Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ফার্নান্দো রেডোন্ডোর রাজত্বে…

ফার্গুসনের চোখেমুখে তখন বিস্ময়। সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন,

‘রেডোন্ডোর পায়ে চুম্বক লাগানো। আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত।’

অবশ্য ফার্গুসন কেন, পুরো বিশ্বের ফুটবল প্রেমীদের সেদিন চমকে দিয়েছিলেন রেডোন্ডো। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ওল্ড ট্র‍্যাফোর্ডে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হাই-ভোল্টেজ ম্যাচে দুর্দান্ত এক ব্যাকহিল স্কিলে অ্যাসিস্ট করেছিলেন রাউলকে। ‘ওয়ান টাচ জিনিয়াস’-খ্যাত রেডোন্ডো সেবার ছিলেন আর্মব্যান্ড হাতে। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে একমাত্র বিদেশি ক্যাপ্টেন হিসেবে সেই বছর জিতেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। জিতেছিলেন মাদ্রিদের প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ারও। এমনকি ফার্গুসনের মতে সেই মাদ্রিদ টিমের সেরা খেলোয়াড় রাউল-মরিয়েন্তেস নন, ছিলেন ফার্নান্দো রেডোন্ডো

মাঠে কাব্যিক ও সুন্দর খেলার কথা বললে অনেকের কথাই মনে আসবে আপনার। শুধু যদি বলা হয় রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে, হলফ করে বলা যায় যে তাহলেও বেশিরভাগ লোকেই এক নামে বলে দেবে জিনেদিন ইয়াজিদ জিদানের কথা। তবে জিদান বাদে মাদ্রিদিস্তাদের মনে থাকার কথা আরেকজনকেও, এল প্রিন্সিপে দে মাদ্রিদ নামেই যাকে ডেকে থাকেন মাদ্রিদবাসী। তিনি ‘মাদ্রিদের প্রিন্স’ ফার্নান্দো কার্লোস রেডোন্ডো নেরি। স্বভাবতই রেডোন্ডোর নাম শোনা মাত্রই আপনার চোখে ভেসে উঠবে ওল্ড ট্র‍্যাফোর্ডে সেই চোখ-ধাঁধানো স্কিল। তবে রেডোন্ডো তার থেকেও বেশি কিছু ছিলেন।

আর্জেন্টিনার জার্সিতে রেডোন্ডো; Image Source: Getty Images

১৯৯৪ বিশ্বকাপের আগে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় এর মাঠে নিজেদের ঝালাই করে নিচ্ছিলেন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়েরা। সেদিন নিজেদের মধ্যে একটি ম্যাচে উপস্থিত সবার চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছিলেন রেডোন্ডো। ম্যারাডোনা, বাতিস্তুতা, সিমিওনে, ভেরনসহ অনেকেই ছিলেন সেখানে। কিন্তু সবার মুখেই একটিই শব্দ ছিল, ‘ফ্লাকো’; যার মানে ‘চিকন ছেলে’। লাতিন আমেরিকান ফুটবলে নিকনেম পাওয়াটা এত সহজ নয়; তারা তখনই আপনাকে নিকনেম দেবে, যখন আপনি সেই ভালোবাসাটা পাবেন।

লম্বা চুলের হিপিদের মতো হ্যাংলা-পাতলা ‘ফ্লাকো’ রেডোন্ডোর জন্ম আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে। ফার্নান্দো রেডোন্ডো অনেকটা নিপাতনে সিদ্ধ ব্যাকরণের মতো। বলা হয়ে থাকে, লাতিন আমেরিকানরা পায়ে বল তুলে নেয় বস্তির ক্ষুধা দারিদ্র্যতায় ভরা জীবন থেকে বাঁচার জন্য। তবে রেডোন্ডোর এত তাড়া ছিল না। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা রেডোন্ডো পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে আর দশজন আর্জেন্টাইনের মতোই ফুটবল খেলতেন। আর্জেন্টিনা জুনিয়র্স টিমে থাকলেও একেবারেই প্রফেশনাল ফুটবলার বনে যাননি, আইনের উপর পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছিলেন; যার ফলস্বরূপ ৫ বছরে খেললেন মাত্র ৬৫ ম্যাচ।

তবে প্রতিভার স্ফুরন দেখে আর্জেন্টিনার কোচ বিলার্দো রেডেন্ডোকে ডেকেছিলেন ১৯৯০ বিশ্বকাপের আগে, কিছু প্রীতি ম্যাচ খেলার জন্য। হয়তো বিশ্বকাপ দলেও জায়গা হয়ে যেত সেই সময়ে কখনোই আর্জেন্টিনার জার্সিতে না খেলা রেডোন্ডোর। তবে অবাক করে দিয়ে নিজের পরীক্ষার অজুহাত দিয়ে না করে দিলেন!

তবে ভেতরের সত্যিটা অন্যরকম। আর্জেন্টিনায় আপনি দুই ধরনের কোচের দেখা পাবেন। প্রথম ধরন হলো, যারা মনে করেন ফুটবল মানেই শরীরী খেলা; এই দলে রয়েছেন বিলার্দো-প্যাসারেলারা। অন্যদিকে শৈল্পিক খেলার কারিগর হিসেবে ছিলেন মেনোত্তি-ভালদানো-বিয়েলসারা। কাব্যিক ফুটবল খেলা রেডোন্ডো তাই বিলার্দোকে ফিরিয়ে দিতে একটুও পরোয়া করেননি।

মাদ্রিদের রাজপুত্র; Image Source : Ondra Paul/managing madrid

রেডোন্ডো ছিলেন সাহিত্য প্রেমিক। ভালোবাসতেন বোর্হেস, গ্যাব্রয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের আগের রাতেও বই এ বুঁদ হয়ে থাকার ঘটনা রয়েছে তার। হয়তো চেয়েছিলেন আইনে পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন, সেটা হয়নি। সেজন্য ঈশ্বরকে একটি ধন্যবাদ জানাতেই পারেন ফুটবলপ্রেমীরা।

রেডোন্ডোর ইউরোপে আগমন ‘৯০ বিশ্বকাপের পরপরই। স্পেনের ক্লাব টেনেরিফে তখন অবনমন বাঁচাতে লড়াই করে যাচ্ছিল। টেনেরিফে ম্যানেজার হোর্হে ভালদানো, আর্জেন্টিনা ও মাদ্রিদের ইতিহাসে অন্যতম এক সেরা খেলোয়াড়। তার অনুরোধেই রেডোন্ডোর আগমন টেনেরিফেতে। সেবার অবনমন বাঁচিয়ে পরের মৌসুমে সবাইকে চমকে দিয়েছিল টেনেরিফে, লিগের শেষ ম্যাচে রিয়ালকে হারিয়ে হয়েছিল পঞ্চম। তবে রিয়ালের মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে এসেছিল সেই ম্যাচে হেরে বার্সেলোনার কাছে লিগ শিরোপা খোয়ানোটা।

তাই হয়তো এই শোককে কাটানোর জন্য একসাথে টেনেরিফের দুই মহীরূহকে বার্নাব্যুতে নিয়ে এলো মাদ্রিদ। ভালদানোকে কোচ করার পর ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে রেডোন্ডোরও আগমন হলো মাদ্রিদে। সেই থেকে মাদ্রিদ আর রেডোন্ডোর প্রেম শুরু।

প্রাচীন রোমের স্কলাররা বিশ্বাস করতেন, প্রতিটি পুরুষের মধ্যে রয়েছে ঘরকে খারাপ প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার সক্ষমতা; এক কথায় ‘গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল’। তবে আধুনিক মতবাদ অবশ্য ভিন্ন; সৃজনশীলতা কিংবা প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভা দিয়ে যার বিচরণ সব জায়গায়, তারাই গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল। ফার্নান্দো রেডোন্ডো মাদ্রিদের জন্য ছিলেন দুটোরই সন্নিবেশ। ভিসেন্তে দেল বস্ক বলেছিলেন, তার দেখা সবচেয়ে পার্সোনালিটি সম্পন্ন মানুষ রেডোন্ডো। তাই শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও রেডোন্ডো ছিলেন একজন পুরোদস্তুর রোল মডেল।

মাদ্রিদের হয়ে মাঠের একটি মুহূর্তে; Image Source: Getty Images

মাঠের কথায় ফেরা যাক। রেডোন্ডোর যখন বেড়ে ওঠা, তখনও তাবৎ আর্জেন্টাইনদের আইডল ম্যারাডোনা। কিন্তু রেডোন্ডো এর উল্টো, তার আদর্শ ছিলেন রিকার্ডো বচিনি। আপনি হয়তো তার নামও শোনেননি। তবে বচিনিকে বলা হতো ‘মাস্টার অফ লা পাউসা।’ সেটা আবার কী! সেটি না হয় শুনুন রিকার্ডো বচিনির মুখেই –

‘আমার চোখে লা পাউসার দুইটি ধরন রয়েছে — দ্রুতগতির বল আর ধীরগতির বল। বল হোল্ড করে সতীর্থদের জন্য অপেক্ষা করা অনেকটা টিপিক্যাল লা পাউসা। মাঝে মাঝে আপনাকে অনেক দ্রুত গতিতে বল নিয়ে হুট করে থেমে যেতে হবে সতীর্থদের আগমনের জন্য, যেটি প্রতিপক্ষকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়ে দিতে বাধ্য।’

প্রথম মৌসুমে ভালদানোর অধীনে রিয়াল মাদ্রিদ খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। তাই পরের মৌসুমে তার জায়গায় ডাগআউটে আগমন ফ্যাবিও ক্যাপেলোর। প্রথম দিকে ক্যাপেলো রেডোন্ডোকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে খেলাতে অনিচ্ছুক ছিলেন। ক্যাপেলোর কাছে মনে হয়েছিল, এই জায়গায় খেলার জন্য রেডোন্ডো গতানুগতিকের চেয়ে বেশিই মার্জিত। তবে খুব দ্রুতই ধারনা পাল্টে যায় তার। ‘তার খেলা দেখে আমি মুগ্ধ। সে ট্যাকটিকালি পারফেক্টের চেয়েও বেশি।’ দিনকয়েক পরই রেডোন্ডোয় মুগ্ধ হয়ে ক্যাপেলোর এই বাণী। এই পজিশনে ডিপ-লায়িং প্লেমেকারে হিসেবে রেডোন্ডো ছিলেন অনেকটা জাভির মতোই কার্যকরী।

মাদ্রিদে ৬ বছর থাকলেও রেডোন্ডো সেরা সময় কাটিয়েছিলেন দেল বস্কের অধীনে; ১৯৯৮-২০০০ পর্যন্ত। স্টিভ ম্যাকমানামানের সাথে জুটি করে মাঝমাঠে রেডোন্ডোর সর্বোচ্চটাই আদায় করে নিয়েছিলেন দেল বস্ক। ১৯৯৮ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের কথাই চিন্তা করেন। জুভেন্টাসের জিদান, দেশম ও এডগার ডেভিডসের মাঝমাঠকে একাই নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন রেডোন্ডো। ৩২ বছর পর মাদ্রিদ জিতেছিল চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। অথচ সেইভাবে প্রশংসা পেলেন কই!

১৯৯৯-২০০০ মৌসুমের কথায় আসা যাক। সেবার মাদ্রিদের অবস্থা বেশ শোচনীয়। অন্যদিকে আর্মব্যান্ড আবার রেডোন্ডোর হাতে। কোনোক্রমে চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে আগমন, তাও সেখনে খেলতে হবে ফার্গুসনের ম্যানচেস্টারের সাথে। লিগে এমনই যাচ্ছেতাই অবস্থা যে পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের টিকেট কাটার একটাই উপায় – এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়! আর তখনই ওল্ড ট্রাফোর্ডে রেডোন্ডো ঝলকে ৩-২ গোলে জয় নিয়ে ফেরে মাদ্রিদ। ফার্গুসন সেই ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, তিনি কখনোই রয় কিন আর পল স্কোলসকে এতটা এলোমেলো দেখেননি। এক রেডোন্ডোই এলোমেলো করে দিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে। বিখ্যাত রেফারি পিয়েরলুইগি কলিনা ছিলেন সেই ম্যাচের রেফারি। তিনি বলেছিলেন, রেডোন্ডোর ব্যাকহিলে রাউলের গোল ফুটবল পিচে দেখা তার সবচেয়ে বেশি সুন্দর স্কিল।

সেবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেও তেমন লাইমলাইটে আসলেন না। বছর শেষে ব্যালন ডি’অরে দেখা গেল, রেডোন্ডো পেয়েছেন মাত্র ৩টি ভোট। তবে আন্তর্জাতিকভাবে লাইমলাইটে আসুক বা না আসুক, মাদ্রিদিস্তাদের মনে চিরকালই ছিলেন তিনি। তাই তো মার্কার জরিপে মাদ্রিদের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা বিদেশি একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন রেডোন্ডো। পরবর্তীতে পাঠক জরিপে স্থান পেয়েছেন মাদ্রিদের সর্বকালের সেরা একাদশেও।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি হাতে রেডোন্ডো; Image Source: Getty Images

তবে শেষটা অম্লমধুর। ২০০০ সালে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগমন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের। লুইস ফিগোকে আনার তোড়জোড় শুরু করেন তিনি। সে মৌসুমে ফিগো থেকে শুরু করে ম্যাকেলেলে, কনসেইকাও এবং সোলারিকে ভেড়ান তিনি। স্বাভাবিকভাবেই ক্লাব ছাড়তে হয়েছিল অনেকেরই। আনেলকা চলে যান পিএসজিতে, কারেমবেউ মিডলসবরোতে। তবে রেডোন্ডোকে রাজি করানো ছিল পেরেজের সবচেয়ে কঠিন কাজ। এক বাক্যে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিলেন রেডোন্ডো,

‘রিয়াল মাদ্রিদ আমার হোম। আমি অন্য ক্লাবে খেলার কথা চিন্তাই করতে পারি না।’

ফ্যান ফেভারিট রেডোন্ডোকে অন্য ক্লাবে দেখতে চায়নি মাদ্রিদিস্তারাও। ‘রেডোন্ডোর বদলে ফিগোকে চাই না আমরা’ প্ল্যাকার্ড নিয়ে মাঠে হাজির হতো মাদ্রিদিস্তারা। কিন্তু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রেডোন্ডো পেরেজের কথায় ইচ্ছার বিরুদ্ধেই মিলান পাড়ি জমান। ফুঁসে উঠেন মাদ্রিদিস্তারা। ‘রেডোন্ডো ইজ মাদ্রিদ’, ‘লার্ন ফ্লোরেন্তিনো, নো ওয়ান সেলস রেডোন্ডো’ প্ল্যাকার্ডও আটকাতে পারেনি এই ট্রান্সফার। ১৭ মিলিয়নে এসি মিলানে নাম লেখান রেডোন্ডো। বিখ্যাত ‘ম্যাকেলেলে রোল’ আদতে হওয়া উচিৎ ছিল ‘রেডোন্ডো রোল’। রেডোন্ডোর বিদায়ের পরই এই শূন্যস্থান পেরেজ পূরণ করেছিলেন ৫০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে ম্যাকেলেলে আর কনসেইকাওকে কিনে।

এসি মিলানে এসে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই হাঁটুর ইনজুরিতে পড়েন রেডোন্ডো। যেটি থেকে পুরোপুরি মুক্তি মেলেনি আর কখনোই। মিলানের হয়েও একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলেও চার বছরে মিলানের জার্সি গায়ে খেলতে পেরেছেন মাত্র ১৬ ম্যাচ। দুই বছরই ছিলেন মাঠের বাইরে। মোট তিনটি সার্জারিতে ফুটবল ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে যায় সান সিরোতেই।

এসি মিলানের জার্সি গায়ে রেডোন্ডো; Image Source: Getty Images

ইনজুরির শুরুতেই ২০০১ সালে রেডোন্ডো দেখা করেন মিলান প্রেসিডেন্ট গ্যালিয়ানির সাথে। তাকে অনুরোধ করেন তাকে দেওয়া মিলানের বাড়ি ও গাড়ি ফিরিয়ে নিতে। আর যতদিন সুস্থ না হন, তার বেতন যাতে না দেওয়া হয়। পরবর্তীতে রেডোন্ডো বলেছিলেন,

‘মিলানে আমি এসেছি খেলার জন্য, এবং তারা আমাকে স্যালারি দিবে খেলার জন্যই। না খেলতে পারলে আমি কেন টাকা নিব!’

গ্যালিয়ানি বলেছিলেন, তার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে সবচেয়ে মার্জিত ও অনন্য মানুষটি ছিলেন রেডোন্ডো।

আর্জেন্টিনা নিজেদের একই সাথে ভাগ্যবান ও দুর্ভাগা ভাবতেই পারে। রেডোন্ডো ছিলেন তাদের সন্তান। কিন্তু নিজের সন্তানের দেখা পেলো কই তারা! রেডোন্ডো আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দিয়েছেন মাত্র ২৯ ম্যাচে। যদিও তাতে জেতা হয়ে গিয়েছিল ১৯৯৩ কোপা আমেরিকা। তবে বিশ্বকাপ ছিল তার জন্য হতাশাই। ১৯৯৪ বিশ্বকাপে বাতিস্তুতা, সিমিওনে, ম্যারাডোনাসহ বিশ্বকাপের দাবিদার আর্জেন্টিনা টালমাটাল হয়ে গিয়েছিল ম্যারাডোনার ডোপ কেলেঙ্কারিতে। ফলাফল, দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায়।

১৯৯৮তে প্যাসারেলা এসে নির্দেশ দিয়েছিলেন সবার বড় চুল কেটে ফেলতে; তা না হলে বিশ্বকাপে নিবেন না তিনি। বাতিস্তুতা, ওর্তেগা, আয়ালারা বিশ্বকাপ খেলার জন্য চুল কাটলেও রেডোন্ডো কাটেননি। সুন্দর ফুটবলের পূজারি রেডোন্ডোর কাছে এসব বাড়াবাড়ি মনে হয়েছিল। ফলাফল, ১৯৯৮ বিশ্বকাপে খেলাই হয়নি তার। পরবর্তীতে মার্সেলো বিয়েলসা ১৯৯৯ সালে জাতীয় দলে ডাকলেও কয়েক ম্যাচ পরই জাতীয় দলের হয়ে বুট জোড়া তুলে রাখার ঘোষণা দেন। আর্জেন্টাইনদের কাছে তাই এক আক্ষেপের নাম ফার্নান্দো রেডোন্ডো। তবে মাত্র ২৯ ম্যাচ খেলেই মুন্ডো আলবিসেলেস্তের জরিপে আর্জেন্টিনার সর্বকালের সেরা একাদশে ম্যারাডোনা ও রিকেলমের সাথে মাঝমাঠে জায়গা করে নিয়েছেন রেডোন্ডো!

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ম্যাচে রিভালদোর সাথে বল দখলের লড়াইয়ে রেডোন্ডো; Image Source: Getty Images

রেডোন্ডোর টেনেরিফে ও মাদ্রিদের প্রথম কোচ স্বদেশী ভালদানো বলেছিলেন,

‘গুটিকয়েক খেলোয়াড় রয়েছে, যারা মাথা দিয়ে যা ভাবে পা দিয়ে তা-ই করতে পারে। রেডোন্ডো তাদের একজন। আমি সবসময়ই চোখ বন্ধ করে তাকে আমার দলে চাই।’

সঙ্গীত কিংবা গানের মতো কিছু সুন্দর জিনিসের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ না দিলে আপনি এর মাহাত্ম্য পুরোটা ধরতে পারবেন না। রেডোন্ডোর ক্যারিয়ারটাও কি একই রকম নয়! ইনজুরিতে বেশ আড়ালেই চলে গিয়েছিলেন ক্যারিয়ারের শেষের দিকে। তবে বার্নাব্যুতে ফিরে এসেছিলেন ২০০৩ সালে। আরো নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে, ১২ মার্চ। মিলান বনাম মাদ্রিদের সেই ম্যাচে আনচেলত্তি খেলিয়েছিলেন রেডোন্ডোকে। অবশেষে মাদ্রিদিস্তারা আচমকা চলে যাওয়া তাদের রাজপুত্রকে অভিবাদনের সুযোগ পেয়েছিল। পুরো বার্নাব্যু দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছিলো তাকে। চ্যান্টিং করেছিল রেডোন্ডোর নামে,

‘দ্য প্রিন্স ইজ ব্যাক হোয়্যার হি বিলংস, ইন মাদ্রিদ।’

This Bangla article is about Fernando Redondo a footballer who played for Madrid, AC Milan, Argentina. Necessary references are hyperlinked in the article. 

Feature Image : Christopher Weir/these football times

Related Articles