Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ট্রেবল জেতা সাত ক্লাব

ট্রেবল!

একটিমাত্র শব্দের মাহাত্ম্য শুধু ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। বলা যায়, যেকোনো ক্লাবের জন্যই আরাধ্য বস্তু এই ট্রেবল। এক মৌসুমে একই সাথে চ্যাম্পিয়নস লিগ, ঘরোয়া লিগ ও ঘরোয়া কাপ শিরোপা ট্রফিকেসে পুরতে পারলে তবেই একটি ক্লাবের ট্রেবল জয় পরিপূর্ণ হয়। ব্যাপারটি যে বেশ দুরূহ, তা এমনিতেই বোঝা যাচ্ছে। যার জন্য যেকোনো ক্লাবকে পুরো মৌসুম ধরে টানা ভালো খেলে যেতে হবে। এক পা হড়কালেই ছুটে যেতে পারে একটি ট্রফি। তবে এই ট্রেবল জয়ের মতো অসাধ্য সাধন করেছে সাতটি ক্লাব, যার মধ্যে বার্সেলোনার ভাগ্যে দুইবার জুটেছিল এই শব্দের মুকুট। প্রতিবারের মতো এইবারও এই পর্যায়ে এসে দুইটি দলের সম্ভাবনা ছিল ট্রেবল জয়ের। লা লিগা টেবিলে এক নাম্বারে থাকা বার্সেলোনা কোপা দেল রে ফাইনালেও উঠেছে, চ্যাম্পিয়নস লিগেও ছিল সেমিফাইনালে। অন্যদিকে, একই অবস্থা ডাচ ক্লাব আয়াক্সের। এই দুই ক্লাবের কেউই ট্রেবল না জিতলেও সম্ভাবনা ছিল শেষ অবধি। চলুন, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ট্রেবলজয়ী সাত ক্লাবকে

সেল্টিক (১৯৬৬-৬৭)

প্রথমবারের মতো ট্রেবল জেতার সৌভাগ্য অর্জন করে স্কটিশ ক্লাব সেল্টিক। বিখ্যাত কোচ জক স্টেইনের অধীনে ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে তিনটি শিরোপাই ঘরে তোলে এই ক্লাব। মৌসুমের এপ্রিল মাসে এবারডিনকে হারিয়ে স্কটিশ কাপ জিতে নেয় ক্লাবটি। অন্যদিকে, লিগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রেঞ্জার্সের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইশেষে লিগ শিরোপাও পকেটে পুরে জক স্টেইনের শিষ্যরা।

অন্যদিকে, এইবারই প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান কাপের মতো কুলীন প্রতিযোগিতায় খেলতে নেমেছিল সেল্টিক। তাতেও তাদের শিরোপা থেকে বঞ্চিত করতে পারেনি কোনো দল। ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ২-১ গোলে হারিয়ে সাফল্যের ষোলোকলা পূর্ণ করে দলটি। তবে শুধুমাত্র এই তিনটি শিরোপাই নয়, এর পাশাপাশি সেল্টিক জিতেছিল স্কটিশ কাপ ও গ্লাসগো কাপ। অর্থাৎ, সম্ভাব্য ৫টি শিরোপাই জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় দলটি।

শিরোপা জয়ের পাশাপাশি কিছু ভিন্নধর্মী রেকর্ডও গড়ে ক্লাবটি। সেই মৌসুমে সেল্টিকের সব খেলোয়াড়ই ছিলেন স্কটল্যান্ডের। একই দেশ থেকে সব খেলোয়াড় খেলিয়ে আগে কেউ এইরকম সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এমনকি প্রথম ব্রিটিশ ক্লাব হিসেবেও ইউরোপিয়ান কাপের মুকুট পড়ে সেল্টিক। পুরো মৌসুমজুড়ে প্রতিপক্ষদের নাস্তানাবুদ করে রেকর্ড ১৯৬টি গোল করে এই ক্লাবটি।

আয়াক্স (১৯৭১-৭২)

আরেকটি ট্রেবল জয়ের হাতছানির সামনে দাঁড়ানো আয়াক্সের ইতঃমধ্যেই জেতা হয়ে গেছে আরাধ্য ট্রেবল। সেটি অবশ্য বেশ আগের কথা, ১৯৭১-৭২ মৌসুমে। বর্তমানের আয়াক্সের সাথে অবশ্য তৎকালীন আয়াক্সের এতটুকু মিলও ছিল না। সেই সময়ে ইউরোপের অন্যতম সেরা ছিল এই ডাচ ক্লাবটি। ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত টানা তিন মৌসুমেই ইউরোপিয়ান কাপ জিতে তারা। তবে ট্রেবল জেতে শুধু মাঝের বছরই।

‘ট্রেবল’ জেতা আয়াক্স দল; Image Source : Sportskeeda

ইয়োহান ক্রুইফ, জোহান নিস্কেন্স ও পিট কাইজারের আয়াক্স তখন নিজেদের সোনালি সময়ে। ১১ মে’তে ঘরোয়া কাপ ও লিগ জিতে নেওয়ায় আয়াক্সের সামনে ইউরোপিয়ান ক্লাব জিতে ট্রেবলের মর্যাদা অর্জন করার সুবর্ণ সুযোগ আসে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে এতটুকু ভুলও করেনি আয়াক্স। ক্রুইফের জোড়া গোলে ইন্টার মিলানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ট্রেবল জিতে নেয় ডাচ ক্লাব আয়াক্স।

পিএসভি আইন্দহোভেন (১৯৮৭-৮৮)

আয়াক্সের পর ট্রেবল জেতার সুযোগ আরেক ডাচ ক্লাব পিএসভি আইন্দহোভেনের। নিজেদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ট্রেবল জয়ের ১৬ বছর পর মুকুট উঠে পিএসভির মাথায়। কিংবদন্তি কোচ গাস হিডিঙ্ক ও আইকনিক খেলোয়াড় রোনাল্ড কোম্যান, এডওয়ার্ড লিন্সকেন্সের রসায়নের উপর ভর দিয়েই সেবার তিনটি শিরোপাই শোকেসে পুরে এই ডাচ ক্লাব।

পিএসভি ও বেনফিকা ফাইনালের একটি দৃশ্য; Image Source : Goal.com

নয় পয়েন্টের ব্যবধান রেখেই লিগ শিরোপা জিতে নেওয়া পিএসভি ঘরোয়া কাপেও রোডা জেসিকে হারায় ৩-২ গোলে। সেবার শুধু লিগেই পিএসভি আইন্দহোভেন বল জালে জড়ায় ১১৭ বার। অন্যদিকে, ইউরোপিয়ান কাপে গ্যালাতাসারাই, ভিয়েনা, বোর্দো, রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে তারা ফাইনালে মুখোমুখি হয় বেনফিকার। স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত হওয়া সেই ম্যাচে ১২০ মিনিটেও কোনো দল গোল করতে না পারায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানে বেনফিকাকে ৬-৫ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান কাপ জিতে নেয় পিএসভি। সেইসাথে সেটিই একমাত্র ইউরোপিয়ান কাপ জয় তাদের।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (১৯৯৮-৯৯)

একমাত্র ইংলিশ ক্লাব হিসেবে এক মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা একমাত্র ক্লাব ‘রেড ডেভিল’ খ্যাত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এর আগের মৌসুমে শিরোপাশূন্য থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়নস লিগে আসে আন্ডারডগ হিসেবেই।

প্রিমিয়ার লিগে পুরো মৌসুমজুড়ে আর্সেনালের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ দিনে এক পয়েন্টের ব্যবধানে শিরোপা জিতে নেয় ফার্গুসনের শিষ্যরা। অন্যদিকে, এফএ কাপে লিভারপুল, চেলসি ও আর্সেনালের মতো বড় বড় ক্লাবগুলোকে হারিয়ে ফাইনালে তারা মুখোমুখি হয় নিউক্যাসলের। সেখানে ২-০ গোলের সহজ জয়ে এফএ কাপের শিরোপাও জিতে নেয় রেড ডেভিলরা।

ট্রেবল জয়ী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড দল; Image Source : The Daily Mail

চ্যাম্পিয়নস লিগে তো সেবার রূপকথার জন্মই দিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সেমিফাইনালে জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় লেগে ৪০ মিনিট আগ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩-১ গোলে পিছিয়ে ছিল তারা। সেই ম্যাচশেষে ৪-৩ গোলে জিতলেও নিজেদের আসল চমক জমিয়ে রেখেছিল ফাইনালের জন্য। বায়ার্নের বিপক্ষে ১-০ পিছিয়ে থাকা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচটি জিতে নেয় ৯১ ও ৯৩ মিনিটে গোল করে। আর তাতেই ট্রেবল শিরোপাও নিশ্চিত হয় তাদের।

বার্সেলোনা (২০০৮-০৯ ও ২০১৪-১৫)

ইতিহাসে ক্লাব হিসেবে দুইবার ট্রেবলের ত্রিমুকুট উঠেছিল মাত্র দুইটি ক্লাবের মাথাতেই। তার মধ্যে একটি বার্সেলোনা অন্যটি বায়ার্ন মিউনিখ। প্রথমবার জিতে নেয় পেপ গার্দিওলার সময়ে। টিকিটাকার ছন্দে মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তা মিলে ক্লাবকে এনে দেন এই সর্বোচ্চ সাফল্য। সেই বার্সেলোনা দলকে অনেকেই সর্বকালের সেরা ক্লাব দল হিসেবে মানেন।

ছয় বছর পর কিউলরা আবারও জিতে নেয় ট্রেবল। এইবার ত্রিমূর্তি মেসি, নেইমার, সুয়ারেজের কল্যাণে বার্সেলোনা জিতে নেয় মেজর তিনটি শিরোপাই। দুই পয়েন্টের ব্যবধানে লা লিগা জেতার পাশাপাশি কোপা দেল রে ফাইনালে তারা অ্যাথলেটিক বিলবাওকে হারায় ৩-১ গোলে। আর অন্যদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হওয়া জুভেন্টাসের সাথে ম্যাচটি জিতে নেয় ৩-১ গোলে। আর তাতেই দ্বিতীয়বারের মতো ট্রেবল জিতে নেয় কাতালানরা।

বার্সেলোনার জয়োৎসব; Image Source : Marca

ইন্টার মিলান (২০০৯-১০)

বার্সেলোনার প্রথম ট্রেবল জয়ের পরের বছরই বিশ্ব দেখে নতুন ট্রেবলজয়ী ক্লাব। এইবার এই সম্মান অর্জন করে ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান। মরিনহোর অধীনে সেবার রোমা থেকে দুই পয়েন্ট বেশি পেয়ে ‘স্কুডেট্টো’ ঘরে তোলে ‘নেরাজ্জুরি’রা। একই প্রতিপক্ষকেই কোপা ইতালিয়াতে হারায় ১-০ গোলে।

চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে ইন্টার মিলানকে সেই সময়ের সেরা ক্লাব বার্সেলোনার মুখোমুখি হতে হয় সেমিফাইনালেই। কিন্তু মরিনহোর ট্যাকটিক্সে সেই ম্যাচটি ৩-২ গোলে জিতে ফাইনালে যায় ইন্টার মিলান। ফাইনালে দিয়েগো মিলিতোর জোড়া গোলে বায়ার্নকে হারিয়ে ট্রেবল জিতে নেয় মরিনহোর শিষ্যরা।

চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা হাতে মরিনহো; Image Source : The National

বায়ার্ন মিউনিখ (২০১২-১৩)

ঠিক আগের মৌসুমেই অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় নিজেদের দর্শকদের সামনে টাইব্রেকারে চেলসির সাথে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল হারে বাভারিয়ানরা। কিন্তু সেই শোককে শক্তি করে পরের মৌসুমে দুর্দান্তভাবে ফিরে আসে তারা, জিতে নেয় ট্রেবল।

বুন্দেসলিগায় প্রতিটি প্রতিপক্ষিকে উড়িয়ে দিয়ে ডর্টমুন্ড থেকে ২৫ পয়েন্টের ব্যবধান নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় হেইঙ্কেসের শিষ্যরা। ডিএফপি পোকাল ফাইনালে রোবেন, রিবেরিরা ভলফসবুর্গকে হারায় ৩-২ গোলে।

চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা হাতে বায়ার্ন দল; Image Source : Sportskeeda

চ্যাম্পিয়নস লিগে সেমিফাইনালে দুই লেগ মিলিয়ে বার্সেলোনাকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে বায়ার্ন মুখোমুখি হয় আরেক জার্মান ক্লাব ডর্টমুন্ডের। রোবেনের শেষ মুহূর্তের গোলে ফাইনালও জিতে নেয় ২-১ গোলে। তবে ৭ বছর পরের ট্রেবলে আরো দানবীয় রুপ ধারণ করে বাভারিয়ানরা। নিকো কোভাকের অধীনে খাবি খাওয়াই শাপে বর হয়ে আসে বায়ার্নের জন্য। কোভাকের স্থলাভিষিক্ত হন তারই সহকারী হান্সি ফ্লিক। প্রেসিং ফুটবলে বাভারিয়ানরা হয়ে উঠে অপ্রতিরোধ্য। প্রতিপক্ষকে গোল বন্যায় ভাসানোই হয়ে উঠেছিলো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। লিগে ঠিক ১০০ গোল করে ডর্টমুন্ড থেকে ১৩ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে জিতে নেয় বুন্দেসলিগা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আরো দুর্দান্ত। পুরো মৌসুমে কোনো ম্যাচ না হেরেই জিতে নেয় ক্লাব প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ পুরষ্কারটি। শিরোপা জেতার প্রাক্কালে বার্সেলোনা, টটেনহাম, চেলসির মতো ক্লাবগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে বায়ার্ন। ফাইনালে পিএসজিকে হারিয়েছিলো কোমানের একমাত্র গোলে। ডিএফবি পোকাল ফাইনালেও একই চিত্র। হেসে খেলেই তারা হারায় বেয়ার লেভারকুসেনকে। আর তাতেই বার্সেলোনার পর দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে দুইবার ট্রেবল জেতার স্বাদ উপভোগ করে বাভারিয়ানরা। 

সপ্তম ও এখন পর্যন্ত সর্বশেষ দল হিসেবে ট্রেবল জিতা ক্লাব বর্তমানে বায়ার্ন মিউনিখই। 

 

 

This article is about the club who won the treble in European club competition. References are hyperlinked in the article.

Feature Image: Telegraph.co.uk

Related Articles