Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফ্রি-কিক থেকে হ্যাটট্রিক করা পাঁচ নায়ক

যদি ফুটবলে সুন্দর গোলের কথা বলা হয়, তাহলে ফ্রি-কিক থেকে করা গোলসমূহের কথা সবার আগে আসবে। একজন ফুটবল দর্শককে ফ্রি-কিক সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চিত করে। এবং একজন ফুটবলারের শৈল্পিক ক্রীড়াশৈলীর প্রদর্শন হয়ে থাকে সেটপিসে। ফুটবল ইতিহাসে অনেক রথী-মহারথীর আগমন ঘটেছে, যারা ছিলেন ফ্রি-কিক স্পেশালিস্ট। এদের মধ্যে রয়েছেন জিকো, মিশেল প্লাতিনি, ডেভিড বেকহাম এবং রোনালদিনহোর মতো তারকারা। কিন্তু এদের মধ্যে কেউই ফ্রি-কিক থেকে হ্যাটট্রিক করতে পারেননি। তবে এমনও নয় যে, ফুটবলে ফ্রি কিক থেকে অহরহ হ্যাটট্রিক হয়েছে। বরং গুটিকতক ফুটবলার বিরল এই কীর্তি তৈরি করেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক ফুটবল মাঠের পাঁচ নায়কের গল্প, যারা হ্যাটট্রিক করেছেন ফ্রি-কিক থেকে।

জিউসেপ্পে সিগনোরি

জুনিনহোর হাত ধরে ‘নাকল বল ফ্রি-কিক’ সর্বপ্রথম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, এবং বিশেষ ধরনের এই ফ্রি-কিক তার জনপ্রিয়তা এখনও ধরে রেখেছে। ‘নাকলবল ফ্রি-কিক’ হলো হাওয়ায় ভাসানো জোরালো এক শট, যা গোলরক্ষকের সামনে গিয়ে তার গতিপথ পরিবর্তন করে। এই শটে গোলরক্ষককে সহজেই বোকা বানানো যায়। সেজন্য ‘নাকলবল’ বেশ জনপ্রিয় উঠে উঠে। কিন্তু জুনিনহোর ‘নাকলবল’কে পেছনে ফেলেন ইতালিয়ান এক ফুটবলার, নাম জিউসেপ্পে সিগনোরি। যার বাম পায়ের ফ্রি-কিকে মুগ্ধ হয়েছেন ফুটবলভক্তরা।

তিনি বেড়ে উঠেন ইন্টার মিলান একাডেমিতে, কিন্তু কখনোই গায়ে চাপেনি ইন্টারের মূল দলের জার্সি। ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করেছেন লাৎসিওতে। লাৎসিওর ভক্তদের কাছে সিগনোরি ছিলেন নায়ক। তাকে এবং তার চোখজুড়ানো ফ্রি-কিককে প্রায় সবাই ভালোবাসতেন।

জিউসেপ্পে সিগনোরি; Image Source: Getty Images

১৯৯৪ সালে ইতিহাস সৃষ্টি করেন সিগনোরি। আটালান্টার বিপক্ষে প্রথম ফুটবলার হিসেবে ফ্রি-কিক থেকে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। তার দুইটি ফ্রি-কিক আটকানোর জন্য গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় কিকে সেই সুযোগও পাননি, ১০ গজ দূর থেকে তার নেওয়া ট্রেডমার্ক শটে বোকা বনে যান আটালান্টার গোলরক্ষক। সিগনোরির ওয়ান-স্টেপ ফ্রি-কিক বিশ্বজুড়ে অনেক ফুটবলার নকল করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তার মতো নিঁখুত কেউ হতে পারেননি। তার বাঁ পায়ের জোরালো ও বাঁকানো শট অধিকাংশ গোলরক্ষক তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেছেন। সিগনোরি তার নিজস্ব ঢঙে মাঠ মাতিয়েছেন, এবং জায়গা করে নিয়েছেন ফুটবল ইতিহাসে।

সিনিসা মিহাইলোভিচ

ইতালিয়ান ঘরোয়া লিগ সিরি’আ ইতিহাসে দুইজন খেলোয়াড় ফ্রি-কিক থেকে হ্যাটট্রিক করেছেন। দু’জনই আবার লাৎসিওর হয়ে খেলেছেন, এবং দুজনই বাঁ পায়ের ফুটবলার। জিউসেপ্পে সিগনোরির পর লাৎসিওর দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে ফ্রি-কিক থেকে হ্যাটট্রিক করেন সিনিসা মিহাইলোভিচ। নব্বই দশকের শেষ এবং গত দশকের প্রথম দিকে ইউরোপিয়ান ফুটবল মাতানো খেলোয়াড়দের অন্যতম একজন মিহাইলোভিচ। তিনি ছিলেন নিখাদ ডিফেন্ডার। তাকে তুলনা করা হতো রোনাল্ড কোম্যানের সাথে, বলা হতো ‘বলকান রোনাল্ড কোম্যান’। কিন্তু মিহাইলোভিচ কোম্যানকে ছাড়িয়ে যান তার ফ্রি-কিক দক্ষতায়। তিনি ফুটবলের চেয়ে অধিক ভালোবেসেছেন ফ্রি-কিককে। এক সাক্ষাৎকারে মিহাইলোভিচ বলেন,

‘আমি ফ্রি কিকের জন্যই ফুটবল খেলেছি। আমি ফুটবল পুরোপুরি পছন্দ করতাম না, কিন্তু ফ্রি-কিকগুলো দারুণ ছিল। আমার জন্য এটাই ফুটবল। যদি ফ্রি-কিক না থাকতো, তাহলে আমি ফুটবলই খেলতাম না।’

সিনিসা মিহাইলোভিচ; Image Source: Getty Images

১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মিহাইলোভিচ ইতালিতে রোমা, সাম্পদোরিয়া, লাৎসিও এবং ইন্টার মিলানের হয়ে খেলেছেন। ১৯৯৮ সালে তিনি লাৎসিওতে যোগ দেন। একই বছর তিনি তার সাবেক ক্লাব সাম্পদোরিয়ার বিপক্ষে ফ্রি-কিক থেকে হ্যাটট্রিক করেন। তার প্রথম দুইটি গোল ছিল বক্সের বাইরে থেকে। সাম্পদোরিয়ার খেলোয়াড়দের মানব দেয়ালের মাথার উপর দিয়ে গোলরক্ষকদের বাম দিয়ে বাঁকানো শটে বল জালে জড়ান। তৃতীয় গোলটি ছিল আরো বেশি সুন্দর। গোলপোস্টের বেশ দূর থেকে তার নেওয়া শট আটকানোর জন্য ডানদিকে ঝাপিয়ে পড়েন সাম্পদোরিয়ার গোলরক্ষক। কিন্তু তার সেই প্রচেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। মিহাইলোভিচের প্রতিটি ফ্রি-কিকই বেশ জোরালো এবং বাঁকানো হতো, এবং ফ্রি-কিক থেকে নিয়মিত গোল করার দক্ষতাই তাকে ‘ডেড বল এক্সপার্ট’ হিসেবে ইতিহাসে জায়গা করে দিয়েছে।

রে ম্যাককিনন

রে ম্যাককিনন তার ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে ১২ বার ক্লাব বদল করেছেন। ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের অনেকগুলো ক্লাবে খেলেছেন, কিন্তু কোনো ক্লাবেই থিতু হতে পারেননি। শৈশবে নটিংহাম ফরেস্টে খেলার সময় তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেক স্কটিশ। কিন্তু তিনি প্রত্যাশানুযায়ী খেলতে পারেননি। ম্যাককিনন তার পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন ডান্ডি ইউনাইটেডের হয়ে। সেখানে দুই মেয়াদে খেলার পর ২০১৬ সালে কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ডান্ডিতে খেলার সময়ই ফ্রি-কিক থেকে হ্যাটট্রিক করেন ম্যাককিনন, এবং এই তালিকার একমাত্র ডান পায়ের ফুটবলার তিনি।

রে ম্যাককিনন; Image Source: BBC

১৯৯৬ সালে স্কটিশ লিগে কিলমারনকের বিপক্ষে ম্যাককিনন তার ক্যারিয়ার সেরা হ্যাটট্রিক করেন। তার প্রথম গোলটি ছিল মিহাইলোভিচের তৃতীয় গোলেরই অনুলিপি। বক্সের বামপ্রান্ত থেকে জোরালো শটে ডান কর্নার দিয়ে গোল করেন ম্যাককিনন। কিলমারনকের গোলরক্ষক কিছু বুঝে উঠার আগেই বল জালে জড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় গোল বক্সের বাইরে মাঝ বরাবর থেকে। বিপক্ষ দলের মানব দেয়ালের উপর দিয়ে শটে লক্ষ্যভেদ। ম্যাককিনন তার তৃতীয় গোলটি করেন বেশ চতুরতার সাথে। কিলমারনকের খেলোয়াড়দের পায়ের ফাঁক দিয়ে মাটি কামড়ে যাওয়া শটে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। পেশাদার ক্যারিয়ারে ম্যাককিনন পুরোপুরি সফল ছিলেন না। কোনো মৌসুমে তিনি ছয়টির বেশি গোল করতে পারেননি। এমনকি মিহাইলোভিচের ফ্রি-কিক থেকে করা গোলের চেয়ে ম্যাককিননের গোল সংখ্যা কম। কিন্তু তার অনন্য এই কীর্তির জন্য ইতিহাসের অন্যতম এলিট ক্লাবে জায়গা করে নিয়েছেন।

কোস্তাস ফ্র্যানজেসকোস

‘এরপর আমরা যখন পেনাল্টি পাবো, তখন সতীর্থরা আমাকে নিতে বললে আমি একটা দেয়াল (সারিবদ্ধ খেলোয়াড়) তুলে দিতে বলবো।’

বিখ্যাত এই মন্তব্যটি করেছিলেন গ্রিক ফুটবলার কোস্তাস ফ্র্যানজেসকোস, যাকে গ্রিসের বাইরে অধিকাংশ মানুষই চেনেন না। কিন্তু তিনি ছিলেন ফ্রি-কিক স্পেশালিস্ট। গ্রিসের ঘরোয়া লিগে ফ্রি-কিক থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক গোল করেছেন কোস্তাস। এছাড়া ১৯৯৮ বিশ্বকাপে বসনিয়ার বিপক্ষে নাটকীয় এক ম্যাচে তার করা গোলটির জন্য নিজ দেশে বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি তার ক্যারিয়ারে শতাধিক গোল করেছেন, যার অধিকাংশই পায়োকের হয়ে। রে ম্যাককিননের সাথে মিল রেখে একই মৌসুমে ফ্রি-কিক থেকে হ্যাটট্রিক করেন কোস্তাস। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমের শেষ দিনে কাস্তোরিয়ার বিপক্ষে দুই জার্সিতে গোল তিনটি করেন।

কোস্তাস ফ্র্যানজেসকোস; Image Source: POAK

ম্যাচের প্রথমার্ধে পায়োক তাদের ঐতিহ্যবাহী কালো ও সাদা রঙের স্ট্রাইপ জার্সিতে মাঠে নামে। কোস্তাস তার প্রথম গোলটি করেন নিচু এক শট থেকে। কাস্তোরিয়ার ডিফেন্ডারদের পাশ ঘেঁষে যাওয়া শট গোলপোস্টের ডান কর্নার দিয়ে গোললাইন অতিক্রম করেন। কোস্তাস তার দ্বিতীয় গোল করেন বক্সের বাইরে থেকে, তার নেওয়া শট ডিফেন্ডারদের মাথার উপর দিয়ে গিয়ে জালে জড়ায়। বিরতির পর পায়োক তাদের জার্সি পরিবর্তন করে সাদা জার্সিতে মাঠে নামে। কোস্তাস এই জার্সিতে তার তৃতীয় গোল করে অনন্য এক রেকর্ডে ভাগ বসান।

ক্রিস্টিয়ানো সিলভা

এই তালিকার একমাত্র লাতিন ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো সিলভা। ক্যারিয়ারের শেষভাগে এসে তিনি জাপানের ঘরোয়া ফুটবল লিগ ‘জে’ লিগে খেলছেন, এবং ২০১৫ সালে সর্বশেষ ফ্রি-কিক থেকে হ্যাটট্রিক করেছেন এই ব্রাজিলিয়ান। জাপানের ‘জে’ লিগে কেসিওয়া রেসলের হয়ে লিগ কাপে এই কীর্তি গড়েন তিনি। এই হ্যাটট্রিকের পরই সিলভাকে তার পূর্বসূরি জুনিনহোর সাথে তুলনা করা হয়। জুনিনহো ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফ্রি-কিক স্পেশালিস্ট।

ক্রিস্টিয়ানো সিলভা; Image Source: Getty Images

ভেগালটা সেন্দাইয়ের বিপক্ষে প্রথম গোলটি করেন বিখ্যাত ‘বানানা’ শটে। বক্সের ডান দিক দিয়ে তার নেওয়া শটটি গোলরক্ষক বুঝে ওঠার আগেই জালে জড়ায়। এরপর দ্বিতীয় গোলটি করেন ৩০ গজ দূর থেকে। তার নেওয়া শটটি মাটি থেকে মাত্র আট ইঞ্চি উপর দিয়ে গিয়ে শেষ মুহূর্তে মাটির সাথে ছোঁয়া লেগে গোলপোস্টের ভেতর প্রবেশ করে। মাটি ছোঁয়ার আগ পর্যন্ত বল একবারের জন্যও আট ইঞ্চি উচ্চতার উপরে উঠেনি। তৃতীয় গোলটি করেন সেন্দাইয়ের ডিফেন্ডারদের মাথার উপর দিয়ে।

This article is in Bangla language. It is about 'THE FIVE HEROES WHO SCORED THREE FREE-KICKS IN A SINGLE GAME'. Necessary references have been hyperlinked.

Featured Image Source: Getty Images

Related Articles