Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দেপোর্তিভো লা করুনার উত্থান ও পতন

‘They were big. For a while, they were among the biggest.’ 

দেপোর্তিভো লা করুনা কে নিয়ে আক্ষেপ করেই এই কথা গুলো বলেছিলেন সিড লো। কিন্তু আমরা খুব দ্রুতই সব ভুলে যাই। আমরা ভুলে গেছি একটা সময় রিয়াল-বার্সার সমান্তরালে নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদেরই ছাড়িয়ে গিয়েছিলো দেপোর্তিভো। ভুলে গিয়েছে এই টিমেই একসাথে খেলতো রিভালদো, ম্যাককেই, বেবেতোরা। এরাই নিজেদের স্বতন্ত্র খেলার ধরনে জিতে নিয়েছিলো মেজর শিরোপা। এদেরকেই একসময় ডাক হতো সুপার ডেপোর। পতনের সাথেই আমরা ভুলে গেছি দেপোর্তিভো লা করুনার ইতিহাস। আজ আমরা জানবো এই স্প্যানিশ ক্লাবটির উত্থান ও পতনের গল্প

২০০৪ সালের কথা। রেফারি পিরলুইগি কলিনার হুইসেল আর ডেরলেইয়ের একটি পেনাল্টিই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো দেপোর্তিভোর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলার সামনে। দ্বিতীয় লেগের শেষ মুহূর্তের পেনাল্টির খেসারত দিয়ে মরিনহোর পোর্তোর কাছে দুই লেগ মিলিয়ে ১-০ গোলে হেরে সেমিফাইনালেই সেবার বিদায় ঘটেছিলো দেপোর্তিভোর।   

এর ঠিক ৭ বছর পর ২০১১ সালের এক রাতে ভ্যালেন্সিয়ার কাছে হেরে দেপোর্তিভো নেমে যায় সেগুন্দা বিভাগে। যেটি কি না স্প্যানিশ ফুটবলের দ্বিতীয় স্তর। ১৯৯১ সালের পর টানা ২০ বছর ধরে লা লিগা খেলে যাওয়া দেপোর্তিভোর পতন শুরু সেই রাত থেকেই।

গোলের পর লা করুনা দলের উল্লাস; Image Source: Marca

২০১১ সালের সেই মৌসুমে দেপোর্তিভোর উত্থানের সাক্ষী হয়ে থাকা দুই ডুয়ো তখনো খেলছিলো লা করুনার হয়ে। একজন ৩৯ বছর বয়সী অধিনায়ক ম্যানুয়েল পাবলো। ২০০০ সালে নিজেদের প্রথম লা লিগা শিরোপা জয়ের সময় যে পাবলো ছিলেন অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরা, সেই পাবলোই দেখে গিয়েছিলেন সুপার ডেপোরের পতন। তা-ও আবার আর্মব্যান্ড পরিহিত অবস্থাতেই। আরেকজন ছিলেন ভ্যালেরন। যদিও অবনমনের অনুভূতি ভ্যালেরনের ততদিনে হয়ে গেছে। ২০০০ সালে এটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে লা করুনায় যোগ দেওয়ার মৌসুমেই এটলেটিকো মাদ্রিদের অবনমন হয়েছিলো সেগুন্দা বিভাগে। তবে তার চেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে ভ্যালেরনের দেপোর্তিভোর হয়ে অবনমনে। সর্বেসর্বা হয়ে ওঠা একটা দলকে পতনের মুখে দেখাটা মোটেও সুখকর অনুভূতি নয়।

ভ্যালেরন ও ম্যানুয়েল পাবলো; Image Source: Laliga

দেপোর্তিভো লা করুনার ইতিহাস এতটা ঐতিহ্যপূর্ণ নয়। ১৯৯১ সালে লা লিগায় উন্নীত হওয়ার আগে টানা ১৮ মৌসুম তারা কাটিয়েছিলো দ্বিতীয় বিভাগেই। ১৯৯১ সালে লা লিগায় এসেই দ্রুতই পরিবর্তন আসতে শুরু করে। যার জন্য পূর্ণ বাহ্‌বার দাবিদার সেই দলটির প্রেসিডেন্ট লেনদোরিও। আর্থিকভাবে প্রচুর সহযোগিতা ছাড়াও পুরো ক্লাবের অবকাঠামো,  যুব একাডেমি, ক্লাব স্টাফ ও কর্মকর্তা সব কিছুর মধ্যেই দ্রুত পরিবর্তন আনেন তিনি।

শুরুতেই দলে ভেড়ান ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার বেবেতো, দোনাতো ও মাউরো সিলভাকে। পরবর্তীতে একে একে ক্লাবে হাজির করেন রিভালদো, ডালমিনহা, জুলিও সানিতাস, কস্টাদিনবের মতো তৎকালীন সময়ের বেশ ভালো কিছু ফুটবলারকে। আর এদের দিয়েই দেপোর্তিভোকে অপ্রতিরোদ্ধ করেন কোচ আর্সেনিও ইগলেসিয়াস। ফলও পায় তারা হাতে নাতে।

১৯৯৩ ও ‘৯৪ পরপর দুই মৌসুম লা লিগায় রানার্সআপ হয় দেপোর্তিভো লা করুনা। ১৯৯৫ সালে এসে জিতে নেয় কোপা দেল রে শিরোপা। কোপা দেল রে জেতার সুবাদে স্প্যানিশ সুপার কাপে দেপোর্তিভো মুখোমুখি হয় সেবারের লা লিগা চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের। পুরো ম্যাচে আধিপত্য বজায় রেখে রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপও নিজেদের করে নেয় এই স্প্যানিশ ক্লাব। আর সেই সাথে বিশ্বকে নিজেদের আগমনী বার্তাও দিয়ে রাখে সুপার ডেপোর। তবে লা লিগা শিরোপার জন্য ২০০০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষাও করতে হতো না দেপোর্তিভো লা করুনার। ১৯৯৪ সালেই তারা পেতে পারতো সেই স্বাদ। ১০ বছর পর ২০০৪ সালে যেমন একটি পেনাল্টির হুইসেল স্বপ্ন ভেঙেছিলো লা করুনার। তেমনিভাবে ১৯৯৪ সালেও পেনাল্টিই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো লা লিগা জয়ের ক্ষেত্রে। তবে এক্ষেত্রে ভুলটা ছিলো লা করুনার স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ দুরিচের। শেষ ম্যাচ জিতলেই শিরোপা এমন অবস্থানে দাঁড়িয়ে ভ্যালেন্সিয়ার সাথে ড্র করে বার্সেলোনার কাছে শিরোপা খুইয়েছিলো লা করুনা। শেষ মূহুর্তের পেনাল্টি ভ্যালেন্সিয়ার গোলকিপার ঠেকিয়ে দেওয়াতেই ভাগ্য পোড়ে স্প্যানিশ ক্লাবটির।

জাভিয়ের ইরুরেতা; Image Source: The Playmaker

১৯৯৮ সালে লা করুনার কোচ হয়ে আসেন জাভিয়ের ইরুরেতা। আগের মৌসুমে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী সেল্টা ভিগোকে উয়েফা কাপের টিকেট ধরিয়ে দেওয়া এবং সেবারের সেরা লা লিগা কোচ নির্বাচিত হওয়া ইরুরেতাই ছিলো লেনদোইরোর প্রথম পছন্দ। কোচ করেই ক্ষান্ত থাকেননি লেনদোইরো। রিয়াল বার্সার মতো ট্রান্সফারের দায়িত্ব ভার দেন কোচের হাতেই। আর সেই দায়িত্ব পেয়েই লা করুনার ভিত আরো মজবুত করেন ইরুরেতা। ২০০০ সালে মায়োর্কা থেকে ডিয়েগো ট্রিস্টানকে দলে ভেড়াতে মুখিয়ে ছিলো রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু ইরুরেতা তাকে নিয়ে আসেন লা করুনায়। একইভাবে ২০০০ সালেই ম্যানুয়েল পাবলো, রয় ম্যাককেই, ভ্যালেরন প্রমুখ খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ান তিনি।

দেপোর্তিভো লা করুনার দল; Image Source: Goal.com

৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলা ইরুরেতার প্রধান লক্ষ্য ছিলো মাঝমাঠের আধিপত্য। আর সেভাবেই নিজের দলকে গড়ে তোলেন তিনি। মাঠের মাঝখানে পিরামিডের মতো করে বলের দখল রেখেই রণ পরিকল্পনা সাজাতেন তিনি। এমারসন, সার্জিও গঞ্জালেস, ডালমিনহা, মাউরো সিলভারা ইরুরেতার মাঝমাঠে শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছিলো। সৃজনশীল মাঝমাঠের প্রভাবে গোলের বন্যাও বইয়ে দিতে শুরু করলো লা করুনা। পাশাপাশি ফুল ব্যাকদের আক্রমণাত্মক করে তোলেন এই ইরুরেতাই। লিওনেল স্কালোনি ও ক্যাপডেভিলা ছিলেন তার দুই ফুলব্যাক। ইগিলেসিয়াসের রেখে যাওয়া কাজটিই যেন সমাপ্ত করতে ইরুরেতার আগমন। নিজের দায়িত্বের দ্বিতীয় বছরের মাথাতেই লিগ শিরোপা জেতাতে সক্ষম হন তিনি। লা করুনার ইতিহাসে এটিই সর্বপ্রথম লিগ শিরোপা। এর পরবর্তীতে লিগ শিরোপা না জিতলেও বরাবরের মতো লিগে সেরাদের সাথেই লড়াই করে গেছে তার দল। এরই মধ্যে ২০০৪ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমি ফাইনাল খেলে দেপোর্তিভো লা করুনা।

ঠিক এর পরের মৌসুম থেকেই শেষের শুরু হয়। তার জন্য অনেকাংশে দায়ী লেনদোরিও নিজেও। নিজের ভুল স্বীকার করে তিনি পরবর্তীতে বলেন, যে সময়টাতে খেলোয়াড় বিক্রয় করে আর্থিকভাবে আরো শক্ত হতে পারতো ক্লাবটি, সেই সময়ই কোনো খেলোয়াড় বিক্রয় করেননি তিনি। বরং তিনি শিরোপা জেতার বিভ্রমে পড়েছিলেন। যার জন্য সব তারকা খেলোয়াড়দের ধরে রেখে খেলিয়েছেন তাদের ক্যারিয়ার সেরা সময়টাতে। পরবর্তীতে বুড়িয়ে যাওয়া এই খেলোয়াড়দের কোথাও বিক্রিও করতে পারেননি তিনি। তবে লেনদোরিওর ভুল ছিলো আরো বড়। শেষ দিকে ইয়ুথ একাডেমির দিকেও তেমন গুরুত্ব দেননি লেনদোরিও। ফলাফল কয়েক বছরের মধ্যেই অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়ে দলটি। ২০০৫ সালে ক্লাব ত্যাগ করেন ইরুরেতা। ২০০৮ সালের মধ্যেই অবসরে কিংবা ক্লাব ছেড়ে চলে যান ম্যাককেই, ভিক্টর, ক্যাপডেভিলা, স্কালোনি, মাউরো সিলভা, ডোনাতো, ডালমিনহা, ফ্রান, ডুসার, নেইবেট, কলোচ্চিনি প্রমুখ।

কোপা দেল রে জেতা দেপোর্তিভো; Image Source: Goal.com

ততদিনে রিয়াল, বার্সেলোনা নিজেদেরও গুছিয়ে নিয়েছে দুর্দান্তভাবে। তাদের সাথে পাল্লা দেওয়া দূরে থাক, খেলোয়াড় সমন্বয়, আর্থিকভাবে সব কিছুতেই পিছিয়ে যাওয়া দেপোর্তিভো ততদিনে লা লিগায় টিকে থাকার জন্য লড়াই শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু শেষমেষ আর পারেনি। ২০১১ সালে দেপোর্তিভোর অবনমন ঘটে। ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়ানো লেনদোরিও শেষ দিকের বাজে সিদ্ধান্ত ও নিজেদের ভুলের জন্য ক্ষমা চান। যাওয়ার আগে তিনি বলে যান- ২০০০ সালের লা লিগা জয় তার জীবনের সেরা মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

ডিয়েগো ট্রিস্টান; Image Source: All these footballs

২০১১ সালে অবনমনের পর ২০১২ সালে আবারো লা লিগায় আসে লা করুনা। কিন্তু পরের মৌসুমেই আবার নেমে যায় সেগুন্দায়। ২০১৪ মৌসুমে প্রথম বিভাগে এসে প্রথম ১৫ সপ্তাহ এক নাম্বারেও ছিলো এই ক্লাবটি। কিন্তু শেষমেষ আর পেরে ওঠেনি নিজের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে। সর্বশেষ গত মোসুমেও লা লিগায় ১৮ নাম্বারে থাকার ফলে আরো একবার অবনমিত দেপোর্তিভো লা করুনা।

সম্ভবত উড়তে থাকা সুপার ডেপোর একটু বেশিই উড়ে ফেলেছিলো। সূর্যের বেশি কাছাকাছি গিয়ে ইকারুসের পরিণতি বরণ করেছে এই ক্লাবটি। আবারো ফিনিক্স পাখির মতো দেপোর্তিভো জেগে উঠবে কি না তা একমাত্র ঈশ্বরই ভালো জানেন। কিন্তু তার আগে আমাদের মাঝে চিরজীবিত হয়ে থাকবে দেপোর্তিভোর ক্ষনিকের দাপিয়ে বেড়ানোর ইতিহাস।

This Bangla article is about the rise and fall of spanish club deportivo la coruna. References are hyperlinked in the article.

Feature Image : All these football

Related Articles