেলোয়াড় ছিলো মূলত দুজন, লুকা মদ্রিচ ও ইভান রাকিটিচ। কিন্তু দালিচ কখনো তারকাকেন্দ্রিক দল সাজাননি। তার দলে প্রত্যেক খেলোয়াড়ই সমান গুরুত্ব বহন করতো। আর শুধুমাত্র রাকিটিচ বা মদ্রিচের দায়িত্ব একটু বেশি থাকতো।

দালিচের এই ট্যাকটিস আর কিছু নিখুঁত চিন্তা-ভাবনার ফলেই ক্রোয়েশিয়া পৌঁছেছিল বিশ্বকাপ ফাইনালে। কিন্তু ফিফার বর্ষসেরা কোচ হবার জন্য দালিচ কতটা উপযুক্ত? ফুটবলে সবকিছুকে ছাপিয়ে শিরোপা বা ট্রফিকেই সম্মানের চোখে দেখা হয়। সারা মৌসুম বা পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে নান্দনিক ফুটবল খেলে, শেষে শূন্য হাতে ফিরলে তার বাহবা শুধুমাত্র দর্শকই দেয়। জ্লাৎকো দালিচের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি প্রযোজ্য। ক্রোয়েশিয়া পুরো বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়ে ফাইনালে পোঁছালেও ট্রফি তাদের হাতে ওঠেনি। এই দুর্দান্ত দলকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে যে ফ্রান্স, তাদের কোচও কিন্তু ফিফা বর্ষসেরা কোচের তালিকায় আছেন। আর সফলতার দিক থেকে তার যোগ্যতাও কিন্তু একধাপ বেশি।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার সোনালি প্রজন্ম; Image Source: Reuters

দিদিয়ের দেশম; ফ্রান্সের কোচের দায়িত্বে আছেন বেশ কয়েক বছর। ফ্রান্সের একটা যুগের ফুটবলারদের পর তারুণ্যনির্ভর এ দলটি তিনি নিজে হাতে বানিয়েছেন। বিশ্বকাপের শুরুতেই সমালোচিত হলেন তিনি, কারণ অনেক খেলোয়াড়কেই তিনি দলে জায়গা দিতে পারেননি। যে ফুলব্যাকদ্বয়কে সবাই ভেবে রেখেছিলো ফ্রান্স দলে, তাদের বদলে দেশম খেলালেন আনকোরা দুজনকে। ফ্রান্স বিশ্বকাপ না জিতলে হয়তো হাজারো প্রশ্ন দেশমের দিকে ধেয়ে আসতো। কিন্তু বর্তমানে এসব কৌশনের জন্য প্রশংসাই তিনি পেয়ে যাচ্ছেন। 

দিদিয়ের দেশম, কোচ ও খেলোয়াড় হয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি জিতেছেন যিনি; Image Source: Football365.com

বিশ্বকাপে ফ্রান্স গেছে ফেবারিট দল হিসেবেই, দলে তারকা খেলোয়াড় ঠাসা। গোলরক্ষক থেকে বেঞ্চে থাকা ডিফেন্ডার পর্যন্ত সেরাদের পর্যায়ের খেলোয়াড়। এই দল নিয়ে ফ্রান্স তো স্বাভাবিকভাবেই ভালো করবে, এমন কথা বলে অনেকেই দেশমের প্রাপ্য কৃতিত্ব দিতে চান না। অথচ তারকাপূর্ণ একটি প্রজন্ম থেকে একাদশ নির্বাচন করে সেই দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সহজ কথা নয়। অনেক কোচই এ কাজটি করতে পারেননি। পূর্ণাঙ্গ শক্তিশালী দল তো ইংল্যান্ড বা বেলজিয়ামও ছিলো, অথচ ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারেনি তারা। দেশম গত বিশ্বকাপেও পারেননি, হেরেছেন ইউরো ফাইনাল। কিন্তু এবার আর শিরোপা হাতছাড়া হতে দেননি। জিনেদিন জিদানের সময়ের পর ফ্রান্সকে আরও একবার বিশ্বকাপ এনে দেবার কৃতিত্ব অর্জনের জন্য ফিফা বর্ষসেরার ট্রফিটা যদি এবার দেশমের হাতে ওঠে, তা হবে তার প্রাপ্য পুরস্কার। 

বিশ্বকাপ জয়ে উল্লসিত ফরাসি দল; Image Credit: Alexander Nemenov/Getty Image

রিয়াল মাদ্রিদের কোচের চেয়ার ছেড়ে দেবার পর জিনেদিন জিদান ফুটবল থেকে বেশ দূরে আছেন, কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে গত মৌসুমে তার অর্জন এখনও টাটকা। কোনো কোচ, এমনকি ইতিহাসে কোনো দল যা পারেনি, তা করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। জিনেদিন জিদানের অধীনে তিন মৌসুমে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। আর জিদান পেয়েছেন কোনো ক্লাবকে টানা ৩ বার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো প্রথম কোচের মর্যাদা। 

জিনেদিন জিদান, একমাত্র কোচ যিনি টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন; Image Source: Eurosports 

ফিফা আলাদা হয়ে পুরস্কার দেওয়া শুরু করলে প্রথমবার অর্থাৎ ২০১৬ সালে পুরস্কার পান লেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগ জেতা ক্লদিও রানিয়েরি। যদিও সে বছর চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছিল রিয়াল মাদ্রিদ, তবে লেস্টার সিটির রূপকথা ও রানিয়েরির অর্জনের সামনে তা ফিকে হয়ে যায়। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের পাশাপাশি লা লিগাতেও প্রথম হয়েছিলো রিয়াল মাদ্রিদ। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্ষসেরা কোচ হন জিদান। আর এ বছরের গল্পও অনেকটা একই, শুধুমাত্র তার বড় প্রতিপক্ষ বিশ্বকাপ জেতা দিদিয়ের দেশম। 

টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পেছনে জিদানের ট্যাকটিকসের দারুণ গুরুত্ব ছিলো। নিজের পছন্দসই একটা একাদশ পেয়েছিলেন এবং তা সাজিয়েছিলেনও নিজের মতো করে। ৯০ মিনিটের প্রতিটি সেকেন্ড যেন ব্যবহার করতে চাইতেন জিদান। কখনও ইসকোকে নামিয়ে প্রতিপক্ষের কাউন্টার অ্যাটাক নিষ্ক্রিয় করে, আবার কখনও অ্যাসেনসিও এবং ভাসকেজকে নামিয়ে আক্রমণের গতি বাড়িয়ে। ফুলব্যাক দিয়ে দুই উইং দিয়ে ক্রসের মাধ্যমেও ম্যাচে আক্রমণে যাবার পদ্ধতি ব্যবহার করতেন তিনি। আর এরই সুফল পেয়েছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রতি ম্যাচে। জিদানের ট্যাকটিকস হয়তো সবসময় লিগে কাজ করেনি, কিন্তু মাদ্রিদকে যে অর্জন এনে দিয়েছিল তিনি তা নিয়ে অন্য কিছু ভাবার অবকাশ নেই। 

রিয়াল মাদ্রিদ, একমাত্র ক্লাব হিসেবে টানা তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার রেকর্ড তাদের দখলে; Image Source: Sportsclub

বিশ্বকাপ ফাইনালে যাওয়া, বিশ্বকাপ জেতা, নাকি চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা ঘরে তোলা- ফিফা কোনটিকে বেশি মূল্যবান ভাবছে, তা আন্দাজ করা সহজ নয়। কারণ সবাই এমন একটি অবস্থানে দাঁড়িয়ে, মনে হতে পারে তিনজনই তাদের দিক থেকে সেরা। তবে আরও গভীরভাবে চিন্তা করে যদি একজনকে বেছে নিতেই হয়, তাহলে ২৪ সেপ্টেম্বর দিদিয়ের দেশমের মুখের হাসি আরও গাঢ় হতে যাচ্ছে।

ফিচার ইমেজ: Marca

Related Articles