Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আল-আমিন হোসেন: ডেথ ওভারের মায়াস্ত্রোর লঘু পাপে গুরু দণ্ড

একটু আগেই উইন্ডিজ সফরের জন্য ৩১ সদস্যের দল ঘোষণা হয়েছে। অ্যাকাডেমি মাঠেই আছে দলে জায়গা পাওয়া বেশিরভাগ ক্রিকেটার। কার্যতই একজন ক্রিকেটারের নাম নেই। তিনি নিজেও হয়তো আশা করেননি হয়তো। তারপরও মনে হয়, ৩১ জনের মধ্যেও কি থাকার যোগ্য নন তিনি! হয়তো নিয়তি মেনে নিয়েছেন। তাই চেহারার ভাবলেশহীন অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হলো না। কিন্তু পেসারদের নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন ক্যাম্পে, মানে হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের (এইচপি) পেসারদের তালিকাতেও যে তার নাম নেই!

এর পেছনের ব্যাখাটা তিনি নিজেও জানেন না। অথচ একসময় ছিলেন নির্বাচকদের ‘অটোমেটিক চয়েস’। ডেথ ওভারে তার হাতে বল তুলে দিয়ে নিশ্চিত হতে চাইতেন মুশফিক-মাশরাফি-সাকিবরা। সেই আল-আমিন হোসেন আজ প্রায় স্মৃতিতেও বিস্মৃত। লঘু পাপের যে গুরু দণ্ড পেয়ে যাচ্ছেন, সেই অদৃশ্য ‘শাস্তি’ কবে শেষ হবে নিজেও জানেন না। তার উপর গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো একাধিকবার প্রশ্নবিদ্ধ বোলিং অ্যাকশনটাও যেন ভাগ্যের ছেঁড়া সুতোর মতো ঝুলে আছে তার ডানে-বামে, চারিদিকে।

২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকেই যেন দুর্ভাগ্যের সুনজর পড়েছে আল-আমিন হোসেনের উপর। বিশ্বকাপ খেলতে জাতীয় দলের সঙ্গে গেলেন অস্ট্রেলিয়ায়। সবকিছু ঠিকই ছিলো। কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ হলো না। তার আগেই বিতর্ক তার পিছু নিলো। আসলে কী নিয়ে যে বিতর্ক, সেটা নিয়েও রয়েছে ‘বিতর্ক’। শুরুতে বলা হলো, শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন আল-আমিন। গভীর রাতে নাকি হোটেল রুমে ফেরেন এই পেসার। বাংলাদেশ দল যখন হোটেলে চলে এসেছে, ব্রিসবেনে তারও দুই ঘণ্টা পর কোনোরকম অনুমতি ছাড়াই রাত ১২টার পর দলের সঙ্গে যোগ দেন তিনি। তাতেই বাঁধে গোলমাল।

ড্রেসিংরুমে হয়তো আরও কিছু হয়েছিল। একবার শোনা গেলো, টিম বাস যখন হোটেলে ফিরছে, তখন নাকি আল-আমিন ভাতের খোঁজে বের হয়েছিলেন! এমনটা জানিয়েছিলেন দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন। তার পরপরই এলো সবচেয়ে বড় খড়গ। জুয়াড়িদের সঙ্গে দেখা করেছেন আল-আমিন! এমন অভিযোগে সবকিছু ওলট-পালট।

মাশরাফি বিন মুর্তজা ও মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে উদযাপনে আল-আমিন হোসেন; Image Source; AFP

ফলাফল, বিশ্বকাপের মাঝেই দেশে ফেরার বিমানে চাপিয়ে দেওয়া হলো আল-আমিনকে। মাঠে নামার আগেই স্বপ্নের ধূলিসাৎ। অথচ এটা ছিল কেবলই ‘অভিযোগ’। প্রমাণ হয়নি, বিসিবির কড়া সমালোচনা যখন শুরু হলো, তখন সেই বিসিবিই জানালো জুয়াড়িদের সঙ্গে কোনো যোগসাজশ নেই আল-আমিনের।

সেখান থেকে দেশে ফিরে এসে ক্যারিয়ারের রঙিন সময়ের উল্টোপিঠ দেখা শুরু করেন আল-আমিন। জাতীয় দল যেন ক্রমশই দূরে সরে যেতে থাকে তার। যদিও টি-টোয়েন্টিতে জায়গা পেয়েছিলেন ভালোভাবেই। সেই দেশে ফেরার পর বছরের নভেম্বর মাসে জাতীয় দলের হয়ে ফিরলেন এই ২০ ওভারের ফরম্যাট দিয়েই। টানা খেললেন ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। তারপর? হারিয়ে গেলেন, ‘অন্তত’ জাতীয় দল থেকে।

২০১৬ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি আল-আমিন হোসেনের। অথচ তিনি ছিলেন ডেথ ওভারে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের অন্যতম কার্যকরী বোলার। যে উইন্ডিজ দলের বিপক্ষে তার নাম আসেনি, সেই দলটির বিপক্ষেই ২০১৪ সালে ৩ ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন এই পেসার।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে এখন পর্যন্ত সাদা পোশাকে ৬ টেস্ট, রঙিন পোশাকে ১৪ ওয়ানডে আর ২৫ টি-টোয়েন্টি খেলা এই ডানহাতি বোলার উইকেট নিয়েছেন যথাক্রমে ৬, ২১ ও ৩৯টি।

২.

আল-আমিন হোসেনের নামের পাশে ‘শৃঙ্খলাভঙ্গ’ আর অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের ‘বেনাম’টাও পিছু ছাড়ছে না। জাতীয় দলের সেই ২০১৫ সালের পরও বিতর্কিত হতে হয়েছে তাকে। যেটার শেষ হয়েছে সর্বশেষ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের আসরে। যদিও সেই ঘটনাকে শৃঙ্খলাভঙ্গের কাতারে ফেলা যায় কিনা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

২০১৬ সালের পর একাধিকবার জাতীয় দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে জায়গা হয়েছিলো আল-আমিনের। সেখানেও সেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ। তিনি নাকি সিনিয়রদের সঙ্গেও ‘বেয়াদবি’ করেন। যদিও এসব নিয়ে কোনো সত্যতা মেলেনি। আর নির্বাচকরা তাকে সরিয়ে রাখার পেছনে বাজে ফিল্ডিংকেও দায়ী করে এসেছেন বারবার।

বাজে ফিল্ডিং বারবারই ভুগিয়েছে তাকে, দলকেও; Image Source: ICC

২০১৬ সালে জাতীয় দলের পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বিতর্কিত হন নিজের আচরণ নিয়েই। জরিমানা গুনতে হয়েছিল প্রায় ১৩ লাখ টাকার মতো। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত নিজেকে শুধরিয়ে যাচ্ছেন আল-আমিন। কিন্তু সেই শোধরানোর ভালো দিকটা চোখে পড়ছে না কর্তাব্যক্তিদের।

শেষটা হলো প্রিমিয়ার ডিভিশনে। খেলেছেন অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে। এবারের আসরে ব্রাদার্স ইউনিয়নের একটি ম্যাচে দলের হয়ে রুখে দাঁড়াতে গিয়েই অপরাধী হলেন আল-আমিন। ফলাফল, নির্বাচকদের উপর বোর্ড থেকে একরকম ‘নিষেধ’ এলো আল-আমিনের ব্যাপারে।

জানা যায়, ব্রাদার্সের বিপক্ষে আল-আমিনদের ম্যাচটা ছিল অবনমন বাঁচানোর। খেলা চলছিল বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) মাঠে। ম্যাচে আম্পায়ারের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বিতর্কিত ছিল। সেটা নিয়েই প্রতিবাদ করেন আল-আমিন। আসরে ১৩ ম্যাচে ১৪ উইকেট পাওয়া এই বোলার বিসিবির এক নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গেও বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

লাল-সবুজ জার্সিতে সতীর্থদের সেই ভালোবাসা আজ ভুলতে বসেছেন আল-আমিন; Image Source: AFP

গোলটা বাঁধিয়েছেন ওই নিরাপত্তাকর্মী। তিনিই বিসিবির কাছে আল-আমিনের ব্যাপারে অভিযোগ দিয়েছেন, বোর্ডকে গালি দিয়েছেন এই ক্রিকেটার। সেই অভিযোগ বিশ্বাস করে বিসিবি। বড় শাস্তিও দিতে চেয়েছিল তাকে। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটাররা বিসিবির যে চুক্তিতে থাকে সেই চুক্তির খাতা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছিলো তার নাম। একই সঙ্গে টুর্নামেন্টের বাকি রাউন্ডগুলো থেকেও বাদ দিতে চাওয়া হয়েছিল। যদিও শেষপর্যন্ত এক ম্যাচে নিষিদ্ধ করা হয় তাকে।

এসবের খেসারত হিসেবেই জায়গা পাওয়া হয়নি আল-আমিনের। অথচ আল-আমিন বলেন, “আমি যে বোর্ডের অধীনে খেলছি, তাদেরকে কেন গালি দেব! আর একজন নিরাপত্তাকর্মী কেন আমার দিকে তেড়ে আসবে! একটা সময় তো জাতীয় দলে খেলেছি, এতটুকু সম্মান তো আমি পেতেই পারি।

হ্যাঁ, এতটুকু সম্মান অন্তত পাওয়ার যোগ্য আল-আমিন।

৩.

বোলিং অ্যাকশন নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়তে হয়েছে আল-আমিনকে। এই বিপত্তির শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ চলছিল তখন। প্রথম টেস্টেই তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আম্পায়াররা। একবার নয়, দুই দফায় পরীক্ষা দিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা হয় তার। তারপর তো ২০১৬ সালের মার্চের পর জাতীয় দলের জার্সিই গায়ে উঠলো না।

খুলনা বিভাগ বনাম ঢাকা মেট্রোপলিসের ম্যাচে জাতীয় লিগে এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে যৌথ ম্যাচ সেরা হওয়ার পর আল-আমিন হোসেন; Image Source: Walton

ঘরোয়াতে দাপটের সঙ্গে খেলছিলেন আল-আমিন হোসেন। ২০১৭ সালে গিয়ে আবার সেই একই অবস্থা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসরে খেলছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে বল করতে গিয়ে আবারও আম্পায়াররা তার অ্যাকশন নিয়ে আপত্তি জানান। আবারও ফিরে আসার লড়াই শুরু হয় আল-আমিনের।

ফিরে আসেন ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু এবার রয়েছেন আরেক বিপদে। আগামী দুই বছরের মধ্যে যদি তার বোলিং অ্যাকশন সন্দেহজনক বা অবৈধ প্রমাণিত হয়, তাহলে এক বছর ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হবেন তিনি।

আল-আমিনের জন্ম ১৯৯০ সালে ঝিনাইদাহ জেলায়। পড়াশোনা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনূর্ধ্ব-১৫ ও ১৭ জেলা দলে খেলার পর ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। এরপর ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের নেট বোলার হয়ে ক্রিকেট শুরু করেন। প্রথম বিভাগের খেলা হয় লালমাটিয়া ক্লাবে। তবে ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায় সরোয়ার ইমরানের তিন সপ্তাহের এক ক্যাম্পে। সুযোগ পেয়ে যান গ্রামীণফোন বিসিবি দলে। তারপর ২০১৩ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হয় জাতীয় দলে।

ফিচার ইমেজ- AP

Related Articles