Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্টিভেন স্মিথ: পরিসংখ্যানে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান

প্রায় ২০ বছর ধরে ব্রিসবেনের গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়া অপরাজিত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষবারের মতো হারের স্বাদ পেয়েছিলো ১৯৮৬ সালে! এই মাঠে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের ধারায় ফাটল ধরানোর জন্য বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলো ইংল্যান্ড। পাঁচদিনের ম্যাচের আড়াই দিন শেষে ইংল্যান্ডই এগিয়ে ছিলো। স্টিভেন স্মিথ অসাধারণ ইনিংস না খেললে হয়তো গ্যাবায় অজিদের অপরাজিত থাকার রেকর্ড ভেঙে দিতে পারতো ইংল্যান্ড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুই তরুণ মার্ক স্টোনম্যান ও জেমস ভিন্সের অর্ধ শতকে বড় সংগ্রহের দিকে এগোতে থাকে ইংল্যান্ড। এই দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর ভালো শুরু করেও প্রথম ইনিংসে ৩০২ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে অভিষিক্ত ব্যানক্রফট মাত্র ৭ রান এবং উসমান খাঁজা ১১ রান করে সাজঘরে ফিরলে ৩০ রানেই দুই উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। দুই উইকেট পতন ঘটার পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। অ্যান্ডারসন, ব্রডদের বোলিং তোপের মুখে অপরপ্রান্তের ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত বিরতিতে সাজঘরে ফিরে গেলেও ক্রিজের একপ্রান্তে অবিচল ছিলেন স্মিথ। শরীর এমনভাবে নাড়াচাড়া করে ব্যাট করছিলেন, মনে হচ্ছে মেশিন। যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে নাড়ানো যায়। অবশ্য স্টিভ স্মিথের ব্যাটিং স্টাইলই এমন। ক্রিকেটের ব্যাকরণ অনুযায়ী দেখতে গেলে বিদঘুটে। কিন্তু তার নিজস্ব ব্যাটিং স্টাইল চোখের সৌন্দর্য।

ডেভিড ওয়ার্নার এবং হ্যান্ডসকম্ব দ্রুত ফিরে গেলে ৭০ রানে চার উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। এরপর শন মার্শকে নিয়ে দ্বিতীয় দিনটা দেখেশুনেই কাটিয়ে দেন স্মিথ। দিনশেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ চার উইকেটে ১৬৫ রান।

ইংলিশ পেসারের আরও একটি বাউন্সার দক্ষতার সাথে ছেড়ে দিচ্ছেন স্টিভ স্মিথ ; Image Source – Getty Images

পরদিন ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন জো রুটের ইংল্যান্ড। শুরুতেই শন মার্শকে ফিরিয়ে দেন স্টুয়ার্ট ব্রড। দ্বিতীয় দিনে স্টিভ স্মিথকে সাতটি বাউন্সার মোকাবেলা করতে হয়েছিলো। তৃতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই স্মিথকে ১৪টি শর্ট বল করে ইংলিশ পেসাররা। ঠিক যেন কুখ্যাত বডিলাইন সিরিজের আধুনিক রূপ। জো রুট ফিল্ডিংও সাজালেন সেভাবে। লেগ সাইডে ছয়জন। লং লেগ, ডিপ স্কয়ার লেগ এবং ডিপ মিডউইকেটে তিনজন। বাকি তিনজন স্কয়ার লেগ, শর্ট মিডউইকেট এবং মিড-অনে ওঁত পেতে ছিলেন স্মিথের ভুল পুলের জন্য। ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং জো রুটের বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কত্বের কাছে হার মেনে ধৈর্যচ্যুত হয়ে নিজের উইকেটটি হারিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। স্মিথ সে ভুল করেননি। নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে নিয়ে উল্টো ইংলিশ বোলারদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন তিনি। স্মিথের ৩২৬ বলের ইনিংসে ৯১% বলই তার নিজের নিয়ন্ত্রণে ছিলো।

ইংলিশ পেসার অসাধারণ বল করেও স্মিথকে কাবু করতে পারেননি।

গ্যাবায় অসাধারণ শতক হাঁকিয়ে উদযাপন করছেন স্টিভ স্মিথ; Image Source – Saeed khan, Getty Images

স্মিথের ৩২৬ বলে ১৪টি চারের মারে অপরাজিত ১৪১* রানের উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে লিড পায় অস্ট্রেলিয়া। শেষপর্যন্ত গ্যাবায় নিজেদের জয়ের ধারা বজায় রেখে দশ উইকেটের জয় তুলে নেয়। দশ উইকেটের বড় ব্যবধানে জয়। ফলাফল দেখে যে কেউ বলবে বড্ড একপেশে ম্যাচ ছিলো। ম্যাচের আড়াই দিন এগিয়ে ছিলেন ইংল্যান্ড। বাধা হয়ে দাঁড়ান স্মিথ। প্রথম অর্ধশতক পূর্ণ করতে খেলেন ১১২ বল, দ্বিতীয় অর্ধশতক করেন ১৪৯ বল। ২৬১ বলের শতক! তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ধীরগতির শতক। এর আগে রাঁচিতে ভারতের বিপক্ষে ২২৭ বলের শতকটি তার সবচেয়ে ধীরগতির শতক ছিলো। সবদিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সেরা ইনিংস এটি। তার সতীর্থদের চোখেও তাদের দেখা স্মিথের সেরা ইনিংস গ্যাবা টেস্টের ১৪১* রানের ইনিংটি।

এবার পরিসংখ্যান দিয়ে আলোচনা করা যাক টেস্ট ক্রিকেটে স্টিভ স্মিথ কত দ্রুত ছুটছেন। স্টিভ স্মিথ আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে ৫৭ টেস্টে ৬১.২৩ ব্যাটিং গড়ে ৫,৫১১ রান। ২১টি করে শতক এবং অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। ৫৭ টেস্টের পর সবচেয়ে বেশি রান এখন স্টিভ স্মিথের। প্রথমদিকে বোলার হিসাবে খেলেও বিশ্বের সব ব্যাটসম্যানদের পেছনে ফেলেছেন। ৫৭ টেস্ট শেষে সুনীল গাভাস্কারের রান ছিলো ৫,৪৬০। ব্যাটিং গড়ের দিক থেকেও স্টিভ স্মিথ সবাইকে পেছনে ফেলে দিয়েছেন। একইসময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তী ক্রিকেটার গ্যারি সোবার্সের ব্যাটিং গড় ছিলো ৬০.১৪! উল্লেখ্য, ডন ব্রাডম্যান ৫২টি টেস্ট খেলেছিলেন, তাই তাকে বাদ দিয়েই এই পরিসংখ্যান। ব্রাডম্যান ৫২ টেস্টে ৯৯.৯৪ ব্যাটিং গড়ে ৬,৯৯৬ রান করেছিলেন।

দ্রুততম একুশ

স্টিভ স্মিথ ৫৭টি টেস্টে ২১টি শতক হাঁকিয়েছেন। ক্যারিয়ারের একই সময়ে শচীন টেন্ডুলকার ১৩টি শতক, রিকি পন্টিং ১১টি। ব্রায়ান লারা, রাহুল দ্রাবিড়, মাহেলা জয়াবর্ধন ১০টি এবং জ্যাক ক্যালিস, এবি ডি ভিলিয়ার্স ও কুমার সাঙ্গাকারা নয়টি শতক হাঁকিয়েছিলেন।

সবচেয়ে কম ইনিংসে একুশটি শতক হাঁকানো ব্যাটসম্যানদের তালিকায় স্মিথ তৃতীয় ; Image Source – Matt King – Getty Images

স্টিভ স্মিথ ১০৫ ইনিংসে ২১টি টেস্ট শতক হাঁকিয়েছেন। সবচেয়ে কম ইনিংসে ২১টি শতক হাঁকানো ব্যাটসম্যানদের তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন তিনি। সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান ডন ব্রাডম্যান ৫৬ ইনিংসে এবং সুনীল গাভাস্কার ৯৮ ইনিংসে ২১টি টেস্ট হাঁকিয়েছিলেন।

অধিনায়কোচিত পারফরমেন্স

স্টিভ স্মিথ অধিনায়ক হিসাবে ৪৮ ইনিংস ব্যাট করে ১৩টি শতক হাঁকিয়েছেন। গ্রেগ চ্যাপেলও অধিনায়ক হিসাবে ৮৬ ইনিংসে ১৩টি শতক হাঁকান। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক হিসেবে তার চেয়ে বেশি শতক আছে পাঁচজনের। রিকি পন্টিংয়ের ১৯টি, অ্যালান বোর্ডারের ১৫টি, স্টিভ ওয়াহর ১৫টি, ডন ব্রাডম্যানের ১৪টি এবং মাইকেল ক্লার্কের ১৪টি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন স্মিথ। এখন পর্যন্ত ১৩টি শতক পূর্ণ করেছেন। এ সময়ে অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১টি শতক অর্জন করেন বিরাট কোহলি। আর অন্য কোনো অধিনায়ক পাঁচটির বেশি শতক হাঁকাতে পারেননি। অধিনায়ক হিসেবে স্মিথের ব্যাটিং গড়ও ঈর্ষণীয়। ২,৯৭১ রান করেছেন ৭২.৪৬ ব্যাটিং গড়ে। কমপক্ষে ৫০০ রান করেছেন এমন অধিনায়কদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় তার।

অধিনায়ক হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় (কমপক্ষে ৫০০ রান)

স্টিভেন স্মিথই এগিয়ে

সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় স্মিথ

স্টিভেন স্মিথ বর্তমানে ৯৪১ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বসেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান। ৮৮৮ রেটিং পয়েন্ট দ্বিতীয় স্থানে আছেন চেতেশ্বর পূজারা। স্মিথের ধারেকাছেও নেই পূজারা। স্মিথ লড়াই করছেন সর্বকালের সেরা রেটিং পয়েন্ট অর্জনকারী ব্যাটসম্যানদের সাথে।

র‍্যাংকিংয়ে বর্তমানের বিশ্বসেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ; Image Source – Getty Images

আর মাত্র পাঁচ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করতে পারলে ৯৪৬ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সর্বকালের সেরা রেটিং পয়েন্ট অর্জনকারী ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ডন ব্রাডম্যানের পরেই নিজের নাম লেখাবেন স্মিথ।

সর্বকালের সেরা রেটিং পয়েন্ট অর্জনকারী ব্যাটসম্যান

আর পাঁচ পয়েন্ট পেলে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবেন স্মিথ

ফিচার ইমেজ – wallpapercave-com

Related Articles