Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘শচীন’ নামক ঘুড়ির নাটাই ছিল যার হাতে

ক্রিকেট মাঠের ২২ গজে খেলেন ২২ জন ক্রিকেটার। কিন্ত এই ২২ জন ক্রিকেটারই তাদের ক্যারিয়ারে কারো না কারো কাছে ক্রিকেট-দীক্ষা নিয়েছেন। যারা দীক্ষা দিয়ে তাদের ময়দানি লড়াইয়ে জিততে পাঠায় সচরাচর আমরা তাদের মনে রাখি না। তবে এদের মধ্যেও কয়েকজন আছেন যারা তাদের মনে রাখতে, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে আমাদের বাধ্য করে। ক্রিকেট ইতিহাসেও তাদের নাম খোদাই করা আছে এবং থাকবে। এঁদেরই একজন রামাকান্ত আচরেকার। খোদ শচীন টেন্ডুলকারও যার কাছে শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় মাথা নত করেন।

হ্যাঁ, বলা হচ্ছিল শচীন টেন্ডুলকারের বাল্যকালের ক্রিকেট গুরু ও কোচ রামাকান্ত আচরেকারের কথা। শুধু শচীন নয়, বিনোদ কাম্বলি, অনিল গুরাভ, অমল মজুমদার, প্রভিন আমরে, সমির দীঘে, বলভিন্দর সন্ধু, অজিত আগারকার, রমেশ পাওয়ার- তারা প্রত্যেকেই রামাকান্তের ছাত্র। ১২০ কোটি মানুষের দেশ ভারত। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ যে মানুষটির হাত ধরে এসেছিল তিনি রামাকান্ত আচরেকার। আজকের আয়োজন তাকে ঘিরেই।

Image Courtesy: Zee News

নিউ হিন্দ স্পোর্টস ক্লাব, ইয়ং মহারাষ্ট্র একাদশ, গুল মহার হিল এবং মুম্বাই পোর্টের হয়ে বিভিন্ন সময় খেলেছেন রামাকান্ত। তবে ষাটের দশকে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার হয়ে হায়দারাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের বিপক্ষে খেলা একটি ম্যাচই তার ক্যারিয়ারের সম্বল। মুম্বাইয়ের নির্বাচক হিসেবেও কাজ করেছেন অনেকদিন। এরপর কোচিং ক্যারিয়ারে মনোনিবেশ করেন। ক্রিকেটার রামাকান্তকে খেলার জন্য নয়, তাকে সবাই চেনে ক্রিকেটার তৈরির কারিগর হিসেবে। আশির দশকের শেষভাগে এবং নব্বইয়ের দশকে মুম্বাইয়ের অসংখ্য ছেলেকে ক্রিকেট-দীক্ষা দিয়েছেন, যারা পরবর্তীতে টিম ইন্ডিয়ার হয়ে ঝান্ডা উড়িয়েছে ক্রিকেটের ২২ গজে।

শিবাজী পার্কের কামাত মেমোরিয়াল ক্লাব ক্রিকেট একাডেমি। মুম্বাইয়ের ক্রিকেট তৈরির কারখানা এই একাডেমি। আর একাডেমিরই ক্রিকেট প্রশিক্ষক কোচ রামাকান্ত আচরেকার।

Image Courtesy: BCCI

শচীনের বয়স যখন ১১, তখন বড় ভাই অজিত তাকে কোচ রামাকান্তের কাছে এনেছিলেন। শুরুতে পেসার হওয়ার স্বপ্ন ছিল শচীনের। রামাকান্ত শচীনের পেস বোলার হবার স্বপ্নকে ব্যাটসম্যান হবার স্বপ্নে রূপান্তর করে দেন। তারই পরামর্শে বান্দ্রার নিউ স্কুল বদলে ভর্তি হয়েছিলেন সারদাশ্রম বিদ্যানিকেতনে, যেখানে তার নিখুঁত ব্যাটসম্যানশিপের প্রমাণ মিলেছিল।

গুরু রামাকান্ত নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন শচীনকে গড়ার নিমিত্তে। তবে শচীন নামক ওই ঘুড়ির নাটাই সবসময় ছিল রামাকান্তের হাতে। তাই তো শচীন কখনও কক্ষচ্যুত হননি। তাকে স্কুটিতে করে নিয়ে মুম্বাইয়ের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিয়ে খেলিয়েছেন রামাকান্ত। কেননা তিনি শচীনের মধ্যে দেখেছিলেন অসম্ভব প্রতিভা। তাই তিনি চাইতেন এই প্রতিভার ষোলকলায় দু’হাত ভরে ক্রিকেটকে যেন দিতে পারেন শচীন।

হ্যাঁ, শচীন পেরেছিলেন গুরুর ইচ্ছাকে একদিন বাস্তবে রূপ দিতে। রামাকান্তের ছাত্র কালের পরিক্রমায় ভারতীয়দের কাছে হয়ে উঠেছিলেন ‘ক্রিকেট ঈশ্বর’। শিবাজী পার্কে এই টোটকাটা দিয়েছিলেন কোচ রামাকান্ত আচরেকার। শচীনও কখনও বিশ্বসেরা হওয়ার অহমে গুরুকে ভুলে যাননি। সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন প্রিয় গুরুর কাছে। তার শেষ বিদায়ে শচীন বলেছিলেন, 

আচরেকার স্যারের উপস্থিতিতে স্বর্গে ক্রিকেট সমৃদ্ধি লাভ করবে। আমার মতো তার অনেক ছাত্রই স্যারের তত্ত্বাবধানে ক্রিকেটের এ-বি-সি-ডি শিখেছে। আমার জীবনে তার অবদান ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমার আজকের ভিতটা তিনি গড়েছেন।

Image Courtesy: Hindustan Times

শচীনের এ কথা থেকেই বোঝা যায় তার ক্যারিয়ারে গুরু রামাকান্তের নিবেদনটা কতটুকু। তার উইলো থেকে আসা প্রতিটি রানে কিংবা প্রতিটি শতকে মিশে ছিল রামাকান্ত স্যারের রক্ত পানি করা ঘাম। শচীন নামের ওই মহীরুহের গোড়ায় যদি পানি না ঢালতেন, তাহলে হয়তো অন্যদের মতো সাদামাটা ক্যারিয়ার নিয়েই ক্যারিয়ার শেষ কর‍তে হত। রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়েছেন, সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করেছেন, সব শেষ ভারতকে ২০১১ সালে বিশ্বসেরা বানিয়েছেন শচীন। তবে তার এত সব অর্জনের পেছনের কারিগর ঐ একজনই- রামাকান্ত আচরেকার।

১৯৩১ সালে তৎকালীন বোম্বের মালাভানে জন্মগ্রহণ করেন রামাকান্ত। জীবনের বেশিরভাগ সময়ই দিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটে। আগাগোড়া ক্রিকেটপাগল এই মানুষটি ৮৬ বছর বয়সে ২০১৯ সালের ২ জানুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে ২০১৩ সালে স্ট্রোক করার পর থেকে ইনটেনসিভ লাইফ কেয়ার সাপোর্টে চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

Image Courtesy: Times of India

শেষ করা যাক গুরুর কাছ থেকে পাওয়া জীবন-দর্শনের একটা ছোট গল্প দিয়ে। স্কুল ক্রিকেটে প্র‍থম ম্যাচে শচীন ২৪ রান করেছিল। তার দলও জিতেছিল। মুম্বাই ক্রিকেটের নিয়ম মতো কোনো ক্রিকেটার ম্যাচে ৩০ রান করতে পারলে তার ছবি পত্রিকায় ছাপানো হবে। কিন্তু শচীনের রান ২৪, অর্থাৎ ৬ রান কম। ম্যাচের স্কোরার দলের এক্সট্রা রান থেকে ৬ রান শচীনের রানের সাথে যোগ করে ৩০ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিল তাকে। শচীনও প্রস্তাবটা সাদরে গ্রহণ করলেন। সেদিনের সেই ১২ বছরের কিশোর শচীন নীতি-আদর্শকে আমলে না নিয়েই কাজটি করেছিল। 

পরদিন সকালে মুম্বাইয়ের পত্রিকায় শচীনের ছবি দেখে বেশ অবাক হন রামাকান্ত। শচীনের কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি সব খুলে বলেন। এটা শুনে তিনি প্রচন্ড মনঃক্ষুণ্ণ হন। শচীনও তার ভুল বুঝতে পেরে সেদিনেই শপথ নিয়ে নিয়েছিলেন আর কখনও এমনটা না করার। শুধু ক্রিকেটের ২২ গজে নন, জীবনে কখনও এই ভুল দ্বিতীয়বার করবেন না।

সবশেষে শচীনের শিক্ষক কোচ রামাকান্ত আচরেকারের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী।

আরো জানতে পড়ুন- শচীন রূপকথা”

Related Articles